বিদ্যায় সাফল্যও হতাশা দুই বর্তমান। নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কর্মপ্রার্থীদের শুভ যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রের ... বিশদ
করোনা ভাইরাসের কোপে লম্বা লকডাউনে গৃহবন্দী সব্বাই। তবে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকলেও এখন জোরকদমে চলছে অনলাইন ক্লাস। কারণ, সিলেবাস করতে হবে তো! স্কুলের মাঠে খেলাধুলো, দৌড়ঝাঁপ, পিটির ক্লাসও বন্ধ। মাঠে শেষ কবে তোমরা ঘাম ঝরানো দৌড় দিয়েছিলে তাও হয়তো কারও মনে নেই। আবার কবে তোমরা আগের মতো নিশ্চিন্তে হাসিমুখে স্কুলে যাবে, ঘুরে বেড়াবে এই প্রশ্নের উত্তরও মুহূর্তে অধরা। সবমিলিয়ে এখন তোমরা কিছুটা হলেও শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত।
তবে চিন্তা কোরো না। সমস্যার সমাধানও রয়েছে তোমাদের হাতে। তোমরা চাইলেই বাড়িতে থেকেও ঘাম ঝরিয়ে চনমনে ও চাপমুক্ত হয়ে থাকতে পার। কেমন করে? তেমন কষ্টের কিছু নয়, তিনটি যোগাসন ও প্রাণায়াম নিয়মিত করলেই হবে বাজিমাত। হয়তো তোমরা জানো না, উদ্বেগ, হতাশা, অবসাদ কাটিয়ে মনকে শান্ত করতে ও মনঃসংযোগ বাড়াতে যোগাসন ও প্রাণায়ামের কোনও বিকল্প নেই। অশান্ত মনকে শান্ত করতে, মনঃসংযোগ ও একাগ্রতা বাড়াতে, মস্তিষ্কের অবসাদ দূর করতে, মানসিক চাপ কমাতে, দুশ্চিন্তামুক্ত হতে, স্মরণশক্তিহীনতায়, শরীর সতেজ রাখতে যোগাসন ও প্রাণায়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আর দেরি না করে বড়দের সাহায্য নিয়ে আজই শুরু করে দাও তোমাদের এই নতুন মিশন।
ধনুরাসন
পদ্ধতি : উপুড় হয়ে শুয়ে পা দুটি হাঁটুর কাছ থেকে ভাঁজ করে গোড়ালি দুটি জোড়াভাবে নিতম্বের কাছে নিয়ে এসো। এবার দু'হাত দিয়ে পায়ের গোছ দুটো বেশ শক্ত করে ধরে বুক এবং ঊরু মাটি থেকে ওপরের দিকে টেনে তোলো। তলপেট মাটিতে ঠেকে থাকবে। দৃষ্টি সামনে ও ঘাড় পেছন দিকে হেলে থাকবে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে মনে মনে ১০ থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে ৩০ গুণে তিনবার অভ্যেস করো। প্রতিবারের পর উপুড় হয়ে শুয়ে শবাসনে বিশ্রাম নাও।
উপকারিতা : কোষ্ঠবদ্ধতা, ক্ষুধামান্দ্য, অম্বল, পিঠে ও কোমরে ব্যথা, পেটে বায়ু, কোলাইটিস হাঁপানি ও পেটে চর্বি কমাতে খুব উপকারী।
অর্ধকূর্মাসন
পদ্ধতি : হাঁটু গেড়ে পায়ের পাতার উপর বস। হাঁটু দুটি জোড়া থাকবে। এবার হাত দুটি সোজা করে ওপরে তুলে নমস্কারের ভঙ্গিতে জোড় কর। হাত কানের সঙ্গে ঠেকে থাকবে। এরপর সামনে ঝুঁকে প্রণাম কর। পেট ও বুক ঊরুর সঙ্গে এবং কপাল মাটিতে লেগে থাকবে। খেয়াল রেখ, নিতম্ব যেন গোড়ালির সঙ্গে লেগে থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে মনে মনে কুড়ি থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে ৩০ গুনতে থাকো। তারপর হাত ওই অবস্থায় রেখে ওঠো। এবার শবাসনে বিশ্রাম নাও। এইভাবে তিনবার অভ্যেস কর।
উপকারিতা : অজীর্ণ, অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের অসুখ, আমাশয়, ডায়াবেটিস, ক্ষুধামান্দ্য, বাত, হাঁপানি, লিভারের দোষ ও কোলাইটিসে খুব উপকারী।
উৎকটাসন
পদ্ধতি : প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়াও। দু' হাত সোজা করে সামনের দিকে বাড়িয়ে দাও। এবার মেরুদণ্ড সোজা রেখে চেয়ারে বসার মতো আস্তে আস্তে বস। নজর রেখো, বুক যেন সামনে ঝুঁকে না যায়। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে মনে মনে দশ গুনতে থাকো। এভাবে আস্তে আস্তে সময় বাড়াও। শেষে শবাসনে বিশ্রাম নাও। এভাবে তিনবার অভ্যাস করো।
উপকারিতা : হাঁটুর ব্যথা, পায়ের কব্জির ব্যথা, ঊরুর পেশিতে ব্যথায় বেশ উপকারী। হাত ও পায়ের পেশির দুর্বলতা, ঊর্ধ্ব ও নিম্নাঙ্গে সচলতা বাড়াতে, ভেরিকোজ ভেইন, পায়ের পেশির ক্র্যেম্পস প্রভৃতি সারাতে সাহায্য করে।
অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম
পদ্ধতি: পদ্মাসনে বা সুখাসনে মেরুদণ্ড সোজা করে বসে সূর্যভেদ প্রাণায়ামের মতো ডান নাসাপথে ছয় সেকেন্ড শ্বাস নিতে হবে। তারপর সঙ্গে সঙ্গে বাম নাসাপথে সমান সময় শ্বাস ত্যাগ ও বাম নাসাপথে ছয় সেকেন্ড ধরে বায়ু গ্রহণ করতে হবে। সব শেষে ডান নাসাপথে ছয় সেকেন্ড ধরে বায়ু ত্যাগ করতে হবে। এই হল একবার। এভাবে পর পর ছয়বার অভ্যাস কর।
উপকারিতা: একাগ্রতার অভাব, মস্তিষ্কের অবসাদ, ক্লান্তি, দুর্বলতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, স্মরণশক্তি হীনতা ও অস্থিরতা দূর করতে এটি বিশেষভাবে সহায়তা করে।
উজ্জয়ী প্রাণায়াম
পদ্ধতি: প্রথমে পদ্মাসনে বা সুখাসনে বাবু হয়ে বস। তারপর চোখ বন্ধ করো। নাক দিয়ে লম্বা শ্বাস নাও ও লম্বা শ্বাস ছাড়ো। এভাবে ১৫ থেকে ২০ বার কর নিয়ম করো।
উপকারিতা: মনোনিবেশ করার ক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে। একাগ্রতার অভাব, মস্তিষ্কের অবসাদ, ক্লান্তি, দুর্বলতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, স্মরণশক্তিহীনতা ও অস্থিরতা দূর করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
শীতলী প্রাণায়াম
পদ্ধতি: আমরা নাক, মুখ ও গলা দিয়ে শ্বাস নিতে পারি। ‘স্বা’ বা ‘আ’ শব্দ করে শীতলী প্রাণায়াম গলা দিয়ে করতে হয়। গলায় দুটি পর্দা রয়েছে, যাকে স্বরযন্ত্র বা ভোকাল কর্ড বলা হয়। যখন ভোকাল কর্ড বা পর্দা দুটি কাছাকাছি আসে তখন শ্বাসপথ সরু হয়। এই সরু শ্বাসপথে শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে এই ‘স্বা’ বা ‘আ’ শব্দ হয়। এক থেকে ছয় গুনতে যতক্ষণ সময় লাগে ততক্ষণ ‘স্বা’ বা ‘আ’ শব্দে শ্বাস ধীরে ধীরে এবং সহজভাবে নিতে হয়। অনুরূপভাবে ‘স্বা’ বা ‘আ’ শব্দ করে শ্বাস ছাড়তে হয়। ‘স্বা’ বা‘আ’শব্দ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন ঘড় ঘড় শব্দ না হয়। আবার থেমে থেমে শ্বাস নিলেও হবে না।
উপকারিতা : রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি হাই ব্লাডপ্রেসার, দুশ্চিন্তা, স্নায়বিক দুর্বলতা, অবসাদ, ক্লান্তি, একটুতে রেগে যাওয়া, চঞ্চলতা, খিটখিটে মেজাজ প্রভৃতি নিরাময়ে বিশেষ উপকারি।
জেনে রেখো
ঘুম যেন ঠিকমতো হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাতে খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে না ঘুমিয়ে বরং বাড়ি বা ছাদে কিছুক্ষণ হাঁটো। আর এক সঙ্গে বেশি পরিমাণ না খেয়ে, অল্প অল্প করে বারে বারে খাও। বেশি মশলাদার নয়, হালকা খাবারই খাও। জাঙ্ক ফুড ও ভাজাভুজি না খাওয়াই ভালো। পর্যাপ্ত পরিমাণ জলপান করো।
কারা করবে
পাঁচ বছরের বেশি বয়সি যে কেউ এই যোগাসন ও প্রাণায়ামগুলি নিশ্চিন্তে করতে পারে।
কতক্ষণ করবে
প্রতিটি যোগাসন ও প্রাণায়াম তিন থেকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত করলেই হবে। সকালে, বিকেল, সন্ধে যে কোনও সময়ই করা যায়। খালিপেট ভরাপেটের কোনও ব্যাপার নেই।