পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
মন খারাপের সরস্বতী পুজো
সরস্বতী পুজো আমার কাছে খুব ভালো লাগার একটি দিন। যদিও এবার সব বছর থেকে আলাদা। বাড়ি থেকে বেরনো, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা, খেলা-ধুলো সবই বন্ধ। এমনি সরস্বতী পুজোয় আমি খুব মজা করি। গত বছর স্কুলের নাচের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এবছর আর স্কুলে যাওয়া হবে না। তবে এবারও বাড়িতে পুজো হবে। পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। বাবা বলেছেন, আজই কুমারটুলি থেকে সরস্বতী ঠাকুর নিয়ে আসবেন। এবার বাবা একাই মণ্ডপ সাজাবেন। কারণ পুজোর পরের দিন অঙ্ক পরীক্ষা। তাই পড়াশুনা করব। আমার একটা হলুদ শাড়ি আছে। এবার পুজো শুরু সকাল সাড়ে ৭টায়। ভোরে উঠে তৈরি হতে হবে। মা শাড়ি পরিয়ে দিলে আমি মণ্ডপে জোগাড় করব, অঞ্জলি দেব। প্রসাদও খাব। এবছর আর স্কুল বা অন্য কোথাও পুজো দেখতে যাওয়া হবে না। এবারের সরস্বতী পুজো সত্যিই খুব মনখারাপের পুজো। মা সরস্বতীর কাছে প্রার্থনা করি, করোনা ভাইরাস যেন তাড়াতাড়ি চলে যায়। আগের মতো যেন স্কুল যাতে পারি। সব কিছু যেন স্বাভাবিক হয়ে যায়।
সন্ধেবেলায় গান বাজনা হবে
দিন সাতেক আগে দোকানে হলুদ শাড়ি ঝুলছে দেখেই মনে পড়ল সরস্বতী পুজো আর কয়েকদিন বাদেই। মুহূর্তে লাফিয়ে উঠলাম আনন্দে! দেবী সরস্বতী বিদ্যার দেবী। মাঘ মাসের পঞ্চমীতে দেবীর পুজো হয়। ছাত্রছাত্রীরা সারা বছর অপেক্ষা করে এই দিনের জন্য। আগে সপ্তাহ খানেক বাকি থেকেই আমরা ঠাকুর নিয়ে আসা, বাজার করা, পাশের স্কুলে নেমন্তন্ন করা, স্কুল সাজানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। এই বছর করোনার প্রভাবে প্রায় এগারো মাস স্কুল যেতে পারিনি। বন্ধুদের সঙ্গেও দেখা হয়নি। তবে হঠাৎ স্কুল খোলার নির্দেশ শুনে সারাদিন শুধু পরিকল্পনা চলছে, কী পরব, কী খাব, কোথায় যাব এসব। আমার স্কুলে পুজো হয় না। তবে বাড়িতে পুজো হয়। পুজোর দিন সকালে হলুদ শাড়ি পরে অঞ্জলি দেওয়া, প্রসাদ ও খিচুড়ি ভোগ খাওয়া, দেদার আড্ডা চলবে। এবার করোনা ভাইরাসের জন্য কোথাও ঘুরতে যাওয়া হবে না। পুজোর দিন বই খাতা মায়ের পায়ে দিয়ে সেদিনের মতো আমাদের পড়ার ছুটি। সন্ধেবেলায় শুরু হবে গান বাজনার আসর। পরদিন সকালে দেবীকে প্রণাম করে আবার বই খাতা নিয়ে পড়তে বসা। আবার সামনের বছরের জন্য দিন গোনা শুরু হয়।
ইউনাইটেড মিশনারি গার্লস হাইস্কুল
এদিন পড়াশোনা বন্ধ
সরস্বতী পুজোর দিনটা আমার ভীষণ ফেভারিট। কারণ একমাত্র ওই দিনই পড়াশোনা করতে হয় না। আমাদের বই-খাতা, হারমোনিয়াম, তবলা— সবকিছু আমরা সরস্বতী ঠাকুরের কাছে রাখি। প্রত্যেক বছর স্কুলের সরস্বতী পুজোতে বন্ধুরা মিলে ভীষণ মজা করি। কিন্তু এবছর করোনার জন্য পুজো হলেও মজা হবে না। আমাদের আবাসনে সরস্বতী পুজো হয়। এখানে আমার অনেক বন্ধু আছে। তাদের সঙ্গে সারাদিন আমি মাঠে খেলতাম, প্রসাদ খেতাম। এবছর আগেরবারের মতো তেমন ভাবে মজা করতে পারব না। তবুও পুজো দেখতে যাব, অঞ্জলি দেব তবে অবশ্যই মাস্ক পরে। সঙ্গে থাকবে স্যানিটাইজার। তবে এবছর যেহেতু মজা করতে পারব না, বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে হইহই করে কাটাতে পারব না, তাই প্ল্যান করেছি বাড়িতে বসে গল্পের বই পড়ব। গল্পের বইগুলো তো আর মা সরস্বতী ঠাকুরের কাছে রাখে না। আচ্ছা, সরস্বতী ঠাকুর কি গল্পের বই পড়ে না? পড়ার বই পড়তে আমার একদম ভালো লাগে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে আমি আমাদের আবাসনের পুজো মণ্ডপে চলে যাব। তারপর সেখানে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যতটুকু মজা করা যায় করব। তারপর বাড়ি ফিরে সারাদিন কম্পিউটারে ফোটো এডিটিং করব আর অনেক গল্পের বই পড়ব।
নারায়ণা স্কুল
আগামী বছর অনেক বেশি আনন্দ করব
সরস্বতী ঠাকুর বিদ্যার দেবী। তাই আমাদের ছাত্রছাত্রীদের কাছে সরস্বতী পুজো প্রাণের পুজো। এই পুজোতে আমরা প্যান্ডেলের সাজসজ্জা, পুজোর সব আয়োজন নিজেদের হাতে করতে পারি। প্রতি বছর স্কুলের দাদারা পুজোর আয়োজন করে। আমি পাশের বাড়িতে গিয়ে পুজোর অঞ্জলি দিয়ে স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ, মজা করতাম। স্কুলে নানারকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে আমরা অংশগ্রহণ করতাম। সন্ধ্যাবেলা দিদির সঙ্গে পাড়ার ক্লাবে পুজোতে গিয়ে মজা করতাম। সব থেকে বড় কথা যে এদিন আমাকে কেউ পড়তে বসতে বলে না সারাদিন শুধু মজা করে কাটাতে পারি। কিন্তু এই বছর তো করোনা পরিস্থিতির জন্য স্কুল বন্ধ। তাই স্কুলের আনন্দ, মজা আর এবছর হবে না। বন্ধুদের সঙ্গেও দেখা হবে না। আমার খুবই মন খারাপ। তাই আমি ঠিক করেছি এবছর মাস্ক পরে, স্যানিটাইজার নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে পাশের বাড়িতে গিয়ে আগে অঞ্জলি দেব। তারপর পাড়ায় যে বন্ধুরা আছে তাদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করব। আর আগামী বছর ডবল আনন্দ করব।
স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল (ইংরেজি মাধ্যম)
সতর্কতা মেনে স্কুলে যাব
করোনা ভাইরাসের জন্য এবার সরস্বতী পুজোর পরিকল্পনা অন্য বছরের থেকে বেশ খানিকটা আলাদা। আগে একাধিক স্কুলে দল বেঁধে ঠাকুর দেখতে যেতাম। অনেক আন্দন হতো। সরস্বতী পুজোর প্রসাদ খাওয়া বা নিজের স্কুলের মণ্ডপে অনেকক্ষণ সময় কাটানো, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কত কি হতো। এবার অবশ্য এইসব আনন্দ থেকে নিজেকে বিরত রাখব। করোনা সংক্রমণের জন্য এবার আর আগের মতো পুজোর আয়োজন ও মণ্ডপসজ্জার কাজে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের বিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজোয় অঞ্জলি দিতে অবশ্যই যাব। তবে কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সবরকম সতর্কতা মেনে স্কুলে যাব। আর মা সরস্বতীর কাছে প্রার্থনা করব যাতে এই করোনা পরিস্থিতি সত্ত্বেও আমার মতো সকল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ভালোভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
উত্তরপাড়া রাষ্ট্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়
দিদিমণির বাড়িতে যাব
সরস্বতী পুজো কথাটা শুনলে প্রথমেই আমার মনে পড়ে শাড়ি পরার কথা। আমার কাছে সরস্বতী পুজোর সবচেয়ে বড় আনন্দ ওটাই। শাড়ি পরে স্কুলে যাওয়া, বন্ধুদের এক একজনকে এক একরকম শাড়িতে দেখা, তাদের সঙ্গে গল্প করা, একসঙ্গে স্কুলে খাওয়া-দাওয়া করা আমার খুব ভালো লাগে। পুজোর দিন ভোরে পুজোর জোগাড় করা, কুল খাওয়া এসবের আলাদা মজা আছে। স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্রীদের ওপর পুজোর দায়িত্ব থাকে। এবার সেই দায়িত্ব পালনের সৌভাগ্য হল না। কারণ, স্কুলে যেতে পারব না। সরস্বতী পুজোয় আমি প্রত্যেক বছর মায়ের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরই। প্রতিবারের মতো এবার বাড়িতে পুজো হবে। যেহেতু স্কুলে যাওয়া যাবে না, তাই ভেবেছি যাঁর কাছে আর্টস গ্রুপ পড়ি, সেই দিদিমণির বাড়িতে যাব, আনন্দ করব।
শ্রীরামপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
সব নিয়ম মেনে আনন্দ করব
বাঙালির ছাত্রজীবনে সবচেয়ে আনন্দ উৎসব সরস্বতী পুজো। সরস্বতী পুজোর কথা মাথায় এলেই সবার আগে মনে পড়ে শাড়ি, পাঞ্জাবি। প্রতি বছর সরস্বতী পুজোয় সবার মতো আমিও ভোরবেলা স্নান করে শাড়ি পরে মায়ের কাছে অঞ্জলি দিই। তারপর একসঙ্গে বন্ধুরা ও মা-বাবা মিলে স্কুলে স্কুলে ঠাকুর দেখতে যেতাম। সারাদিনটা বেশ আনন্দে কাটত। কিন্তু এবার সরস্বতী পুজোটা যেন একটু অন্যরকমের। আমরা সকলেই জানি বিশ্বব্যাপী মারণ ভাইরাস আমাদের জীবনে এনেছে এক ব্যাপক ভয়াবহতা। এই অদৃশ্য ভাইরাস লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। প্রতি মুহূর্তে আমাদের মেনে চলতে হচ্ছে নানারকম সতর্কবার্তা। তাই আমি ঠিক করেছি সরস্বতী পুজোতেও সব নিয়ম মেনে চলব। শাড়ি পরা, সাজগোজ প্রতি বছরের মতো থাকবে। তবে অবশ্যই মাস্ক, স্যানিটাজার আর দূরত্ব বিধি মেনে পুজো আনন্দ করব।
বাগবাজার মাল্টিপারপাস গার্লস হাই স্কুল
অনুমতি পেলে স্কুলে যাব
এবার স্কুলের সরস্বতী পুজোয় আমাদের আনন্দ নেই। মিশন আশ্রমে পুজো হবে হয়তো, কিন্তু অন্যবারের মতো হই চই করতে পারব না। অনেক বড় সরস্বতী ঠাকুর হয় স্কুলে। আমরা পুজোর দিন ধুতি বা পাজামার সঙ্গে পাঞ্জাবি পরি। সকাল থেকে কিছু না খেয়ে থাকি। পুষ্পাঞ্জলি দিই। প্রসাদ খাই। পড়াশোনার ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। এদিন স্কুল আর মাঠ জুড়ে আমরা ঘুরে বেড়াই। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করি। প্রতিবার পুজোর এইসময় স্কুলে বার্ষিক অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণ ও প্রদর্শনীর আয়োজন হয়। বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, সাহিত্য সব বিষয়েই অনেক কিছু সাজানো হয়। আমরা সেগুলো সবাইকে বুঝিয়ে বলি। অনেকে ছবি তুলে নিয়ে যান। এবার এসব কিছুই হবে না। আবার হলেও হয়তো অনেক সতর্কতা নিয়ে হবে। স্কুল অনুমতি দিলে আমি ঠাকুর দেখতে যাব। এবছর আমার প্রার্থনা হবে অন্যরকম। আমি আবার আমাদের সেই চেনা স্কুলটা ফিরে পেতে চাই।