তোমাদের জন্য চলছে জনপ্রিয় বিভাগ মার্কশিট। এই বিভাগে থাকছে পরীক্ষায় নম্বর বাড়ানোর সুলুক সন্ধান। এবারের বিষয় নবম শ্রেণীর ইতিহাস। পরামর্শে বিধাননগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষিকা রীনা বন্দ্যোপাধ্যায়।

স্নেহের ছাত্রছাত্রীরা, কেমন আছো? দীর্ঘদিন স্কুলে না যেতে পারার জন্য নিশ্চয়ই তোমাদের খুব মন খারাপ। তবে তার মধ্যেও তো ভালো খবর, এখন তোমরা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে অনেকটা পড়া তৈরি করে নিতে পারছ। তাই স্কুল কবে খুলবে তা নিয়ে চিন্তিত না হয়ে আজ বরং এসো আমরা ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় ‘শিল্পবিপ্লব, উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ’ ভালো করে বুঝে নিই।
নবম শ্রেণীর ইতিহাস হল আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাবলি। প্রথম অধ্যায় ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শুরু করে তোমরা ক্রমশ বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারছ। আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা শিল্পবিপ্লব। বিভিন্ন কারণে ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব হয়। পরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শিল্পবিপ্লবের ফলে দ্রুত অনেক বেশি পরিমাণ পণ্যসামগ্রীর উৎপাদন শুরু হয়। ফলে উদ্বৃত্ত পণ্য বিক্রির জন্য বাজারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাই নিজের দেশের চাহিদা পূরণের পর উদ্বৃত্ত পণ্য বিক্রির বাজার ধরতে ক্রমশ অনুন্নত দেশগুলোতে উপনিবেশ স্থাপন শুরু হয়। এই ভাবেই ঔপনিবেশিকতাবাদের জন্ম। শিল্পবিপ্লবের আর একটি প্রভাব— নতুন নতুন শহরের বিকাশ, কলকারখানার উৎপত্তি, মালিক ও শ্রমিক শ্রেণীর দ্বন্দ্ব। এর থেকেই ধীরে ধীরে সমাজতন্ত্রবাদের সূচনা, যার সুস্পষ্ট রূপ প্রকাশ পায় মার্কস ও এঙ্গেলসের সাম্যবাদী ধারণায়। অনুন্নত আফ্রিকার বিভিন্ন রাষ্ট্রে ও চীনে বৃহৎ শক্তিবর্গ ধীরে ধীরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য কায়েম করতে শুরু করে। এভাবে ঔপনিবেশিকতাবাদের থেকে জন্ম হয় সাম্রাজ্যবাদের, যার চূড়ান্ত পরিণতি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। সুতরাং দেখো, শিল্পবিপ্লব দিয়ে যে ইতিহাসের শুরু, তার চরম পরিণতি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। প্রতিটি ঘটনা একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। তোমরা পাঠ্যবই ভালো করে পড়লে পুরো বিষয়টা সহজেই অনুধাবন করতে পারবে।
এবার আমরা বিভিন্ন মানের প্রশ্নের ধরন নিয়ে আলোচনা করব। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষায় এক নম্বরের এমসিকিউ, অতি সংক্ষিপ্ত, দু’ নম্বরের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, চার নম্বরের টীকা বা বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন ও আট নম্বরের রচনাধর্মী প্রশ্ন আসে। একটা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উদাহরণ দিই—শিল্পবিপ্লব কাকে বলে? এই প্রশ্নের উত্তরে আগে লিখবে বিপ্লব কাকে বলে। কোনও ক্ষেত্রে দ্রুত ও সুদূরপ্রসারী আমূল পরিবর্তনকে বলা হয় বিপ্লব। এইরূপ পরিবর্তন যখন শিল্পের ক্ষেত্রে ঘটছে তখন তাকে শিল্পবিপ্লব বলা যায়। এর সঙ্গে এটাও উল্লেখ করতে হবে, ১৮৩৭ সালে সর্বপ্রথম অগাস্তি ব্ল্যাঙকি শিল্পবিপ্লব শব্দটি ব্যবহার করেন।
চার নম্বরের প্রশ্নের ক্ষেত্রে বলা হয় সাত-আটটি বাক্যের মধ্যে উত্তর লিখতে। এই বিভাগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল— ইংল্যান্ডে কেন প্রথম শিল্পবিপ্লব হয়েছিল? পুঁজিবাদ বলতে কী বোঝায়? শিল্পবিপ্লব কীভাবে উপনিবেশবাদের জন্ম দেয়? প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ কী? ইত্যাদি। যেমন ধরো, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে রেলপথের বিস্তার। এক্ষেত্রে রেলপথ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য দিয়ে শুরু করে কবে কোথায় প্রথম রেলপথ প্রবর্তিত হয়? কীভাবে তার সাহায্যে সাফল্য আসে? ইংল্যান্ডের উপনিবেশ হিসাবে ভারতে রেলপথের প্রবর্তন ও তার লক্ষ্য— এই সব পয়েন্টগুলোই আসবে, তবে খুব সংক্ষেপে।
রচনাধর্মী প্রশ্নের মান আট। এখানে নম্বর বিভাজনের প্রশ্ন থাকে (৫+৩, ৪+৪) আবার পূর্ণমানের প্রশ্নও থাকে। ১৫ থেকে ১৬টি বাক্যে উত্তর লিখবে। উত্তরের শুরুতেই একটা সূচনা থাকবে, তারপর পয়েন্ট অনুযায়ী উত্তর লিখবে। শেষে উপসংহার থাকবে। যেমন ধরো প্রশ্ন এল— সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দ্বারা চীন ব্যবচ্ছেদের ওপর আলোকপাত করো। এক্ষেত্রে সূচনায় ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে কনফুসীয় আদর্শে বিশ্বাসী প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ চীন কীভাবে নিজেকে স্বতন্ত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্র হিসাবে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল তার উল্লেখ করতে হবে। প্রথম অহিফেন যুদ্ধ, নানকিং-এর সন্ধি উল্লেখ করে সূচনা শেষ হবে। তারপর পয়েন্ট করে বিভিন্ন রাষ্ট্র কীভাবে চীনের বিভিন্ন অঞ্চল পরোক্ষভাবে দখল করে, কী কী বৈষম্যমূলক সন্ধি স্বাক্ষর করে ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে। উপসংহারে হ্যারল্ড ভিনাকের উক্তি — ‘cutting the Chinese melon’ উল্লেখ করে জন হে’র মুক্তদ্বার নীতির ও প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে পারলে ভালো। চীনে পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত দু’ একটা প্রতিবাদী আন্দোলনের উল্লেখ করে শেষ করবে।
এমসিকিউ এবং অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের ক্ষেত্রে খুব ভালো করে পাঠ্যবই পড়বে। এর সঙ্গে আরও দু’ একটা অন্য লেখকের সহায়ক বইয়েরও সাহায্য নেবে। যত বেশি পড়বে, তত ভালো সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।
এই অধ্যায় থেকে মানচিত্রে স্থান চিহ্নিতকরণ অভ্যাস করো। ইউরোপ, এশিয়ার আউটলাইন রাজনৈতিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বই না দেখে অভ্যাস করবে। এই অধ্যায় যখনই পড়বে সবসময়ই মানচিত্রের বই সঙ্গে রাখবে। পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোচ্য স্থানের ভৌগোলিক অবস্থানটা দেখে নিলে সহজেই সেটা মনে থাকবে।
সবশেষে বলি, এই অধ্যায়ে অনেক সালের উল্লেখ আছে। বিশেষ করে শিল্পবিপ্লবের সময়ে আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতি কে কবে আবিষ্কার করেন? প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কালের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাল তারিখ আছে। এগুলো একটা খাতায় লিখে রাখবে। আর চেষ্টা করবে বর্তমান সময় থেকে ওই নির্দিষ্ট ঘটনা কত আগের সেটা মনে রাখতে।
ইতিহাস যেহেতু অতীতকাল থেকে সংগঠিত ধারাবাহিক ঘটনার বিবরণ তাই সবসময়ই বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে অতীতকে দেখার চেষ্টা করবে। তবেই বিষয়টা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
আশা করি, সবাই এই অধ্যায়টি ভালো মতো বুঝতে পেরেছ। সবাই ভালো থেকো।