বাড়তি অর্থ পাওয়ার যোগ আছে। পদোন্নতির পাশাপাশি কর্মস্থান পরিবর্তন হতে পারে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পক্ষে থাকবে। ... বিশদ
কাশ্মীরের কাঠুয়া, উত্তরপ্রদেশের উন্নাও, গুজরাতের সুরাত... নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও খুনের অন্তহীন সাম্প্রতিক মিছিল এই দেশকে বিশ্বের দরবারে আবারও কলঙ্কিত করেছে। এই দেশ যেন ধর্ষণভূমি।
দিনে গড়ে প্রায় ১০৭ জন এই ভূমিতে ধর্ষণের শিকার। ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২। দিল্লির বাসে ওই দিন গণধর্ষণ ও নৃশংস যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে মারা যায় একটি মেয়ে। এমনই বিধির বাঁধন, কলঙ্কিত সমাজ সেই মেয়েটির নাম জানাতে পারবে না, জানতেও অপারগ! অন্যোন্যপায় হয়ে সমাজ অভাগার নাম দিয়েছিল ‘নির্ভয়া।’ নির্ভয়া কাণ্ডের পর কত অশ্রুপাত, কত উদ্যোগ, কত অঙ্গীকার! কিন্তু সমাজ পরবর্তী এই ক’বছরে কতটা সভ্য, শালীন, সংবেদনশীল ও নিরাপদ হল? কতটা নির্ভয়া? ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে ২০১২ সালে গোটা দেশে নথিভুক্ত ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ২৪,৯২৩ আর ২০১৬ সালে সেটা ৩৮,৯৪৭! অর্থাৎ হ্রাস তো দূরের কথা, পাঁচ বছরে ধর্ষণের ঘটনা ৫৬ শতাংশ বেড়েছে! ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি ১৫ বছরের এক ছাত্রীর গণধর্ষণের মামলার শুনানি চলাকালীন স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘পরিস্থিতি আরও খারাপ থেকে খারাপ হচ্ছে। মুশকিল হল এই কলঙ্ক দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের মুখ পোড়াচ্ছে। আসমুদ্রহিমাচল আবালবৃদ্ধবনিতা কাঠুয়া-উন্নাও কাণ্ডে উত্তাল। দেশের ৪৯ জন আমলা কড়া চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর দায়িত্ব পালনের কথা জানিয়েছেন। দেশের বাইরে রাষ্ট্রপুঞ্জ একই সুরে দুষ্কৃতীদের শাস্তির দাবি তুলেছে। মোদিকে খোলা চিঠি দিয়ে লন্ডনের নামী কলেজগুলির ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন ‘প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। ভারতে যে মেয়েদের যোগ্য সম্মান আছে তা প্রমাণ করুন।’
মনে পড়ে যায় শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের সেই মার্কিন ছাত্রীটির কথা। তিন মাসের ভারত সফরে তিনি বেশ কয়েকবার শ্লীলতাহানির শিকার হন। দেশে ফিরে গিয়ে তিনি পোস্ট-ট্রমাটিক ডিজ অর্ডারে ভোগেন আর সেই বিভীষিকাময় ভারত ভ্রমণের ইতিবৃত্ত সিএনএন-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেন। ‘ইন্ডিয়া: দ্য স্টোরি ইউ নেভার ওয়ান্টেড টু হিয়ার’ শীর্ষক সেই প্রতিবেদনে তরুণীটি জানান যে, ভারত পর্যটকদের স্বর্গভূমি হলেও মেয়েদের কাছে নরকের মতো।
যাই হোক, প্রায় পাঁচ বছর আগে নির্ভয়া কাণ্ডকে ঘিরে গর্জে উঠেছিল আসমুদ্রহিমাচল। দেশের আনাচ-কানাচে দিবারাত্র প্রতিবাদ-ধিক্কার-আন্দোলন-সমাবেশে শামিল হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ। তারপরও কেন যে-কে-সেই? অথবা, আরও তীব্রতর তমসা? উদ্বিগ্ন সুপ্রিম কোর্টকেও কেন প্রশ্ন তুলতে হল ‘কেন বারংবার এত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে?’ সত্যিই আরও গভীরভাবে অনুসন্ধানের প্রয়োজন ধর্ষণ নামক এই ভয়ঙ্কর ব্যাধির নিরাময় বা প্রশমনের উপায় কী।
নানা গুরুবাদ
ধর্ষণের ঘটনা কেন ঘটে তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কারণ শনাক্তকরণের মধ্যেই নিহিত থাকে নিবারণের উপায়। কিন্তু সেখানেই তো বিভ্রান্তি, যাকে বলে গোড়ায় গলদ। মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ, মানে যেটা সব চাইতে বেশি শোনা যায়, তা হল মেয়েদের বেশভূষা। কানাডা তো যথেষ্ট প্রগতিশীল। সেই দেশের এক পুলিস কী করে বলে বসলেন ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে ‘স্লাট’ মেয়েদের মতো পোশাক পরা বন্ধ করতে হবে? ২০১১-র এই মন্তব্যের পর পৃথিবী জুড়ে সমালোচনার ঝড়, কত প্রতিবাদ, চালু হল ‘স্লাট ওয়াক’। তবুও কি ধারণার কোনও পরিবর্তন হল? সমাজবাদী পার্টির নেতা আবু আজমি মেয়েদের পোশাকে ধর্ষণের রসদ খুঁজে পেয়ে বলেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্যের পোশাকই নারীর শ্লীলতাহানির মূল কারণ। পোশাকের বাইরেও ধর্ষণোদ্দীপক কিছু কারণের সন্ধান দিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন দিকের নামীদামি কিছু মানুষ। যেমন, মেয়েরা লিপস্টিক ব্যবহার না করলেই ভালো, যদিও বা করে তা যেন প্রগাঢ় লাল না হয়। কো-এড শিক্ষাপদ্ধতি নিষিদ্ধ করা উচিত। নাইট শো-তে সিনেমা-থিয়েটার দেখতে যাওয়া ঠিক কাজ না। রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে ফুচকা, চাউমিন কিংবা একা রেস্তরাঁয় কাটলেট, বিরিয়ানি খাওয়া বিপজ্জনক। মেয়েদের হাতে যেন মোবাইল ফোন না থাকে...। এইরকম নানা প্রস্তাব, উপদেশ, নিষেধাজ্ঞা সমাজের বিভিন্ন বিভাগের অভিভাবকরা অকাতরে বিলি করছেন, কখনও তাঁরা ধর্মীয় গুরু কখনও বা রাজনৈতিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক গুরু। লক্ষ করার বিষয় হল এদের সমস্ত বাণীই মেয়েদের উদ্দেশে নিঃসৃত। ব্যতিক্রম যা আছে যৎসামান্য এবং সেটাও হাস্যকর। এই যেমন হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌতালা মহাশয় রজনীশীয় সম্ভোগ তত্ত্বের পথে গিয়ে বলেন বিবাহযোগ্যতার ন্যূনতম বয়সসীমা কমিয়ে দিলেই নাকি সমাজে ধর্ষণের হারও কমে যাবে। পুরুষেরা ধর্ষণোদ্যত হলে মেয়েরা কী করবে তারও উপায় বাতলে দিয়েছেন এক ধর্মীয় গুরু। তাঁর কথায় সেই সময় মেয়েদের উচিত বেদমন্ত্র উচ্চারণ এবং ধর্ষকামীদের ভাই বলে সম্বোধন করা। এই সম্বোধনতত্ত্ব প্রসঙ্গে আর একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে যা ২০০৫ সালে ঘটে। ৬২ বছরের আলি মহম্মদ তাঁর পুত্রবধূকে (যে কি না পাঁচ সন্তানের মা) ধর্ষণের পর পঞ্চায়েত প্রধানরা বিধান দিয়েছিলেন ওই মহিলা যেন শ্বশুরকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করে এবং স্বামীকে ছেলে হিসাবে বিবেচনা করে সেইভাবে আচরণ করে। মুজফ্ফরনগরের এই ঘটনা দেশে আলোড়ন তৈরি করেছিল এবং শ্বশুর বাবাজির ১০ বছরের জেল হয়।
কেন ধর্ষণ কিংবা কী তার প্রতিষেধক সেই সম্পর্কে এইসব গুরুবাদ যে সমস্যা সমাধানের পথে অন্তরায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সঠিক চিকিৎসার প্রধান শর্ত হল সঠিক রোগ নির্ণয়। ধর্ষণ মোকাবিলায় এই অযৌক্তিক ব্যাখ্যাসমূহ সমাধানকে করছে সুদূর পরাহত। শুধু তাই নয়, অনেক সময় ধর্ষণ-বিরোধী কর্মকাণ্ডের একটা বড় অংশের অপচয় ঘটছে এইসব গুরুবাদ ও তজ্জনিত ফতোয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। একটা উদাহরণ দিই। দিল্লির বাসে গণধর্ষণের তখন এক মাসও হয়নি, দেশের অন্যপ্রান্তে সতেরো বছরের এক ছাত্রীকে অপহরণ করে ধর্ষণ করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া এক ছাত্র ও এক বাস কন্ডাক্টর। পুদুচেরির সরকার ফরমান জারি করে স্কুলছাত্রীদের ওভারকোট পরতে হবে যাতে ছেলেদের চোখে শরীর ঢাকা থাকে। কিন্তু বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলনে সরকার সেই ফরমান তুলে নেয়। কথা হল, এই আন্দোলনটা যদি পোশাকের ফতোয়ার বিরুদ্ধে না হয়ে ধর্ষণের বিরুদ্ধে হতো, সেটা কি আরও ভালো হতো না? কাজেই চাই সমস্যার গভীরে গিয়ে তথ্যনির্ভর বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ।
চাই বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ
৯/১১-র সন্ত্রাসবাদী হানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর দুনিয়া জুড়ে একটা চর্চা শুরু হয়েছিল মানুষ কেন সন্ত্রাসবাদী হয়। আর্থ-সামাজিক কারণ অনুসন্ধানের সঙ্গে সঙ্গে স্নায়বিক বা শারীরবৃত্তীয় কারণ নিয়েও বিস্তর গবেষণাধর্মী কাজ হয়েছে। সেই অন্বেষণ আজও চলেছে। ধর্ষণের পিছনেও সেই বায়োলজি, কেমিস্ট্রি বা বায়োকেমিস্ট্রি কীভাবে কাজ করে সেই বিশুদ্ধ বিজ্ঞানে না ঢুকেও বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টি দিয়ে সমস্যাটা বোঝা দরকার।
পোশাকের কথাই ধরা যাক। মেয়েদের হ্রস্ব পোশাকই যদি ধর্ষণের কারণ হয় তাহলে বোরখা পরিহিতা কিংবা শাড়ি পরিহিতা ব্রীড়াবনত মহিলাও কেন ধর্ষণের শিকার হয়? মেয়েদের বেশভূষাকে দায়ী না করে যাঁরা পুলিস, বিচার, শাস্তি এই তিনের তৎপরতার কথা বলেন তারা তাও কিছুটা সদর্থক যুক্তি খাড়া করেন। তবে একথাও জোর দিয়ে বলা যায়, শাস্তি কিছুটা প্রতিবন্ধকতার কাজ করলেও সম্পূর্ণ প্রতিরোধক নয়। সুনীল সুরেশ নামে সেই বর্বরটির কথা মনে পড়ে? একটি শিশুকে ধর্ষণ করে খুনের অপরাধে ২০০৩ সালে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায় নাসিকের দায়রা আদালত। পরে বম্বে হাইকোর্টের রায়ে সতেরো বছরের জেল হয়। সংশোধনাগারে ভালো ব্যবহারের জন্য ২০১২ সালে সে ছাড়া পায়। সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়ে মুক্তির কিছু দিনের মধ্যেই সে আর একটি শিশুকে ধর্ষণ ও খুনের অপরাধে গ্রেপ্তার হয়। সুতরাং শাস্তির ভয়ই ধর্ষকাম থেকে বিরত রাখার একমাত্র উপায় নয়। অনেকে বলছেন চরম শাস্তি, যেমন ফাঁসি হলে ধর্ষণের হার কমবে। তাহলে তো ধনঞ্জয়ের ফাঁসির পর এদেশে ধর্ষণের ঘটনা আর না হওয়ার কথা ছিল। আসলে পুলিস ও বিচারবিভাগের কাজ যদি সঠিক ও দ্রুত হয় তাহলে শাস্তির ভয় ভালো কাজ করতে পারে। ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে পুলিসের ঢিলেমি, রাজনীতি ও পয়সার অসাধু সংমিশ্রণ একদিকে, অন্যদিকে বিচারবিভাগীয় দীর্ঘসূত্রিতা—এই দুটি নেতিবাচক দিক জারি থাকায় অপরাধীদের কাছে শাস্তির ভয় অনেকটাই কম ঠেকে। ২০১৩-র ২২ জানুয়ারি নবি মুম্বইয়ে ৫৩ বছরের এক প্রৌঢ় পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করে খুন করে। চার্জশিটের দু’মাসের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে আদালত। মনে করা হচ্ছে এ ধরনের মামলায় এত তাড়াতাড়ি শাস্তি এই প্রথম।
দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের সাত মাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার মধ্যেও অনেকে ব্যতিক্রম দেখছেন যা আশার আলো। কিন্তু আবারও স্মরণ করিয়ে দেওয়া ভালো যে, পুলিস ও বিচারবিভাগের যৌথ অকর্মণ্যতার কারণে ধর্ষকদের দোষী সাব্যস্ত হওয়া ও শাস্তি পাওয়ার হার এদেশে ভয়ঙ্কর ভাবে কম। ২০১২-তে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর হিসাবে প্রায় ২৫ হাজার ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়, যার মাত্র ২৪ শতাংশ ক্ষেত্রে অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছে শাস্তি পাওয়ার জন্য।
কামদুনি গণধর্ষণ কাণ্ডের পর সেখানে যে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল সেখানে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি অন্যান্য যে সব দাবি ছিল তা হল পাকা রাস্তা, রাস্তায় স্ট্রিট ল্যাম্প, হাইস্কুল এবং পুলিস ফাঁড়ি। পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ কিংবা দিল্লি গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ঘটনাস্থল তো মেট্রোপলিটন দুই শহরে, এমনকী রাজ্য ও দেশের রাজধানীতে। সেখানে তো রাস্তা-লাইট-স্কুল-পুলিসের প্রাচুর্য। তবুও তো নৃশংস ঘটনা ঘটল। আর একটা কথা— শুধু পুলিস দিয়ে যেমন সমাজকে ধর্ষণমুক্ত করা যাবে না, আবার অত পুলিস জোগান পাওয়াও অসম্ভব। একটা পরিসংখ্যান দিই। ভারতের আয়তন প্রায় ৩২ কোটি ৮৭ লক্ষ বর্গকিমি যেখানে প্রায় ১২১ কোটি লোকের বাস। সারা দেশে মোট পুলিসের সংখ্যা ১৫ লক্ষ ৮৫ হাজার ১১৭ জন। তাহলে প্রতি হাজার জনের জন্য ১.৩ জন এবং প্রতি ১০ বর্গকিমিতে মাত্র ৫ জন পুলিস। অর্থাৎ পুলিসকে যদি রক্ষক হিসাবে ধরি তাহলে দেশের বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড এবং সেখানে বসবাসকারী মানুষ অরক্ষিত।
রক্ষকই যে ভক্ষক
সর্ষেতেই যে ভূত!
গভীর রাতে ধর্ষিতা থানায় অভিযোগ জানাতে এসে ওসি-র দ্বারা আবার ধর্ষিতা হয়, এমন ঘটনা যেমন আছে, তেমনই রাস্তার ধারে ঝুপড়ির মহিলাকে ধর্ষণ করেছে পুলিস এমনও আছে। নানাবিধ পাপাচারের বিরুদ্ধে যে তহেলকারের ভূমিকা সর্বজনবিদিত তার প্রাক্তন সম্পাদকের বিরুদ্ধে সহকর্মীকে যৌন নিগ্রহের ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ। ৭৪ বছরের বিখ্যাত ধর্মগুরু ষোড়শী কিশোরীকে যৌন নিগ্রহের অপরাধে ধৃত। কত মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ। এক রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর ধর্ষণের ভিডিও সিডি প্রকাশ পাওয়ায় তিনি পদত্যাগ পর্যন্ত করেন। ডাক্তারের দ্বারা রোগিণীর শ্লীলতাহানির ঘটনা বহু। বাকি রইল শ্রেষ্ঠ সমাজবন্ধু শিক্ষকের কথা। শিক্ষকদের দ্বারা শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সের ছাত্রী বা সহকর্মিণীকে ধর্ষণের ঘটনা বহু। সাত মাসের গর্ভবতী মহিলাকে ধর্ষণ করেছেন শিক্ষক এমন ঘটনা তো এই রাজ্যেই আছে। শ্রেষ্ঠ সমাজবন্ধুদের হাতেই যখন নারীর শ্লীলতা, মর্যাদা লুণ্ঠিত, তখন পুলিসি নিরাপত্তার কথা হাস্যকর ঠেকে না কি? বাইরের লোক, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদেরও বাদ দিন, পিতৃসঙ্গও যে বিপজ্জনক হয়েছে! পেশায় অটোচালক এক ব্যক্তি তার বছর কুড়ির মেয়েকে প্রায় চার বছর ধরে ধর্ষণ করেছে তিন সন্তানেরও জন্ম দিয়েছে। শুধু ধর্ষণ নয়, একবার মেয়ের কানও কেটে দেয় সে। তামিলনাড়ুতে ঘটা এই ঘটনাটির পর বাইরের নিরাপত্তার কথা বড্ড অসার মনে হয়।
তাহলে উপায়
ধর্ষকদের টার্গেট শিশু থেকে বৃদ্ধা যে কোনও বয়সি। ধর্ষণ শুধু নয়, যৌন নিপীড়ন করে খুন। গর্ভবতী মহিলাকেও ধর্ষণ। সুস্থ সংস্কৃতির ক্রমাগত চর্চা ছাড়া ধর্ষণ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। বিভিন্ন ক্লাব ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলিকে এই আন্দোলনে শামিল করতে হবে। রাজনৈতিক, ধর্মীয়, আর্থিক, লিঙ্গীয় ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে গিয়ে একযোগে সমাজের নজরদারি ও তার বিশোধনের কাজটা চালাতে হবে।
হাল ছেড়ে দিয়ে প্রাক্তন সিবিআই প্রধান যা বলেছেন (‘ধর্ষণ না ঠেকানো গেলে তা এনজয় করাই বুদ্ধির কাজ’) সেটা সমাজকে আরও ভয়ঙ্কর পথে ঠেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুঘটনের কাজ করবে। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এইসব বিষাক্ত অর্বাচীন মন্তব্যের বিরুদ্ধেও লড়াই জারি রাখতে হবে। আর হ্যাঁ, বছরে একবার পক্ষকাল ব্যাপী ‘নারী নিগ্রহ প্রতিরোধ দিবস’-এর উদ্যাপন-মুখরতায় মগ্ন থাকলেই চলবে না। কারণ, এই সংগ্রাম প্রত্যেকের, প্রত্যহের, প্রতি মুহূর্তের।