ব্যবসা সূত্রে উপার্জন বৃদ্ধি। বিদ্যায় মানসিক চঞ্চলতা বাধার কারণ হতে পারে। গুরুজনদের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন ... বিশদ
পশ্চিম সাইবেরিয়ার একটা ছোট্ট শহর কিদরোভি। মস্কো থেকে অনেক দূর। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার। সেখানকার মেয়ে একাতেরিনা বোচারোভা আজ সারা বিশ্বে এক পরিচিত নাম। সে তো ওই জাবিভাকার দৌলতেই। জাবিভাকা একাতেরিনার কল্পনাপ্রসূত সৃষ্টি। সেই জাবিভাকা এবারের বিশ্বকাপের ম্যাসকট। অনেক লড়াইয়ে জিতে সে আজ সকলের আদরের চরিত্র। জাবিভাকার ম্যাসকট হয়ে ওঠার পর একুশ বছরের একাতেরিনা যেন ঢুকে পড়েছেন এক রূপকথার জগতে। স্বপ্নের ঘোর এখনও কাটেনি তাঁর।
কথাটা মনে ধরেছিল একাতেরিনার। ভাবলেন ম্যাসকট হিসেবে তাঁর প্রিয় পোষা কুকুর টাইসনের ছবি এঁকে পাঠাবেন। কিন্তু না। ভাবলেন কুকর তো অনেকেই পাঠাবেন। তাহলে ভল্লুকের ছবি পাঠানো যাক। কিন্তু তাও তিনি আঁকলেন না। আঁকতে বসে লেগে গেল একটা স্বপ্নের ঘোর। আপন মগ্নতার মধ্যে ধীরে ধীরে জন্ম নিতে লাগল জাবিভাকা। কী করে যে সব হয়ে গেল! এ যেন এক অন্তর্রহস্য। শিল্পী মন ছাড়া সে রহস্যের সন্ধান পাওয়া যায় না। শিক্ষিকারা সেই ছবির প্রশংসা করে বললেন, ‘পাঠিয়ে দাও।’ তাঁরা তখনও জানতেন না, জাবিভাকা ম্যাসকট হয়ে উঠবে এবং একাতেরিনা তাঁদের গর্ব হয়ে উঠবেন। তাঁরা শুধু উৎসাহ দিতেই চেয়েছিলেন। প্রতিযোগিতায় ম্যাসকট হিসেবে জমা পড়েছিল অনেক ছবি। বাঘ, সিংহ, রোবট, অ্যালিয়েন, ভল্লুক সহ আরও অনেকে সেখানে হাজির হয়েছিল। সেগুলি নিয়ে একটি অনলাইন ভোটের আয়োজন করে রাশিয়া। হু হু করে ভোট পড়তে থাকে। প্রাথমিকভাবে তিনটি ছবিকে বেছে নেওয়া হয়। নেকড়ে, বাঘ এবং বিড়াল। উল্লেখ করার মতো ব্যাপার হল এই তিনটি ছবির ডিজাইনই করেছেন তিনজন ছাত্রী। বাঘের ছবিটি এঁকেছিলেন সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটির গ্রাফিক্স ডিজাইনের ছাত্রী ভ্যালেরিয়া তাবুরেঙ্কো এবং বিড়ালের ছবিটি করেন নভগরদের ইয়ারোস্লাভ ওয়াইজ স্টেট ইউনির্ভাসিটির ছাত্রী সোফিয়া পদলেসনিখ। ফাইনাল রাউন্ডে ভোটদানের শেষে যখন গণনা হয়, দেখা যায় ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জাবিভাকা। বাকিরা তার ধারেকাছেও নেই। ২৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয় বাঘ এবং ২০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিড়াল হয় তৃতীয়। বোঝাই যাচ্ছে, প্রতিযোগিতায় জাবিভাকা যেভাবে ভোট পেয়েছে, তাতে সে বহু মানুষের হৃদয় জিতে নিয়েছে। মস্কোয় এক অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের রোনাল্ডো জাবিভাকাকে বিশ্বকাপের ম্যাসকট হিসাবে ঘোষণা করেন। তিনিও জাবিভিকা নিয়ে উচ্ছ্বসিত।
রাশিয়ার মানুষকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন তাঁরা জাবিভাকার পক্ষে এত ভোট দিয়েছেন? এর উত্তরে রশিয়ার মানুষ এক বাক্যে বলেছেন, জাবিভাকার মধ্যে রয়েছে একদিকে আত্মবিশ্বাস, অন্যদিকে মজা। একদিকে একাগ্রতা, অন্যদিকে স্পিরিট। যেন একটা সেট পিস থেকে সে এক্ষুণি একটা অনবদ্য গোল করে ফেলবে। অথবা বক্সের মধ্যে চকিতে বল পেয়ে গোল করতে উদ্যত সে। তাছাড়া রুশ ভাষায় জাবিভাকার অর্থ হল ‘গোলদাতা’। ফুটবলে মানুষ তো দৃষ্টিনন্দন গোলই দেখতে চান। তাই তাঁদের মনে হয়েছে দেশে প্রথম বিশ্বকাপের আসরে জাবিভাকাই হতে পারে আদর্শ ম্যাসকট। সে যেন এক আদর্শ টিমম্যান। আর জাবিভাকাই জয় করতে পারে বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়।
আর এই সুবাদেই দেখা গেল কাগজে কাগজে, চ্যানেলে চ্যানেলে একাতেরিনার ছবি, সাক্ষাৎকার। রাতারাতি তিনি সুপারস্টার। খুবই লাজুক স্বভাবের মেয়ে তিনি। ডিজনির কার্টুনের বিশেষ ভক্তও একাতেরিনা। পরে সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকারও করেছেন, জাবিভাকা ডিজনি অনুপ্রাণিত। ফুটবল খেলাও একাতেরিনার খুব ভালো লাগে। রিয়াল মাদ্রিদের খেলা হলে তো কথাই নেই। টিভির সামনে বসে পড়বেনই। আর বল পায়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে দেখলেই ‘গোল’ বলে চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছা করে।
রাশিয়ায় বিশ্বকাপের আসর বসলেও সাইবেরিয়ার কোথাও কোনও ম্যাচ নেই। সেই সুদূরে বসে সেখানকার মানুষ টিভিতে বিশ্বকাপের খেলা দেখবেন এবং একাতেরিনার জন্য গর্বিত হবেন। রাশিয়ার আসরে একমাত্র তিনিই যেন সাইবেরিয়ার প্রতিনিধি। তিনি যে জাবিভাকার মা।