কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর ঈর্ষার কারণে সম্মানহানি হবে। ব্যবসায়ীদের আশানুরূপ লাভ না হলেও মন্দ হবে না। দীর্ঘ ... বিশদ
ছোট্টসোনা বন্ধুরা ভাই
‘এক রাজার দুই রাণী; তাহার এক রানি যে রাক্ষসী!...রাক্ষসী রাণীর মনে কাল, রাক্ষসী রাণীর জিভেলাল।... একরাত্রে রাজার হাতিশালে হাতি মরিল, ঘোড়াশালে ঘোড়া মরিল,... এক মস্ত রাক্ষস কুসুমকে ধরিয়া আনিল। রাক্ষসের হাতে কুসুম যেনও কাটির পুতুল!... রাজার সামনে রাক্ষস কুসুমকে খাইতে লাগিল।...’
তারপর? কুসুম কি রাক্ষসের হাত থেকে রক্ষা পেল? তোমরা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গিয়েছ যে এখানে নীলকমল আর লালকমলের গল্প হচ্ছে। ঠাকুরমারঝুলির রূপকথার রাজ্যটা মনে পড়ছে তো? যেখানে রাজা, রানি, রাজকন্যা আর রাক্ষসদের রাজত্ব। একেবারে ছোট্ট বন্ধুদের (৪ কি ৫ বছর বয়স) বলছি, লক ডাউনের জন্য অফুরন্ত ছুটির নিঃসঙ্গ দুপুরে ঠাকুরমার ঝুলির রাজা, রানি আর রাজপুত্রদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারো। কোথা দিয়ে যে সময় কেটে যাবে টেরও পাবে না। ঠাকুরমার ঝুলি ছাড়াও বাংলা আর ইংরেজি সাহিত্যের সাম্রাজ্যে রূপকথার মণি-মাণিক্য ছড়ানো রয়েছে প্রচুর। যেখান থেকে খুশি তা তুলে নিতে পারো। এই যেমন সিন্ডারেলার কথাই ধরো না, সৎ মা আর বোনেদের অত্যাচারে যখন তার হমশিম অবস্থা ঠিক তখনই রাজপুত্রের নেমন্তন্ন পেল সে। কিন্তু রাজপ্রাসাদে যাবে কী করে সিন্ডারেলা?পরীর যাদু কাঠির ছোঁয়ায় সিন্ডারেলার রাজরানি হয়ে ওঠার গল্প পড়েছনাকি তোমরা? না পড়ে থাকলে আর দেরি কর না, তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলো সেই গল্প। সিন্ডারেলা ছাড়াও স্নোহোয়াইট, ফ্রগ প্রিন্স, স্লিপিং বিউটি, রেড রাইডিং হুড, হেইডি... রূপকথার ঝুলিতে গল্পের অভাব নেই। আর অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ক্ষীরের পুতুলের সেই দুয়ো রানি? মুখপোড়া বাঁদর ছানার বুদ্ধিতে যার ভাগ্য খুলে গেল। তার কথা জানো তোমরা? এইসব গল্পের টানে একবার যদি মন মজে যায়, দেখবে তখন কেমন মজা হবে।
রাজা রানির বদলে যদি একটু অন্যরকম গল্পের স্বাদ নিতে চাও তাহলে চলো টুনটুনি পাখির সঙ্গে বাঘ, কুমিরদের রাজ্যে পাড়ি জমানো যাক। টুনটুনি পাখির বুদ্ধির কাছে রাজাও কেমন হার মানে তা দেখতে হবে তো। নাক কাটা রাজাকে দেখে টুনটুনি পাখির ছড়া কেটে গানগুলো শুনলে তো হেসেই খুন হবে তোমরা সবাই। রাজা আর টুনটুনি ছাড়াও চালাক শেয়াল, কুমির, বাঘ মামার রাজত্বে যেতে চাইলে টুনটুনির বইটা একবার পড়ে দেখতেই হবে। লকডাউনের জন্য ছুটি যখন পাওয়াই গেছে তখন আর দেরিনা করে গল্পের বইয়ের রাজ্যে ডুব দাও। শুধুই কি আর গল্প? মন মাতানো ছড়াও আছে প্রচুর। আর আছে দুখানা মহাকাব্য, শিশু সাহিত্য সংসদের ছেলেদের রামায়ান আর মহাভারত। রামায়ানের দশরথ রাজা,কুঁজি মন্থরার দুষ্টু বুদ্ধি, রামের বনবাস, সোনার হরিণ, রাবণের সীতা হরণ, হনুমানের মাথায় করে গন্ধমাদন পাহাড় বয়ে আনা...। অথবা মহাভারতেপাণ্ডব আর কৌরবদের যুদ্ধের গল্প হয়তো তোমরা সবাই মায়ের কাছে শুনেছ, তবু অপূর্ব ছবির সঙ্গে মিলিয়ে নিজে এই বইগুলো পড়লে আরও ভালো লাগবে।
পায়ে পায়ে বাল্য
তোমাদের বয়স যদি এই ৮ থেকে ১২ বছরের মধ্যে হয়, তাহলে বইয়ের জগতটাও বদলে ফেলতে হবে। এবার বরং গগনেন্দ্রনাথের ঠাকুরের ভোঁদড় বাহাদুরটা একবার পড়ে নাও। ভোঁদড়ের বাহাদুরির কথা পড়তে পড়তে মুগ্ধ আর চমৎকৃত হবে একইসঙ্গে। পাগলা দাশুর নানারকম কাণ্ড কারখানার কথা জানা আছে কি? নাহলে সুকুমার রায়ের পাগলা দাশু বইটা পড়ে নিয়ো কিন্তু। পাশাপাশি হ য ব র ল আর আবোল তাবোল পড়তেও ভুলো না যেন। নাহলে কাতুকুতু বুড়োর কথা জানবে কীকরে? কী করেই বা বুঝবে হাঁস আর সজারু কেমন করে হাঁসজারু হয়ে গেল। এইসব পড়ার পর যদি মনে একটু রহস্যের গন্ধ লাগে তাহলে লীলা মজুমদারের পদি পিসির বর্মি বাক্সটা হাতিয়ে দেখো। ইংরেজি বইয়ের মধ্যেও রহস্যের প্রচুর খোরাক পাবে। এনিড ব্লাইটনের ফেমাস ফাইভের কথাই ধরো না, পাঁচ ভাইবোন মিলে কতই যে অ্যাডভেঞ্চার করে বেড়ায়তা পড়তে সুরু করলে আর ছাড়তেই পারবে না। এনিড ব্লাইটনের আরও রহস্যের গন্ধ মাখানো গল্প আছে। সিক্রেট সেভেনের সাত বন্ধুর অ্যাডভেঞ্চার। সেও দারুণ রোমহর্ষক। এছাড়া এনিড ব্লাইটনের স্কুলের গল্পগুলোও দারুণ ভালো। মেলরি টাওয়ার্স, সেন্ট ক্লেয়ারস ইত্যাদিতে পাবে স্কুলের নানা রকম ঘটনা। তোমাদের মতো ছাত্রদের পড়াশোনার পাশাপাশি বোর্ডিং স্কুলে থাকার গল্প। মনে হবে এক ছুটে সেইসব স্কুলে চলে যাই। সেখানে মধ্য রাতে পিকনিক হয়, বাবা মায়ের বকুনির ভয় থাকে না। সে যেন এক সব পেয়েছির দেশ। তবে শুধুই এনিড ব্লাইটনের গল্প পড়লে চলবে না। পাশাপাশি ইংরেজি ক্লাসিকগুলোও একটু পড়তে হবে। এই যেমন ট্রেজার আইল্যান্ড, কিডন্যাপড, অ্যারাউন্ড দা ওয়ার্ল্ড ইন এইটটি ডেজ ইত্যাদি। আর আলিসের অবাক পৃথিবীতে একবার যদি ঢুকে পরো তাহলে তো কথাই নেই। আলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড বা আজব দেশে অমলা যে বই-ই পড় না কেন মন তাতে মজবেই।
টিনএজারদের দুনিয়ায়
তোমরা যদি ১৩ থেকে ১৫ বছরের ছেলেমেয়ে হও, তাহলে একটু পরিণত মনের পরিচয় দিতে হবে বই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। অবন ঠাকুরের নালক দিয়ে শুরু কর গল্পের বই পড়া। ক্রমশ রাজকাহিনীও পড়তে হবে। রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা পড়লে বুঝবে কেমন আশ্চর্য একটা জগৎ ছিল ঠাকুর বাড়ির অন্দরমহলে। এরপর শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত প্রথম পর্বটার দিকে হাত বাড়াতে পারো। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ফেলুদার রহস্যের দুনিয়াতেও ঢুকে পড়তে পারো। ফেলুদার রহস্যের জগৎ ছাড়াও এইসব বই পড়ার আর একটা মজা আছে, গল্পের ছলে জায়গাটার চরিত্র, সেখানকার ইতিহাস, লোকেদের আচার ব্যবহার সব জানা হয়ে যায়। পাশাপাশি একটু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবুর রোমাঞ্চে ভরা গল্পগুলোও পড়ে ফেলো কিন্তু। নাহলে গোয়েন্দায় গোয়েন্দায় তুলনা করবে কী করে? ইংরেজি বইয়ের মধ্যে কোনান ডয়েলের লেখা শারলক হোমস তো পড়তেই হবে। গোয়েন্দা গল্পের স্বাদ পেতে গেলে হোমসের মতো দুঁদে গোয়েন্দার সঙ্গে একটু পরিচয় করে নেওয়াটা জরুরি। তারই সঙ্গে আগাথা ক্রিস্টির গোয়েন্দা এরকিউল পোয়ারোর সঙ্গেও আলাপটা সেরে ফেলা দরকার। হোমসের সঙ্গে স্বভাবের কোনও মিল নেই, তবু বুদ্ধিতে পোয়ারোর জুড়ি মেলা ভার। শেক্সপিয়ারের সঙ্গেও এই বয়সে একটু পরিচয় থাকা উচিত। তার জন্য চার্লস ল্যাম্বের টেলস ফ্রম শেক্সপিয়ার অনবদ্য। গল্পের মতো করে কি অসম্ভব মুনশিয়ানায় শেক্সপিয়ারের নাটকের গদ্যরূপ দিয়েছেন ল্যাম্ব। আর যাদের সিলেবাসে শেক্সপিয়ারের নাটক রয়েছে তারা তো ইতিমদ্ধেই নাট্যসম্রাটের সঙ্গে পরিচিত। গল্প, উপন্যাস বা নাটক ছাড়া কবিতার প্রতি যদি আকর্ষণ থাকে তাহলে সুভাস মুখোপাধ্যায় আর নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা পড়তে পারো। ভালো লাগবে। ইংরেজি কবিতা পড়তে চাইলে ওয়ার্ডসওয়ারথের লেখা বেশ উপভোগ্য।
বয়ঃসন্ধির শেষ প্রান্তে
যত বয়স বাড়বে ততই বাড়বে গল্পের বইয়ের পরিধি। এই যেমন টিনএজের শেষের দিকে মানে ১৬ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে বড়দের বইয়ের লাইব্রেরিতে ঢুঁ মারতেই পারো। এই বয়সে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখার সিংহভাগ পড়া হয়ে যাওয়া চাই। এছাড়া বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসগুলোও শুরু করে দাও। কপাল কুণ্ডলা, আনন্দমঠ, দুর্গেশ নন্দিনী, দেবী চৌধুরানী, ইন্দিরা এইসব উপন্যাস যত পড়বে ততই আকৃষ্ট হবে গল্পের প্রতি। ভাষার প্রাথমিক বাধাটা অবশ্য কাটিয়ে উঠতে হবে। এছাড়া আধুনিক সাহিত্যও এই বয়সে একটু আধটু পড়তে হবে। পুজো সংখ্যায় যে সব গল্প বেরয় তা উলটে পালটে দেখতে পারো। গোয়েন্দা গল্পের মধ্যে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ তো অবশ্য পড়তে হবে। ব্যোমকেশ বক্সীর সত্যান্বেষণের কাহিনী না পড়লে বাংলা রহস্য গল্প তোমাদের কাছে অধরা থেকে যাবে অনেকাংশেই।
ভ্রমণ কাহিনীও নিশ্চয়ই পড়ো। যেমন থর হেয়ারডালের কনটিকি অভিযানের কথা পড়লে তো গায়ে কাঁটা দেবে। ইংরেজি সাহিত্যের মধ্যে এই সময় নাগাদ চার্লস ডিকেন্সের উপন্যাস একটু পড়া দরকার। অলিভার টুইস্ট, টেল অব টু সিটিজ, ডেভিড কপারফিলড, নিকলাস নিকলবি, ক্রিসমাস ক্যারলের মতো উপন্যাসে গল্পের টান তো আছেই, সেই সঙ্গে আছে পটভূমিকার আকর্ষণ। সেই সময়কার ইংল্যান্ড সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে এইসব উপন্যাস পড়লে। শারলট ব্রনটের জেন এয়ারও এই বয়সে পড়তে দারুণ লাগবে।জনাথন সুইফটের গালিভার’স ট্র্যাভেলস, ড্যানিয়েল ডিফোর রবিনসন ক্রুসোও বেশ উপভোগ করতে পারবে এই বয়সে। কবিতার মধ্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা তো আছেই আর ইংরেজিতে শেলি, কিটস, ব্রাউনিং, বায়রনের কবিতা পড়তে পারো। অন্যরকম একটা স্বাদ পাবে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।
বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যে মণি মাণিক্যের ছড়াছড়ি। তার সামান্যই কয়েকটা নাম এই স্বল্প পরিসরে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। এছাড়াও বহু গল্প, উপন্যাস, নাটক ও কবিতা আছে যা পড়লে মোহিত হয়ে যাবে। তাহলে আর দেরি কর না, ছুটির সুযোগ কাজে লাগিয়ে বইয়ের নেশায় বুঁদ হয়ে যাও।