গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
রং খেলতে গিয়ে বিপত্তি হয় প্রধানত আমাদের দেহত্বকে, চোখে, নাকে- কানে। চোখ দুটো আমাদের অক্ষিপটের মধ্যে এমনভাবে বসানো থাকে যে হঠাৎ করে চোট লাগতে পারে না। কিন্তু রং যেহেতু মাখানো হয় মুখে, চোখের সংস্পর্শে তা আসতে পারে সহজেই। চোখের বাইরের আবরণ, যাকে আমরা বলি কনজাংটাইভা, তাতে রং লেগে জ্বালা করতে পারে, জল গড়াতে পারে। তক্ষুনি কী করবে জেনে রাখ ইন্দ্রজা। ভুল করেও যেন চোখ ডলবে না। তাহলে চোখের রং আরও ভিতরে প্রবেশ করবে। চোখে বারেবারে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দেবে। পারলে কলের নীচে জলের ধারায় চোখটাকে রাখতে পারো। যতক্ষণ রাখা যায় ততক্ষণই ভালো। অন্তত আধঘণ্টা তো রাখবেই। শুধু জল দিয়ে ধুলেই অধিকাংশ রং বার হয়ে যায়। ঘরে পড়ে থাকা পুরনো আই ড্রপ বা দোকান থেকে কিনে নতুন আই ড্রপ, কক্ষনও চোখে দেবে না। চোখে কোনও প্যাড লাগাবে না। কারণ এই প্যাডের চাপে চোখের অন্যান্য অংশের ক্ষতি হতে পারে, চোখ জুড়ে যেতে পারে, ঘা হতে পারে। বাইরের আলো এড়াতে চোখকে অন্ধকারে বিশ্রাম দেবে বা রোদ-চশমা পরবে। চোখের ডাক্তারকেও একবার দেখিয়ে নেবে।
নানা ধরনের অ্যাসিড ও অ্যালকালি আজকাল রঙে ব্যবহৃত হচ্ছে। অ্যালকালি জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ চোখের লেন্সের সামনে কর্নিয়া নামক যে অংশ থাকে, তাতে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। একে বলে কর্নিয়াল আলসার। কর্নিয়া পুড়ে যেতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু না করলে অন্ধত্ব অনিবার্য।
আজকাল তো আবার বেলুনের রং ভরে সজোরে ছুড়ে মারা হয়। এর ফলে আঘাত লাগতে পারে কানেও। চোখে ও কানে রং ঢুকে যেতে পারে। কানে রং ঢুকলে সহজে বের হতে চায় না, অনেকের কান বন্ধ হয়ে যায়। ছুটতে হয় ডাক্তারের কাছে। যাদের কান দিয়ে জল পড়ে পা পুঁজ পড়ে, তাদের কানের পর্দায় ফুটো থাকে। কাজেই রং খেলতে গেলে সাবধান হয়ে খেলতে হবে। কানে তুলো গুঁজে নেওয়া যেতে পারে। তুলো ভিজে গেলে পাল্টে নিতে হবে, ইয়ার বাড দিয়ে কানের সুড়ঙ্গ দুটো বুলিয়ে নিতে হবে, যাতে জল বা রং কিছুই না থাকে।
কানে ময়লা বা খোল জমে থাকলে জল বা রঙের সংস্পর্শে এসে তা ফুলে উঠে কানে তালা ধরিয়ে দিতে পারে। কান ভোঁ ভোঁ করবে, কানে শুনতে অসুবিধা হবে। জল, তেল, ঘরে পড়ে থাকা কোনও পুরনো ড্রপ কানে দেবে না। আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি কানে তালা ধরার সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা করবেন।
রং লেগে দেহের চামড়ায় সমস্যা হতে পারে। রঙে থাকে নানা রাসায়নিক পদার্থ। যেমন সোনালি রঙে পেতল বা ব্রোঞ্চ। রুপালি রঙে অ্যালুমিনিয়ামের যৌগ। আর কালো রঙে তো থাকে ভুসোকালি বা আলকাতরা। দেহত্বকের পক্ষে এরা প্রত্যেকেই ক্ষতিকর। রং দেবার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের দেহত্বক চুলকোতে শুরু করে, জায়গাটা ফুলে ওঠে। প্রথমেই সাবান জল দিয়ে যে জায়গাটায় রং লেগেছে, সেই জায়গাটা ভালো করে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করবে। রং ধুয়ে গেলে চুলকানি ও জ্বালা যন্ত্রণাও কমে আসবে। রঙের সংস্পর্শে দেহত্বকের এই রোগটিকে বলে কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস। বেশি চুলকালে ক্যালামিন লোশন লাগানো যেতে পারে, খাওয়া যেতে পারে অ্যান্টি অ্যালার্জিক ট্যাবলেট বা সিরাপ। সবথেকে ভালো হয় একজন ত্বক বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে নেওয়া।
কাজেই রং খেলার আগে এইসব ব্যাপার গুলো মাথায় রেখে রং নির্বাচন করতে হবে। আবির ছাড়া অন্য কোনও রং ব্যবহার না করাই ভালো। আবিরও এমন ভাবে দিতে হবে যাতে চোখে- নাকে-মুখে ঢুকে না যায়। ঢুকে গেলে আবির থেকেও সমস্যা হতে পারে। আজকাল ভেষজ রং বাজারে পাওয়া যায়। সেই রং ব্যবহার করাই ভালো। তবে দেখে নিতে হবে রংটা ভালো কিনা।
আর একটা কথা তোমায় জানিয়ে রাখি ইন্দ্রজা, অনেকে বলেন বসন্তকালে রং খেললে বসন্ত বা পক্স নাকি হয় না। জেনে রাখ, এটা একটা কথার কথা ,সত্যি কথা নয়। তাহলে ইন্দ্রজা কী ঠিক করলে, রং খেলবে, নাকি খেলবে না? আবার বলি, যদি আমার কথা শোনো, এই বছরটা রং না খেলাই ভালো।