বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
বাবার পুষ্পচন্দন শোভিত ছবির দিকে তাকাল অনুপম। সেই পরিচিত প্রশান্ত মুখ, সেই স্বস্নেহ চাহনি, সেই নীরব অভিব্যক্তি। আজ অশৌচান্তের তর্পণ যেন অনুপমের মনোদর্পণ— তাতে টুকরো টুকরো ছবি দিয়ে সাজানো স্মৃতির কোলাজ। এমনভাবে ভাবেনি কোনও দিন। অনুপম আবার দৃষ্টি ফেরাল বাবার ছবির দিকে।
পুরোহিতমশাই বললেন, ‘আপনার কাজ শেষ— এবার উঠতে পারেন।’ অপরাজিতা এগিয়ে এল—
‘একটু চা খাবে— চলো’।
আসন ছেড়ে অনুপম তাকাল। আত্মীয়, বন্ধু, চেনামুখ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে, মৃদু কণ্ঠে বাক্যালাপ। ওকে দেখে এগিয়ে এল কেউ কেউ। ভদ্রতাসূচক সমবেদনা, কিছু কথা। পাশের টেবিলে বাবার ছবিতে ফুলমালার স্তূপ, ধূপ জ্বলছে— বাতাসে তার গন্ধ— পাশে জমেছে সন্দেশের বাক্স।
এরা সবাই এতদিন কোথায় ছিলেন? বাবাকে সবাই কি চিনতেন? স্বগত প্রশ্নে অনুত্তর জিজ্ঞাসায় তাকাল অনুপম। এঁরা বেশির ভাগই মায়ের বন্ধুর দল, স্কুলের সহকর্মীরা। একপাশে অপরাজিতার বাবা-মা, দাদা-বউদি, অন্যদিকে ওর কিছু আত্মীয়ের চেনা মুখ, অনুপমের কলেজের অধ্যাপক সহকর্মীরা কেউ কেউ। সবাই বোধহয় বাবাকে চিনতেন না, আজ এসেছেন অনুপমের বাবা অরুণাভ সেনের শ্রাদ্ধবাসরে আমন্ত্রিত অতিথিরূপে।
টুকরো কথা, মৃদু হাসি, কিছু আলাপ-সংলাপের মধ্য দিয়ে অনুপম এগিয়ে চলে, তার সাদা ধুতি চাদরে যেন শোকের ছায়া আঁকা। অবিন্যস্ত চুলে উঁকি দিচ্ছে ধূসর ছায়া। না, প্রথাগতভাবে মস্তক মুণ্ডন করেনি সে। বাবাকে শ্রদ্ধা জানাতে চুল কামাতে হবে— এই প্রথায় বিশ্বাসী নয় সে। হয়তো আরও অনেক কিছুতেই বিশ্বাস নেই তার, তবু রীতি পালন করতে হল। কেন? নিজেকেই প্রশ্ন করল অনুপম। অপরাজিতার মা একবার বলেছিলেন,
—তোমার মা’র কথা ভেবেই তো এসব করতে হবে অনুপম।
—মা’র কথা? চমকে তাকিয়েছিল অনুপম।
বিনতাদেবী একটু অপ্রস্তুত হয়ে থেমে গিয়েছিলেন।
লোকজনের ভিড় একটু একটু করে কমে গেল। ব্যালকনিতে এসে সিগারেট ধরিয়ে অনুপম বসল। সামনে কয়েকটা বাড়ির পিছনে ছোট পার্ক। হঠাৎ মনে হল এ সময় তাদের দার্জিলিঙে থাকার কথা। অপরাজিতা আর অধিরাজকে নিয়ে এক সপ্তাহের ছুটি কাটাতে দার্জিলিঙে পৌঁছবার পরদিনই বাবার আকস্মিক চলে যাওয়ার খবরে ফিরে আসতে হল। সব প্ল্যান মাটি। অপরাজিতা, অধিরাজ আশাহত। কত পরিকল্পনা ছিল। অনুপমের মনেও ছিল সংশয়। বাবার সঙ্গে সম্পর্ক তো ছিন্ন সুতোর মতো, সেটাও কেটে গেল। একবার মনে হয়েছিল— কী লাভ ফিরে গিয়ে। শেষ দেখাও হল না। জীবনের বেশি সময়টা বাবাকে ছাড়াই তো কাটল— আর লোক দেখানো ভড়ংয়ের কী-ই বা দরকার।
হঠাৎ-ই ছেলের দিকে তাকিয়ে কী যেন হল। ভবিষ্যতের সম্ভাবনা উঁকি দিল মনে। তার চলে যাওয়ার খবরে অধিরাজ কী করবে? মনে মনে কেঁপে উঠল অনুপম। তারপরই সব প্ল্যান ভুলে হোটেলের বিল মিটিয়ে তাড়াহুড়ো করে কলকাতার ফ্লাইট। কাঞ্চনজঙ্ঘার স্বর্ণশিখর দেখা হল না। মনে হল বাবাও প্রায় সারা জীবন কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো কুয়াশায় ঢাকা রয়ে গেলেন। অপরাজিতা ফেরার সময় বলেছিল—
—অনেক লস হল।
অনুপম তাকাল— ‘কোনটা লস?’
চুপ করে গেল অপরাজিতা।
‘পিস হ্যাভেন’ থেকে নিষ্প্রাণ অরুণাভ সেনের মরদেহ অনুপমকেই আনতে হল। মা বাড়িতে। কাকু সঙ্গে আসতে চেয়েছিল— অনুপম বলেছিল, ‘না থাক। আমি একাই পারব।’ সব কাজ শেষে বাড়ি ফিরে মা’র দিকে তাকাল অনুপম। মাকে ঘিরে বসে অপরাজিতার মা, পাড়ার দু-একজন মহিলা, মা’র স্কুলের কলিগ সুজাতামাসি।
সকলের দিকে তাকিয়ে দেখল অনুপম, তারপর মা’র কাছে এসে দাঁড়াল।
—সব কাজ হয়েছে নিয়ম মতো? অমিতা প্রশ্ন করলেন। মা’র দিকে তাকাল অনুপম।
—আমি সব নিয়ম জানি না, মানি না-ও। তুমি সব নিয়ম মেনেছ তো, তাহলেই হবে।
চকিতে চোখ তুলে তাকালেন অমিতা। ছেলের কাছা গলায় মূর্তি দেখে থমকালেন একটু। তারপর নিজেকে দেখলেন। না— সাদা থান পরেননি। হাতে, গলায়, কানে সব অলঙ্কারই আছে, তবে কপালে বড় লাল টিপটা নেই। সিঁদুর কি পরতেন স্বামীর কল্যাণে? আবছা রেখা হয়তো রয়ে গিয়েছে। খুব কি বদলে গেছেন অরুণাভের মৃত্যুতে— বাইরে বা ভিতরে। অনুপম প্রশ্ন করল মাকে, নিজেকেও।
লাল পাড় কোরা শাড়ি পরা অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে বলল— ‘একটু চা খাওয়াবে?’
দশ বছরের অধিরাজ অচেনা চোখে তাকাল বাবার দিকে। বাবার এই চেহারা আর পোশাক তার অচেনা। তার ছোট্ট মনে প্রশ্ন জাগল— দাদুর জন্য কি বাবা আজ এমন অন্য মানুষ। অথচ দাদু তাদের সঙ্গে থাকেননি কোনও দিন। অনেক দূরে থাকতেন একা একা। সে থাকত মা-বাবা আর ঠামির সঙ্গে কলকাতায়। তাদের সঙ্গে থাকেন ছোট দাদু—বাবার কাকু। তিনিই বাড়ির অভিভাবক। দাদু বোলপুর থেকে বছরে এক বা দু’বার আসতেন তাদের কাছে। খুব আদর করতেন তাকে, অনেক গল্প শোনাতেন বোলপুর, শান্তিনিকেতনের। দু’দিন পরেই ফিরে যেতেন। ছোট্ট অধিরাজ সবটা বুঝত না শুধু মনে হতো এ বাড়িতে বোধহয় দাদুকে কেউ চায় না। তবুও দাদু আসতেন, নাতিকে আদর করতেন। বাবাকে ডাকতেন ‘খোকন’ বলে। এ নামে বাবাকে আর কেউ ডাকে না। রাজের হাসি পেত, অত বড় একজনের নাম ‘খোকন’।
কাছা গলায় বাবাকে আড়চোখে দেখল রাজ। তারপর একে একে তাকাল সকলের দিকে। আশ্চর্য, কেউ তো কাঁদছে না। পাশের বাড়ির বীরেনদাদু মারা গেলে ওদের বাড়ির সকলের কী কান্না। হঠাৎ-ই অধিরাজের চোখটা জ্বালা করে উঠল। মনে হল দাদুকে কি তাহলে কেউ একটুও ভালোবাসত না। আর তো দাদু বোলপুর থেকে কোনও দিন আসবেন না, তার শান্তিনিকেতনের গল্প শোনাও বন্ধ হয়ে যাবে। দার্জিলিঙে বেড়ানো হল না বলে মনে মনে একটা কষ্ট হচ্ছিল ক’দিন— আজ মনে হল সেই কষ্টটা আর নেই, তার বদলে অন্য কী একটা কষ্ট হচ্ছে মনে মনে।
সন্ধেবেলা। সারা দিন শ্রাদ্ধের সাত-সতেরো নিয়ম। লোকের আনাগোনার পর এখন বাড়িটা নিঝুম। রাজ ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয়। ওপাশের ঘরে কাকু টিভিতে সংবাদ প্রবাহ দেখছে প্রতিদিনের মতো— মা বোধহয় ওখানেই বসে আছে। অপরাজিতা ব্যস্ত রান্নাঘরে। অনুপম বারান্দায় এল। একটু পরে অপরাজিতা এসে পাশে বসল।
—তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ো। কাল আবার নিয়মভঙ্গের পালা, অনেক কাজ।
—আমার আর কী কাজ। ক্যাটারার তো বলাই আছে। একশোজনের আয়োজন— বড় কিছু নয়। ওরাই সামলে নেবে।
—সে তো সামলাবে। তবে লোকেদের আপ্যায়ন তো আমাদেরই কাজ, অনেক খাটুনি হবে।
হঠাৎ কী হল অনুপমের। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে একটু যেন অন্য সুরে বলে উঠল—
একদিন না হয় বাবার জন্য একটু খাটুনি হলই। আগেও বাবার জন্য কিছু করনি। পরেও করতে হবে না। শ্বশুরের জন্য একটু কষ্ট না হয় করলে অপরাজিতা।
—আমাকে বলছ কেন? তোমার বাবার জন্য এ বাড়িতে তোমরাই বা কবে কী করেছ— তুমি, তোমার মা, কাকু? আজ উনি মারা যাওয়ার পর আমায় কর্তব্য শেখাচ্ছ?
অনুচ্চ কণ্ঠে কথাগুলো বলে চলে গেল অপরাজিতা। চমকে উঠল অনুপম। স্ত্রীর কথায় যেন চমক ভাঙল তার। সত্যি, বাবার জন্য তো সারাজীবনে কিছুই করা হয়নি। তার পাঁচ বছরের স্মৃতি জড়ানো বোলপুরের ছোট্ট একতলা বাড়িটার কথা মনে পড়ল। সেই ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে পাঠ ভবনে যাওয়ার অস্পষ্ট স্মৃতি মনে এল। তারপর তো একদিন সব ছেড়ে কলকাতায় চলে আসা, উত্তর শহরতলির দু-কামরার ঘরে মা’র সঙ্গে থাকা। পাশের ঘরে কাকু। মাঝে মাঝে মাসিরা আর বীরভূম থেকে মেজো কাকা আসত। আর মাঝে মাঝে একটা করে পোস্ট কার্ডে বাবার চিঠি আসত— গোটা গোটা অক্ষরে লেখা—
‘খোকন সোনা, কেমন আছ? পড়াশোনা করছ তো? ভালো আছ খোকন? অনেক দিন তোমায় দেখি না।
আশীর্বাদ নিও।
— বাবা’
বানান করে চিঠি পড়ত ছোট অনুপম। পাশের ঘরে কাকুর অফিসের বন্ধুরা তখন তুমুল আড্ডার আসরে মশগুল। মাও চা-জলখাবার নিয়ে সেই আসরে যোগ দিত। ছোট্ট অনুপম তখন ইস্কুলের পড়া নিয়ে ব্যস্ত। ধীরে ধীরে বড় হতে হতে সব সয়ে গেল। মা’র স্কুল, কাকুর অফিসের কাজের সঙ্গে সঙ্গে তার পড়াশোনার চাপও বাড়ল। তারপর সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ অনুপম বন্ধুদের নিয়ে অন্য জগতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বাবার কথা কী তখন মনে পড়ত? তারও পরে আরও বড় হয়ে বাবার কথা ভেবেছে কোনও দিন তেমনভাবে?
জীবন তখন নিজস্ব গতিতে চলেছে। পড়াশোনা, কেরিয়ার গড়ার স্বপ্ন, রোম্যান্টিক কল্পনায় বিভোর হয়ে থাকা তরুণ অনুপমের জীবনে বাবার জন্য কতটুকু জায়গা ছিল। মাঝে মাঝে বেড়াতে যাওয়া। বউদি আর আদরের ভাইপোর সঙ্গে কাকুও সেই সফরের সঙ্গী, গাইড। অনেক ভেবেও আজ অনুপমের মনে পড়ল না কোনও দিন বাবা তাদের সঙ্গে ছিলেন কি না।
কখনও-সখনও বীরভূম থেকে মেজো কাকা-কাকিমা এসে ছোট দেওরের বিয়ের কথা বলতেন। শেষ পর্যন্ত কাকুর বিয়েটা হল না। তাদের মা-ছেলের সংসারে কাকু, কিংবা কাকুর একক সংসারে তারা মা-ছেলে রয়ে গেল। বাবা রইলেন শান্তিনিকেতনে, একা— একেবারে একা।
আজ হঠাৎ অনুপমের মনে হল— ঠিক ছিল না। ঠিক ছিল না। কিন্তু তখন তো ভাবেনি এসব, অথচ ভাবা উচিত ছিল। প্রথম প্রথম কেউ কেউ, মা’র স্কুলের সহকর্মীরা বাবার কথা জিজ্ঞেস করত, ক্রমে ক্রমে গুঞ্জন থেমে গেল। বড় হতে হতে অনুপমও বুঝে গেল বাবা-মা আসলে দু’জন দুই ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা। কাকু অবশ্য তাকে খুব স্নেহ করে, তবু মাঝে মাঝে বাবার কথা ভেবে আনমনা হতো সে, একটা সূক্ষ্ম কাঁটা বিঁধত মনে, অথচ কোনও দিন মাকে স্পষ্ট করে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি। আর এতদিন পরে এই মধ্য চল্লিশের যাপিত জীবনে এ নিয়ে ভাবার অবকাশও নেই। হয়তো আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যে অভ্যস্ত জীবন অনেক অনুত্তর অস্বস্তিকর প্রশ্নকে এড়িয়ে গিয়েছে। কখনও-সখনও বাবা আসতেন তাদের বাড়িতে। দু’দিন থাকতেন অতিথির মতো, কেমন মায়াময় চোখে দেখতেন তাঁর খোকনকে, যে তখন অধ্যাপক অনুপম সেনের নির্মোকে বাবার কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে ক্রমেই সরে গিয়েছিল। তারপর বাবা ছোট ভাইয়ের সংসারে তাদের রেখে ফিরে যেতেন।
এর মধ্যে যৌবন উন্মেষের উত্তাল প্রহরে অপরাজিতার সঙ্গে পরিচয়, প্রণয়, পরিণয়। আধুনিক সমাজ আর অহেতুক প্রশ্ন করে না সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে। তাই তাদের বিয়েতে সবই হল সাড়ম্বরে। কাকুই বরকর্তা। বাবা এলেন, শান্ত ধীর মানুষটি বহিরাগত অতিথির মতো চারদিন পরে ফিরে গেলেন। খোকন ও বউমাকে শান্তিনিকেতনে যাওয়ার কথা বলে গেলেন। তারা দু’জনে একবারই মাত্র গিয়েছিল, তখন অধিরাজ চার বছরের।
আজ শ্রাদ্ধবাসরে মন্ত্রোচ্চারণের সময় বার বার অনুপমের মনে পড়ছিল বাবার সৌম্যশান্ত মূর্তি। জীবনে অপ্রাপ্তি যে এক ধরনের বিষাদমগ্ন প্রশান্তি আনে, তাঁর চেহারায় ছিল সেই ছাপ। স্ত্রীকে ধরে রাখতে পারেননি। জোরও করেননি, একমাত্র সন্তানের ওপরও অধিকার খাটাননি। কেন?
এ প্রশ্ন আগে অনেকবার মনে জাগলেও এড়িয়ে গিয়েছে অনুপম। সত্যের মুখোমুখি হতে কি ভয় পেয়েছিল, সাজানো জীবনের ছক ভাঙার আশঙ্কায় সংশয়িত চিত্ত ছিল। স্বাচ্ছন্দ্য সাফল্য উচ্চাকাঙ্ক্ষার সোপান বেয়ে ওঠা জীবনে আর হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে চায়নি।
অথচ, শ্মশানে, শ্রাদ্ধকর্মে বারবার বাবার নাম গোত্র উচ্চারণে নিজের উত্তরাধিকারের স্বীকৃত সত্যকে মানতেই হয়েছে, শোধ করতে হয়েছে অপরিশোধনীয় পিতৃঋণ।
এই মুহূর্তে তার হাতে ধরা বহু পুরনো এক ছবিতে ধরা আছে তিন প্রজন্ম। শান্তিনিকেতনে ছাতিমগাছের তলায় তারা তিনজন। বাবার পাশে সে আর বাবার কোলে তার ছেলে অধিরাজ। একই পদবিধারী তিন প্রজন্ম, পরম্পরার প্রতীক। হঠাৎ অনুপমের মনে হল বড় হয়ে রাজ যদি তাকে অস্বীকার করে দূরে চলে যায় কোনও দিন। তার শূন্যতা ভরাবে কে? স্ত্রী সন্তানের সংসারে সেও কি বহিরাগত হয়ে থাকবে বাবার মতো?
অরুণাভ সেন, অনুপম সেন, অধিরাজ সেন— তিন প্রজন্ম যে এক রক্ত বন্ধনে বাঁধা, এই সত্য অলীক স্বপ্ন নয়, নয় কুয়াশা ঘেরা। জীবনে বাবাকে তেমনভাবে গ্রহণ করেনি। দূর থেকে সম্পর্ক সূত্রে ছিল বাঁধা। আজ তর্পণ শেষে দর্পণে নিজের ছায়া দেখে শিহরিত হল। তার মনোদর্পণে ভেসে উঠল পরম্পরাবাহিত তিন প্রজন্মের ছবি— বাবা আর ছেলের মাঝখানে নিজেকে চিনতে অনুপমের আজ আর ভুল হল না।