বিদ্যায় সাফল্যও হতাশা দুই বর্তমান। নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কর্মপ্রার্থীদের শুভ যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রের ... বিশদ
ছোট্ট বন্ধুরা, কেমন আছো?
এই লকডাউনের মধ্যে বাড়িতে আটকে থেকে আর অনলাইনে পড়াশুনো করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছ তো? তা একটু আধটু সিনেমা টিনেমা দেখলেও তো পারো! একঘেয়েমি দূর হবে, নতুন করে পড়াশুনো করার উৎসাহ পাবে। না না, টিভিতে সিনেমা দেখার কথা বলছি না মোটেই। এখন তো টিভি ছাড়াও সিনেমা দেখার অসংখ্য উপায় হাতের কাছে মজুত। বহু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেখানে সিনেমা দেখার সুযোগ রয়েছে। বেশিরভাগই অবশ্য টাকা দিয়ে দেখতে হয়। কিন্তু ইউ টিউবে এখনও কিছু কিছু সিনেমা বিনা পয়সায় দেখা যায়। আমি সেরকমই কিছু সিনেমার কথা আজ তোমাদের বলব। এই সিনেমাগুলো বিনা পয়সায় তোমরা ইউ টিউবে ডাউনলোড করে দেখতে পারবে। এই সিনেমাগুলো দেখলে তোমাদের মন ভালো হয়ে যাবে। মানুষ ইচ্ছে করলে যে মনের জোরে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হতে পারে, সে কথাই বলা হয়েছে এই সিনেমাগুলোতে। এই ভয়ঙ্কর ভাইরাস করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে তো সেই মনের জোরটাই লাগবে, তাই না?
হংসরাজ
গ্রামের একটা ছোট্ট ছেলে হংসরাজ। সে বাউল গান গায়। টনি নামে এক চালবাজ শহুরে ছেলে তাকে আশ্বাস দিয়েছিল যে, সে তাকে রেডিওতে গাওয়ার সুযোগ করে দেবে। সেই আশ্বাসকে সম্বল করে হংসরাজ শহরে চলে আসে। কিন্তু টনি তাকে সাহায্য করা তো দূর অস্ত্, দেখে চিনতেই পারে না। তখন শামু নামে আর একটি ছেলে এগিয়ে আসে হংসরাজকে সাহায্য করতে। কয়েকটি বাচ্চা বাচ্চা ছেলে কীভাবে হংসরাজকে রেডিওতে সুযোগ করে দেওয়া যায় তা নিয়ে নানা পরিকল্পনা করতে থাকে। এদিকে টনির দলবল বারবার চেষ্টা করে শামুদের আটকাতে। গুন্ডামি, মারামারি, কিডন্যাপ পর্যন্ত হয়। সাদা-কালো হলেও ১৯৭৬ সালে তৈরি, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনায় ভরা এই সিনেমাটি দেখতে তোমাদের দারুণ লাগবে। আর এই সিনেমার গানগুলোও দুর্দান্ত। ছবিটির পরিচালক অজিত গঙ্গোপাধ্যায়। হংসরাজের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়।
সবুজ দ্বীপের রাজা
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা কাকাবাবু আর সন্তুর অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে ইদানীং অনেক সিনেমা হয়েছে আর হবে হবে করছে। সবুজ দ্বীপের রাজা সন্তু আর কাকাবাবুর অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে বানানো প্রথম সিনেমা। কাকাবাবুর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন স্বর্গত শমিত ভঞ্জ। পরিচালনা করেছিলেন তপন সিংহ। সে সময়ে স্পেশাল এফেক্টের বাহুল্য ছিল না। ছিল না এত ভালো টেকনোলজিও। কিন্তু তা সত্ত্বেও ছবিটি দেখতে দেখতে তোমরা কখন যে মনে মনে সন্তুর অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গী হয়ে উঠবে বুঝতেও পারবে না।
পাঞ্জা নামে এক দুর্ধর্ষ দুশমন আন্দামানে জারোয়াদের দ্বীপে যাচ্ছে মহাকাশ থেকে পড়া এক অদ্ভুত আগুনের গোলা লুট করে আনতে। সন্তু আর কাকাবাবুও ওই একই জাহাজে চেপে আন্দামানে যাচ্ছে বেড়াতে। তারা কি পারবে পাঞ্জার কবল থেকে জারোয়াদের আর সেই অদ্ভুত আগুনের গোলাকে রক্ষা করতে? ছবিটিতে উপরি পাওনা আন্দামানের সুন্দর প্রকৃতি আর সমুদ্র দেখতে দেখতে জাহাজে ভ্রমণের মজা। ছবিটি তৈরি হয়েছিল ১৯৭৯ সালে।
চারমূর্তি
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা টেনিদার গল্প পড়েছ তোমরা? দারুণ মজাদার আর রোমাঞ্চকর সেসব গল্প। টেনিদা, প্যালারাম, ক্যাবলা আর ঢাকাইয়া হাবুল —এই চারজনকে একত্রে বলা হয় চারমূর্তি। এদেরই একটি রোমাঞ্চকর ভ্রমণের গল্প নিয়ে এই ছবি। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর ঝন্টিপাহাড়িতে বেড়াতে গিয়ে চারমূর্তি এক ভণ্ড সাধু স্বামী ঘুটঘুটানন্দ আর কালোবাজারী শেঠ ঢুন্ঢুরামের কবলে পড়ে। তারপর বুদ্ধিবলে কীভাবে তাদের পুলিসের হাতে তুলে দেয় তারই মজাদার আর রোমাঞ্চকর গল্প নিয়ে এই সিনেমা। টেনিদার ভূমিকায় প্রয়াত চিন্ময় রায়। ১৯৭৮ সালে তৈরি এই ছবিটির পরিচালক উমানাথ ভট্টাচার্য।
দামু
টেনিদার স্রষ্টা সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প ‘পঞ্চাননের হাতি’ অবলম্বনে ছবিটি তৈরি করেছিলেন রাজা সেন। দামু নামে গ্রামের এক সাধাসিধে ভোলেভালা মানুষ একটি ছোট্ট মেয়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে, তাকে হাতি দেখাবে। কিন্তু বাংলার অজ পাড়াগাঁয়ে সে হাতি পাবে কোত্থেকে! কিন্তু সে যে আবার ছোট্ট মেয়েটির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রতিজ্ঞা তো পালন করতেই হবে। কাজেই সে বেড়িয়ে পড়ে হাতি খুঁজতে। শুরু হয় দামুর অ্যাডভেঞ্চার। নানা জায়গা ঘুরে, নানা বিপদের মাঝে পড়ে, বহু প্রতিকূলতাকে জয় করে শেষে দামু কি পারবে তার প্রতিজ্ঞা রাখতে? হাসি, মজা আর অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ পাবে এই ছবিতে। দামুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রঘুবীর যাদব।
হীরের আংটি
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মজার মজার গল্প তো তোমাদের অনেকেরই প্রিয় তাই না? এই সিনেমাটাও ওঁরই গল্প অবলম্বনে তৈরি। রতনলালবাবুরা গ্রামের বেশ নামকরা বড়লোক পরিবার। দুর্গাপুজোর সময়ে তাঁদের বাড়িতে এসে হাজির হয় গন্ধর্বকুমার নামে এক রহস্যময় যুবক। সে নাকি ম্যাজিক জানে! অনেকেই তাকে বেশ পছন্দ করে। বিশেষ করে রতনলালবাবুর নাতি আর নাতনি হাবুল আর তিন্নি। রতনলালবাবুদের বাড়িতে তাঁর পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া একটি মূল্যবান হীরের আংটি আছে। একদিন হাবুল আর তিন্নিকে কেউ অপহরণ করে নিয়ে যায়। তার দাবি ওই হীরের আংটি। গন্ধর্বকুমার দাবি করে, সে রতনলালবাবুর সেই পূর্বপুরুষের প্রতিনিধি। সে-ও ওই হীরের আংটি দাবি করে বসে। শেষ পর্যন্ত কী হবে? হাবুল আর তিন্নিকে কি উদ্ধার করা যাবে?
চিল্লার পার্টি
একটি আবাসনের একদল ছেলেমেয়ে কীভাবে একটি কুকুর আর একটি বাপ-মা হারা গবির ছেলের রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়ায় তারই গল্প এটি। কুকুর আর তার মনিব ওই অসহায় ছেলেটিকে বাঁচাতে আবাসনের ছেলের দল কী না করে! এমনকী মন্ত্রীর চেলাকেও নাস্তানাবুদ করে দেয়। ২০১১ সালে তৈরি এই হিন্দি ছবিটির পরিচালক নীতিশ তিওয়ারি ও বিকাশ বহেল। ছবিটির প্রযোজক সলমন খান।
বাম বাম বোলে
খুব গরিব এক পরিবারের দুই ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়ে পিনু আর ঝিলমিল। তারা এতটাই গরিব যে তাদের স্কুলের ইউনিফর্ম কিংবা জুতো কিনে দিতেই বাবা-মাকে হিমশিম খেয়ে যেতে হয়। এর মধ্যে আবার পিনু তার বোনের একমাত্র জুতো জোড়া হারিয়ে ফেলে। বাবা-মাকে সে কথা সে বলতেও পারে না ভয়ে এবং লজ্জায়। তারা তখন ঠিক করে যে পিনুর জুতো জোড়াই সকালে ঝিলমিল পরে স্কুলে যাবে তারপর সে ফিরলে ওই জুতো জোড়াই আবার পিনু পরে দুপুরে স্কুলে যাবে। কিন্তু এতে পিনুর রোজই স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যায়। বকা খায়। একদিন পিনু জানতে পারে যে একটা ম্যারাথন দৌড় হবে। সেই দৌড়ে যে তৃতীয় হবে তাকে একজোড়া স্নিকার্স দেওয়া হবে। কিন্তু চেষ্টা করে কি থার্ড হওয়া যায়? পিনু কি পারবে রেসে থার্ড হয়ে বোনের জন্য স্নিকার্স জিতে আনতে? ইরানি ছবি চিল্ড্রেন অব হেভেন অবলম্বনে ২০১০ সালে এই হিন্দি ছবিটি বানিয়েছিলেন প্রিয়দর্শন। অদম্য ইচ্ছা থাকলে যে সবই করা যায় তা শিখতে পারবে এই ছবিটি থেকে। পিনুর ভূমিকায় অভিনয় করেছে দর্শিল সাফারি।
ফাইন্ডিং নেমো
ছোট্ট একটা সুন্দর মাছ, তার নাম নেমো। সে তার বাবা মার্লিনের সঙ্গে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ্টে থাকতো। ছোট্ট নেমোর মনে সমুদ্রটাকে জানার, চেনার অদম্য বাসনা। মার্লিন অবশ্য ছেলেকে অথৈ সমুদ্রে ছাড়তে সাহস পায় না। কে জানে বাবা, কোথায় হারিয়ে যাবে! কিন্তু একদিন বাবার নিষেধ অমান্য করেই নেমো বেরিয়ে পড়ে সমুদ্র ভ্রমণে। আর হারিয়ে যায়। হাঙর আর বড় বড় হিংস্র মাছে ভরা সমুদ্রে সে দিশাহারা হয়ে পড়ে। পথ ভুলে হাজির হয় অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবারে। সেখানে তাকে ধরে একটা অ্যাকোরিয়ামে পুরে দেওয়া হয়। মার্লিন বের হয় ছেলেকে খুঁজতে। মাঝ সমুদ্রে একটা বিরাট বড় তিমিমাছ মার্লিনকে গিলে ফেলে। মার্লিন কি পারবে ছোট্ট নেমোকে খুঁজে বের করতে? এটি একটি ইংরেজি অ্যানিমেশন ছবি। দেখত দেখতে মন ভরে যাবে।
আ টার্টল’স টেল
স্যমি নামে একটা গ্রিন সি টার্টল, মানে কচ্ছপের গল্প এটি। সে জন্মের সময় থেকেই অনাথ হয়ে পড়ে। একটা সিগাল তাকে খেতে গিয়েছিল। সে কোনওরকমে পালিয়ে বাঁচে। তারপর তার বন্ধুত্ব হয় আর একটি কচ্ছপের সঙ্গে। তারপর একটি অক্টোপাস তাদের দলে জোটে। সমুদ্রে মানুষের দ্বারা সৃষ্টি করা নানারকম দূষণ, মাছ ধরার জাল তাদের প্রতি পদে বিপদে ফেলতে থাকে। কীভাবে বাঁচবে তারা? পরিবেশ দূষণের ফলে পৃথিবীটা অন্য জীবদের পক্ষে কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠছে তা এই ইংরেজি সিনেমাটি দেখতে দেখতে প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করবে তোমরা।
দ্য কিড
চার্লি চ্যাপলিনের নাম তো তোমরা সবাই জানো, তাই না? এই সিনেমাটা চার্লি চ্যাপলিন তৈরি করেছিলেন ১৯২১ সালে। মানে সামনের বছরই এর শতবর্ষ। সাদা-কালো, নির্বাক এই সিনেমাটি কিন্তু এখনও ছোটবড় সবার মনজয় করে নেয়। এক চালচুলোহীন ভবঘুরে হঠাৎ করেই একটি অনাথ শিশুকে কুড়িয়ে পায়। প্রথমে সে চেষ্টা করে বাচ্চাটিকে অন্যের ঘাড়ে গছিয়ে দিতে। কিন্তু বারে বারে বিফল হয়ে শেষপর্যন্ত নিজেই বাচ্চাটিকে মানুষ করতে থাকে। বাচ্চাটিও ওই ভবঘুরেকে নিজের অভিভাবক ভাবতে শুরু করে। এমন সময় একদিন ওই বাচ্চাটির মা তার হারানো ছেলেকে দেখতে পায়। তারপর কী হয়? ভবঘুরের কাছ থেকে ছেলেটিকে কি কেড়ে নেবে তার মা? দেখে নাও ছবিগুলো। তারপর জানিও আমাদের কেমন লাগল।