Bartaman Patrika
গল্পের পাতা
 

ছাতা হারানোর পর
রিমি মুৎসুদ্দি

 টক আর ঝাল একেবারে সমান সমান ছিল আজ। ফুচকা খাওয়ার পরও টাকরায় একটা সুখের রেশ রয়ে গিয়েছে। ট্রামটা হেদুয়া পেরলে সেই পুরনো রেস্তরাঁটা এখনও আছে কি না উঁকি দিয়ে দেখতে গিয়ে মাথায় একটু চোট পেল কলি। 
ট্রামটা আরেকটু এগতেই আবার বৃষ্টি। ব্যাগ থেকে ছাতা বের করতে গিয়ে দেখে ছাতা নেই। 
কী আশ্চর্য! ছাতা তো ও নিয়েই বেরিয়েছিল!
পরের স্টপে নেমে সেই ফুচকাওয়ালার কাছে ফিরে যাবে? ছাতাটা হয়তো ওখানেই... 
ছাতাটা কি ফুচকার গাড়িতেই রেখেছিল? 
স্টার থিয়েটারের উল্টোদিকে ট্রামটা অনেকক্ষণ ট্রাফিক জ্যামে দাঁড়িয়ে। কী মনে করে কলি নেমে পড়ল। বৃষ্টিটা একটু ধরেছে। ছাতাটার জন্য মন খারাপ লাগছে কলির। ছেলে তীর্থর জন্মদিনের কেনাকাটার সময় বেঙ্গালুরুর মালেশ্বরম বাজার থেকে ছাতাটা কিনেছিল। 
ছাতা হারানোর ওর সেই স্বভাবটা কি আবার ফিরে এল? 
লাইব্রেরিতে, ক্যান্টিনে বহুবার ছাতা ফেলে আসা ওর স্বভাব ছিল। আবার মাঝে মধ্যে ছাতা ফিরেও পেয়েছে। একবার তো এরকমই ফুচকাওয়ালার দোকানেই ছাতা ফেলে এসেছিল। সেই কথা মনে পড়তেই হুড়মুড় করে বৃষ্টির মতো বারো বছর আগের পুরনো সময় নেমে এল। 
থার্ড ইয়ারে ফাইনাল পরীক্ষার শেষে পরীক্ষার হল থেকে বেরতেই দেখল মম্পাদা দাঁড়িয়ে গেটের সামনে। সেই ইস্ত্রিবিহীন কোঁচকানো শার্ট আর জিনসের প্যান্ট! 
গত তিন বছর মম্পাদাকে এই এক ভাবেই ও দেখে এল। কলির যখন ফার্স্ট ইয়ার সেবার মম্পার থার্ড ইয়ার— ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র     সংসদের কী সব বোঝাতে ওদের ক্লাসে এসেছিল। 
কলি দূর থেকে মম্পা বা ওদের গ্রুপের কাউকে দেখলেই পালাত। এরপর একদিন কলেজেরই সোশ্যাল অনুষ্ঠানে মম্পা ওকে প্রোপোজ করল। সেদিনও সেই একই কুঁচকনো শার্ট আর বহু পুরনো জিনস। 
ঘাটালের কাছে কোনও এক গ্রামে মম্পার বাড়ি। কলেজ হস্টেলে থাকত তখন। ছাত্র-রাজনীতি করা একটা ছেলে কি পড়াশোনায় তেমন ভালো হতে পারে? কোনও ধারণা ছিল না কলির। সেদিন মম্পার প্রস্তাবে ও রাজি হয়নি। কিন্তু খুব জোরালো ভাবে নাও বলেনি মম্পাকে। 
এরপর থেকেই মম্পা কখনও কলির ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকত, কখনও আবার লাইব্রেরি গেলে ছুতোনাতায় একটা বই নিয়ে ওর পাশে এসে বসত। খুব বেশি কথা বলে ওকে বিরক্ত করত না। শুধু ভুল করে কলি নিজের ছাতা কোথাও ফেলে আসলে মম্পা পরদিন ছাতাটা ওকে ফিরিয়ে দিত। 
হাঁটতে হাঁটতে কলি হেদুয়ার মোড়ে চলে এল।
পুরনো রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ওর বেশ ভালোই লাগছে। বৃষ্টির কারণে ভেজা রাস্তায় একটা অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ। 
হেদুয়ার সুইমিং পুলের পাশের ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ও এই জলের গন্ধটা আরও তীব্রভাবে পেল। সামনেই পলিথিনের শিটের আড়ালে কোনও এক ফুটপাত সংসার থেকে ভেসে আসছে ডাল ফোড়নের গন্ধ। গন্ধটা অতিক্রম করে রাস্তা পেরলো কলি।

কলি জানত, মম্পা নিজে পড়াশোনা বিশেষ করে না। সারাক্ষণ মিটিং মিছিল নিয়েই ওর সময় কাটে। এমন মিটিং মিছিল করা ছেলের সঙ্গে কী করেই বা ও জড়াত নিজেকে? আর তাও যদি মম্পার রেজাল্টটা তেমন কিছু হতো তাহলেও কিঞ্চিৎ বিবেচনায় ওকে রাখতে পারত। 
মম্পাকে কি কোনওদিন ও প্রশ্রয় দিয়েছিল? মনে করার চেষ্টা করল।
বাটার দোকানের সামনে এসে পড়েছে ও। আর একটু এগলেই কলেজ স্ট্রিট মোড়। তারপর ইউনিভার্সিটি পেরলেই সেই ফুচকার দোকান। 
হাঁটার অভ্যেস তেমন নেই বলে একটু হাঁপ ধরছে কলির।  
পুরনো দিনের স্মৃতি অবশ্য সেটুকু কষ্টও কমিয়ে দিচ্ছে আজ। 

একদিন প্রচণ্ড বৃষ্টিতে আমহার্স্ট স্ট্রিটে জল জমল। বাসগুলোয় উপচে পড়া ভিড়। কলি বাড়ি ফেরার জন্য ট্যাক্সি ধরবে। ট্যাক্সিও দাঁড়াচ্ছে না। মম্পা সেদিন ওর সঙ্গে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এল। দু’জনেই কোনও ট্যাক্সি দাঁড় করাতে পারছে না। অবশেষে একটা ট্যাক্সির ড্রাইভার হাতের ইশারায় ডাকল ওদের। সিগন্যাল পেরিয়ে অনেকটা এগিয়ে দাঁড়াল। ওরা প্রায় ছুটতে ছুটতে ট্যাক্সিটার কাছে পৌঁছল। 
ড্রাইভার যথারীতি দ্বিগুণের থেকেও কিছু বেশি ভাড়া চাইল। কলির আর তর্ক করতে ইচ্ছে করছিল না। একে ভিজে গিয়েছে, তার উপর এতক্ষণ অপেক্ষা করেছে। মম্পা কী বিশ্রী ভাষায় ড্রাইভারের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করল! 
এরপর অবশ্য কিছু কম ভাড়ায় রাজি হল লোকটি। কলি ট্যাক্সিতে উঠে বসতেই জানলায় মুখ বাড়িয়ে মম্পা বলল, ‘বাড়ি ফিরে ফোন করিস। ট্যাক্সির নম্বরটা আমি নোট করে নিলাম।’ 
এ একরকম কলির উপকারই। কিন্তু ট্যাক্সিটা মম্পাকে পেরতেই ড্রাইভার অস্ফুটে বলেছিল, ‘মস্তান কোথাকার!’
ওই ‘মস্তান’ শব্দটাই কলির একদম ভালো লাগেনি। এরকম কারও সঙ্গে কিছুতেই ও নিজেকে জড়াবে না। সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেদিনই। এর পরদিন যদি আবার দেখা হয় ও মম্পাকে স্পষ্ট বলে দেবে। 
পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে কলেজের গেটে মম্পাকে দাঁড়াতে দেখে ও খুব বিরক্ত হয়েছিল। কিছু বলার আগে মম্পা নিজেই বলেছিল, ‘তোর সঙ্গে কিছু দরকারি কথা ছিল। চল হাঁটতে হাঁটতে বলি।’ 
কলি তখনই ঠিক করেছিল, ওর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। কিছুতেই মম্পার মতো কারও সঙ্গে নিজেকে জড়াবে না। কিন্তু গেটের সামনে দাঁড়িয়ে এত কথা বললে আবার অন্য বন্ধুরাও এতে কৌতূহলী হবে। তাই দু’জনে কলেজ স্কোয়ারের দিকে এগিয়ে গেল। ফুচকা খেতে খেতেই বৃষ্টি এসেছিল সেদিন। মম্পা কলির হাত থেকে ছাতাটা নিয়ে ওদের দু’জনের মাথাতেই ধরল। 
তারপর হাসতে হাসতেই বলল, ‘তুই কী ভাবছিস জানি না। কিন্তু আমি এই তিন বছর একদমই সিরিয়াস ছিলাম না। তুই স্টুডিয়াস ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী। নিজের পথে এগিয়ে যা। আমাকে নিয়ে সিরিয়াসলি কিছু ভাবিস না।’ 
কলি অবাক হল। এই কথাটাই তো ও নিজে বলবে ভেবেছিল!
এরপর তো ও বেঙ্গালুরুতে। দীর্ঘ       বারো বছর পর আজ এই ছাতা হারানোয় মম্পার কথা মনে পড়ায় ওর বেশ মজাই লাগছে।
ফুচকাওয়ালার দোকানে ছাতা না পেয়ে বেশ খানিকটা তর্ক হল। ফুচকাওয়ালা সমানে বলছে, ‘এক ছাতরি থা। লেকিন ও আপকা নেহি থা।’ 
কথাটা শুনে কলির আরও রাগ বেড়ে যাচ্ছে। ওর ছাতা না হলে ও এতদূর আবার ফিরে আসে? এরমধ্যেই ওর নাম ধরে একটা ডাক শুনতে পেল
‘কলি!’ 
মম্পাদার পরনে আজও সেই কুঁচকানো শার্ট আর বহু পুরনো জিনস। ছাতা হারিয়েছে শুনে মম্পাদা কি একটু হাসল? হয়তো ভাবল, কলি এখনও আগের মতোই...।  
ফুচকাওয়ালার সঙ্গে তর্ক জুড়েছে মম্পা। কিন্তু না, আগের মতো কোনও অপছন্দের শব্দ ব্যবহার করল না। তবে, পরিস্থিতি যা দাঁড়াল তাতে তেমন হতেই পারত।  
কলি থামাতে চাইল। বলল, ‘থাক থাক। হয়তো উনি ঠিকই বলছেন। আমি ছাতাটা অন্য কোথাও রেখে এসেছি বোধহয়।’
এর মধ্যে একটা ছেলে আর মেয়ে ছাতা মাথায় ওদের পেরিয়ে চলে যাচ্ছে। ফুচকাওয়ালা চিৎকার করে ডাক দিল—
‘আরে ও ভাইয়া, তনিক ইধার আও।’
যেভাবে ওরা দু’জন হেঁটে যাচ্ছে, দেখে মনে হল না ওই ডাক শুনতে পাবে। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে ওরা পিছন ফিরল। ওদের সামনে এগিয়ে আসতেই কলি দেখল ছেলেটার হাতে ওর ছাতাটা। 
‘ভাইয়া, এ ছাতরি আপকা হ্যায়? আভি আপ কুছ দের পেহলে ইঁহা ফুচকা খা নে আয়ে থে। ছাতরি আপকাই হ্যায় না?’
ছেলেটাও মাথা নেড়ে জানাল ছাতাটা ওদেরই। এমনকী, বেশ মেজাজ দেখিয়েই বলল, কলেজ স্ট্রিটে প্রায় সবাই চেনে ওকে। ইত্যাদি। 
কলি বলতে যাচ্ছিল, ছাতার পেছনে যে লোগোটা আছে সেটা দেখলেই বোঝা যাবে এটা এই শহরের নয়। তার আগেই মম্পাদা ছেলেটার কলার ধরে ফেলেছে। এইবার একটা হাতাহাতি হয়ে যাবে। কলির খুব বিরক্ত লাগে। আবার একটা সামান্য ছাতার কারণে মম্পাদার মস্তানি দেখতে হবে? এর থেকে ছাতাটা খুঁজতে না এলেই তো ভালো হতো! 
‘এত ত্যাঁদড় না এখনকার কচি ছেলেগুলো...’
কলির ঠিক আগের মতোই বিরক্ত লাগছে।
‘আমি এগই। আবার বৃষ্টি আসবে মনে হয়।’
মম্পাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কলি এগিয়ে গেল। 

ট্যাক্সিটা ট্রাফিকের গুঁতো খেতে খেতে ঠনঠনে কালীবাড়ির আগে এসে একেবারেই দাঁড়িয়ে পড়ল। জানলার কাচটা নামাতেই বৃষ্টির ছাঁট এসে মুখে লাগল। ঠিক তখুনি সেই ছেলেটা জানলার বাইরে থেকে মুখ বাড়িয়ে বলল, ‘দিদি, এই নিন আপনার ছাতাটা। আমি ওটা ভুল করে দীপাঞ্জলির ভেবেছিলাম। সরি।’
কলি অবাক হল খুব। 
‘আশ্চর্য! তাহলে তুমি ছাতাটা ওখানেই তো দিতে পারতে?’
ট্রাফিক সিগন্যাল ছেড়ে দিয়েছে। ট্যাক্সিটাও স্টার্ট দেবে এমন সময় কলির মনে হল ওর জানা দরকার কেন ওরা ছাতাটা এখন ফেরত দিল? ও ট্যাক্সির দরজাটা খুলে ছেলেমেয়ে দুটোকে বলল, ‘উঠে এসো। আমি এই সোজা রাস্তা দিয়ে শ্যামবাজার যাব। তোমরা আর বৃষ্টিতে ভিজো না। কিছুটা এগিয়ে দিই তোমাদের।’
ছেলেমেয়ে দুটোও বিনা প্রশ্নে ট্যাক্সিতে উঠে এল। মেয়েটা বলল, ‘আমি বিবেকানন্দ রোডের মোড়ে নেমে যাব দিদি।’ 
‘সে ঠিক আছে। কিন্তু তোমরা আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। ছাতাটা তখন দিলে না কেন?’ 
ছেলেটা বলল, ‘দিদি, ক্ষমা করবেন। দীপাঞ্জলি তখন বুঝতে পারেনি যে, ছাতাটা ওর নয়। আমিও তাই তর্ক জুড়েছিলাম আপনার সঙ্গে।’
দীপাঞ্জলি নামের মেয়েটা বলল, ‘কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে ছাতার ট্যাগটা চোখে পড়তেই বুঝলাম ভুল হয়েছে। এ ছাতা আমার নয়। তক্ষুণি খুব আফশোস হচ্ছিল দিদি। কী করে আপনাকে ফেরত দেব ভেবে প্রায় ছুটতে ছুটতে এলাম আমি আর অনির্বাণ। আর আপনাকে ট্যাক্সিতে দেখতে পেয়ে গেলাম। কিছু মনে করবেন না। আমাদের সত্যিই ভুল হয়েছিল।’
রাস্তার দিকে তাকিয়ে দীপাঞ্জলি বলল, ‘এই তো বিবেকানন্দ রোডের মোড়।’
ছেলেটাও ওর সঙ্গে নামতে গেলে মেয়েটা বলল, ‘অনি, তুই নামছিস কেন? তুই বরং হেদুয়া পর্যন্ত দিদির সঙ্গে চলে যা। ওখান থেকে জোড়াবাগানের অটো পাবি। আমি আর একটুও দাঁড়াতে পারব না। খুব তাড়া আছে আজ।’ 
মেয়েটা নেমে গেলে ট্যাক্সিতে কলি আর অনির্বাণ নামে ওই ছেলেটা। কলির ভেতর একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। মম্পা ছেলেটার কলার ধরে কী বলল? 
প্রশ্নটা শুনে ছেলেটা খুব অবাক হল।
‘দিদি, আপনার কথা তো কিছুই বুঝতে পারছি না? কে আমার শার্টের কলার ধরেছিল? কেউ তো ছিল না। আপনি আর ফুচকাওয়ালাকাকু ছিলেন শুধু। ওখানে আপনার কোনও বন্ধু তো ছিলেন না।’ 
কলি স্তম্ভিত! ও স্পষ্ট মম্পাকে দেখেছে। মম্পার গলা শুনেছে। ও জোর দিয়ে বলল, ‘ভাই, তোমার কোনও ভুল হচ্ছে না তো? আর কেউ ছিল না? লম্বা মতো একটা ছেলে যার শার্টটা কুঁচকানো...’ 
অনির্বাণের মুখের দিকে তাকিয়ে কলি লজ্জা পেল। ছেলেটা কেমন হতভম্বের মতো ওর দিকে তাকিয়ে আছে। 
‘দিদি, কিছু যদি না মনে করেন একটা প্রশ্ন করি?’
সম্মতি দেওয়া ছাড়া কলির আর কী উপায়?
‘আপনি কি কাউকে খুঁজছিলেন?’ 
‘হ্যাঁ মানে... আমি তো ছাতাটা খুঁজতেই ...’ 
‘না, ছাতা নয়। কোনও পুরনো বন্ধু বা চেনা কাউকে?’ 
কলি সজোরে মাথা নাড়ায়। ও ছাতাটা ছাড়া আর কাউকেই খুঁজছিল না। 
‘তবুও আপনি একবার ভেবে দেখবেন দিদি। আমরা আর ওই ফুচকাওয়ালা ছাড়া আর কেউই তো ছিল না? বিশ্বাস না হয় দীপাঞ্জলিকে ফোন করছি দেখুন।’ 
নিজের মোবাইল ফোনটা নিয়ে দীপাঞ্জলিকে ফোন করতে গিয়ে ছেলেটা বলল, ‘নাহ! আমি নিজেই আজ ওকে কথা দিয়েছি। আর কখনও কোনও কারণেই ফোন করব না ওকে। ও কাল ভোরের ফ্লাইটে হায়দরাবাদ চলে যাচ্ছে এমটেক পড়তে। আমি গোটা কলেজ জীবন ওর কাছে ছাত্র রাজনীতি করার সুবাদে নায়কের মতো দেখালেও আসলে যে ওর যোগ্য কখনও হতে পারব না, তা নিজে অন্তত জানি। তাই আজই ওর সঙ্গে শেষ দেখা করে বলে দিলাম আর কখনও ফোন করব না ওকে।’ 
হেদুয়া এসে গিয়েছে। নামার আগে কলি জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার কোন কলেজ ভাই?’ 
কলেজের নামটা শুনে কলি চমকে উঠল। একই কলেজের ছাত্রছাত্রী ওরা! কলি কিছু বলার আগে অনির্বাণ বলল, ‘আচ্ছা, দিদি আপনার বন্ধুর নামটা কী বলছিলেন?’ 
‘প্রবীর চক্রবর্তী।’ মনে পড়েছে মম্পার ভালো নাম। 
 ‘নাহ! ওই নামে কাউকে চিনি না।’ 
হেদুয়াতে আবার ট্রাফিকে গাড়ি দাঁড়িয়ে গিয়েছে। অনির্বাণ নেমে গিয়েছে। কী মনে হওয়ায় কলি মুখ বাড়িয়ে ডাকল ওকে। 
‘মম্পা নামে কাউকে চেনো? তোমাদের কলেজে ২০০৬ সালে ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি ছিল।’ 
‘এত বছর আগের কাউকে কী করে চিনব দিদি!’ 
অনির্বাণ এগিয়ে যায়। ট্রাফিক তখনও ছাড়েনি। কলি বসে আছে ট্যাক্সিতে। আবার বৃষ্টির বেগ বাড়ল। 
ভিজতে ভিজতে অনির্বাণ ফিরে এল ট্যাক্সির কাছে। 
‘মনে পড়েছে দিদি। গতমাসে আমাদের পার্টির এক কর্মী আমহার্স্ট স্ট্রিটের মোড়ে রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিলেন। তাঁর নাম ছিল মম্পা। পথ দুর্ঘটনায় পার্টি কর্মী মারা যাওয়ায় আমাদের ছাত্র-যুব মিছিলও বের হয়। তখনই জেনেছিলাম, লোকটা এক সময় আমাদের কলেজেরই জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন।’        
সিগন্যাল খুলে গিয়েছে। ট্যাক্সি ড্রাইভার বলল, ‘আর দাঁড়ানো যাবে না দিদি।’ 
ছেলেটার মুখ আর এখন দেখতে পাচ্ছে না কলি।
অঙ্কন : সোমনাথ পাল
30th  May, 2021
অথ দাম্পত্যচরিতম
সোমজা দাস

যে লোকটা ফুলকুল্লি স্টেশনের লাগোয়া বিন্তিমাসির চায়ের দোকানে প্রতি সপ্তাহের মঙ্গল আর শুক্কুরবার বেলা এগারোটা থেকে সাড়ে বারোটা অবধি বসে থাকে, ওই যে যার মাথায় খড়খড়ে মরচে রঙের চুল, গালে চটামটা লালচে দাড়ি, উদাস চোখ, তার কথা বলছি। সে-ই দশানন দাস।    বিশদ

07th  April, 2024
ছোট গল্প: বন্ধনহীন গ্রন্থি
বিতস্তা ঘোষাল

—অনেকদিন তোমার পোস্ট আমার অ্যাকাউন্টে দেখাচ্ছে না। আজ একজন বললেন, তোমার হ্যাজব্যান্ড চলে গেলেন। তিনি তোমার পেজ শেয়ারও করলেন। আমি জানতাম না অনিকেত তোমার স্বামী। ওঁর সঙ্গে বহুদিন আগে আমার দেখা হয়েছিল। বিশদ

31st  March, 2024
গুপ্ত রাজধানী: দারা শিকোহের গ্রন্থাগার
সমৃদ্ধ দত্ত

রামায়ণকে বুঝতে হলে, হিন্দু শাস্ত্রের অন্তর্নিহিত দর্শনকে আত্মস্থ করতে হলে, যোগ বশিষ্ট পাঠ করা দরকার। আর শুধু পাঠ করা নয়, প্রজাদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। সম্রাট শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা শিকোহকে একথা বলেছিলেন দরবারের অন্যতম হিন্দু পণ্ডিত চন্দ্রভান ব্রাহ্মণ। বিশদ

31st  March, 2024
অতীতের আয়না: হারিয়ে যাওয়া হাড়গিলে পাখি
অমিতাভ পুরকায়স্থ

নিউ মার্কেটের পূর্ব ও পশ্চিম গেটের একটু উপরের দিকে সবুজ বৃত্তাকার জায়গাটার দিকে কখনও নজর করেছেন? খেয়াল করলে দেখবেন একটি এমব্লেম বা প্রতীক। কলকাতা পৌরসংস্থার এই মোহরচিহ্ন শহরের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। বিশদ

31st  March, 2024
সম্পর্ক
অর্পিতা সরকার

 

ওদের তিনতলা বাড়ি, বাবা সরকারি চাকুরে। সুস্মিতা ওর বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তারপরেও বাবার সাধারণ জীবনযাত্রার কারণেই স্কুল-কলেজে কখনও সেভাবে গর্ব করতে পারেনি সুস্মিতা। ওর বাবার মুখে একটাই কথা, ‘নিজে ইনকাম করো, তারপর বুঝবে রোজগার করতে কত কষ্ট করতে হয়। বিশদ

24th  March, 2024
তবু যেতে হয়

—কাজটা তালে ছেড়েই দিলি সুবি!
সুবি উত্তর দেয় না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে সে। লাঙলপোতা গ্রামের ছোট্ট বাড়ির মাটির বারান্দার এক কোণে দাঁড়িয়ে পায়ের উপর পা ঘষে সুবিনয়। এ তার দীর্ঘ দিনের অভ্যেস। ঘরের ভিতরে তার শয্যাশায়ী মা অলকা। শুয়ে শুয়েই সান্ত্বনা দেন।
বিশদ

17th  March, 2024
গুরুদ্বার সিস গঞ্জ

দিল্লি দেখতে এসে চাঁদনী চক যাওয়া হবে না? তা কীভাবে হয়? অতএব দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয় ভ্রমণস্থল চাঁদনী চক।
বিশদ

17th  March, 2024
দেখা যায় না, শোনা যায় পুতুল বাড়ি
 

আকর্ষণ, বিতর্ক, কৌতূহলের চিরন্তন কেন্দ্রবিন্দু অলৌকিক দুনিয়া। বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী দুই শিবিরেরই এব্যাপারে আগ্রহ ষোলোআনা। তাই ভৌতিক সাহিত্য হোক বা সিনেমা, বাজারে কাটতি বরাবরই বেশি।
বিশদ

17th  March, 2024
প্রস্থান
দীপারুণ ভট্টাচার্য

শববাহী গাড়িটা গেটের ভিতর ঢুকতেই অরুণবাবু চারপাশটা দেখলেন। বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে তার ছেলে নীলাঞ্জন আর বউমা সুতপা। নীলাঞ্জন বড় চাকরি করে। সে ফোন পেয়েছিল অফিসে যাওয়ার পর। সুতপাকে বলেছিল, ‘বেরতে একটু সময় লাগবে। বিশদ

10th  March, 2024
গুপ্ত রাজধানী: জাহান আরার সমাধি
সমৃদ্ধ দত্ত

নভরোজ পরব চলছে। আগ্রা জুড়ে উৎসবের উচ্ছ্বাস। এখন ১৬৪৪। বাদশাহ শাহজাহানের আগ্রা দুর্গে সবথেকে বেশি উজ্জ্বল আয়োজন। স্বাভাবিক। প্রতি বছর নভরোজের সময় আগ্রা দুর্গ এভাবেই সেজে ওঠে। সম্রাটের পুত্রকন্যারা এই সময়টায় পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হন। বিশদ

10th  March, 2024
অতীতের আয়না: বাঙালির সার্কাস
অমিতাভ পুরকায়স্থ

১৯২০ সালের ২০ মে। নিজের ‘গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস’ নিয়ে সিঙ্গাপুরে ট্যুরে গিয়ে জন্ডিস হয়ে মারা গেলেন প্রিয়নাথ বসু। শুধু উপমহাদেশের সার্কাসের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও উৎকর্ষের নতুন মানদণ্ড ছাড়াও, বিনোদন শিল্প হিসেবে সার্কাসকে দৃঢ় ভিত দিয়ে গেলেন তিনি। বিশদ

10th  March, 2024
ভোগ
শুচিস্মিতা  দেব

পুতুলকে সদ্যই নিমতিতা থেকে ‘রায়চৌধুরী ভিলা’তে এনেছে তার পিসি সবিতা। সবিতা এই পরিবারের বহু দিনের থাকা-খাওয়ার মাসি। টিভি সিরিয়ালের মতো প্রকাণ্ড বাড়িখানা দেখে পেরথমেই ভেবলেছে পুতুল। ফুটবল মাঠের মতো বৈঠকখানা। বিশদ

03rd  March, 2024
রুপোর চাকু

আলমারিটা খুলতেই দাদার চোখ চলে গিয়েছিল। উপরের তাকে জামা কাপড়ের পাশে খালি জায়গায় শোয়ানো ছিল। বাজপাখির চোখ দাদার।
বিশদ

25th  February, 2024
অপরাজিতা
মীনাক্ষী সিংহ

জুনিয়র ডাক্তার সুমন সান্যাল জানিয়ে গেল অপারেশন থিয়েটার রেডি, এবার ডাঃ মিত্রকে যেতে হবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠলেন সার্জেন মাধবিকা মিত্র। আজ একটা ক্রিটিক্যাল অপারেশন। বছর সতেরোর মেয়েটির মায়ের মুখ মনে পড়ল মাধবিকার। বিশদ

18th  February, 2024
একনজরে
নিজেদের মধ্যে সব দ্বন্দ্ব ভুলে তমলুক লোকসভার প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যকে জেতাতে হবে বলে তৃণমূল নেতাদের সাফ জানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার হলদিয়ায় একটি হোটেলে তমলুক লোকসভার ...

একদিকে সুনীল নারিন ও বরুণ চক্রবর্তী। অন্যদিকে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, যুজবেন্দ্র চাহাল, কেশব মহারাজরা। মঙ্গলবার ইডেনে কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচে স্পিনারদের লড়াই আকর্ষণীয় ...

দেশজুড়ে আদর্শ নির্বচনী আচরণবিধি চলছে। ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার নির্বাচন। ওই দিন জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট। কিন্তু বিতর্ক বেঁধেছে আবাস যোজনার ফর্ম পূরণকে কেন্দ্র করে। ...

রাজস্থানের সিকারে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যু হল। এর মধ্যে রয়েছেন তিনজন মহিলা ও দু’টি শিশু। জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুরে একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ ...




আজকের দিনটি কিংবদন্তি গৌতম ( মিত্র )
৯১৬৩৪৯২৬২৫ / ৯৮৩০৭৬৩৮৭৩

ভাগ্য+চেষ্টা= ফল
  • aries
  • taurus
  • gemini
  • cancer
  • leo
  • virgo
  • libra
  • scorpio
  • sagittorius
  • capricorn
  • aquarius
  • pisces
aries

কর্ম বা গৃহক্ষেত্রে অশান্তি মনঃকষ্ট হতে পারে। পেশাদারী কর্মে সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ


ইতিহাসে আজকের দিন

বিশ্ব কণ্ঠ দিবস
হাজব্যান্ড অ্যাপ্রিসিয়েশন ডে
১৮৫০:  মাদাম তুসো জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ম্যারি তুসোর মৃত্যু
১৮৫৩: প্রথম ট্রেন চলল সাবেক বোম্বাইয়ের ভিক্টোরিয়া থেকে থানে পর্যন্ত
১৮৬৭: উড়োজাহাজের আবিষ্কারক উইলবার রাইটের জন্ম
১৮৮৯: অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের জন্ম
১৯১৬ - রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন
১৯৫১: লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মণের মৃত্যু
১৯৬৬: শিল্পী নন্দলাল বসুর মৃত্যু
১৯৭৮: অভিনেত্রী লারা দত্তর জন্
১৯৮৭: বিশিষ্ট অভিনেতা বিকাশ রায়ের মৃত্যু
২০২১: পিডিএফ ও ফটোশপের উদ্ভাবক ও সফটওয়্যার কোম্পানি এডোবির সহ-প্রতিষ্ঠাতা চার্লস গ্যাসকির মৃত্যু



ক্রয়মূল্য বিক্রয়মূল্য
ডলার ৮২.৯৭ টাকা ৮৪.০৬ টাকা
পাউন্ড ১০২.৭৫ টাকা ১০৫.৩৮ টাকা
ইউরো ৮৭.৭৪ টাকা ৯০.১৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
পাকা সোনা (১০ গ্রাম) ৭৩,১৫০ টাকা
গহনা সোনা (১০ (গ্রাম) ৭৩,৫০০ টাকা
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট ১০ গ্রাম) ৬৯,৯০০ টাকা
রূপার বাট (প্রতি কেজি) ৮৩,৬০০ টাকা
রূপা খুচরো (প্রতি কেজি) ৮৩,৭০০ টাকা
[ মূল্যযুক্ত ৩% জি. এস. টি আলাদা ]

দিন পঞ্জিকা

৩ বৈশাখ, ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪। অষ্টমী ২০/১৫ দিবা ১/২৫। পুষ্যা নক্ষত্র ৫৯/৫৩ শেষ রাত্রি ৫/১৬। সূর্যোদয় ৫/১৯/২৪, সূর্যাস্ত ৫/৫৩/৩২। অমৃতযোগ দিবা ৭/৪৯ গতে ১০/২০ মধ্যে পুনঃ ১২/৫২ গতে ২/৩২ মধ্যে পুনঃ ৩/২৩ গতে ৫/৪ মধ্যে। রাত্রি ৬/৪০ মধ্যে পুনঃ ৮/৫৬ গতে ১১/১২ মধ্যে পুনঃ ১/৩০ গতে ৩/১ মধ্যে। বারবেলা ৬/৫৪ গতে ৮/২৮ মধ্যে পুনঃ ১/১১ গতে ২/৪৫ মধ্যে। কালরাত্রি ৭/১৯ গতে ৮/৪৫ মধ্যে। 
৩ বৈশাখ, ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪। অষ্টমী অপরাহ্ন ৪/২৮। পুনর্বসু নক্ষত্র দিবা ৬/২৩। সূর্যোদয় ৫/২০, সূর্যাস্ত ৫/৫৫। অমৃতযোগ দিবা ৭/৪০ গতে ১০/১৫ মধ্যে ও ১২/৫১ গতে ২/৩৫ মধ্যে ও ৩/২৭ গতে ৫/১১ মধ্যে এবং রাত্রি ৬/৪৭ মধ্যে ও ৯/০ গতে ১১/১১ মধ্যে ও ১/২৩ গতে ২/৫১ মধ্যে। বারবেলা ৬/৫৪ গতে ৮/২৯ মধ্যে ও ১/১২ গতে ২/৪৬ মধ্যে। কালরাত্রি ৭/২০ গতে ৮/৪৬ মধ্যে। 
৬ শওয়াল।

ছবি সংবাদ

এই মুহূর্তে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ভবনে অগ্নিকাণ্ড
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে আচমকাই অগ্নিকাণ্ড। আজ, মঙ্গলবার দিল্লিতে রাইসিনা হিলসে নর্থ ...বিশদ

01:37:02 PM

আমার নাম অরবিন্দ কেজরিওয়াল, আমি কোনও সন্ত্রাসবাদী নই, জেল থেকে বার্তা আপ প্রধানের

01:33:27 PM

সলমনের বাড়ির বাইরে গুলি চালানোর আগে তিনবার রেকি করে ধৃতরা, জানাল মুম্বই পুলিস

01:30:42 PM

কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

01:27:53 PM

তামিলনাড়ুতে স্ট্যালিন, উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ, পাঞ্জাবে কেজরিওয়াল ও আমরা এখানে জিতব: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

01:26:08 PM

বিজেপি ২০০ পার হবে না: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

01:24:54 PM