তোমরা সবাই জানো, এই মহাবিশ্বে পৃথিবীই হল একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণ আছে। পৃথিবীতে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের ফলেই এই গ্রহে প্রাণের সঞ্চার ঘটে থাকে। আর এই ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় সূর্য, আবহাওয়া, মহাসাগর, আগ্নেয়গিরি প্রভৃতি। সোনি বিবিসি আর্থ এ নিয়ে একটি বিশেষ শো-এর আয়োজন করেছে। শো-এর নাম ‘এ পারফেক্ট প্ল্যানেট’। আগামী ৮ মার্চ সোনি বিবিসি আর্থ-এ শোটি দেখা যাবে। আশা করা যায়, ‘এ পারফেক্ট প্ল্যানেট’ অনুষ্ঠানটি দেখে তোমাদের বেশ ভালো লাগবে। দেখতে ও জানতে পারবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ে অনেক অজানা তথ্য।
আগ্নেয়গিরি
পৃথিবীর পৃষ্ঠতলে প্রায় পনেরোশোরও বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। আমরা চাইলেই এইসব আগ্নেয়গিরিকে কখনওই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। কিন্তু প্রাণী সমূহের জন্যও এইসব আগ্নেয়গিরি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। পৃথিবীর প্রায় ৮০ শতাংশ-এর বেশি জমি ভুগর্ভস্থ গলিত ম্যাগমার ফলেই গঠিত হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি প্রায় চার বিলিয়ন বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে, যা এখনও চলছে। লাভা ঠান্ডা হলে এগুলি শিলায় পরিণত হয়। এমনকী এসব জায়গায় প্রাণের সঞ্চারও হয়। আগ্নেয়গিরির লাভা কখনও কখনও দ্বীপেও পরিণত হয়। এর আশপাশের জমি খুব উর্বর হয়। শুধু তাই নয়, আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে তৈরি দ্বীপপুঞ্জে প্রায় ২০ শতাংশ প্রজাতির বাসস্থান। অনেকেরই হয় তো জানা নেই, আগ্নেয়গিরির তাপ আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহও করতে পারে।
সূর্য
পৃথিবী থেকে প্রায় ৯৩ মিলিয়ন মাইল দূরে সূর্যের অবস্থান। সূর্যের রশ্মি প্রায় আট মিনিটের মধ্যে পৃথিবীতে এসে পৌঁছয়। পৃথিবীর প্রতিটি অংশেই প্রায় সমপরিমাণ সূর্যরশ্মি এসে পড়ে। সূর্য একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে রয়েছে। বছরের প্রথমার্ধে উত্তর গোলার্ধের বিভিন্ন জায়গা অন্ধকার থাকে। তাই প্রবল ঠান্ডা নেমে আসে। তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে উত্তর গোলার্ধে সূর্যের মুখ দেখা যায়। সূর্যালোক প্রাণীদের বাঁচতে সাহায্য করে। সূর্যের রশ্মি উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে মরুভূমি অর্থাৎ সর্বত্র বসবাসের উপযোগী করে তুলতে সাহায্য করে।
আবহাওয়া
আমরা এমন এক প্রাকৃতিক পরিবেশে বাস করি যেখানে বৃষ্টির জন্য মেঘ ও হাওয়া বাতাস বিশ্বজুড়ে প্রবাহিত হয়। আমরা সবাই জানি, আবহাওয়া প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হতে থাকে। তোমাদের আরও জানলে ভালো লাগবে, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৩ মিলিয়ন টন জল সমুদ্র থেকে বাষ্পীভূত হয় এবং তা মেঘে পরিণত হয়। পৃথিবীর নিজস্ব গতির জন্য মেঘগুলি দিক পরিবর্তন করে। তাই কোনও কোনও জায়গায় বেশি আবার কোনও কোনও জায়গায় কম বা মাঝারি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়। আবহাওয়া পৃথিবীর সর্বত্র পরিষ্কার জলের সরবরাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর সেজন্যই এই পৃথিবী বিভিন্ন প্রাণীর বাসস্থান হয়ে উঠতে পেরেছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা দশ হাজার বছরে খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি। এ সব কারণই জলবায়ুকে স্থিতিশীল করে তুলেছে।
মহাসাগর
সমুদ্রে বসবাসকারী প্রাণীদের জীবন জলের গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। শুনলে অবাক লাগবে, স্রোতে ভেসে যাওয়া সমুদ্রের একটি ফোঁটা জল নাকি আবার একই জায়গায় ফিরে আসতে প্রায় এক হাজার বছর সময় লাগে। আসলে যেখানে স্রোত থাকে, সেখানেই জীবনের অস্তিত্ব থাকে। মহাসাগরে হাজার হাজার প্রজাতির প্রাণ আছে যেগুলি পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক অক্সিজেন উৎপাদন করে। শুধু তাই নয়, কার্বনও শোষণ করে। এগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের খুব সাহায্য করে।