শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
ট্রামটা আরেকটু এগতেই আবার বৃষ্টি। ব্যাগ থেকে ছাতা বের করতে গিয়ে দেখে ছাতা নেই।
কী আশ্চর্য! ছাতা তো ও নিয়েই বেরিয়েছিল!
পরের স্টপে নেমে সেই ফুচকাওয়ালার কাছে ফিরে যাবে? ছাতাটা হয়তো ওখানেই...
ছাতাটা কি ফুচকার গাড়িতেই রেখেছিল?
স্টার থিয়েটারের উল্টোদিকে ট্রামটা অনেকক্ষণ ট্রাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে। কী মনে করে কলি নেমে পড়ল। বৃষ্টিটা একটু ধরেছে। ছাতাটার জন্য মন খারাপ লাগছে কলির। ছেলে তীর্থর জন্মদিনের কেনাকাটার সময় বেঙ্গালুরুর মালেশ্বরম বাজার থেকে ছাতাটা কিনেছিল।
ছাতা হারানোর ওর সেই স্বভাবটা কি আবার ফিরে এল?
লাইব্রেরিতে, ক্যান্টিনে বহুবার ছাতা ফেলে আসা ওর স্বভাব ছিল। আবার মাঝে মধ্যে ছাতা ফিরেও পেয়েছে। একবার তো এরকমই ফুচকাওয়ালার দোকানেই ছাতা ফেলে এসেছিল। সেই কথা মনে পড়তেই হুড়মুড় করে বৃষ্টির মতো বারো বছর আগের পুরনো সময় নেমে এল।
থার্ড ইয়ারে ফাইনাল পরীক্ষার শেষে পরীক্ষার হল থেকে বেরতেই দেখল মম্পাদা দাঁড়িয়ে গেটের সামনে। সেই ইস্ত্রিবিহীন কোঁচকানো শার্ট আর জিনসের প্যান্ট!
গত তিন বছর মম্পাদাকে এই এক ভাবেই ও দেখে এল। কলির যখন ফার্স্ট ইয়ার সেবার মম্পার থার্ড ইয়ার— ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র সংসদের কী সব বোঝাতে ওদের ক্লাসে এসেছিল।
কলি দূর থেকে মম্পা বা ওদের গ্রুপের কাউকে দেখলেই পালাত। এরপর একদিন কলেজেরই সোশ্যাল অনুষ্ঠানে মম্পা ওকে প্রোপোজ করল। সেদিনও সেই একই কুঁচকনো শার্ট আর বহু পুরনো জিনস।
ঘাটালের কাছে কোনও এক গ্রামে মম্পার বাড়ি। কলেজ হস্টেলে থাকত তখন। ছাত্র-রাজনীতি করা একটা ছেলে কি পড়াশোনায় তেমন ভালো হতে পারে? কোনও ধারণা ছিল না কলির। সেদিন মম্পার প্রস্তাবে ও রাজি হয়নি। কিন্তু খুব জোরালো ভাবে নাও বলেনি মম্পাকে।
এরপর থেকেই মম্পা কখনও কলির ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকত, কখনও আবার লাইব্রেরি গেলে ছুতোনাতায় একটা বই নিয়ে ওর পাশে এসে বসত। খুব বেশি কথা বলে ওকে বিরক্ত করত না। শুধু ভুল করে কলি নিজের ছাতা কোথাও ফেলে আসলে মম্পা পরদিন ছাতাটা ওকে ফিরিয়ে দিত।
হাঁটতে হাঁটতে কলি হেদুয়ার মোড়ে চলে এল।
পুরনো রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ওর বেশ ভালোই লাগছে। বৃষ্টির কারণে ভেজা রাস্তায় একটা অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ।
হেদুয়ার সুইমিং পুলের পাশের ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ও এই জলের গন্ধটা আরও তীব্রভাবে পেল। সামনেই পলিথিনের শিটের আড়ালে কোনও এক ফুটপাত সংসার থেকে ভেসে আসছে ডাল ফোড়নের গন্ধ। গন্ধটা অতিক্রম করে রাস্তা পেরলো কলি।
কলি জানত, মম্পা নিজে পড়াশোনা বিশেষ করে না। সারাক্ষণ মিটিং মিছিল নিয়েই ওর সময় কাটে। এমন মিটিং মিছিল করা ছেলের সঙ্গে কী করেই বা ও জড়াত নিজেকে? আর তাও যদি মম্পার রেজাল্টটা তেমন কিছু হতো তাহলেও কিঞ্চিৎ বিবেচনায় ওকে রাখতে পারত।
মম্পাকে কি কোনওদিন ও প্রশ্রয় দিয়েছিল? মনে করার চেষ্টা করল।
বাটার দোকানের সামনে এসে পড়েছে ও। আর একটু এগলেই কলেজ স্ট্রিট মোড়। তারপর ইউনিভার্সিটি পেরলেই সেই ফুচকার দোকান।
হাঁটার অভ্যেস তেমন নেই বলে একটু হাঁপ ধরছে কলির।
পুরনো দিনের স্মৃতি অবশ্য সেটুকু কষ্টও কমিয়ে দিচ্ছে আজ।
একদিন প্রচণ্ড বৃষ্টিতে আমহার্স্ট স্ট্রিটে জল জমল। বাসগুলোয় উপচে পড়া ভিড়। কলি বাড়ি ফেরার জন্য ট্যাক্সি ধরবে। ট্যাক্সিও দাঁড়াচ্ছে না। মম্পা সেদিন ওর সঙ্গে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এল। দু’জনেই কোনও ট্যাক্সি দাঁড় করাতে পারছে না। অবশেষে একটা ট্যাক্সির ড্রাইভার হাতের ইশারায় ডাকল ওদের। সিগন্যাল পেরিয়ে অনেকটা এগিয়ে দাঁড়াল। ওরা প্রায় ছুটতে ছুটতে ট্যাক্সিটার কাছে পৌঁছল।
ড্রাইভার যথারীতি দ্বিগুণের থেকেও কিছু বেশি ভাড়া চাইল। কলির আর তর্ক করতে ইচ্ছে করছিল না। একে ভিজে গিয়েছে, তার উপর এতক্ষণ অপেক্ষা করেছে। মম্পা কী বিশ্রী ভাষায় ড্রাইভারের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করল!
এরপর অবশ্য কিছু কম ভাড়ায় রাজি হল লোকটি। কলি ট্যাক্সিতে উঠে বসতেই জানলায় মুখ বাড়িয়ে মম্পা বলল, ‘বাড়ি ফিরে ফোন করিস। ট্যাক্সির নম্বরটা আমি নোট করে নিলাম।’
এ একরকম কলির উপকারই। কিন্তু ট্যাক্সিটা মম্পাকে পেরতেই ড্রাইভার অস্ফুটে বলেছিল, ‘মস্তান কোথাকার!’
ওই ‘মস্তান’ শব্দটাই কলির একদম ভালো লাগেনি। এরকম কারও সঙ্গে কিছুতেই ও নিজেকে জড়াবে না। সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেদিনই। এর পরদিন যদি আবার দেখা হয় ও মম্পাকে স্পষ্ট বলে দেবে।
পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে কলেজের গেটে মম্পাকে দাঁড়াতে দেখে ও খুব বিরক্ত হয়েছিল। কিছু বলার আগে মম্পা নিজেই বলেছিল, ‘তোর সঙ্গে কিছু দরকারি কথা ছিল। চল হাঁটতে হাঁটতে বলি।’
কলি তখনই ঠিক করেছিল, ওর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। কিছুতেই মম্পার মতো কারও সঙ্গে নিজেকে জড়াবে না। কিন্তু গেটের সামনে দাঁড়িয়ে এত কথা বললে আবার অন্য বন্ধুরাও এতে কৌতূহলী হবে। তাই দু’জনে কলেজ স্কোয়ারের দিকে এগিয়ে গেল। ফুচকা খেতে খেতেই বৃষ্টি এসেছিল সেদিন। মম্পা কলির হাত থেকে ছাতাটা নিয়ে ওদের দু’জনের মাথাতেই ধরল।
তারপর হাসতে হাসতেই বলল, ‘তুই কী ভাবছিস জানি না। কিন্তু আমি এই তিন বছর একদমই সিরিয়াস ছিলাম না। তুই স্টুডিয়াস ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী। নিজের পথে এগিয়ে যা। আমাকে নিয়ে সিরিয়াসলি কিছু ভাবিস না।’
কলি অবাক হল। এই কথাটাই তো ও নিজে বলবে ভেবেছিল!
এরপর তো ও বেঙ্গালুরুতে। দীর্ঘ বারো বছর পর আজ এই ছাতা হারানোয় মম্পার কথা মনে পড়ায় ওর বেশ মজাই লাগছে।
ফুচকাওয়ালার দোকানে ছাতা না পেয়ে বেশ খানিকটা তর্ক হল। ফুচকাওয়ালা সমানে বলছে, ‘এক ছাতরি থা। লেকিন ও আপকা নেহি থা।’
কথাটা শুনে কলির আরও রাগ বেড়ে যাচ্ছে। ওর ছাতা না হলে ও এতদূর আবার ফিরে আসে? এরমধ্যেই ওর নাম ধরে একটা ডাক শুনতে পেল
‘কলি!’
মম্পাদার পরনে আজও সেই কুঁচকানো শার্ট আর বহু পুরনো জিনস। ছাতা হারিয়েছে শুনে মম্পাদা কি একটু হাসল? হয়তো ভাবল, কলি এখনও আগের মতোই...।
ফুচকাওয়ালার সঙ্গে তর্ক জুড়েছে মম্পা। কিন্তু না, আগের মতো কোনও অপছন্দের শব্দ ব্যবহার করল না। তবে, পরিস্থিতি যা দাঁড়াল তাতে তেমন হতেই পারত।
কলি থামাতে চাইল। বলল, ‘থাক থাক। হয়তো উনি ঠিকই বলছেন। আমি ছাতাটা অন্য কোথাও রেখে এসেছি বোধহয়।’
এর মধ্যে একটা ছেলে আর মেয়ে ছাতা মাথায় ওদের পেরিয়ে চলে যাচ্ছে। ফুচকাওয়ালা চিৎকার করে ডাক দিল—
‘আরে ও ভাইয়া, তনিক ইধার আও।’
যেভাবে ওরা দু’জন হেঁটে যাচ্ছে, দেখে মনে হল না ওই ডাক শুনতে পাবে। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে ওরা পিছন ফিরল। ওদের সামনে এগিয়ে আসতেই কলি দেখল ছেলেটার হাতে ওর ছাতাটা।
‘ভাইয়া, এ ছাতরি আপকা হ্যায়? আভি আপ কুছ দের পেহলে ইঁহা ফুচকা খা নে আয়ে থে। ছাতরি আপকাই হ্যায় না?’
ছেলেটাও মাথা নেড়ে জানাল ছাতাটা ওদেরই। এমনকী, বেশ মেজাজ দেখিয়েই বলল, কলেজ স্ট্রিটে প্রায় সবাই চেনে ওকে। ইত্যাদি।
কলি বলতে যাচ্ছিল, ছাতার পেছনে যে লোগোটা আছে সেটা দেখলেই বোঝা যাবে এটা এই শহরের নয়। তার আগেই মম্পাদা ছেলেটার কলার ধরে ফেলেছে। এইবার একটা হাতাহাতি হয়ে যাবে। কলির খুব বিরক্ত লাগে। আবার একটা সামান্য ছাতার কারণে মম্পাদার মস্তানি দেখতে হবে? এর থেকে ছাতাটা খুঁজতে না এলেই তো ভালো হতো!
‘এত ত্যাঁদড় না এখনকার কচি ছেলেগুলো...’
কলির ঠিক আগের মতোই বিরক্ত লাগছে।
‘আমি এগই। আবার বৃষ্টি আসবে মনে হয়।’
মম্পাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কলি এগিয়ে গেল।
ট্যাক্সিটা ট্রাফিকের গুঁতো খেতে খেতে ঠনঠনে কালীবাড়ির আগে এসে একেবারেই দাঁড়িয়ে পড়ল। জানলার কাচটা নামাতেই বৃষ্টির ছাঁট এসে মুখে লাগল। ঠিক তখুনি সেই ছেলেটা জানলার বাইরে থেকে মুখ বাড়িয়ে বলল, ‘দিদি, এই নিন আপনার ছাতাটা। আমি ওটা ভুল করে দীপাঞ্জলির ভেবেছিলাম। সরি।’
কলি অবাক হল খুব।
‘আশ্চর্য! তাহলে তুমি ছাতাটা ওখানেই তো দিতে পারতে?’
ট্রাফিক সিগন্যাল ছেড়ে দিয়েছে। ট্যাক্সিটাও স্টার্ট দেবে এমন সময় কলির মনে হল ওর জানা দরকার কেন ওরা ছাতাটা এখন ফেরত দিল? ও ট্যাক্সির দরজাটা খুলে ছেলেমেয়ে দুটোকে বলল, ‘উঠে এসো। আমি এই সোজা রাস্তা দিয়ে শ্যামবাজার যাব। তোমরা আর বৃষ্টিতে ভিজো না। কিছুটা এগিয়ে দিই তোমাদের।’
ছেলেমেয়ে দুটোও বিনা প্রশ্নে ট্যাক্সিতে উঠে এল। মেয়েটা বলল, ‘আমি বিবেকানন্দ রোডের মোড়ে নেমে যাব দিদি।’
‘সে ঠিক আছে। কিন্তু তোমরা আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। ছাতাটা তখন দিলে না কেন?’
ছেলেটা বলল, ‘দিদি, ক্ষমা করবেন। দীপাঞ্জলি তখন বুঝতে পারেনি যে, ছাতাটা ওর নয়। আমিও তাই তর্ক জুড়েছিলাম আপনার সঙ্গে।’
দীপাঞ্জলি নামের মেয়েটা বলল, ‘কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে ছাতার ট্যাগটা চোখে পড়তেই বুঝলাম ভুল হয়েছে। এ ছাতা আমার নয়। তক্ষুণি খুব আফশোস হচ্ছিল দিদি। কী করে আপনাকে ফেরত দেব ভেবে প্রায় ছুটতে ছুটতে এলাম আমি আর অনির্বাণ। আর আপনাকে ট্যাক্সিতে দেখতে পেয়ে গেলাম। কিছু মনে করবেন না। আমাদের সত্যিই ভুল হয়েছিল।’
রাস্তার দিকে তাকিয়ে দীপাঞ্জলি বলল, ‘এই তো বিবেকানন্দ রোডের মোড়।’
ছেলেটাও ওর সঙ্গে নামতে গেলে মেয়েটা বলল, ‘অনি, তুই নামছিস কেন? তুই বরং হেদুয়া পর্যন্ত দিদির সঙ্গে চলে যা। ওখান থেকে জোড়াবাগানের অটো পাবি। আমি আর একটুও দাঁড়াতে পারব না। খুব তাড়া আছে আজ।’
মেয়েটা নেমে গেলে ট্যাক্সিতে কলি আর অনির্বাণ নামে ওই ছেলেটা। কলির ভেতর একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। মম্পা ছেলেটার কলার ধরে কী বলল?
প্রশ্নটা শুনে ছেলেটা খুব অবাক হল।
‘দিদি, আপনার কথা তো কিছুই বুঝতে পারছি না? কে আমার শার্টের কলার ধরেছিল? কেউ তো ছিল না। আপনি আর ফুচকাওয়ালাকাকু ছিলেন শুধু। ওখানে আপনার কোনও বন্ধু তো ছিলেন না।’
কলি স্তম্ভিত! ও স্পষ্ট মম্পাকে দেখেছে। মম্পার গলা শুনেছে। ও জোর দিয়ে বলল, ‘ভাই, তোমার কোনও ভুল হচ্ছে না তো? আর কেউ ছিল না? লম্বা মতো একটা ছেলে যার শার্টটা কুঁচকানো...’
অনির্বাণের মুখের দিকে তাকিয়ে কলি লজ্জা পেল। ছেলেটা কেমন হতভম্বের মতো ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
‘দিদি, কিছু যদি না মনে করেন একটা প্রশ্ন করি?’
সম্মতি দেওয়া ছাড়া কলির আর কী উপায়?
‘আপনি কি কাউকে খুঁজছিলেন?’
‘হ্যাঁ মানে... আমি তো ছাতাটা খুঁজতেই ...’
‘না, ছাতা নয়। কোনও পুরনো বন্ধু বা চেনা কাউকে?’
কলি সজোরে মাথা নাড়ায়। ও ছাতাটা ছাড়া আর কাউকেই খুঁজছিল না।
‘তবুও আপনি একবার ভেবে দেখবেন দিদি। আমরা আর ওই ফুচকাওয়ালা ছাড়া আর কেউই তো ছিল না? বিশ্বাস না হয় দীপাঞ্জলিকে ফোন করছি দেখুন।’
নিজের মোবাইল ফোনটা নিয়ে দীপাঞ্জলিকে ফোন করতে গিয়ে ছেলেটা বলল, ‘নাহ! আমি নিজেই আজ ওকে কথা দিয়েছি। আর কখনও কোনও কারণেই ফোন করব না ওকে। ও কাল ভোরের ফ্লাইটে হায়দরাবাদ চলে যাচ্ছে এমটেক পড়তে। আমি গোটা কলেজ জীবন ওর কাছে ছাত্র রাজনীতি করার সুবাদে নায়কের মতো দেখালেও আসলে যে ওর যোগ্য কখনও হতে পারব না, তা নিজে অন্তত জানি। তাই আজই ওর সঙ্গে শেষ দেখা করে বলে দিলাম আর কখনও ফোন করব না ওকে।’
হেদুয়া এসে গিয়েছে। নামার আগে কলি জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার কোন কলেজ ভাই?’
কলেজের নামটা শুনে কলি চমকে উঠল। একই কলেজের ছাত্রছাত্রী ওরা! কলি কিছু বলার আগে অনির্বাণ বলল, ‘আচ্ছা, দিদি আপনার বন্ধুর নামটা কী বলছিলেন?’
‘প্রবীর চক্রবর্তী।’ মনে পড়েছে মম্পার ভালো নাম।
‘নাহ! ওই নামে কাউকে চিনি না।’
হেদুয়াতে আবার ট্রাফিকে গাড়ি দাঁড়িয়ে গিয়েছে। অনির্বাণ নেমে গিয়েছে। কী মনে হওয়ায় কলি মুখ বাড়িয়ে ডাকল ওকে।
‘মম্পা নামে কাউকে চেনো? তোমাদের কলেজে ২০০৬ সালে ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি ছিল।’
‘এত বছর আগের কাউকে কী করে চিনব দিদি!’
অনির্বাণ এগিয়ে যায়। ট্রাফিক তখনও ছাড়েনি। কলি বসে আছে ট্যাক্সিতে। আবার বৃষ্টির বেগ বাড়ল।
ভিজতে ভিজতে অনির্বাণ ফিরে এল ট্যাক্সির কাছে।
‘মনে পড়েছে দিদি। গতমাসে আমাদের পার্টির এক কর্মী আমহার্স্ট স্ট্রিটের মোড়ে রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিলেন। তাঁর নাম ছিল মম্পা। পথ দুর্ঘটনায় পার্টি কর্মী মারা যাওয়ায় আমাদের ছাত্র-যুব মিছিলও বের হয়। তখনই জেনেছিলাম, লোকটা এক সময় আমাদের কলেজেরই জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন।’
সিগন্যাল খুলে গিয়েছে। ট্যাক্সি ড্রাইভার বলল, ‘আর দাঁড়ানো যাবে না দিদি।’
ছেলেটার মুখ আর এখন দেখতে পাচ্ছে না কলি।