বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে আজকের দিনটা শুভ। কর্মক্ষেত্রে আজ শুভ। শরীর-স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। লটারি, শেয়ার ... বিশদ
ফেব্রুয়ারি মাস মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মাস। তোমাদের ভয়, উদ্বেগ, মানসিক অস্থিরতার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দেরও সময়। কারণ, এই প্রথম তোমরা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দেবে। বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ হয়েছে গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা তোমাদের বিষয়ভিত্তিক নানা পরামর্শ দিয়েছেন। কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কোনটা তুলনায় কম তাও বলেছেন। কিন্তু এসব সত্ত্বেও তোমাদের মানসিক অস্থিরতা কিছুতেই কাটছে না। যতদিন না পরীক্ষা শেষ হচ্ছে এবং ভালো নম্বর সমেত মার্কশিট হাতে আসছে, ততদিন এরকম চলবে।
ভূগোল বিষয়ে পড়াশোনার চাপ কমিয়ে কীভাবে তোমরা বেশি নম্বর পাবে, তা নিয়ে কিছু পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করেছি এই লেখায়। এখানে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধারা অনুযায়ী আমরা আলোচনা করব।
বিভাগ-ক
এই অংশে ‘বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তরধর্মী প্রশ্ন’ থাকে ১৪টি। সবকটিরই উত্তর করতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের চারটি বিকল্প। সঠিক উত্তর বেছে নিতে হবে। উত্তরপত্রে প্রশ্নের দাগ-নম্বর দিয়ে সঠিক উত্তর লিখলেই পুরো নম্বর পাওয়া যায়।
উদাহরণ : ১।১.১ যে প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় তাকে বলে — ক) আরোহণ প্রক্রিয়া খ) অবরোহণ প্রক্রিয়া গ) আবহবিকার প্রক্রিয়া ঘ) নগ্নীভবন প্রক্রিয়া। এই প্রশ্নটির উত্তর লেখার জন্য পুরো বাক্য লেখার দরকার নেই। সঠিক উত্তরটি হবে ১।১.১ ক) আরোহণ। এই বিভাগের উত্তর এক জায়গাতেই পরপর লেখা উচিত যাতে পরীক্ষকের নজর না এড়িয়ে যায়।
বিভাগ-খ
‘অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন’ বিভাগে ২৬টি প্রশ্ন থাকবে। ২২টি প্রশ্নের উত্তর লিখবে। যেমন ২.১ নম্বর দাগে শুদ্ধ-অশুদ্ধ নির্বাচন করতে হয়। ৭টির মধ্যে ৬টির উত্তর করতে হবে। তোমরা দু’ ভাবে উত্তর লিখতে পারো।
উদাহরণ: ২.১.১ ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমি হল ডেকান ট্র্যাপ। উত্তর হবে ২.১.১-অ। অথবা পুরো বাক্য লিখে পাশে ‘অ’ লেখো। তাহলেই পুরো নম্বর। কিন্তু কখনও সত্য-মিথ্যা লেখা যাবে না। এরপর ২.২ নম্বর দাগে শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে। পুরো বাক্য লিখে যে শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করা হল, তার নীচে দাগ দিলে উত্তরটি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
২.৩ নম্বর দাগে প্রশ্নের উত্তর একটি-দুটি শব্দে লিখতে হবে। ৮টির মধ্যে ৬টি করতে হবে। উদাহরণ : ২.৩.১ ভারতের কোন রাজ্য বৃষ্টির জল সংরক্ষণে সর্বাধিক অগ্রণী? উত্তর হবে— ২.৩.১- তামিলনাড়ু।
২.৪ নম্বর প্রশ্নে বাঁদিকের সারণীর প্রশ্নের সঙ্গে ডানদিকের সারণীর উত্তর মেলাতে হবে। এখানে উত্তর লেখার সময় বাঁদিকের সারণী ঠিক রেখে ডানদিকের সঠিক উত্তরটি ক্রম অনুযায়ী সাজিয়ে নিলেই হল।
এতক্ষণ আমরা বিভাগ ক এবং খ-এর ১৪+২২=৩৬ নম্বর নিয়ে আলোচনা করলাম। পুরো উত্তর ঠিক করতে চাইলে বইয়ের সমস্ত অধ্যায় মন দিয়ে পড়তে হবে। এ জন্য পাঠ্যাংশের উদাহরণ এবং স্টেটমেন্ট বাক্যগুলো মনে রাখতে হবে।
বিভাগ-গ
এখানে সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন থাকবে ৬টি, যার মান ২। প্রত্যেকটির একটি করে বিকল্প প্রশ্ন থাকবে, যা সংজ্ঞামূলক। উত্তরের জন্য ২/৩টি সঠিক বাক্যই যথেষ্ট। তোমাদের জন্য প্রাকৃতিক ভূগোল থেকে পর্যায়ন, পুঞ্জিত ক্ষয়, জলচক্র, ধারণ অববাহিকা, হিমরেখা, মিয়েন্ডার, লোয়েশ, পেডিমেন্ট, ব্লো-আউট, অ্যারোসল, অ্যালবিডো, ইন্সোলেশন, হিমপ্রাচীর, আপেক্ষিক আর্দ্রতা, শৈবাল সাগর, সিজিগি, ষাঁড়াষাঁড়ির বান প্রভৃতি, পরিবেশ ভূগোল থেকে স্ক্র্যাবার, 3R, 4R জৈব বর্জ্য, ই-বর্জ্য, চিকিৎসা বর্জ্য, ব্যাগাসে, ম্যানিওরপিট ইত্যাদি বিষয়ে নজর রাখো। আঞ্চলিক ভূগোলে ভাবর, তরাই, মালনাদ, ময়দান, দুন, মরুস্থলী, কয়াল, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা, সামাজিক বন সৃজন, আঁধি, সবুজ বিপ্লব, বাগিচা ফসল, অনুসারী শিল্প, মানুষ-জমি অনুপাত, কাম্য জনসংখ্যা, স্থিতিশীল উন্নয়ন, শিপিং লেন ইত্যাদি বিষয় তৈরি রাখো। উপগ্রহ চিত্র বিভাগে সেন্সর, দূর সংবেদন, এফসিসি, মিলিয়ন শিট, ডিগ্রি শিট, ভূ-সমলয় ও সূর্য-সমলয় উপগ্রহ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখো।
বিভাগ-ঘ
এই বিভাগের উত্তর হবে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক। মোট ৪টি প্রশ্ন থাকবে ৩ নম্বরের। প্রাকৃতিক ভূগোল, পরিবেশ ভূগোল, আঞ্চলিক ভূগোল এবং উপগ্রহ চিত্র অধ্যায়ে একটি করে প্রশ্ন ও তার বিকল্প একটি প্রশ্ন থাকবে। ৪/৫টি বাক্যে উত্তর লিখলে ভালো হয়। পারলে ছবি দিও। ৪.১ নম্বর দাগে আরোহণ ও অবরোহণের পার্থক্য, গিরিখাত ও ক্যানিয়নের পার্থক্য, পেডিমেন্ট ও পেডিপ্লেন, পেডিমেন্ট ও বাজাদা, স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ু, মুখ্য ও গৌণ জোয়ার, সমুদ্রস্রোত ও সমুদ্র তরঙ্গের পার্থক্য ভালো করে পড়তে হবে। ব-দ্বীপ সৃষ্টির কারণ, গ্রাবরেখা, ওজোন স্তর, বিশ্ব উষ্ণায়ণের প্রভাব, বায়ুচাপ বলয়ের স্থান পরিবর্তন, গ্রিন হাউস প্রভাব, সমুদ্র স্রোতের বৈশিষ্ট্য, জোয়ার-ভাটার প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। ৪.২ পরিবেশ ভূগোল থেকে বর্জ্যের উৎস, বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার, ভাগীরথী-হুগলি নদীতে বর্জ্যের প্রভাব, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং জৈব ভঙ্গুর ও জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যের পার্থক্য গুরুত্বপূর্ণ। ৪.৩ এই আঞ্চলিক ভাগে বৃষ্টির জল সংরক্ষণে তামিলনাড়ুর ভূমিকা, মাটি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা, কালো মাটি-লাল মাটির বৈশিষ্ট্য, অরণ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা, বিশুদ্ধ ও অবিশুদ্ধ কাঁচামাল, জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি, মৌসুমি বায়ুর ওপর জেট বায়ুর প্রভাব, ইন্টারনেট পরিষেবা, লবণাম্বু উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য, নগরায়ণের সমস্যা ইত্যাদি ভালো করে তৈরি করো। ৪.৪ অংশের জন্য সান সিনক্রোনাস ও জিও-স্টেশনারি উপগ্রহের পার্থক্য, উপগ্রহ চিত্র তোলার পদ্ধতি, উপগ্রহ চিত্রের ব্যবহার, টোপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্রের বৈশিষ্ট্য এবং সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় সেন্সর সম্পর্কে ভালো ধারণা চাই।
বিভাগ-ঙ
এই পর্যায়ে দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্ন থাকবে যার মান ৫। প্রাকৃতিক ভূগোল বিভাগ থেকে ৪টি প্রশ্ন থাকবে। এর মধ্যে যে কোনও দুটির উত্তর লিখতে হবে। এই অংশে পয়েন্ট-সাব্ পয়েন্ট করে উদাহরণসহ উত্তর লেখা উচিত। ড্রয়িংও জরুরি। নদীর সঞ্চয়কার্য, পুরো হিমবাহ ও বায়ুর কাজ তৈরি রাখতে হবে। এছাড়া বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের কারণ, চাপের তারতম্যের কারণ, বায়ুচাপ বলয় ও নিয়ত বায়ুর সম্পর্ক, সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ ও প্রভাব এবং বিশ্ব-উষ্ণায়ণের প্রভাব মন দিয়ে পড়ো। আঞ্চলিক ভূগোলে দুটি উপকূলের বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক আলোচনা, ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক, জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য, মাটি সংরক্ষণের পদ্ধতি, ধান-চা-কফি-কার্পাস চাষের অনুকূল পরিবেশ ভালো করে পড়তে হবে। পশ্চিম ভারতে বস্ত্রবয়ন শিল্পের উন্নতির কারণ, পূর্ব ভারতে লোহা-ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রিভবনের কারণ এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে জন-বণ্টনের তারতম্যের কারণ গুরুত্বপূর্ণ এবারের মাধ্যমিকে। তবে উপগ্রহ চিত্র এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে সাধারণত কোনও দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্ন আসে না।
বিভাগ-চ
আঞ্চলিক ভূগোল পড়ার সময় মানচিত্র বই বা অ্যাটলাস খুলে পড়ো। ভারতের নদী, পাহাড়, পর্বত, গাছপালা, কৃষি, শিল্প সম্পর্কে মানচিত্র থেকে ধারণা নিয়ে মানচিত্রে স্থান নির্ণয় অভ্যাস করো।
পরিশেষে বলি, পাঠ্যবই মন দিয়ে পড়ো। ঘড়ি ধরে প্রশ্নের উত্তর লেখা অভ্যাস করো। সেই সঙ্গে অবসর সময়ে ছবি আঁকারও অভ্যাস বাড়াও।