বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
সিলেবাস তাড়া করে
বুকসেল্ফের রঙিন গল্প,
আজ কি কেউ পড়ে?’
প্রশ্নটা মাঝেমধ্যেই মাথায় ঘুরপাক খায়, আজকের প্রজন্ম কি পড়ার বইয়ের জগৎ থেকে বেরিয়ে অন্যান্য বই পড়ে। এই প্রসঙ্গে কলকাতা পাবলিশার্স ও বুকসেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় সেদিন এক মজার কথা বললেন, বাচ্চাদের গল্প শোনাতে হবে এবং যখন তার মধ্যে গল্পটার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ তৈরি হবে ঠিক তখন অর্থাৎ মাঝপথে গল্প থামিয়ে দিয়ে বাকিটা সেই বাচ্চাটিকে দিয়ে বলাতে হবে। সেই চরম আগ্রহ থেকেই গল্পের শেষটা করবে সে। গল্পের আকর্ষণ বা বইপড়ার যে তীব্র নেশা সেটা তৈরি করতে হবে। ডিজিটালের হাতছানি, মোবাইল নির্ভর আজকের সমাজ থেকে শিশুবেলাটুকুকে বাঁচানোর দায়িত্ব তো আমাদের সকলেরই।
শহরে চলছে বইমেলা। কলকাতার সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্ক এখন শহরের অন্যতম বই পাড়া। কচিকাঁচাদের সঙ্গে মিশে বইমেলার একটা চেনা ছবি এবং কিছু অচেনা অজানা তথ্য সংগ্রহ করে তুলে দেওয়া হল তোমাদের জন্য। ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখ পর্যন্ত চলবে বইমেলা। এবারের থিমকান্ট্রি গুয়াতেমালা। ছেলেবেলার বইমেলার ছবি এবং এখনকার বইমেলার ছবির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। শুধু যে গঠনগত পার্থক্য তাই নয়, পার্থক্য রয়েছে মানসিকতারও। যেমন ছোট্ট শিয়ান ক্লাস থ্রিতে পড়ে, কিন্তু বাংলা পড়তে ভালোবাসে না। বাবার সঙ্গে বইমেলার মাঠে সে-ও হাজির। বাবা তাকে ‘হযবরল’ কিনে দিয়েছে। কিন্তু সুকুমার রায়কে সে চেনে না। স্কুলে ভালো বাংলা শেখায় না, ভালো পাঠ্যবই নেই, অভিযোগ তার বাবার। কিন্তু মা’র কাছে সে বাংলা গল্প শোনে। ইংরেজি বই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা বই পড়ার আগ্রহ তৈরির চেষ্টায় পাশে ওর বাবা-মা সবসময় রয়েছেন।
ক্যান্ডিফ্লস মুখে মাখামাখি আলোরিনা ক্লাস ফাইভে। তার বক্তব্য কিন্তু অন্যরকম। বইমেলা আমার কাছে বছরের অন্যান্য উৎসবের মতোই একটা বড় উৎসব, জানলাম ওর মুখে। এখন সে গোয়েন্দা গল্প পড়তে শুরু করেছে। তাই সারাবছরের সকলের থেকে পাওনা টাকা নিয়ে সে মেলার মাঠে। সেরা সত্যজিৎ, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র, ফেলুদা... তার বই কেনার লম্বা তালিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ঐশিকী ‘আবোল তাবোল’ কিনে খুব খুশি। নানান সুস্বাদু খাবার খেয়ে, গান শুনে, মজার ‘আবোল তাবোল’ হাতে সে-ও শনিবারের পূর্ণ মজা উপভোগ করেছে বইমেলা নিয়ে। বাবার ডে-আউট প্ল্যানে সে ও মা দু’জনেই খুব খুশি। এশিয়ার সর্ববৃহৎ বইমেলার জন্য বাড়তি ১৯০টি বাস চলাচল করছে শহরে। বিশ্বের ২০টি দেশ অংশ নিয়েছে বইমেলায়। বিভিন্নরকম আকর্ষণীয় লটারি বা কম্পিটিটিভ প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে আদতে মানুষকে বইমুখী করতে চাইছে কর্তৃপক্ষ। ‘বাই বুক অ্যান্ড উইন আ বুক লাইব্রেরি’— এবারের বইমেলার বিশেষ চমক। যেখানে ১ লক্ষ টাকার বই এবং বুক সেল্ফ বিজেতারা উপহার হিসেবে পাবেন। একটা ব্যাপার নিশ্চিত যে, মিশনটা একক নয়, ভাবনাটা সকলের মধ্যেই ঘুরছে। অনলাইন বুক রিডিং আধুনিক সমাজের অংশ হলেও তা থেকে নানান সমস্যা হচ্ছে ছোট বড় সবারই। চোখ ও স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছেন মানুষ। তাই বইয়ের পাতার সাদাকালো অক্ষর দেখা প্রয়োজন। বই পড়ার সু-অভ্যাস আজকের প্রজন্মের মধ্যে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ মেলার ভিড় ও ছোটদের সংখ্যা সত্যিই অবাক করার মতো।
ঋতুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়
ছবি: স্বপ্নিল সরকার