পঠন-পাঠনে আগ্রহ বাড়লেও মন চঞ্চল থাকবে। কোনও হিতৈষী দ্বারা উপকৃত হবার সম্ভাবনা। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
ছোট্ট বন্ধুরা। আর দু’দিন পরেই তো রথযাত্রা। প্রতি বছর এই রথযাত্রা উপলক্ষে তোমরা কত আনন্দ করো তাই না? ছোট ছোট কাঠের রথ সুন্দর করে সাজিয়ে সেই রথগুলি টানতে টানতে বন্ধুদের নিয়ে পাড়াময় কী আনন্দেই না ঘুরে বেড়াও তোমরা! রথে জগন্নাথদেব, বলরাম এবং সুভদ্রার ছবি। ছোট স্টিলের থালায় বাতাসা অথবা নকুলদানা নিবেদন করা হয়। তোমরা রথ টেনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহাপ্রভুর প্রসাদ কী খুশি হয়েই না সকলকে দাও। তোমাদের হাসিখুশি, কচিকাঁচা মুখগুলি দেখে বড়দেরও খুব আনন্দ হয় তখন। তারপর তো রথের মেলা যাওয়া আছেই।
জানি তোমাদের মন খারাপ হবে তবুও বলি, এবারে কিন্তু রথ নিয়ে আর বেরিও না। জানোই তো করোনার জীবাণু কীভাবে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। এই মারণ জীবাণুর হাত থেকে বাঁচতে হলে এখন তোমাদের বাইরে যাওয়া মোটেই নিরাপদ নয়। বরং এক কাজ করতে পারো। রথ সাজানোয় তো মানা নেই। এবারেও মনের মতো করে রথ সাজিয়ে বাড়ির ভেতরেই না হয় কয়েকপাক ঘুরিয়ে নিলে। কী বলো?
তোমাদেরই এক ছোট্ট বন্ধুর কথা বলি। ওর নাম রাজদীপ মুখোপাধ্যায়। হাওড়ায় বাড়ি। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। ছোটবেলা থেকে জগন্নাথদেবের প্রতি ভীষণ টান রাজদীপের। ঘরের দেওয়াল জুড়ে জগন্নাথদেবের কত রকমের যে ছবি! ওর মা রাখীদেবীর মুখে শুনেছিলাম, প্রতিদিন দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে মহাপ্রভুর পুজো করে তারপর খেতে বসে রাজদীপ। আবার রাতে মন্ত্র পড়ে মহাপ্রভুর ফটোতে প্রণাম করে শুতে যায়। এতটুকু ছেলের জগন্নাথদেবের ওপর এতটা ভক্তি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার! ফি বছর রথযাত্রায় রাখী সপরিবারে পুরীতে যান। রথের রশি একবার ছুঁতে না পারলে রাজদীপের কিছুই ভালো লাগে না। এবারে পুরীর রথযাত্র হচ্ছে না। তাই খুব মন খারাপ।
পাশে চ্যাটার্জিদের বাড়িতে রথের দিন উৎসব। জগন্নাথদেবের পুজো। টানা উল্টোরথ পর্যন্ত। তবে করোনা আবহে সবরকম সুরক্ষাবিধি মেনেই এই উৎসব এবার ছোট করে হবে। কিন্তু সেখানেও রাজদীপ যেতে পারবে কি না জানে না। তবে তার মায়ের অনুমতি নিয়ে ঘরেই রথ সাজিয়ে টানবে। মায়ের কথার কখনও অবাধ্য হয় না রাজদীপ।
চৈতন্যদেবের কথা তোমরা সকলেই জানো। নবরূপী অবতার তিনি। মায়ের আদেশ মাথা পেতে মেনে নিয়েছেন। শচীমাতার ইচ্ছায় বৃন্দাবন না গিয়ে নীলাচলে অর্থাৎ পুরীতে জগন্নাথদেবের আশ্রয়ে অতিবাহিত করেন সন্ন্যাস জীবন। প্রতিবছর রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করতেন চৈতন্যদেব। রথের আগে নাচতে নাচতে যেতেন। ভাবে বিভোর। মায়ের আজ্ঞা শিরোধার্য করে শুধু রথযাত্রায় যোগদান নয়, তাঁর অলৌকিক জীবনে নানান কর্ম সম্পাদন করে গিয়েছেন।
মায়েরা সবসময় সন্তানের মঙ্গল চান। তোমরাও মায়ের কথা শুনে চলবে কেমন। তাতে জগন্নাথদেবের আশীর্বাদ তোমাদের ওপর বর্ষিত হবে। এবারের রথযাত্রায় তোমরা ঘরে থেকে এই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করবে, এমনই হোক তোমাদের ছোট্ট অঙ্গীকার।