কর্মরতদের সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা ও ব্যবহারে সংযত থাকা দরকার। ... বিশদ
লম্বা ছুটিতে অগ্নিগড়ে
স্কুলে লম্বা ছুটি। ওদিকে আমার মা প্রশিক্ষণের জন্য যাবেন অসমের তেজপুরে। এই সুযোগে আমরা সবাই মিলে গিয়েছিলাম তেজপুর। আহা, কী সুন্দর জায়গা! কলকাতার মতো এত দূষণ নেই। যানজট নেই। মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য। আমার ভাই নীলাব্জ খুব আনন্দ করেছে অগ্নিগড়ে গিয়ে। বন্ধুদের বলি, বান রাজা এই দুর্গটি তৈরি করেছিলেন। কালিকা পুরাণে গড়টির উল্লেখ আছে। ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তরপাড়ে অবস্থিত অগ্নিগড়। এখানে এলে দেখবে, হরি আর হরের মধ্যে যুদ্ধের দৃশ্য, সুন্দর বাগান, ঝরনা, টাওয়ার আরও কত কী! সি-স থেকে দোলনা চড়ার মজাও পাবে এখানে। ব্রিটিশরা নাকি এই টিলা থেকে দূরবিন দিয়ে তেজপুর শহরের ওপর নজর রাখত!
নীলার্ক পাহাড়ি, ষষ্ঠ শ্রেণী,
ইয়ং হরাইজন স্কুল
শুট করো ভূত মারো
ভূতে তুমি বিশ্বাস করো আর নাই করো—ভূত মারতে পারবে কলকাতার নিক্কোপার্কে গেলে। বড়দিনের ছুটিতে আমরা গিয়েছিলাম নিক্কোপার্ক। এটা একটা রাইড। রয়েছে ১০০টার বেশি ভূত। তোমাকে দেওয়া হবে একটা লেজার গান। ঢুকতে হবে অন্ধকার গুহার ভিতর দিয়ে। সামনেই থাকবে গোল টেবিল। সেখানে বসলেই দেখবে, একের পর এক ভূত তোমার সামনে এগিয়ে আসছে। ও হ্যাঁ, গোল টেবিলটা কিন্তু সমানে ঘুরতে থাকবে। মনে হবে তুমিই ঘুরছ। সেই সময় লেজার গান দিয়ে চটজলদি মেরে ফেলতে হবে একটার পর একটা ভূত। কতগুলো ভূত মারলে, তা ফুটে উঠবে লেজার গানে। — খুব মজা, তাই না!
তমোঘ্ন দাস, নবম শ্রেণী
উত্তরপাড়া গভর্নমেন্ট হাইস্কুল
বড়দিনে ঝিলিমিলি জঙ্গলে
এবারের বড়দিনের ছুটিতে আমরা ঝিলিমিলি জঙ্গলে ঘুরতে গিয়েছিলাম। খাতড়া শহর পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম ঝিলিমিলি জঙ্গলে। শুরু হল নৈসর্গিক দৃশ্য, যা আমি কোনও দিন ভুলতে পারব না। কালো পিচের রাস্তার দুই দিকে ঘন শাল, পিয়াল ও মহুয়ার জঙ্গল, মাঝে মাঝেই পাহাড়ি রাস্তার মতো বাঁক, চড়াই ও উতরাই। মাঝে একবার দাঁড়িয়ে ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখে নিলাম দূরের বিস্তৃত দিগন্ত, যেখানে নীল আকাশ ও অরণ্যের সবুজ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এই ভাবেই পৌঁছে গেলাম তালবেড়িয়া লেকে। তিনদিকে অরণ্য তার মাঝেই প্রকৃতির বুকে এই প্রাকৃতিক লেক। লেকের চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে খাওয়াদাওয়া সেরে এক অদ্ভুত ভালো লাগা ও আনন্দকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
অংশুমান মণ্ডল, ষষ্ঠ শ্রেণী,
দিল্লি পাবলিক স্কুল, দুর্গাপুর
ঘাটশিলা ও সুবর্ণরেখা
পাহাড় সে তো অনুভূতির এক নামান্তর। গভীরতা বাড়ে সঙ্গে থাকে যদি নদী ও অরণ্যের হাতছানি। তেমনি এক জায়গা ঘাটশিলা। কলকাতা থেকে মাত্র ঘণ্টাচারেকের রাস্তা। ঘাটশিলা বলতে মনে পড়ে মায়াময় ‘রাতমোহনা’, ‘গালুডি’, চিত্রকূট, ফুলডুঙরি, অবশেষে বিভূতিভূষণের বাড়ি। মনে হল নুটবিহারীর লাগানো আমগাছের তলায় আজও অপু দুর্গা খেলা করছে। এখুনি দৌড়ে যাবে পাখির ছানা ধরতে কিংবা নিশ্চিন্তপুরে প্রথম পাতা রেললাইনের খোঁজে। বুরুডি ড্যাম। যার পাশে বসে থাকা যায় অনন্তকাল। সে এক অসাধারণ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।
শুভমিতা পাইক, দশম শ্রেণী,
জয়নগর ইনস্টিটিউশন ফর গার্লস
সারাদিন সবুজের মাঝে
এবছর বাড়ির সবাই মিলে গেলাম বোটানিক্যাল গার্ডেনে। দূর থেকে দেখলেও ভেতরে ঢুকে যেন আত্মহারা হয়ে গেলাম। একসঙ্গে এত সবুজ আমি কখনও দেখিনি। পৃথিবীর সব প্রান্তের গাছই এখানে আছে। এছাড়া বটবৃক্ষ দেখতে যে কত লোক আসে সেদিন নিজের চোখে দেখেছি। অভিভূত হয়েছি আফ্রিকার জঙ্গলের জায়েন্ট ওয়াটার লিলি দেখে। পদ্মপাতার মতো বিশালাকার লিলি দেখে সত্যিই আমি অভিভূত। এছাড়া ভেষজ উদ্যান, লাইব্রেরি, গঙ্গার পাশে সুন্দরী, গরান গাছও দেখেছি। বিশালাকার এই গার্ডেন দেখতে কখন যেন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। নানারকমের পাখিরা বাসায় ফিরছিল। তখনই বাবা বলল, বাড়ি চল আরেক দিন আসব।
তন্দ্রা নস্কর, দশম শ্রেণী
থানা মাখুয়া মডেল হাইস্কুল
মুসৌরির অসাধারণ পরিবেশ
হাড় হিম করা ঠান্ডা। তারপরে ঠিক হল হরিদ্বার যাব। বাবা টিকিট কাটল উপাসনা এক্সপ্রেসে। ২৩ ডিসেম্বর। হরিদ্বার গিয়ে পৌঁছালাম ২৪ তারিখ। গিয়ে পৌঁছালাম শিব বিশ্রাম লজে। হোটেলে আমরা বিশ্রাম করে সন্ধাবেলা গেলাম গঙ্গার ঘাটে। ওখানে সবাই মিলে প্রদীপ ভাসালাম। গঙ্গার ঘাটে আরতি দেখে মাসির হোটেলে রাতের খাবার খেলাম। পরের দিন গঙ্গা স্নান করে পুরো জ্ঞান হারিয়ে ফেলি আর কী! এত ঠান্ডা যে সারা শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছিল। দুপুরবেলা রোপওয়ে করে যাই মনসা মন্দিরে। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করেছি প্রাণ ভরে। পরের দিন গিয়েছি কনখলের দিকে। তারপর গাড়ি করে সারা হরিদ্বার প্রদক্ষিণ করি। তবে দেরাদুন ও মুসৌরির পরিবেশে আমি মুগ্ধ। পাহাড়ি রাস্তায় প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে প্রাণ ভরে গিয়েছে। যদি আবার সুযোগ পাই সেই আশায় পথ চেয়ে আছি।
স্নেহা হালদার, নবম শ্রেণী,
বালি বঙ্গ শিশু বালিকা বিদ্যালয়
ছুটিতে শান্তিনিকেতনে
শীত পড়লেই আমার মনটা উড়ু উড়ু করে। তাই শীতের ছুটিতে ঘুরতে গিয়েছিলাম শান্তিনিকেতনে। সঙ্গী ছিল আমার মা, বাবা। ওখানকার বিরাট লাল মাটির রাস্তা ধরে ঢুকলাম বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে। রবিঠাকুরের সাধের ‘ছাতিমতলা’য় আমারই বই নিয়ে বসে পড়তে ইচ্ছা করছিল।
রবীন্দ্রনাথের দূরদর্শিতা, চিন্তাভাবনা, শিল্পকলা আমার মন কেড়েছে। দেখেছি রবীন্দ্রনাথের জিনিস সমৃদ্ধ মিউজিয়াম, উপাসনাগৃহ, শ্রীনিকেতন, শান্তিদেব ঘোষের বাড়ি, অমর্ত্য সেনের বাড়ি, পৌষমেলার মাঠ, খোয়াই’র হাট, আমার কুটির সহ কত কিছু। তবে ঘুরতে ঘুরতে একটা কথা মনের মধ্যে উঁকি মারছিল। এত বিদগ্ধ মানুষের পদধূলিধন্য এই শান্তিনিকেতন। সেখানে কি সত্যিই আমাদের বিশ্বকবির নোবেল কি আর আমরা ফিরে পাব না?
বিভাসচন্দ্র মণ্ডল, অষ্টম শ্রেণী
নবনালন্দা শান্তিনিকেতন স্কুল
বছর শেষের আনন্দ
অনেক উৎসবের মতো ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহটা একটা উৎসবের চেহারা। বছর শেষের আনন্দ সে যার মতো করে উপভোগ করে। আমরাও এ বছর অনেক ঘুরেছি। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বরে পার্ক স্ট্রিটে মানুষের মিছিল দেখেছি। আর এত রংবেরঙের লাইট এই বছরই দেখার সৌভাগ্য হল। মানুষের ভিড়ে রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচলের ভীষণ অসুবিধা হচ্ছিল। যাইহোক কোনওরকমে পৌঁছালাম সেন্টপল্স ক্যাথিড্রাল চার্চে। ওখান থেকে গেলাম অ্যাকাডেমি ফাইন আর্টসে। তখন নান্দীকার নাট্য উৎসব চলছিল। কয়েকজন অভিনেতাকে সামনে দেখলাম। ওখান থেকে নন্দন রবীন্দ্রসদনে সবাই মিলে লাল টুপি পরে অনেক ছবি তুললাম। তারপর গেলাম ‘মোহর কুঞ্জ’-এ। ওখানে পৌষপার্বণের মেলা চলছিল। বিভিন্ন শিল্পীর লোকসঙ্গীত শুনলাম। আমার সঙ্গীসাথীরা ওই গানের সঙ্গে নাচ করছিল। থিক থিক করা ওই ভিড়ের মধেই স্টল থেকে পিঠেপুলি, মিষ্টি খেলাম। রাত ১০টার পর বছর শেষের আনন্দ গায়ে মেখে বাড়ি ফিরলাম। মনের মধ্যে রয়ে গিয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আলো-আঁধারির খেলা। আর হইহই করা আনন্দের রেশ।
সূচনা দেউড়ি, সপ্তম শ্রেণী
নারায়ণা স্কুল, রিষড়া
সংকলক : শম্পা সরকার