বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
অবিনাশচন্দ্র চমকে উঠলেন, ইনি বাল গঙ্গাধর তিলক! তিনি তাঁকে প্রণাম করে ক্ষমা চাইলেন। অবিনাশচন্দ্রকে হাত ধরে বুকে টেনে নিয়ে তিলক বললেন, ‘তুমি তো অন্যায় কিছু করনি। ক্ষমা কীসের?...অরবিন্দ বিশ্রাম করছে বুঝতে পেরেই আমার নাম পরিচয় তোমায় দিইনি।’
সেই লোকমান্য তিলককেই ১৯০৭ সালের অক্টোবরে কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন অরবিন্দ। পরে লালা লাজপত রায় জেল থেকে মুক্তি পেলে তাঁকে কংগ্রেসের হাল ধরার অনুরোধ জানান স্বয়ং তিলক। কিন্তু কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ গোলমাল দেখে সভাপতি হতে রাজি হলেন না লাজপত রায়। তাঁর এ সিদ্ধান্তকে ২০ ডিসেম্বর ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকায় ‘A fatal blunder’ বলে ঘোষণা করেন অরবিন্দ। পরের দিনই সদলবলে সুরাট রওনা দেন তিনি। কী মন নিয়ে অরবিন্দ সুরাট কংগ্রেসে যান— সেই মনের সন্ধান করেছেন ইংরেজ সাংবাদিক Navinson। এই ঘটনার কিছুদিন আগে অরবিন্দ একটি চিঠিতে স্ত্রী মৃণালিনীকে লিখেছেন, ‘আমি আর নিজের ইচ্ছাধীন নই। যেইখানে ভগবান আমাকে নিয়া যাইবেন, সেইখানে পুতুলের মতো যাইতে হইবে। যাহা করাইবেন, তাহা পুতুলের মতো করিতে হইবে। এখন এই কথার অর্থ বোঝা তোমার পক্ষে কঠিন হইবে।’
এ সম্বন্ধে গিরিজাশঙ্কর রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘লক্ষ্য করিবার বিষয় অরবিন্দ মেদিনীপুর, সুরাট পুতুলের মত যাতায়াত করিতেছেন। বাহিরের একটি শক্তি দ্বারা তিনি পুতুলের মতো পরিচালিত হইতেছেন। এই শক্তিকে তিনি ভগবান বলিয়া কল্পনা করিতেছেন। তিনি আর এখন নিজের ইচ্ছায় কোন কর্ম্মই করিতেছেন না।’
...
সুরাট কংগ্রেসে যাওয়ার সময় দু’টি ঘটনায় উদ্বেল ছিল অরবিন্দের মন। ছোটলাট ফুলার ও ফ্রেজার বধের ব্যর্থ চেষ্টার গ্লানি। তাছাড়া মাত্র কয়েকদিন আগে (৭ ডিসেম্বর, ১৯০৭) মেদিনীপুরে কংগ্রেসের নরমপন্থী বা মডারেটদের পরিত্যাগ করে তিনি চরমপন্থীদের নিয়ে একটি পৃথক সভা করে আসেন। তিনি বুঝতে পারেন, মডারেটদের সঙ্গে একত্রে পথচলা তাঁর পক্ষে আর সম্ভব হবে না। কারণ, মডারেটদের লক্ষ্য— ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন। অরবিন্দের লক্ষ্য— পূর্ণ স্বাধীনতা। আসন্ন রাজনীতিক কুরুক্ষেত্রের আশঙ্কায় অরবিন্দ ও তাঁর অনুগামীরা বম্বে মেলে চড়ে দল বেঁধে সুরাটযাত্রা করেন।
এদিকে, বারীন ঘোষের আত্মকাহিনি থেকে জানা যায়, তিনি যে সুরাট যাবেন, তা যাওয়ার দিন সকাল পর্যন্ত জানতেন না। ‘হঠাৎ কে যেন আসিয়া বলিল, তোমার টিকিট কেনা হইয়াছে, তুমি য়্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির ডেলিগেট।’ টিকিট হাতে পেয়ে একটা ক্যানভাস ব্যাগে তল্পিতল্পা মানে খানকতক ধুতি ও পিরাণ নিয়ে বারীনও চড়ে বসলেন বম্বে মেলে। তাঁর অন্য কম্পার্টমেন্ট। সেই সময় তাঁর মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরছে। কীভাবে দেশের সমস্ত বিপ্লব কেন্দ্রকে একসূত্রে গেঁথে ফেলা যায়। খালি তাঁর মনে হচ্ছে, মহারাষ্ট্র প্রস্তুত, শুধুমাত্র বাংলার জন্য অপেক্ষা করছে। সুরাটে গিয়ে এমন অনেক নেতার সঙ্গে দেখা হবে। তাই সেখানে গিয়ে তাঁর পরিকল্পনা নিখিল ভারত বিপ্লবপন্থীর পঞ্চায়েত বসানো।
এরমধ্যেই বম্বে মেল পৌঁছে গেল খড়্গপুরে। অরবিন্দ কাউকে দিয়ে ডেকে পাঠালেন ছোটভাইকে। শীতে ও খিদেয় কাতর বারীন হাজির হলেন সেজদার কাছে। গিয়ে দেখলেন, অরবিন্দ চলেছেন তৃতীয় শ্রেণির কামরায়। ভিতরের অবস্থা নরক গুলজার। জুটে গিয়েছেন বহু রাজনৈতিক ভবঘুরে। বারীনের গায়ে গরম জামা নেই দেখে শ্যামসুন্দরবাবু নিজের ওভার কোটটা তাঁর গায়ে জড়িয়ে দিলেন। হাতে ধরিয়ে দিলেন এক ঠোঙা জলখাবার। খিদের পেটে সেটা তাঁর কাছে মনে হচ্ছিল অমৃত। শেষমেশ ওই কামরাতেই থেকে গেলেন বারীন।
ট্রেন যত এগতে লাগল, তত অপূর্ব এক ব্যাপার আরম্ভ হল। যে স্টেশনেই বম্বে মেল দাঁড়াচ্ছে, সেই স্টেশনেই মানুষের ভিড়। বারীন ঘোষ লিখছেন, ‘প্রতি স্টেশনে লোক লোকারণ্য, প্রতি স্টেশনে ফুলের মালা, লুচি মণ্ডা মেঠাই ও চা! বন্দেমাতরম ধ্বনিতে কানে তালা লাগিয়া গেল, আর চা জলখাবার খাইতে খাইতে সকলেরই পেট হউল ঢোল।’ অরবিন্দের গলার মালায় ট্রেন বোঝাই। অনেক স্টেশনে আবার বহু লোক নিরাশ হয়ে ফিরে গেল। ব্যাপার কী? আসলে অনেকেরই ধারণা ছিল, অরবিন্দের মতো দেশের গণ্যমান্য লোক নিশ্চয়ই ট্রেনের প্রথম শ্রেণিতে কিংবা অন্তত দ্বিতীয় শ্রেণিতে আসছেন। তাই প্রথম শ্রেণিতে তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে তৃতীয় শ্রেণিতে পৌঁছনোর আগেই ট্রেন দিচ্ছিল ছেড়ে।
নাগপুর ও অমরাবতী স্টেশনে ট্রেন থেমেছিল বেশ অনেকক্ষণ। ওই দুই স্টেশনে অরবিন্দ কামরা থেকে বেরিয়ে এসে ‘লোক-সমুদ্রে’র সামনে বক্তৃতা দেন।
...
সুরাট স্টেশনের কাছে কংগ্রেস-ক্যাম্প সংলগ্ন মডারেটদের তাঁবু সাহেবি কেতায় সাজানো। আর অরবিন্দ আশ্রয় নিলেন এক মন্দিরে। লোকমান্য তিলক আশ্রয় নিলেন অন্য একটি মন্দিরে। অরবিন্দ ও তিলক ব্যস্ত নানা শলাপরামর্শে। হাজার হাজার মানুষ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। জনস্রোতের বিরাম নেই। বারীন ঘোষ তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘একদিন আহারে বসিতে গিয়া দেখিলাম, তিলকের পাশে এক পঙ্ক্তিতে বসিয়াছেন চিদম্বরম পিলে, হায়দার রেজা, অরবিন্দ আরও কত কে। ভারতের এমন প্রদেশ নাই যেখানকার হিন্দু মুসলমান সে পঙ্ক্তিতে নাই!’ অরবিন্দ, তিলক, খাপার্দে, মুঞ্জে প্রমুখ নেতা ভিতরে ভিতরে কী পরামর্শ করতেন তা জানতেন না বারীন। কারণ তাঁর এই অধিবেশন নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই। তিনি রয়েছেন নিজের তালে। সর্দার অজিত সিং, সুফি অম্বাপ্রসাদের মতো নেতারা লালা লাজপত রায়ের সঙ্গে দেশান্তরী দশা থেকে সবে মুক্তি পেয়েছেন। বারীন গিয়ে আলাপ করেন অজিত সিংয়ের সঙ্গে। খোঁজ পান মহারাষ্ট্রের তিন বিপ্লবী নেতার। তাঁর কথায়, ‘তাঁহারা নিরীহ ডেলিগেট সাজিয়া কংগ্রেসের তামাসা দেখিতে আসিয়াছেন।’
...
১৯০৭-এর ২৬ ডিসেম্বর। বেলা আড়াইটের সময় শুরু হল কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশন। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সভাপতি হিসেবে রাসবিহারী ঘোষের নাম প্রস্তাব করতেই শুরু হয়ে গেল গোলমাল। এ ঘটনা প্রসঙ্গে সুরেন্দ্রনাথ আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, ‘যাঁরা ছোটলাট ফ্রেজারকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁরাই মডারেটদের বিরুদ্ধে গোলমাল করে কনফারেন্স ভেঙে নিজেদের স্বতন্ত্র সভা করেছিলেন।’ বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যাঁরা অন্ধকারে ফ্রেজারকে হত্যার চেষ্টা করেছিল, তাঁরা অরবিন্দেরই অনুগামী।
যাইহোক, সুরাট কংগ্রেসের প্রথম দিনের অধিবেশনেই শুরু হয়ে গেল তুমুল গণ্ডগোল। সুরেন্দ্রনাথ সভাপতি নির্বাচন সম্বন্ধে বক্তৃতা দিতে ওঠা মাত্রই ‘শেম শেম দেশদ্রোহী’ ইত্যাদি রব উঠল। লক্ষ্য একটাই, যেভাবে হোক রাষ্ট্রগুরুকে অপদস্থ করে তাঁর বক্তৃতা থামিয়ে দেওয়া। এমনকী, কেউ কেউ ‘হুক্কা হুয়া’ করে শেয়ালের আওয়াজও করতে থাকলেন। সেই দিনকার মতো অধিবেশন পণ্ড হয়ে গেল।
সুরেন্দ্রনাথ সুরাটে যেখানে উঠেছিলেন, সেখানে বাংলার সমস্ত প্রতিনিধিকে ডেকে পাঠালেন। তাঁর উদ্দেশ্য, সকলকে বুঝিয়ে একমত করতে পারলে বাংলার রায় অন্যান্য প্রদেশের প্রতিনিধিরা মেনে নেবেন। চরমপন্থী ও নরমপন্থীদের মহামিলনের নেপথ্যসভা বসল। পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেই সুরেন্দ্রনাথ বললেন, ‘এসো, এসো সব মিটমাট করে ফেলো। আমরা বাংলা একত্র থাকলে ওরা করবে কী!’
এই নেপথ্যসভাতেও হল অনেক তর্ক-বিতর্ক, অনুনয়-বিনয়। কিন্তু সমাধান অধরা। অবশেষে সুরেন্দ্রনাথের আদেশে অম্বিকাবাবু একটি কাগজে ‘মিলনসূচক অঙ্গীকার’ লিখে সই করানোর জন্য সকলের কাছে ঘুরতে লাগলেন। সেটা পড়ে এ বলেন, ওকে দেখান। ও বলে উনি যদি সই করেন, দেখুন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মেদিনীপুরের বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। যিনি পরবর্তীকালে আলিপুর বোমার মামলায় কানাইলালের সঙ্গে রাজসাক্ষী নরেন গোঁসাইকে গুলি করেছিলেন। তারপর তাঁর ফাঁসি হয়। সেই সত্যেন্দ্রনাথের কাছে আসতেই অম্বিকাবাবুকে বললেন, ‘দেখি মশাই, আমায় দিন। আমি সই করছি।’ যেই অম্বিকাবাবু কাগজটি তাঁর হাতে দিয়েছেন, অমনি তিনি সেটা ছিঁড়ে তাল পাকিয়ে দিলেন। ফলে অচিরেই ভেঙে গেল মিলনোৎসব!
শুরু হল দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন। রাসবিহারী ঘোষকে সভাপতি নির্বাচন করা নিয়ে ফের শুরু হল হট্টগোল। রাসবিহারীকে সভাপতি করার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করলেন তিলক। বার বার বলা সত্ত্বেও তিনি বসলেন না। তিলকের একটাই কথা, ‘আপনারা আমার এই অ্যামেন্ডমেন্ট না শোনা পর্যন্ত আমি এমনি দাঁড়িয়ে থাকব।’
পরবর্তী ঘটনাস্রোতের কথা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী থেকে জানা যায়। তিনি লিখেছেন, ‘জনতা মঞ্চের দিকে ধাবিত হলেও আমি সেখানেই রহিলাম। আমার কয়েকজন বন্ধু আমাকে রক্ষা করেছিলেন। পরে আমাকে, স্যার ফিরোজ শাহ মেটাকে ও অন্যান্য কয়েকজনকে তাঁরা পিছনের তাঁবুতে নিয়ে গেলেন এবং পুলিস এসে প্যান্ডেল হতে সমস্ত লোকজন সরিয়ে দেন। এমনিভাবে অবসান হল কংগ্রেসের এক স্মরণীয় অধ্যায়ের এবং শুরু হল এক নব অধ্যায়ের।’
সুরাটের দক্ষযজ্ঞের দৃশ্যেও অবিচল অটল অরবিন্দ। অধিবেশনস্থলে যখন ‘মার মার’ রব উঠেছে, চারদিকে জুতো, লাঠি, চেয়ার প্রভৃতি শন শন করে ছুটছে, তখন অরবিন্দ বসে আছেন শান্ত মুখে। সামান্য বিচলিত হওয়ার লক্ষণ নেই তাঁর মধ্যে। নেই আত্মরক্ষার জন্য একটুও ব্যস্ততা। অবশেষে পুলিস এসে প্যান্ডেল খালি করে দিল। কয়েকজন অনুগামীর সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এলেন অরবিন্দ।
ইতিহাসের এক যুগসন্ধিক্ষণেও মত-পথের কারণে পরাধীন দেশের মানুষের মধ্যে কী বিরোধ-বিচ্ছেদ-হানাহানি! তারই এক পরিহাস চিত্র ফুটে ওঠে বারীন ঘোষের লেখায়— ‘পনেরো মিনিট ধরিয়া এই লজ্জাকর ব্যাপার চলিল। পনেরো মিনিট ধরিয়া শিয়াল, কুকুর, ষাঁড়, বিড়াল, ময়ূর, মুরগির ডাক চারিদিক হইতে উঠিয়া এই প্রহসনের সংবর্ধনা করিল। আজ তিলক বলিতে উঠিলেও নরম দলের পার্শী সভ্যরা এইরূপ কোলাহল করিয়াছে। তখন একে একে সভাপতি, সুরেন্দ্রনাথ প্রভৃতি সবার বেলায়ই গরমদলের আটশো ডেলিগেট ও দর্শকদল তাহার চতুর্গুণ কলরব করিয়া ছাড়িল।’
চরমপন্থীরা সুরাট সমরে লড়েছিলেন তিলককে সামনে রেখে। মিতভাষী অরবিন্দের পরামর্শে নিয়ন্ত্রিত ছিলেন তিলক ও তাঁর অনুগামীরা। সুরাটে অরবিন্দ নিজের হাতে তিলকের চেয়ে অধিক ভেঙে ফেলেন আবেদন-নিবেদন সর্বস্ব নরমপন্থী কংগ্রেসকে।
....
শিলাইদহে বসে রবীন্দ্রনাথ শুনলেন সুরাট কংগ্রেস ভণ্ডুল-বৃত্তান্ত। চরমপন্থীদের প্রতি তাঁর সমর্থন অস্পষ্ট থাকেনি কখনও। কিন্তু সুরাটের মারামারি, চেয়ারভাঙা, মাথা-ফাটানো, জুতো ছোঁড়াছুঁড়ির অভব্যতায় আহত হলেন কবি। লিখলেন বিখ্যাত সেই প্রবন্ধ— ‘যজ্ঞভঙ্গ’।
শিলাইদহ থেকেই ১৯০৮ সালের ৮ জানুয়ারি লন্ডনে বন্ধু জগদীশচন্দ্র বসুকে চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, ‘এবার কন্গ্রেসের যজ্ঞভঙ্গের কথা ত শুনিয়াছই— তাহার পর হইতে দুই পক্ষ পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করিতে দিনরাত্রি নিযুক্ত রহিয়াছে। অর্থাৎ বিচ্ছেদের কাটা ঘায়ের উপর দুই দল মিলিয়াই নুনের ছিটা লাগাইতে ব্যস্ত হইয়াছে। কেহ ভুলিবে না, কেহ ক্ষমা করিবে না— আত্মীয়কে পর করিয়া তুলিবার যতগুলি উপায় আছে, তাহা অবলম্বন করিবে। কিছুদিন হইতে গবর্মেন্টের হাড়ে বাতাস লাগিয়াছে— এখন আর সিডিশনের সময় নাই। যেটুকু উত্তাপ এতদিন আমাদের মধ্যে জমিয়াছিল তাহা নিজেদের ঘরে আগুন দিতেই নিযুক্ত হইয়াছে। বহুদিন ধরিয়া বন্দেমাতরম কাগজে স্বাধীনতার অভয়মন্ত্রপূর্ণ কোনও উদার কথা আর পড়িতে পাই না, এখন কেবলি দাঁড়াইয়াছে— চরমপন্থী, মধ্যমপন্থী এবং মুসলমান— চতুর্থ পক্ষটি গবর্মেন্টের প্রাসাদ বাতায়নে দাঁড়াইয়া মুচকি হাসিতেছে। ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানেই বয়। আমাদিগকে নষ্ট করিবার জন্য আর কারো প্রয়োজন হইবে না—মর্লিরও নয় কিচেনারেরও নয়— আমরা নিজেরাই পারিব। আমরা বন্দেমাতরম ধ্বনি করিতে করিতে পরস্পরকে ভূমিসাৎ করিতে পারিব।’ (শেষ)