বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
পর্ব- ২৪
পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়: বাঙালিদের কাপুরুষ বলে তামাশা করত ইংরেজরা। মজফ্ফরপুরে ক্ষুদিরাম-প্রফুল্ল চাকীর বোমাকাণ্ডের পর ১৯০৮ সালের ১৭ মে মারাঠা ন্যাশনাল রিভিউ পত্রিকা লিখল, ‘যে বাঙালিকে আগে ঘৃণা করা হতো, সে বাঙালিকে এখন ভয় করা হয়!’
ব্রিটিশ শাসকদের এই ভয় ধরানোর প্রয়াস শুরু হয়েছিল মুজফ্ফরপুরের ঘটনারও বেশ কয়েক বছর আগে। পূর্ববঙ্গ ও অসমের প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর ছিলেন জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলার। তিনি ছিলেন মানসিক জটিলতায় আচ্ছন্ন। কখনও ভারী খোশমেজাজি, আবার কখনও যেতেন বেজায় চটে। সহ্য করতে পারতেন না ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি। এজন্য স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের সইতে হতো নিষ্ঠুর অত্যাচার। এদিকে, নিজের একটা বিদ্যোৎসাহী ভাবমূর্তি খাড়া করতে তিনি ছিলেন সদা সচেষ্ট। এজন্য বিভিন্ন ধরনের লেখালেখির কাজে ব্যস্ত থাকার ভান করতেন। ছাত্রদের কোনওরকম রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকাটা ফুলার সাহেবের ছিল এক্কেবারে না-পসন্দ। তাঁর শাসন কালে সিরাজগঞ্জের দু’টি স্কুলের ছাত্ররা বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় দু’টি স্কুলেরই ‘অ্যাফিলেশন’ বাতিল করেছিলেন তিনি।
বাঙালির জাত-ক্রোধটা ফুলার সাহেবের উপর ঘনিয়ে উঠেছিল। ঘরে ঘরে লোক তখন ফুলারের মৃত্যু কামনা করছেন। এমনকী ঘাতককে দু’-পাঁচ হাজার বকসিস দেওয়ার অঙ্গীকারও দু’-চারজন করে ফেলেছেন।
ফুলার বধের জন্য বারীন ঘোষকে আগাম এক হাজার টাকা দিলেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র সুরেন্দ্রনাথ। এবার প্রয়োজন অস্ত্রের। নেপালের রাজার অস্ত্র তৈরির কারখানায় ছিল এক বাঙালি মিস্ত্রি। তাকে দলে বাগিয়ে, তার বিদ্যেই মেরে দিয়েছিলেন অরবিন্দ-অনুজ। এপ্রসঙ্গে হেমচন্দ্র কানুনগোও পরে লিখেছিলেন, ‘এই বিদ্যে মেরে নেওয়া কথাটা বারীনের মুখে অনেকবার শুনেছি।’
১৯০৬ সালের মে মাস। অরবিন্দের কাছ থেকে ফুলার বধের নির্দেশ এল। পরবর্তীকালে এবিষয়ে গিরিজাশঙ্কর রায়চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে বারীন বলেছিলেন, ‘ফুলার বধের নির্দেশ নিশ্চয়ই সেজদা (অরবিন্দ) দিয়েছিলেন। নইলে অত বড় কাজ হাতে নিই?’ যাইহোক, ইংরেজ ছোটলাটের পিছু নেওয়া শুরু করলেন বিপ্লবীরা। মেদিনীপুরের একজনের উপর ফুলার বধের ভার পড়ল। ওই মে মাসেরই এক সন্ধ্যায় গোয়ালন্দ যাওয়ার জন্য তিনি ট্রেনে চাপলেন। সন্ধেবেলা তাঁকে শিয়ালদা স্টেশনে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত।
ফুলার তখন শিলংয়ে। ৮ জুন শিলংয়ে শ্বশুরমশাই ভূপাল বসুকে ইংরেজিতে একটি চিঠি লিখলেন অরবিন্দ। যার মোদ্দাকথা, ‘বারীন অসুস্থ। আমি তাকে শিলংয়ে চেঞ্জে যেতে বলছি। যদি সে শিলং যায়, তবে আমি জানি যে, আপনি বারীনের ভার নেবেন এবং তাঁকে যত্ন করবেন।’ দুটো বোমা ও দুটো রিভলবার নিয়ে বারীন যাত্রা করলেন ছোটলাটের গ্রীষ্মাবাস শিলংয়ের উদ্দেশে। সেখানে পৌঁছেই টেলিগ্রাম করলেন কলকাতায়। পাঠাতে হবে একজনকে। নাম প্রস্তাব হল ক্ষুদিরামের। বয়স কম বা অন্য কোনও কারণে সেই নাম নাকচ হল। ফুলার সংহারের গুরুদায়িত্ব পেলেন হেমচন্দ্র কানুনগো। ভূপেন দত্ত তাঁকে পৌঁছে দিয়ে এলেন শিয়ালদহ স্টেশন পর্যন্ত। গন্তব্য শিলং। কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখেন টোঙ্গায় করে ফিরছেন বারীন। হতভম্ব হেমচন্দ্র। বারীন বললেন, ‘এখানে হবে না। গুয়হাটি ফিরে যেতে হবে।’
এরমধ্যে ফুলার হঠাৎ গেলেন বরিশালে। বিপ্লবীরাও শিকারের সন্ধানে অনবরত ছুটছেন। বরিশাল থেকে গুয়াহাটি, গুয়াহাটি থেকে রংপুর, রংপুর থেকে কলকাতা। এত ঘুরে অর্থ-সঙ্কটে বিপর্যস্ত বিপ্লবীরা। এপ্রসঙ্গে হেমচন্দ্রের লেখআ থেকে জানা যায়, ‘সেখানে ক-বাবুর (অরবিন্দ) কাছে সে যাবৎ ফুলার-বধ চেষ্টার সমস্ত বিবরণ বলে টাকার অভাব জানাল। তিনি তৎক্ষণাৎ প্যাঁটরা হাতড়ে সব সমেত পঁচিশ টাকা মাত্র তাঁর সম্বল আছে দেখালেন। তা-ই সাঙ্কোর (ছদ্মনাম) হাতে তুলে দিলেন। দরকারি দু’-একটা কিছু কিনে সে সেদিনই রংপুরে যাত্রা করল।
আমাদের কুইকসোট স্যাঙ্কোর মারফত আশানুরূপ টাকা না পেয়ে ক-বাবুকে টাকা পাঠাবার জন্য আবার তাগাদা দিয়েছিল। টাকার কোনও উপায় না দেখে ক-বাবু নরেন গোঁসাইকে রংপুরে পাঠিয়ে আদেশ দিলেন, ডাকাতি করে টাকা সংগ্রহ করা চাই।’ উত্তর-বিপ্লবকালে হেমচন্দ্র কানুনগোর লেখা ‘বাংলার বিপ্লব প্রচেষ্টা’ বইয়ে বহু ব্যাপারে অরবিন্দ-বিমুখতা অস্পষ্ট নয়। তাঁর বহু বক্তব্য উস্কে দেয় নতুন বিতর্ক। পরবর্তীকালে হেমচন্দ্রের কাছে হয়তো বিশেষ এক রাজনৈতিক বিশ্বাস বা আনুগত্যের কারণে তাঁর বিপ্লবী জীবনের প্রথমদিকের পেরিয়ে আসা পথের অনেকটাই বিবেচিত হয়েছে ভ্রান্ত বলে। কাজেই কখনও কখনও তাঁর অরবিন্দের বিরুদ্ধে উগরে দেওয়া ক্ষোভ বিস্ময়কর ঠেকে না তেমন।
এদিকে একসময় খবর এল ফুলার রংপুরে না গিয়ে ‘ব্রহ্মকুণ্ড’ স্টিমারে চেপে গোয়ালন্দের পথে রওনা দিয়েছেন। ছোটলাট ট্রেন যোগে যাবেন কলকাতা। প্রফুল্ল চাকী তাঁর পিছু নিয়ে শিয়ালদা পৌঁছে শুনলেন ফুলারের গাড়ি যাবে নৈহাটি। ধাওয়া করলেন সেখানেও। কিন্তু নৈহাটি পৌঁছে তিনি শুনলেন ছোটলাট হুগলি পুল পেরিয়ে ইআইআর রেল ধরে সোজা বম্বে রওনা দিয়েছেন। শিকার হাতছাড়া। হতাশায়-ক্লান্তিতে-শ্রান্তিতে নৈহাটির প্ল্যাটফর্মেই বসে পড়লেন প্রফুল্ল। তাঁর চোখমুখ দেখে ভয় পেয়ে গেলেন সহযোদ্ধারাও। কাছেই ছিল এক ফেরিওয়ালা। একটা সোডা কিনে তাঁকে খাইয়ে— বাকিটা চোখে মুখে দিতে খানিকটা সুস্থ হলেন প্রফুল্ল। মিনিটখানেক পরেই চলে এল কলকাতাগামী ট্রেন। সেই ট্রেনে কলকাতা ফিরেই বিপ্লবীরা সোজা ছুটলেন অরবিন্দের কাছে। সব শুনে তাঁদের নির্বিকারভাবে বাড়ি যেতে বললেন তিনি।
এদিকে, নানা কারণে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করে বম্বে থেকেই বিলেত ফিরে গেলেন ফুলার।
....
বাংলার তরুণতুর্কিরা আঘাতে আঘাতে টুকরো টুকরো করে দিতে চান ব্রিটিশ শাসকের চাবুককে। ১৯০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর। মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের কাছে রেললাইনের নীচে ডিনামাইট পুঁতে রেখে ছোটলাট ফ্রেজারের ট্রেন উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হল। এই বছরই ২৩ ডিসেম্বর গোয়ালন্দ স্টেশনে বিপ্লবী শিশির গুহর গুলিতে গুরুতর জখম হলেন ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট বি সি অ্যালেন। এর কয়েক মাস পরই চন্দননগরের মেয়র তাদিভিলের বাড়িতে বোমা ছোড়া হয় বারীন ঘোষের নেতৃত্বে।
এই কর্মকাণ্ডের মধ্যেই ১৯০৮-এর ফেব্রুয়ারি মাসে দেওঘরের কাছাকাছি দিঘিরিয়া পাহাড়ে বোমা বিস্ফোরণের পরীক্ষা করেন বিপ্লবীরা। আসে সাফল্য। কিন্তু এর প্রতিদানে হারাতে হয় তরুণ বিপ্লবী প্রফুল্ল চক্রবর্তীর অমূল্য জীবন।
নিজেদের তৈরি বোমা পরীক্ষার জন্য তৈরি হয় বিপ্লবীদের পাঁচজনের টিম— উল্লাসকর দত্ত, বারীন ঘোষ, প্রফুল্ল চক্রবর্তী, বিভূতিভূষণ সরকার ও নলিনীকান্ত গুপ্ত। বোমা তৈরির প্রধান কারিগর উল্লাসকর। বাকিরা সহকারী। পরীক্ষার জন্য নির্জন স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয় দিঘিরিয়া পাহাড়। দেওঘর পৌঁছে পাঁচ বিপ্লবী উঠলেন রেললাইনের কাছে একতলা কুঠিবাড়িতে। শান্ত, স্তব্ধ, নির্মল পরিবেশ। সেখান থেকে মাইলখানেকের মধ্যে রোহিণী গ্রাম। সেখানে একটি বাগানবাড়িতে তখনও থাকতেন অরবিন্দের মা— স্বর্ণলতা দেবী। জঙ্গলাকীর্ণ কুঠিটি বিশাল বড় আটচালা ঘর (যদিও দেওয়াল ও মেঝে পাকা)। তবে, সংস্কারের অভাবে খানিকটা জীর্ণ। স্থানীয় মানুষ বাড়িটিকে বলতেন, ‘মেমসাহেবের কোঠি’। কারণ, অরবিন্দের মা ওই অঞ্চল ‘মেমসাহেব’ নামেই পরিচিত ছিলেন।
যাইহোক, এক বিকেলে পাঁচজন চললেন দিঘিরিয়া পাহাড়ের জঙ্গল ভেদ করে পছন্দসই জায়গায়। বিপ্লবী নলিনীকান্তের বর্ণনা থেকে জানা যায়, সেদিনের বোমা বিস্ফোরণের অবিস্মরণীয় ঘটনাটি। একটা প্রকাণ্ড পাথর সেখানে দেখা গেল— একদিক খাড়া উঁচু, বুক-প্রমাণ হবে। আর একটা দিক ক্রম ঢালু হয়ে নীচে চলে গিয়েছে বিশ-পঁচিশ হাত। প্ল্যান হল প্রফুল্ল বোমাটি ছুড়বে খাড়া দিকটির অবডালে পিছনে দাঁড়িয়ে, ঢালু দিকটার দিকে তাক করে। যাতে তিনি ছুড়েই বসে পরতে পারেন। আর বোমা ফাটার টুকরো যেন তার গায়ে না লাগে। উল্লাস থাকবেন পাশে প্রফুল্লকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য। নলিনীকান্ত রইলেন আরও একটু দূরে গাছের উপর। যাতে সবদিকে নজর দেওয়া যায়। বারীন ও বিভূতি রইলেন অন্য দু’দিকে। নলিনী গুপ্ত লিখছেন, ‘আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি পাথরটার দিকে— হঠাৎ দেখি সেখানে একটা আগুনের ফুলকি জ্বলে উঠল, খানিকটা ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ল আর সঙ্গে সঙ্গে কী বিকট আওয়াজ। সমস্ত আকাশটা যেন ছিঁড়ে ফুঁড়ে ফেটে চৌচির হয়ে গেল, শব্দের তরঙ্গ প্রতিধ্বনিত হয়ে গেল... সহর্ষে গাছ থেকে নেমে দৌড়ে উপস্থিত হলাম ঘটনাস্থলে— সাকসেসফুল, সাকসেসফুল চেঁচিয়ে বলতে বলতে। কিন্তু এ কী? এ কী বীভৎস দৃশ্য? প্রফুল্লর দেহ এলিয়ে পড়েছে উল্লাসের বুকের উপরে, উল্লাস দু’হাতে জড়িয়ে ধরেছে তাকে। আস্তে আস্তে শুইয়ে রাখা হল— দেখা গেল কপালের একটা পাশ চৌচির, তার ভিতর দিয়ে খানিকটা ঘিলু বের হয়ে পড়েছে — চোখে দেখা যায় না। আমরা বসে পড়লাম চারপাশে সব চুপচাপ। বারীনদা বললেন— সব শেষ, কোন আশা নেই। নিঃসাড় নিস্পন্দ দেহ। চক্ষু নিমীলিত, প্রশান্ত মুখমণ্ডল।’
বোমা তৈরির সাফল্যের মুহূর্তে নেমে এল গভীর অবসাদ। কিন্তু প্রফুল্লের দেহের সদগতি কী হবে? গাছপালার মধ্যে আগুন জ্বালালে লোক এসে পড়বে। আবার কবর দেওয়াও সম্ভব নয়। কারণ, শক্ত পাথর খুঁড়ে গর্ত করা অসম্ভব। তাই বারীন্দ্রকুমার বললেন, ‘কিছু করবার দরকার নেই— এভাবেই রেখে চলে যাওয়া যাক। এটা যুদ্ধক্ষেত্র। যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের প্রথম সৈনিক তার দেহদান করল— আমাদের এই প্রথম casualty.’
এতক্ষণে বাকিদের দৃষ্টি পড়ল উল্লাসের উপর। একজন বলে উঠলেন, ‘উল্লাসও আহত।’ তাঁর জামায় শত ছিদ্র, রক্তের দাগ সর্বত্র। বারীন ঘোষ বললেন, ‘ওকে এখন দেখা একান্ত প্রয়োজন। যে গিয়েছে, সে গিয়েছে— এখন তা বিবেচনা করবার সময় নেই। আজই ফিরতে হবে কলকাতায়, ডাক্তার দেখানোর জন্যে।’ উল্লাসের চিকিৎসার জন্য এখন একমাত্র ভরসা কলকাতার দেবদূতপ্রতিম চিকিৎসক ইন্দুমাধব মল্লিক।
মৃত বন্ধুকে ফেলে রেখে পাহাড় থেকে নামার সময় কান্নাটা যেন দলা পাকিয়ে গলার কাছে আটকে আসে। নলিনীকান্ত বলে ওঠেন, ‘আমরা এসেছিলাম পাঁচজন, ফিরে যাচ্ছি চারজন।’
শুনে ধমক দিয়ে বারীন্দ্রকুমার বললেন, ‘No sentimentality, please.’
ওইদিন রাতেই আহত উল্লাসকরকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা যাত্রা করেন বারীন। পরের দিন ভোর হতেই নলিনীকান্ত তাকিয়ে থাকেন দিঘিরিয়া পাহাড়ের দিকে। মনে হয়— চিল শকুন উড়ছে পাহাড়টার উপরে। সেদিন অনেক রাতে এসে পৌঁছন উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দেখতে চাইলেন প্রফুল্লর মৃত্যুস্থান। নলিনীকান্ত লিখেছেন— ‘পৌঁছলাম গিয়ে ঘটনাস্থলে। দূর থেকেই দেখলাম পড়ে আছে দেহটি ঠিক তেমনিভাবে, যেমনটি রেখে গিয়েছিলাম, কাপড়-চোপড় গায়ে ঠিক তেমনি, একটু এদিক-ওদিক হয়নি, গন্ধও কিছু নেই এই তৃতীয় দিনে। যেমন গিয়েছিলাম আবার ফিরে এলাম তেমনি, দেহটিকে তেমনি রেখে।’
এদিকে, পুলিস জানাজানির আশঙ্কা তৈরি হল। অতএব, ছাড়তে হবে দেওঘর। কলকাতা ফেরার আগে নলিনী গুপ্তদের মন চাইল দিঘিরিয়া পাহাড়ে গিয়ে প্রফুল্লকে শেষ বিদায় জানিয়ে আসি। পৌঁছে কী দেখলেন তাঁরা? এই বিপ্লবী নিজেই লিখেছেন, ‘শেষ বিদায়ের আগে একবার শেষ দেখবার ইচ্ছা হল আমাদের দিঘিরিয়া পাহাড় ঘটনার চতুর্থ দিনে। উঠলাম গিয়ে যথাস্থানে কিন্তু কী আশ্চর্য! কোথায় সে দেহ? চিহ্নমাত্র কোথাও কিছু নেই। এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে তল্লাশ করা হল— একটা টুকরো কাপড় পর্যন্ত পাওয়া গেল না। জন্তু-জানোয়ারে নিয়ে গেল? কিন্তু এতটুকু চিহ্ন না রেখে? জিনিসটা প্রহেলিকা রয়ে গেল।’
পরে অনেক রকম গুজব ছড়িয়ে পড়ে বিপ্লবী প্রফুল্ল চক্রবর্তীকে নিয়ে। কেউ নাকি তাঁকে দেখেছে কলকাতার রাস্তায়। এমনও শোনা যায় এক সন্ন্যাসী নাকি তাঁর দেহ দেখতে পান এবং বাঁচিয়ে তোলেন ইত্যাদি। সন্দেহ নিরসনের জন্য নলিনীকান্ত গুপ্ত একদিন অরবিন্দকে সটান প্রশ্ন করেন, এ-সকল কাহিনির কোনও ভিত্তি আছে কি না, প্রফুল্লর সত্যিকার খবর কী? অরবিন্দ সুস্পষ্টভাবে বলেছিলেন, ‘ওসব গল্পগুজবই, প্রফুল্ল সত্য-সত্যই মারা গিয়েছে।’