বিদ্যার্থীদের কোনও বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় ভালো ফল করবে। বিবাহ প্রার্থীদের এখন ভালো সময়। ভাই ও বোনদের ... বিশদ
‘মৃতদেহকে অবিকৃত অবস্থায় রাখার জন্য ঈজিপ্সীয়রা যে সব মশলা ব্যবহার করত তার মধ্যে ন্যাট্রন, কস্টিক সোডা, বিটুমেন, বলসাম ও মধুর কথা জানা যায়। কিন্তু এ ছাড়াও এমন কোনও জিনিস ঈজিপ্সীয়রা ব্যবহার করত যার কোনও হদিশ পরীক্ষা করেও পাওয়া যায়নি।’...
‘বাক্সের ডালা ও কফিনের ডালা খুলে আমি আর একবার ব্যান্ডেজ পরিবৃত মামিটার দিকে চেয়ে দেখলাম।’...
‘মাথার ওপর থেকে ব্যান্ডেজটা খুলতে শুরু করে প্রথম কপাল এবং তারপরে মুখের বাকি অংশটা বেরতে শুরু করল। ঠোঁটের কাছটা পর্যন্ত যখন বেরিয়েছে তখনই যেন মুখটা কেমন চেনা চেনা বলে মনে হল।...
‘তার পরের ঘটনাটি ঠিক পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করার সাধ্য আমার নেই। কারণ সমস্ত জিনিসটা ঘটে গেল একটা বৈদ্যুতিক মুহূর্তের মধ্যে! লোকটাও আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে যাবে, আর ঠিক সেই মুহূর্তে একটা প্রচণ্ড ফ্যাঁস শব্দ করে নিউটন কোত্থেকে জানি এসে সোজা লাফিয়ে পড়ল লোকটার মুখের উপর!’...
চেনা চেনা লাগছে গল্পটা? ঠিক ধরেছ তোমরা। অংশটি সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও ঈজিপ্সীয় আতঙ্ক’ গল্প থেকেই নেওয়া। প্রশ্ন হল হঠাৎ করে মমি নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করলাম কেন? মমি কি আর যেমন তেমন জিনিস? মিশরের পিরামিডে থাকে মমি। ঠিক কথা। তবে, যদি হঠাৎ করে জানতে পার মমি রয়েছে তোমার ধরা ছোঁওয়ার মধ্যে? আর শুধু মমি কেন। চাইলে প্রফেসর শঙ্কুর মতো তোমরাও সময়ের পিছনে ভ্রমণ করে দেখে আসতে পার অশোকের রাজ্যের পশুশালা (প্রোফেসর রন্ডির টাইম মেশিন)! মনে আছে তো গল্পটা? টাইম মেশিনে ঢুকলেই চোখের সামনে পর্দার মধ্যে ভেসে উঠত পুরনো যুগ? সত্যি বলতে কী, তোমাদের হাতের কাছেও রয়েছে তেমনই এক টাইম মেশিন! ওই টাইম মেশিনের সাহায্যে তুমি দেখে আসতে পার কেমন ছিলেন গৌতম বুদ্ধ, কেমন ছিল গ্রিক দেশের সৈন্যরা? কোনও কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়। চুরির আচারের মতো টক, বর্ধমানের সীতাভোগের মতো মিষ্টি, চপের মতো ঝাল আর দিনের আলোর মতো সত্যি কথা বলছি। বিশ্বাস না হলে নিজের হাতে চিমটি কেটে দেখে নাও! চিমটি কাটতে না ইচ্ছে হলে বাড়িতে রাখা টাইম মেশিনটা অন করে গুগলে সার্চ করতে পার। ভাবছ পাগল হয়ে গেলাম? মোটেই না। ঠিকই বুঝেছ। আরে তোমার হাতের মোবাইলটাই আসলে টাইম মেশিন। কেন মোবাইলকে টাইম মেশিন বলছি? খুব সোজা। সেই উত্তর জানতে হলে গুগলে টাইপ করতে হবে। কী টাইপ করবে? কী আবার, টুকটুক করে টাইপ করো indianmuseumkolkata.org। তাহলেই চোখের পলক পড়তে না পড়তে পৌঁছে যাবে কলকাতার জাদুঘরের ওয়েবসাইটে! ওই ওয়েবসাইটই তো জাদুঘরে ঢোকার মূল তোরণ! তোরণ বলে মনে পড়ল। তোমরা নিশ্চয়ই মধ্যপ্রদেশের ভারহুত স্তুপের নাম শুনেছ? সেই স্তুপের প্রবেশপথে বেলেপাথরের তৈরি যে তোরণ ছিল তা রাখা আছে কলকাতা জাদুঘরে। অপরূপ সেই তোরণে রয়েছে অসাধারণ কারুকার্য। যক্ষমূর্তি, নাগমূর্তি, কল্পনা আর বাস্তব মিলিয়ে খোদাই করা হয়েছে কতশত প্রাণীর অবয়ব! তোরণটি রাখা আছে কলকাতার জাদুঘরের ভারহুত গ্যালারিতে। এমনকী বুদ্ধগয়া থেকে আনা বেলেপাথরের তৈরি কারুকার্যে ভরা কয়েকশো বছরের পুরনো রেলিঙও এনে রাখা হয়েছে সেখানে। প্রশ্ন হল ভারহুত গ্যালারি ঘুরবে কেমন করে? খুব সোজা। ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের সাইটে ঢোকার পরেই অ্যাবাউট অপশনে গেলেই দেখা যাবে ভার্চুয়াল ট্যুর অপশন। ওখানে টাচ বা ক্লিক করলেই খুলে যাবে জাদুঘরের একের পর এক গ্যালারি। তারপর শুধু ‘টাচ’ আর ‘ক্লিক’ করে এগিয়ে-পিছিয়ে চোখের সামনে এনে ফেলা যাবে কয়েক হাজার বছর আগের ইতিহাসকে। ইচ্ছে হলেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নেওয়া যাবে পুরাকালের রুপোর তৈরি বাসনপত্র, প্রতিদিনের ব্যবহারের জিনিসের উপর ধাতুর তারের নকশা, কাঠ খোদাই ও বার্নিশ করে গড়ে তোলা মূর্তি ও কারুকাজ। এছাড়া নজরে আসবে কয়েকশো বছরের পুরনো পাথরের তৈরি বিভিন্ন ভঙ্গিমায় বুদ্ধমূর্তি। রয়েছে দেবী পার্বতী, বিষ্ণুদেবের অসাধারণ সব মূর্তি! তবে শুধু ধাতু ও পাথরের তৈরি কারুকার্য নয়, জাদুঘরে রয়েছে বিরল ধরনের গাছগাছালি, লুপ্ত হয়ে যাওয়া পাখি ও প্রাণীর স্টাফ করা শরীর, রেপ্লিকা। রয়েছে ডাইনোসরের হাড়ের কাঠামো। আশ্চর্য ধরনের পোকাদের জন্য আছে সম্পূর্ণ পৃথক গ্যালারি। রয়েছে দেশবিদেশের বিভিন্ন জনজাতির ব্যবহার করা মুখোশের জন্য গ্যালারি। সেখানে দেখা মিলবে ধাতুর তৈরি মুখোশেরও! সেগুলির দর্শনও কম রোমাঞ্চকর নয়! জাদুঘরের ওয়েবসাইটেই রয়েছে গ্যালারি অপশন। সেখান থেকে চলে যেতে হবে বার্ড গ্যালারিতে। অদ্ভুত দর্শন সব পাখির দেহ রাখা রয়েছে সেখানে! তবে হ্যাঁ। খুব সতর্ক হয়ে ঢুকতে হবে ঈজিপ্ট গ্যালারিতে! কারণ ওখানেই শায়িত রয়েছে চার হাজার বছর আগের মমি! বলা যায় না, মমি দেখার সময়েই তোমার চোখ জানলায় চলে গেল, আর তখনই দেখলে মোবাইল স্ক্রিনে যে মমির ছবি দেখছ, সেইরকম একটা লোক জানলায় দাঁড়িয়ে আছে! ঠিক যেন প্রফেসর শঙ্কুর গল্প! কী করবে তখন?