বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
একমাথা আগুন নিয়ে বসেছিল বঁড়শি। দু’চোখ টকটকে লাল। ওর এই উদভ্রান্ত চেহারা, আলুথালু বেশবাস দেখলে যে কেউ মনে করবে রাতে পিশাচ সাধুর সঙ্গে সে-ও পাল্লা দিয়ে নেশা করেছে। সকালে সেই নেশার ঘোর কাটেনি। এখনও খোয়াড়ি ভাঙেনি। মাথার চুলগুলো উসকো খুসকো, ফণা তোলা সাপের মতো সেগুলো মাথা জুড়ে লাফাচ্ছে। বঁড়শি আগুন। কিন্তু সেই আগুনে খইয়ের মতো কথা ফুটছে না। বরং তার কপালের শিরাগুলো দপ দপ করেছে।
সাধু চা চেয়েছেন বেশ কয়েকবার। বঁড়শি চা করে দেয়নি। চা না পেলে মদ খেতে হয়। গ্লাসে ভরে মদ ঢেলে এক চুমুক মেরে সাধু ব্যোমভোলা হয়ে বসে আছেন। তার মনের মধ্যে নানান কথার বুজকুড়ি!
তিনি জানেন, বঁড়শিকে কীভাবে ঠান্ডা করতে হয়। ওর এই মৌনতার সময় কথা বলতে নেই। বঁড়শি এখন মনে মনে কথা বলছে। নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করছে। এখন চুপ করে থাকাই সমীচীন। পিশাচ সাধু তাই করবেন। ওই মেয়ে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া সেরে হঠাৎই উঠবে ঝাড়া মেরে। তারপর আবার দাপাবে। ওই আশ্রমে তিনি এমনটাই দেখেছেন বঁড়শিকে, এখন সংসারে দেখছেন।
কিন্তু তিনি এ-কথা সে-কথায় বড় বেশি কথা বলছেন ইদানীং। কথার মোহে নিজেকে বেসামাল করে ফেলেছেন। এখন আফশোস করছেন। মন বলছে— ওর সর্পতান্ত্রিক বাপের কথা না-তুললেই ভালো হতো। কী যে হল, গড়গড় করে বলে বসলেন। কিন্তু কী কথা বলেছেন তিনি? কী এমন মহাভারত-এঁটো করা কথা বেরিয়েছে তাঁর মুখ দিয়ে? বঁড়শির বাপ তো সর্পতান্ত্রিক, সাপই তাঁর উপাস্য দেবতা, মিথ্যে নয়। ফি বছর বসন্তকালে দেওকি গ্রামের পাগলিমায়ের আশ্রমে গিয়ে পড়ে থাকত। আশ্রমের মা বলত— মায়ের দয়া হয়েছে। কিন্তু ফি বছর কারও মায়ের দয়া হয় না, ওর গা থেকে খোসা ছাড়ে। খোলস! খোলস! পাপের খোলস! বড় তান্ত্রিক ছিল বঁড়শির বাপ। কথা বলত কম, কেন না জিভের মাঝখান দিয়ে চিরে ধরেছিল সাধনকালেই। কিন্তু সেই জিভ ওর লকলক করত গর্ভহীনা-মেয়েমানুষ দেখলেই। পাপিষ্ঠ নিজেকে খেলার পুতুল বানিয়ে ফেলল। সর্প যৌনতার প্রতীক। সাধন করে যে গুণ ওর বাপ রপ্ত করেছিল, সে গুণই ওর কাল হল।
বঁড়শি কী জানে ওর বাপের গুণের কথা?
তাছাড়া তো শুধু গর্ভদান নয়, ওই বাপ মাঝে মাঝে গর্ভ-নষ্ট করার মতো কাজও করত লোভে পড়ে।
পুরনো কথা মনের মধ্যে ঘুরে ফিরে আসে— পিশাচ সাধু গ্লাস তুলে লম্বা চুমুক মারে। ঘরের আলো বড় কম। মনে হয় উঠে গিয়ে লাথি মেরে দেওয়াল ভেঙে দেয়। ক্রমশ তার মাথার মধ্যে অন্ধকার ঢুকছে হু হু করে—
বঁড়শির বাপকে মরতেই হবে বিষে। মরণ ছাড়া ওর গতি নাই। পিশাচ সাধু বিধান দিয়েছিলেন। এই বিধান একান্ত তার নিজের ঘোষণা করা বিধান। এই বিধান তিনি নিজেই সম্পন্ন করেছিলেন। তার জন্যে এতটুকু দুঃখ বা পাপবোধ নেই তাঁর।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, সে-ই গতিই দিয়েছিল বঁড়শির বাপকে। পিশাচ সাধুই তাকে ঠেলে দিয়েছিল মরণের দিকে। গাঁজা সেজে দিয়েছিলেন তিনি। গাঁজার কাপড় সাফিতে বিষ ছিল। সাফিতে রাখা ওই বিষ ঠিক মুখে যাবে। শুকনো কাশি উঠবে অল্প অল্প। কিন্তু নেশায় মশগুল তখন প্রসাদিতে মত্ত। পিশাচ সাধু মদের বোতল খুলে একটু একটু পান করেন, আর অপেক্ষা করেন। সাফি থেকে কখন শুকনো বিষে জর্জরিত হবে সামনের জন, তখন জল চাইবেন, গলা ভেজাতে। জলেও বিষ। পিশাচ সাধু হাসেন— জলে স্থলে বাতাসে বিষ রেখেছি, বাঁচবি কীভাবে?
টান মেরে এলিয়ে পড়েছিল বঁড়শির বাপ। শ্বাস নেওয়ার জন্য হাঁকপাঁক করতে করতে, দম বন্ধ হয়ে গেল যেন। বলল, এট্টু জল দাও বাবা। পিশাচ সাধু জল এগিয়ে দিলেন। মুখে বললেন— চাঁদি! চাঁদি! কলকে খালি। জীবনের কলকেতে আর নেশার বস্তু নাই, আগুন নাই। এবার ফাঁকা কলকের মতো বডি ফেলে দিয়ে ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে যাও!
বঁড়শির বাপ যে আশ্রমে মরল, সেই আশ্রম চত্বরেই মাটি পেল। হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল পিশাচ সাধু, তার যজ্ঞে একটা দান সমাপ্ত হল।
তখন কি জানত, তারই মেয়ে এসে ওর ঘর ঠেলবে? তাকে মৃত্যুবাণ করে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে হবে!
আর যোগীনবাবার মরণ ঘনাইল কেন?
নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে পিশাচ সাধু। মাথা চালায় দ্রুত। মনে মনে কথা আউড়ানোর সুবিধে অনেক, মুখ ফুটে তা আর বাইরে বের হয় না। যা বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল, তা পেট থেকে উঠে বুকের মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে আবার নীচে তলিয়ে যায়।
তাহলে যোগীনবাবার মরণ ঘনাইল কেন?
যোগীনবাবা সব জেনেও অন্ধ হয়ে থাকতেন। বড় সাধক ছিলেন তিনি। পিশাচ সাধু তার কাছে সাষ্টাঙ্গ হতেন। যারা যোগীনবাবার আশ্রমে আশ্রয় নিতে আসত— রাতে ধ্যানে বসে তার সবটা জেনে যেতেন যোগীনবাবা। সে সাধু, না কতটা অসাধু? সে পাপী, আর সে কতটা তাপী? সবটা ধ্যানের আসনেই জেনে যেতেন যোগীনবাবা। অথচ তিনি মুখে কুলুপ দিয়ে থাকতেন। পাপী তাপী সব সময় তার আশ্রম উজাড় করে থাকত। পিশাচ সাধু বার বার সাবধান করেছেন যোগীনবাবাকে। বলেছেন— কী আপনার মোহ বাবা? সাধন ছেড়ে মনোরঞ্জনে মাতছেন?
যোগীনবাবা উত্তর দিয়েছেন, ‘আমি আর কী মনোরঞ্জন করব বাবা? আমি আগেই দেখে ফেলি— কে কী সং সেজে এসেছে। আমি তার সাধু-সাজা রঙে গঙ্গাজল ছেটাই না। থাক-না সাধু-সং সেজে। সাধু-সং সাজতে সাজতে মানুষের যদি সাধু হওয়ার নেশায় পেয়ে বসে তাহলে অনেক লাভ। ভিতর আর বাহিরে লড়াই কে জেতে, কে হারে?’
পিশাচ সাধু বলেন, ‘না, না, বাবা এটা ঠিক করেন না। দোর দেন। দোরে পাহারা বসান। পাপী-তাপীর জন্য এই আশ্রম সাধনক্ষেত্র নয়। সে শ্মশানে যাক—।’
যোগীনবাবা হাসেন, ‘যদি দোর বন্ধ করতে হয়, তাহলে আপনাকেও তো না বলতে হয় গো, মিলিটারি।’
পিশাচ সাধু বুঝেছিলেন, যোগীনবাবা তাকে জেনে-বুঝেই ঠাঁই দিয়েছেন।
যোগীন বাবা দেহ রাখার দু’দিন আগে পিশাচ সাধু শেষবার চেপে ধরেছিলেন। যেমন নিত্যদিন চেপে ধরেন যোগীনবাবাকে। ‘আপনি তো এত কিছু জানেন, আমি একটা হেঁয়ালি দিচ্ছি, এর উত্তর দেন।’
‘বলুন আপনার হেঁয়ালি?’
‘রুগ্ন সন্তানের জন্য এক মা এসেছিল শ্মশানচারী তান্ত্রিক সাধুর কাছে। তান্ত্রিক সাধু বললে, তোর সন্তান তোর কোলে থাকবে না, ভালো চাস তো তাকে দান করে দে আমাকে। মা বুকে পাষাণ বেঁধে তার সন্তান নামিয়ে রাখল তান্ত্রিক সাধুর পায়ের কাছে, শ্মশান ধুলোয়। রাত হচ্ছে। চারদিকে শেয়াল, শকুনের মেলা! সাধু যজ্ঞ করছে। মা আশায় বুক বেঁধে, সাধু কখন লাথি দিয়ে সেই সন্তান ফিরিয়ে দেবে মায়ের কোলে, বলবে, যা নিয়ে যা তোর ছেলেকে। আমি পরের ছেলে নিয়ে কী করব রে? মা বলবে, আমি কানা ফল নেব না, তোমার পায়ের ধুলো মাখিয়ে আমি ভালো ফল এই তুলে নিলাম। এ তোমার সন্তান তুমি একে দেখো। সুস্থ সন্তান কোলে নিয়ে মা ফিরবে শ্মশান থেকে। বাইরে ঝুঝকো আঁধারে তার স্বামী মানে সন্তানের বাপ প্রহর গুনছে। শেয়াল তাড়াচ্ছে, শকুন ওড়াচ্ছে, আঁধার কাটছে। এমনটিই তো হয় গো যোগীনবাবা?’
যোগীনবাবা বলেন, ‘তাই তো হয়, তাই তো হয়ে এসেছে এত কাল? শ্মশানচারী সাধু কী করবে সন্তান নিয়ে? সন্তান থাকবে মায়ের কোলে।’
‘কিন্তু তা তো হয়নি!’ ঘন ঘন মাথা নাড়ায় পিশাচ সাধু। ‘তা তো একদম হয়নি। কেন এমন হল?’
‘তাহলে কী হল?’ যোগীনবাবা মাথা ঝুঁকিয়ে প্রশ্ন করেন।
আঁধার মেখে প্রহর গুনতে গুনতে অধৈর্য হয়ে ছেলের বাপ এসে দাঁড়াল শ্মশানভুঁয়ে, যজ্ঞের সামনে। কিন্তু সেখানে এসে সে পাথর হয়ে গেল! মিলিটারি মানুষ তাই ধপ করে পড়ে গেল না। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। দেখল, তার তিন বছরের রুগ্ন ছেলে আর তার স্ত্রীর ধড় পড়ে আছে, সাধু দু’টি ছিন্ন মুণ্ড অগ্নিতে আহুতি দিয়ে যজ্ঞ সম্পন্ন করে চলে গিয়েছে। সে অনেকক্ষণ একভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পর নিজের পাথর মূর্তি নিজে ভাঙল। স্ত্রী আর ছেলে ধড় নিয়ে গিয়ে ভাসিয়ে দিল নদীর জলে। তারপর শ্মশানভূমিতে এসে যজ্ঞের আগুনে দুটো কাঠ গুঁজে দিয়ে বসে থাকল দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। সে রোজ নিজেকে প্রশ্ন করে— ওটা চিতা, না যজ্ঞ? যজ্ঞ, না চিতা!
সবাই এসে তাকে ঘিরে বলতে শুরু করল—সাধু, সাধু! সে নিজেকে সাধু বলল না, বলল পিশাচ?’ কথা শেষ করে যোগীনবাবার দিকে তাকিয়ে থাকেন পিশাচ সাধু? বলেন, ‘আমার হেঁয়ালি এটাই বাবা। ওটা কি চিতা, না যজ্ঞ? আপনি কী মনে করেন?’
যোগীনবাবা চুপ করে তাকিয়ে থাকেন পিশাচ সাধুর দিকে। তার দুচোখে ঘোর।
পিশাচ সাধু হাসতে হাসতে বলেন, ‘হেঁয়ালি ওটা যেমন, এটাও আবার আর একটা হেঁয়ালি— সবাই এসে দেখল একজন লোক আগুনের সামনে বসে আছে। সবাই বলল— সাধু। সাধুবাবা! কিন্তু আগুনের সামনে বসে থাকা লোকটা ঘোষণা করে দিল সে পিশাচ! এবার হেঁয়ালিটির উত্তর বলুন— লোকটি কী? সাধু, না পিশাচ?’
যোগীনবাবা চুপ করে আছেন। ধীরে ধীরে শান্ত গলায় বলেন, ‘শান্ত হোন গো বাবা!’
পিশাচ সাধু বলেন, ‘শান্ত হব, যদি বলে দেন, কোথায় গেলে তাকে পাব—সেই শ্মশানচারী তান্ত্রিক? যজ্ঞ যে চলছে তার ছিন্ন মুণ্ড সেই অগ্নি আহুতি চায়।’ পিশাচ সাধু হাসেন, ‘হেঁয়ালি না মিটিয়ে দিলে, আমিও হেঁয়ালি করে চলব বাবা। আমার কিচ্ছুটি করার নেই।’
উত্তরহীন যোগীনবাবা বসে থাকেন। মন দিয়ে দু চোখ বন্ধ করে সব শুনে মাথা নিচু করে বলেছিলেন, বড় অন্যায় হয়েছে, বড় অন্যায় বাবা।
পিশাচ সাধু বলেছিলেন, ‘তাকে যে আমি খুঁজছি, আপনি তার হদিশ দেন। আপনি জানেন, এটা কার কম্ম। একটা অন্তত হেঁয়ালির উত্তর দেন।’
উত্তরে যোগীনবাবা শান্ত গলায় বলেছিল, ‘আপনি খুঁজছেন, আপনি খোঁজেন। আপনার পথও ভালো নয়। কথা চালাচালি আমার কম্ম নয় বাবা। আপনি ফিরে আসুন।’
পিশাচ সাধু বলেন, ‘আমি ফিরব না, আমাকে ওই যজ্ঞ শেষ করতে হবে।’
খুব শান্ত গলায় যোগীনবাবা তাকে খণ্ডন করতে চান। বলেন, ‘আপনি আগুন নিয়ে জঙ্গলের পর্ণকুটিরে প্রবেশ করেছেন বাবা। আপনি ভাবছেন আগুনকে উপাস্য দেবতা করে অগ্নি-সাধনা করবেন। কিন্তু যজ্ঞে যদি বেশি ঘি ঢালেন, ওই আগুন কিন্তু দপ করে লাফিয়ে উঠবে। তাতে আপনার পর্ণকুটির সমেত আপনাকেও জ্বলিয়ে খাগ করে দেবে।’
হা হা করে অট্টহাসি হেসেছিল পিশাচ সাধু। বলেছিলেন, ‘আমি জানি। ওই আগুন আমাকে ঝালসাবে। আমি তাই সর্বদা ঘি মেখে বসে থাকি। কিন্তু তার আগে আমার যজ্ঞের দান, সেই শ্মশানচারী তান্ত্রিকের ছিন্ন মুণ্ড অগ্নিতে আহুতি দিয়ে আমি যজ্ঞ সমাপন করে যাব। তারপর চিরপ্রণম্য অগ্নি যদি আমাকে গ্রহণ করে—।’
যোগীনবাবা বলেন, ‘আপনি বড় ভুল পথ বেছেছেন বাবা। এখনও সময় আছে ফিরে আসুন। ওই অগ্নি বিসর্জন দিন জলে, শান্তি পাবেন।’
পিশাচ সাধু হাসেন, ‘পিশাচের শান্তি নাই। সে অশান্তির চাষ করবে, অশান্তির গুণ ধরবে। নিন, আমি গাঁজা সাজলাম। দেখেন শান্তি পান কী না?’
তাঁর হাত থেকে গাঁজার কলকে নেন যোগীনবাবা, গাঁজার কাপড় সাফিতে বিষ গুঁড়ো। দু তিন টানেই তার বুক ভারী, বুক হালকা করতে দম ভরে টানেন। তারপর ছটফট করেন। শ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আছে। দু চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসে। বলেন, ‘এট্টু জল দেন বাবা, শরীলটা উথালিপাথালি করছে।’ জল তো প্রস্তুত করে রেখেছেন পিশাচ সাধু। একটু জল খেয়ে, গাঁজার কলকে হাতে ধরে বুক চেপে শুয়ে পড়েন যোগীনবাবা। পিশাচ সাধু তাঁর সাজা গাঁজার কলকের কাপড় সাফিটা বড় যত্নে নিয়ে ভাঁজ করে পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে তুলে রাখেন। আবার কাজে লাগবে—
মদ ভরা গ্লাসটা এক নিঃশ্বাসে শেষ করে তিনি তাকান ঘরের কোণে। ওখানে পিশাচ— নর করোটি। তার কাছেই দুটি বাহুর হাড়, তাতে সেই গাঁজার কলকে থেকে নিয়ে আসা কাপড় সাফিগুলো জড়ানো। সাত ফেড়ে। সাতটি আহুতি।
এই সাত ফেড়ে কাপড় আগুনে দিলে দাউ দাউ জ্বলবে। কিন্তু তার কাজ যে শেষ হয়নি। প্রতিশোধের আগুন এখনও তার বুকের ভেতর জ্বলছে। যজ্ঞ সম্পূর্ণ হলে নিজের জন্য একটা কলকে বঁড়শিকে দিয়ে সাজবেন তিনি। বলবেন, এই সাত ফেড়ে কাপড় দে কলকের নীচে। দম ভরে গাঁজায় টান দিতে দিতে তিনি ভাববেন, যা রে মেয়ে তোর দেনা আমি রাখিনি, আমি তোর বাবাকে মেরেছি, তুই আমাকে মারলি। শোধবোধ।
কিন্তু বঁড়শি যে তার আলজিবে বঁড়শি বিঁধিয়ে আটকে রেখেছে সংসারে। আবার তাকে বেরুতে হবে। আবার খুঁজতে হবে, সেই শ্মশানচারী তান্ত্রিক সাধুকে। তার যজ্ঞ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। সে এখনও একটার পর একটা কাঠ দিয়ে চিতা জ্বালিয়ে রেখেছে। এই আগুন কেউ দেখতে পাবে না, শুধু তার বুকের ভেতর ধিকিধিকি জ্বলছে। জ্বলবে।
(চলবে)