উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। হিসেব করে চললে তেমন আর্থিক সমস্যায় পড়তে হবে না। ব্যবসায় উন্নতি ... বিশদ
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপক পদে যোগ দিতেই শিলিগুড়িতে আসা। বর্ধমান বা সিইউ-তে চেষ্টা করেছিল— কিন্তু পেরে উঠল না। ধরাধরি করার উপদেশ দিয়েছিল অনেকেই, শাশ্বত কাজটা গুছিয়ে করেই উঠতে পারল না।
না পারার প্রধান কারণ কুঁড়েমি। এটা ওর বরাবরের রোগ। জীবনে কোনও পরীক্ষায় শেষদিনের আগে ফর্ম জমা দিতে পারেনি। বার কাউন্সিলের মেম্বারশিপটা সারাজীবন লেট্ ফিস দিয়েই রিনিউ করিয়েছে। যতদূর পারা যায় ঠেলে রাখার এই মহান ব্যাধি, শাশ্বতকে সবসময় আন্ডার অ্যাচিভারই করে রেখেছিল। বাট আ হ্যাপি আন্ডার অ্যাচিভার।
দ্বিতীয় কারণ একটু মধ্যবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত মর্যাদাবোধ। আমি শাশ্বত মুখার্জি, যার এভিডেন্স অ্যাক্টের খাতা দেখতে দেখতে প্রফেসর অমিয় বাগচী পর্যন্ত বলেছিলেন, ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্টকে এত প্রাঞ্জলভাবে প্রকাশ করতে— শিক্ষকজীবনে কাউকে দেখেননি। সেই শাশ্বত মুখার্জি! যার ফলস এফআইআর-এর উপর তাত্ত্বিক প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরে মেজাজ হারান হাইকোর্টের সিটিং জাজও। সে যাবে পোস্টিং এর তদ্বির করতে? অসম্ভব।
অতএব যা হবার তাই হল। দু’য়ের যোগফলে উত্তরবঙ্গ যাত্রা। ক্যাম্পাসের মধ্যেই বাংলো প্যাটার্নের দোতলা বাড়ি। থাকার জন্য মন্দ নয়। বেশ সবুজে ঘেরা। উত্তরবঙ্গের এই হালকা গ্ল্যামারটা হয়তো আর বেশিদিন থাকবে না। যেভাবে কিছু অর্ধশিক্ষিত, রুচিবোধহীন মানুষ তরাই-ডুয়ার্সে কংক্রিটের জঙ্গল বানাচ্ছে! একটা পিআইএল ফাইল করলে কেমন হয়? ভাবনাটা ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে শাশ্বতর মনে।
ফোনটা এল শনিবারে। সকাল ৯টা নাগাদ দার্জিলিং টি সেকেন্ড রাউন্ড শেষ করে, আতলেতিকো মাদ্রিদের স্বপ্নের দৌড়ের গল্পটা বেশ রসিয়ে পড়ছিল একটা স্পোর্টস ম্যাগাজিনে। মিসড কল এবং নো কলার আইডি। এই এক বিড়ম্বনা। সার্ভিস প্রোভাইডারের দয়ায় প্রাইভেট নাম্বার আজকাল বড়ই সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে। আমলা মহলে একটু জানাশোনা থাকলেই আর গোটাকতক ঠিকঠাক রেফারেন্স থাকলেই মোটামুটি হয়ে যাবে। আর শুরু হবে অন্যের বিড়ম্বনা। কে ফোন করেছিল, জানতে না পারলে রিং ব্যাক করাও যায় না। আর যাঁরা এই নম্বরের অধিকারী তাঁরা তো সকলেই কেউকেটা। তাঁদের কল মিস করা জীবনের পক্ষে ভালো নয়।
না। এবার এল একটা এসএমএস। মাননীয় শ্রী শ্রীজিৎ বসু। রাজ্যের সংস্কৃতি এবং শিক্ষাজগতের অন্যতম পরিচিত মুখ। নাট্যকার-অভিনেতা। শাশ্বতর বেশ পছন্দের মানুষ ।
আলাপটা অনেকদিনের। তখন উনি এত বড় সেলিব্রিটি নন, শুধু অধ্যাপক আর নাট্যকার। শাশ্বত তখন সল্টলেকে আড্ডা মারত। শম্ভুদার বাড়িতে। বড়লোক এবং প্রথম প্রজন্মের। ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ে। চার-পাঁচটা ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট আছে। কামারহাটি, দমদম, কৈখালিতে। মামলার সূত্রে আলাপ। পরে সেটা পাল্টে যায় বন্ধুত্বে। আসা, যাওয়া, পার্টি আর আড্ডার সেই শুরু।
শম্ভুদার বউ শ্রীতমা আবার এই নতুন হওয়া বড়লোকি হাবভাবকে বনেদিয়ানার ছোঁয়া দিতে বদ্ধপরিকর। এমনিতে সাধারণ মহিলা। কিন্তু প্রাচুর্য কোথাও একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি করে।
শ্রীতমা এখন ক্রিয়েটিভ জগতে উঁকিঝুঁকি মারছে। নাটক দেখতে যাচ্ছে। কতটা বুঝছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তবে দেখছে খুব। সল্টলেকের বড় সংগঠনের এখন নিয়মিত সদস্যা। দেখতে ভালো না হলেও নিজেকে দেখানোর আত্মবিশ্বাসের কোনও অভাব চোখে পড়ে না।
শ্রীতমা, শম্ভুদা, শাশ্বত আর মোটা অপূর্ব— চারজনে গিরিশ মঞ্চ থেকে বেরনোর পর উচ্ছ্বসিত শ্রীতমা বলল, ‘অসাধারণ কী ইন্টেলেকচুয়াল প্রোডাকশন! আমি একটা সিনেমা প্রযোজনা করব ওঁর পরিচালনায়।’ ‘২৭শে জুলাই’ নাটকটা সত্যিই অসাধারণ। শ্রীজিৎ বসুর সব নাটকের মধ্যে শাশ্বতর সবচেয়ে প্রিয়।
যে কোনও পয়সাওয়ালা অ্যাভারেজ মানুষের মতোই শম্ভুদা বউকে অসম্ভব ভয় পায়। মোটা অপূর্ব ট্যাবলয়েডের সাংবাদিক। এও শম্ভুদার নতুন আবিষ্কার। মিডিয়ার ছেলেগুলোও স্মার্ট। উৎসাহ দেয় কাগজ বের করুন, চ্যানেল খুলুন। আপনিই তো নেক্সট রুপার্ট মারডক বা মাইকেল ব্লুমবার্গ।
এখন শম্ভুদারও নতুন পর্ব চলছে। টাকা হয়েছে— এবার সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লড়াই।
ছবিটা হল— নাম ‘রঙ্গিত’ এবং যথারীতি ফ্লপ করল। প্রত্যাশিতই ছিল।
শ্রীজিতের পরের দিকের ছবিগুলো শাশ্বতর মন্দ লাগেনি। কিন্তু ‘রঙ্গিত’ ফ্লপ। কাস্ট সিলেকশনে গন্ডগোল, স্লো ন্যারেটিভ। ছবিটা পড়ল মুখ থুবড়ে। শম্ভুদারও বিনোদন জগতে তিরোধান ঘটল।
যাইহোক সেই সূত্র ধরেই আলাপ শ্রীজিৎ বসুর সঙ্গে। তারপর তিস্তা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। শাশ্বত পিএইচডি শেষ করে অধ্যাপনায় প্রবেশ করেছে। শাশ্বতর লজিককে শ্রীজিৎ খুব পছন্দ করতেন। তাই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা নষ্ট হয়নি—
‘আমি লাভাতে আসছি সোমবার একটা শ্যুটিংয়ে। চলে এসো। জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে।’
লোভনীয় প্রস্তাবটা ফেলতে পারল না শাশ্বত। এমনিতে পাহাড় ওর খুব প্রিয় নয়। বরং ডুয়ার্স অনেক প্রিয়। লাভা দূরও বটে। কালিম্পং থেকে আরও প্রায় ঘণ্টা দেড়েক।
তবুও আড্ডা দেওয়ার লোভটা সামলাতে পারল না শাশ্বত। সোমবার দুপুরে লাঞ্চ করে গাড়িতে রওনা হল লাভার উদ্দেশে।
চিত্রে পর্যন্ত খুব খাড়াই না। তারপর শুরু আপহিল জার্নি। এই কালিম্পং শহরটা বেশ মায়াবী। দার্জিলিং আর কার্শিয়াঙের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। হইচই কম। রাস্তার পাশে এত চা বাগানও চোখে পড়বে না। কিন্তু কালিম্পং একেবারে গ্রামের ঢলঢলে সুন্দরী— মায়াবী আর আকর্ষণীয়।
লাভা যাওয়াটা অবশ্য বেশ বিরক্তিকর। বাজে রাস্তা। অন্ধকারও হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল রাস্তা যেন আর শেষ হয় না।
জিজ্ঞেস করার লোকও মেলে না রাস্তায়। সন্ধে সাড়ে পাঁচটা-ছ’টার পর লোকের আর কী-ই বা করার আছে এদিকে? শাশ্বতর মনে হচ্ছিল— এরাই ভালো আছে। ছোট বৃত্ত, সামান্য চিন্তা আর আজকের দিনটা কেটে যাওয়ার সংস্থানটুকু হলেই হল। একটা মাহিন্দ্রা ভ্যান ওদের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল— পিছনে লেখা ‘পিস ইজ পসিবল।’
শ্যুটিং স্পটটা খুঁজে নিতে অসুবিধা হল না। এরকম একটা ছোট গঞ্জে শ্রীজিৎ বসু এসেছেন- ঠিক খবর হয়ে গিয়েছে। স্পট থেকে ফিরে আসছেন কিছু মানুষ পরিবার সহ। সন্তানের হাত ধরে বাবা আগে, মা একটু পিছন পিছন। কোথাও বা একটা ছোট গ্ৰুপ। চাকুরিজীবী অধিকাংশ মানুষ বউকে খুশি রাখতে বছরে একবার বা দু’বার বেড়াতে যাবেই। মাঝারি হোটেল, হাবড়ে খাওয়া, বউয়ের চোখ রাঙানি আর সেই বউকে খুশি করার প্রাণপণ চেষ্টা। এই চক্করে কত্ত লোক যে ঘেঁটে গেল জীবনে। লোকগুলো শ্যুটিং দেখে ফিরছে— শুধু লাভা নয় সঙ্গে দেখা হয়ে গেল শ্রীজিৎ বসুকেও। বাড়ি ফেরার পর পাড়ায় স্ট্যাটাস ফ্যাটাস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রীতিমতো।
কোন দুঃখে যে এখানে শ্যুটিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে— তা বোঝার চেষ্টায় অনেকটা সময় নষ্ট হল শাশ্বতর। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে পরিচালক অর্ণব, নায়িকা ঐন্দ্রিলা আর পার্শ্বঅভিনেতা তীর্থঙ্কর— এঁদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন শ্রীজিৎই। প্রাথমিক কুশল বিনিময়ের পর আড্ডাটা কিক স্টার্ট করল শাশ্বত।
‘আপনার সজারুর কাঁটা দেখেছি রিসেন্টলি। খুব স্মার্ট ও ঝকঝকে ছবি। আপনার পারফরম্যান্সও অসাধারণ ,’ লক্ষ্য তীর্থঙ্কর।
তীর্থঙ্কর হাসল। শাশ্বত খেয়াল করল প্লাস্টিক স্মাইল। ভদ্রলোক হাসেন, কিন্তু ওঁর চোখ হাসে না। আড্ডা চলতে চলতেও কয়েকবার চোখে পড়ল— সেই হাসি। যে কোনও প্রশ্নের উত্তরে হাসি। মতামতের বদলে হাসি। তীর্থঙ্কর হাসিটাকে ব্যবহার করে নিজের আসল মনোভাব ঢেকে রাখার জন্য। কেয়ারফুলি ক্রিয়েটেড কভার। এ ছেলে ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক দূর যাবে।
ঐন্দ্রিলাকে বেশ গোছানো মনে হচ্ছিল সেই সন্ধ্যায়। বডি ল্যাঙ্গুয়েজে একটা মাথা ঘুরিয়ে দেবই গোছের স্টেটমেন্ট আছে। ক্যাপশন প্রতিযোগিতা হলে শাশ্বত লিখত, ‘দ্য হেডটার্নার’।
পরিচালক অর্ণব, অভিনেতা শ্রীজিৎ, তীর্থঙ্কর আর ঐন্দ্রিলা ছাড়াও আর একজন ইন্টারেস্টিং ভদ্রমহিলা উপস্থিত ছিলেন— পল্লবী পুরকাইত। দ্য ডি ফ্যাক্টো প্রোডিউসার। ছবিটা ইন্দো-আমেরিকান কোলাবরেশনে তৈরি হচ্ছে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ইউএস মোশন পিকচার্স আর এদেশের ড্রিমজ লিমিটেডের যৌথ প্রযোজনা। পল্লবীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীজিৎই। ‘শাশ্বত, মিট পল্লবী ফ্রম ইউএস মোশন পিকচার্স।’ শাশ্বত হাত বাড়াল। উষ্ণ এবং দীর্ঘ করমর্দনের পরে মুখোমুখি বসে কিছুক্ষণ কথাও হল। অবশ্যই কাজের ফাঁকে ফাঁকে। ভদকায় জল মিশিয়ে একটা গ্লাসে রাখা। পল্লবী মাঝে মধ্যে চুমুক দিচ্ছে, কথা বলছে, কাজ করছে— আ রিয়েল মাল্টিটাস্কার।
প্রোডাকশনে এর অনেক জিনিসই লোকালি জোগাড় করতে হয়। তাই বোধ হয় একজন লোকাল প্রোডাকশন ম্যানেজার আছেন। নাম সম্ভবত বিনয়। পুরো লজিস্টিকস তারই দায়িত্ব। পল্লবী তার কাজটা নিয়ন্ত্রণ করছে।
নিয়ন্ত্রণ যে করতে পারেন এই ভদ্রমহিলা— সেটা কিছুক্ষণ পর থেকেই ফিল করতে শুরু করেছিল শাশ্বত।
পল্লবী পুরকাইত। বাঙালি হলেও জন্ম, পড়াশোনা দিল্লিতে। বাবা ডাক্তার। ক্ল্যাটে খুব ভালো র্যাঙ্ক না হওয়ায় ন্যাশনাল ল’ স্কুল হয়নি। এক বেসরকারি ল’ কলেজ থেকে পাশ আউট এবং টিপিকাল কর্পোরেট ল’ইয়ার।
‘হঠাৎ এই ধরনের জয়েন্ট ভেঞ্চার?’ শাশ্বত বলটা গড়াচ্ছে ।
‘কর্পোরেট দুনিয়ায় হঠাৎ করে কিছু হয় না মিস্টার মুখার্জি।’ হোয়াটসঅ্যাপে কাউকে মেসেজ করতে করতে পল্লবীর জবাব।
‘হুঁ! যা বলছিলাম’- পল্লবী ফোনটা রাখল।
‘তবে’- শাশ্বত লিড দিচ্ছে।
‘বিজনেস। ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে ছবি প্রোডিউসারদের টার্গেট এরিয়া মিস্টার মুখার্জি। আমাদের সার্ভে বলছে, এই দুটো দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে সিনেমা দেখার জন্য।’
শাশ্বতর কাছে এটা তথ্য – ‘ ও ’।
‘নাউ’- পল্লবী এবার বোর্ডরুম ব্রিফিং করছে। ‘শুধু ইংরেজি ভাষায় বা বিদেশি পটভূমিকায় ছবির থেকে একটু মিশেল দিলে এই বাজারটা ধরা যাবে। সেটা ইন অ্যাডিশন টু ইংরেজি ছবির নিজস্ব বাজার।’
শাশ্বত পরিষ্কার— বিজনেস অফ সিনেমার উপর ওর ক্লাস চলছে ।
‘ক্রিস হেমসোয়ার্থ আর গোলশিফতে ফারহানার ‘এক্সট্রাকশন’ ছবিটার ব্যবসা দেখুন। ব্যাকড্রপ যেহেতু বাংলাদেশ, আর রণদীপ হুডা আর দু-চারটে বাংলাদেশের অভিনেতাকে যেই নিয়ে নিয়েছে ছবিটা সুপার হিট। বাঙালি হামলে পড়ে গিলছে! আবার গালাগালিও দিচ্ছে!’ পল্লবীর লজিক খুব পরিষ্কার।
‘ইউএস মোশন পিকচার্সে আছেন কতদিন?’ - শাশ্বত প্রসঙ্গ পাল্টালো।
‘হয়ে গেল দশ-বারো বছর। আমি মূলত কর্পোরেট অপারেশনই দেখি। যেহেতু ইন্দো-আমেরিকান ভেঞ্চার আর আমি বাঙালি তাই এটা আমার কপালে জুটেছে। উফ অনেকদিন পর খুব রিলাক্সড লাগছে।’
পৃথিবীর সব থেকে বড় প্রোডাকশন কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউএস মোশন পিকচার্স একেবারে প্রথম সারির। ওয়ার্নার ব্রাদার্স, প্যারামাউন্ট পিকচার্স এদের সঙ্গে একই ব্র্যাকেটে থাকে ইউএস মোশন পিকচার্স। সেখানকার একজন সিনিয়র এগজিকিউটিভের যে ওয়ার্ক প্রেশার থাকবে, তা মোটেই আলাদা করে বলার মতো নয়। কিন্তু পল্লবীকে যেন অন্য কারণে খুব টেনসড মনে হচ্ছিল শাশ্বতর। বার বার ফোন কেটে দিচ্ছিল কারও। একবার চাপা গলায় বলল, কলিং ইউ লেটার।
অন্য কোনও সমস্যা? শাশ্বত বোঝার চেষ্টা করছিল। যেটা তখনও ও ভাবতেই পারেনি যে, এত শিউরে ওঠার মতো কিছু ঘটতে যাচ্ছে। স্ক্যান্ডালটা যে এত বড় আর পরিণতি যে এত ভয়ানক হতে পারে, তা আন্দাজই করতে পারেনি ও।
আড্ডা শেষ। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে, ব্রেকফাস্ট সেরে কিছুক্ষণ শ্যুটিং দেখে শিলিগুড়ির দিকে রওনা দিল। শ্রীজিৎ বসু চেয়েছিলেন যে, ও স্টে করুক। কিন্তু শাশ্বতকে ফিরতেই হতো। একটা জার্নালের এডিটর ফোন করেছিলেন। একটা লেখা গিয়ে রেডি করতেই হবে।
মাস দুয়েক পরের কথা। ততদিনে নিজেও অ্যাকাডেমিক পরিমণ্ডলে পুরোপুরি ঢুকে গিয়েছে ও।
লিংকটা শেয়ার করলেন শ্রীজিৎ বসুই। তলায় লেখা ‘ছবিটা বোধহয় গেল শাশ্বত।’
লিংকটা ক্লিক করতেই দ্য লাইভ ওয়্যার বলে অনলাইন পোর্টাল এর একটা খবর সামনে এল। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলল শাশ্বত।
দ্য লাইভ ওয়্যারের সূত্র অনুযায়ী, তিনজন অত্যন্ত ক্ষমতাশালী মিডিয়াপার্সন ২০১৮ সালে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের মিডিয়া স্বত্ব কেনার জন্য তৎকালীন ফিফা প্রেসিডেন্ট জোসেফ ব্লাটারকে ৩ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দেয়। পরে এফবিআই তদন্ত শুরু করে। ব্লাটার পদ হারান। দুটো সংস্থার নাম উঠে আসে যারা এই ডিলটা করেছিল। একটা স্প্যানিশ মিডিয়া কনগ্লোমারেট দ্য ইমাজিনিয়া আর একটা ইউএস মোশন পিকচার্স। এফবিআই ইউএস মোশন পিকচার্সের অ্যাডভাইজার জার্মান লোবোজকে জেরা করে । সূত্রের খবর, জেরায় লোবোজ জানায় যে, অপারেশনটা ইউএস মোশন পিকচার্সের পক্ষ থেকে হ্যান্ডেল করেছিল পল্লবী। লাতিন আমেরিকার একটি এবং মধ্যপ্রাচ্যের দুটি দেশের সিনিয়র পলিটিশিয়ানরাও নাকি জড়িত আছেন এর সঙ্গে।
এফবিআই পল্লবীকে অ্যারেস্ট করার জন্য নিউইয়র্কে তার অ্যাপার্টমেন্টে রেইড করে। কিন্তু ফ্ল্যাটে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এফবিআই তার ল্যাপটপ থেকে কিছু সাম্প্রতিক ছবি উদ্ধার করে। তারই একটা লিক হয়ে দ্য লাইভ ওয়্যারের হাতে এসেছে। লাভার ছবি। ছবিতে শাশ্বত আছে, আছেন শ্রীজিৎ বসুও।
শাশ্বত একটা রিপ্লাই করল । ‘ইন্টারেস্টিং স্যর— একেবারে সিনেমার মতো ।’
অঙ্কন: সুব্রত মাজী