শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
তোমাদের নিশ্চয়ই ভীষণ কৌতূহল হচ্ছে যে, কে সেই সাহিত্যিক? তাঁর নাম এলিজাবেটা দামি। জেরোনিমো স্টিল্টন ছদ্মনামে তিনি রচনা করেছেন শিশুদের উপযোগী অনেক মজার মজার বই। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, এই জেরোনিমো স্টিল্টনই তাঁর গল্পের প্রধান কেন্দ্রীয় চরিত্র। যাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে নানা ঘটনা।
১৯৫৮ সালের ১ জানুয়ারি ইতালির মিলানে এলিজাবেটার জন্ম। তাঁর কোনও সন্তান ছিল না। এই দুঃখ ভুলতে তিনি একটি শিশু হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। এই সময় তিনি প্যাচ অ্যাডামসের কথা শোনেন, যিনি ছিলেন ওই হাসপাতালের একজন ডাক্তার এবং শিশুদের হাসানোর জন্য তিনি জোকারের মতো সাজতেন। এলিজাবেটা শিশুদের হাসানোর জন্য, তাদের যন্ত্রণা দূর করার জন্য গল্প বলতে শুরু করেন। সেই গল্পগুলোর কাহিনি রচিত হয়েছিল একটা ইঁদুরকে কেন্দ্র করে, তার নাম— জেরোনিমো স্টিল্টন।
ইঁদুররা খুব কৌতূহলী, মজাদার। বাচ্চাদের মতো তারাও মজা করতে ভালোবাসে। তারা এটা বোঝে না যে, তাদের মজাগুলো কত বড় বিপর্যয় ডেকে আনে। জেরোনিমো স্টিল্টনের এই গল্পগুলো বাচ্চাদের খুব ভালো লাগল। আর এলিজাবেটা অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনিগুলো লিখতে শুরু করলেন যেগুলো বইয়ের আকারে প্রকাশিত হল।
গল্পে দেখা যায় জেরোনিমোও খুব কৌতূহলী, কিন্তু অ্যাডভেঞ্চার সন্ধানী নয়। সে একজন জার্নালিস্ট। তাই স্টোরির জন্য সে এগুলো করে। সে ভীষণ ভিতু, খুব নার্ভাস হয়ে পড়ে। আর তার অনেক অ্যালার্জি আছে। তবুও জেরোনিমোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গল্পগুলোতে আছে — কৌতুক, অ্যাডভেঞ্চার, অ্যাকশন, মেজাজ।
এলিজাবেটার চরিত্রের প্রতিফলন জেরোনিমোর কার্যকলাপে। ছোটবেলা থেকেই তিনি অনুসন্ধান করতে ও বিশ্লেষণ করতে ভালোবাসতেন। তাছাড়া তাঁর ভালোলাগা বিষয়ের মধ্যে ছিল— ট্রেকিং, ম্যারাথন রানিং, মাউন্টেন ক্লাইম্বিং। ম্যারাথন দৌড়ে সাহারা মরুভূমির ৭০ মাইল পথ ৫ দিনে অতিক্রম করেছেন তিনি। জেরোনিমোও মাউস আইল্যান্ড ম্যারাথনে দৌড়ে ফার্স্ট হয়েছে। নেপালের পাহাড়ে উঠেছেন এলিজাবেটা। আবার নর্থপোলের একটা অংশও তিনি অন্বেষণ করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন। ইগলুতেও কাটিয়েছেন। তাছাড়া প্যারাসুট আর পাইলটের লাইসেন্সও আছে তাঁর। তাইতো ‘সার্ফস্ আপ জেরোনিমো’তে জেরোনিমোকে দেখি হ্যাং গ্লাইডিং, স্কাই ডাইভিং করতে। জেরোনিমো খুব ভয় পেয়েছে এসব করতে। তবুও সে করেছে — এ তো শিশুরই কৌতূহল। বাচ্চারা ভয় পেতে ভালোবাসে বলেই তো ভয়ঙ্কর কাজগুলো করতে পারে, করতে চায়।
আফ্রিকার সাইন্টিফিক ট্রিপে হাতি ও গরিলার সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সাক্ষাৎ এলিজাবেটার বইতেও দেখা যায় - জেরোনিমোর চরিত্রের মাধ্যমে। এলিজাবেটা দুঃসাহসিক কাজ, উদারতা ও সম্মান দেওয়াতে বিশ্বাস করেন। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন — ‘ম্যারাথনের দৌড় থেকে শুরু করে ক্রান্তীয় জঙ্গল অন্বেষণ ও প্যারাসুটিং — সব অ্যাডভেঞ্চার থেকেই আমি কিছু না কিছু শিখেছি। তবে আমার কাছে সবচেয়ে বড় অ্যাডভেঞ্চার হল নতুন কোনও বই লেখা। উদারতা আমার কাছে ভীষণ মূল্যবান। আমরা যদি উদারতার সঙ্গে কোনও কাজ করতে পারি, তাহলে আমরা নিজের জীবন সহ সমগ্র পৃথিবীতে একটা পরিবর্তন আনতে পারব। আমাদের উচিত নিজেকে সম্মান করা, সকলকে সম্মান করা এবং সর্বজনীন মূল্যগুলোকেও সম্মান করা। তাতেই পৃথিবীতে শান্তি বজায় থাকবে এবং আমরা একটি বৃহৎ পরিবারের মতো এই পৃথিবীতে একসঙ্গে বাস করতে পারব।’ আজ পর্যন্ত জেরোনিমোর বইগুলোর ১৪০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে এবং পুরস্কৃতও হয়েছে। ২৪৯টি সংস্করণসহ ২৮টি ভাষায় এর অনুবাদ হয়েছে। এটি সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই। এই বইগুলোর পরতে পরতে আছে এলিজাবেটার জীবনের অভিজ্ঞতা এবং রসবোধ। এই অভিজ্ঞতা ও রসবোধই তাঁকে ইঁদুরের মতো একটি প্রাণীর মধ্যে শিশুসুলভ কৌতূহল, মজা এবং হাস্যকর কাণ্ডকারখানাগুলো খুঁজে নিতে সাহায্য করেছিল। তাইতো তাঁর কলমে সৃষ্টি হয়েছিল জেরোনিমো স্টিল্টনের মতো এক ইঁদুর চরিত্র, যার মধ্যে মানুষের সমস্ত অনুভূতির প্রতিফলন দেখা যায়।
দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা মানবজীবনের এক অপরিহার্য অঙ্গ। তবুও এই স্বল্প জীবনে হাসার গুরুত্ব আমাদের মনে রাখা দরকার। এই গল্পগুলো রচিত হয়েছিল সেই বাচ্চাদের জন্য, যাদের যন্ত্রণাময় জীবনের গল্পগুলোর একটা হ্যাপি এন্ডিং দরকার ছিল। জেরোনিমো স্টিল্টনের সব গল্পই শিশু-কিশোরদের বয়সোপযোগী এবং এগুলোর বিশেষ মূল্য রয়েছে।
তথ্য ও ছবি : সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে