Bartaman Patrika
গল্পের পাতা
 

এমনি বরষা ছিল সেদিন
ছন্দা বিশ্বাস

 দশ দিন হতে চলল অর্ণব ঠাকুরপোকে পাওয়া যাচ্ছে না। অনিকেতের ছেলেবেলার বন্ধু অর্ণব। আমার বিয়ের পরে বেশ কয়েকবার আমাদের বাড়িতে এসেছে। তারপর বহুদিন আর দেখা হয়নি। মাঝখানে হঠাৎ একদিন এসেছিল আমাদের বাড়িতে। সেও বেশ কিছুদিন হতে চলল। অনিকেত শুনলাম থানায় একটা মিসিং ডায়েরি করেছে।
সকাল থেকেই যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে আজ। দিবালোকের শেষ আলোকবিন্দুটুকু শুষে নিয়েছে শ্রাবণের আকাশ। ঘন কাল মেঘে ছেয়েছে চতুর্দিক। মুহুর্মুহু মেঘ গর্জন আর সেই সাথে চলছে বিদ্যুতের ঝলকানি। গাছেরা আগাম বিপদের আশঙ্কায় সবাই যেন ব্যতিক্রমী চুপ। পাখিরাও প্রকৃতির হঠাৎ এই রূপ পরিবর্তনে চিন্তিত এবং কোলাহল বিমুখ শান্ত হয়ে যে যেখানে পেরেছে আশ্রয় নিয়েছে। দূরাগত পথিক উদ্বিগ্ন, ভয়ার্ত এবং দ্রুতগামী তার চলন।
অনিকেত আজ অফিস যায়নি। যাবে বলে মনে হচ্ছে না। অফিস যাওয়ার থাকলে সকাল থেকেই তার প্রস্তুতিপর্ব চলে।
অনিকেতের সঙ্গে আমার বিবাহিত জীবন পাঁচ পেরিয়ে ছয়ে পা দিল। এই কয়েক বছরে আমি মাতৃত্বের আশায় দিন দিন ক্রমশঃ ক্ষয়ে গেলেও অনিকেতের ভিতরে এই জাতীয় কোনও মানসিক যন্ত্রণা লক্ষ্য করি না।
বিয়ের পর থেকেই দেখেছি জেদি, একগুয়ে, বেপরোয়া এই মানুষটা দিনরাত্রি টাকার পিছনে কীভাবে ছুটে মরছে। মাত্রাতিরিক্ত লোভ ওকে একটা প্রাণহীন রোবটে পরিণত করেছে। পয়সার জন্যে এমন কাজ নেই, যা ও করতে পারে না। ও যে কতগুলো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কেনা বেচা, কোথায় কীভাবে টাকা খাটিয়ে দ্রুত লাভবান হওয়া যায় সে একমাত্র অনিকেতই জানে। অনিকেত যেটুকু সময়ের জন্যে বাড়িতে থাকে চেনা ছকের বাইরে ওকে যেতে দেখিনি। সকালে প্রাতঃরাশ ছাড়া কোনওদিন বাড়িতে দুপুরে কিম্বা রাতের খাবার খায় না। বাড়িতে যেটুকু সময় থাকে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। নিজের যা কিছু শখ, আহ্লাদ সেটা বাইরে মিটিয়ে প্রতিদিন ঠিক রাত বারোটায় অনিকেতের গাড়িটা আমাদের গেটের সামনে এসে যখন হর্ণ বাজায় ঠিক তার পরপরেই টাউন স্টেশন থেকে অসমগামী মালবাহী ট্রেনটা ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক শব্দ তুলে শহর ছেড়ে দূরে বহুদূরে কোথায় চলে যায়। একদিন নয় দু’দিন নয় বেশ কয়েক বছর ধরে এই আশ্চর্য সমাপতন আমি দেখে আসছি। একেবারে ঘড়ির কাঁটা ধরে চলেছে অনিকেত। কোথায় একচুল এদিক ওদিক হবার জো নেই।
আমাকে পছন্দ করে এ বাড়ির পুত্রবধূ করে এনেছিলেন আমার শাশুড়িমা। তাঁর ধারণা ছিল সুন্দরী বউ ঘরে থাকলে বিপথু ছেলেটা হয়তো ঘরমুখো হতে বাধ্য। অনিকেত মায়ের সেই স্বপ্ন এবং সম্ভবনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে সেই সময়ে প্রায় রাতে ঘরে ফিরত না। আমি পোষা পাখিটার মতোই সারাটাদিন এই বাড়িটার চারটে দেওয়ালের ভিতরে ডানা ঝাপটাতাম।
সেদিন চুপচাপ ব্যালকনিতে দাড়িয়ে ভাবছি অর্ণব ঠাকুরপোর কথা। বছর খানেক হল শাশুড়িমা গত হয়েছেন। তার পরেই পরেই হঠাৎ একদিন অর্ণব ঠাকুরপো এলেন আমাদের বাড়িতে। সেটাও বেশ কয়েকমাস আগের কথা। শৈশবে মাতৃহারা ছেলেটার প্রতি অনিকেতের মায়ের এক অপার সন্তানস্নেহ ছিল। অর্ণবের কাছের মানুষ বলতে ওরাই ছিল। আমার বিয়ের পরে বেশ কয়েকবার এ বাড়িতে আসতে দেখেছি। তারপর বহুদিন তার দেখা পাইনি।
সেদিন হঠাৎ দুপুরে ডোর বেলটা বাজতে দরজা খুলে দেখি অর্ণব ঠাকুরপো। এ কয় বছরে একেবারে পাল্টে গেছে তার চেহারা ছবি। দারিদ্র্য কীভাবে মানুষের লালিত্য হরণ করে নেয় ভাবছিলাম।
ঠাকুরপোর হাতে চা আর মিষ্টির প্লেটটা তুলে দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করি, ‘বিয়ে থা করছ?’
ঠাকুরপো সেই গালভরা হাসির পরিবর্তে শুষ্ক হেসে জানায়, ‘আর বিয়ে, নিজেরটাই জোটাতে পারছি না, তো,-’
‘তোমার মতো সৎ মানুষের এই পৃথিবীতে কাজ পাওয়া সত্যি মুশকিল। এই পৃথিবীটা এখন ঠগ, লুটেরা, লম্পট আর জোচ্চোরদের হাতের পুতুল হয়ে গেছে।’
‘তা যা বলেছ, বৌঠান।’
ঠাকুরপো এক বাক্যে আমার কথাটাকে সমর্থন করে বলে, ‘এ কয় বছরে বেশ কয়েকটা সুযোগ পেয়েও ছেড়ে দিলাম শুধুমাত্র দুর্নীতির জন্য। এত কোরাপশন সত্যি মেনে নেওয়া যায় না।’
কথাপ্রসঙ্গে জানিতে পারি অর্ণব ঠাকুরপো কিছুদিন হল অনিকেতের কোম্পানিতে জয়েন করেছে।
কথাটা শোনামাত্র আমি ঠাকুরপোর মুখের দিকে তাকাই। ঠাকুরপো আমার মনের কথাটা বুঝতে পেরে বলে, ‘আসলে পয়সা কড়ি তো সেরকম কিছুই নেই যে নিজে থেকে ব্যবসা করব, তাই অনিকেত যখন প্রস্তাব দিল তখন এক বাক্যেই রাজি হয়ে গেলাম।’
সুন্দরবনে মধু আর মোমের ব্যবসার কাজে লাগানো হয়েছে অর্ণব ঠাকুরপোকে। এখান থেকে চা, কমলালেবু নিয়ে যাবে বাংলাদেশে আর ফিরতি পথে সেখান থেকে মধু আর মোম নিয়ে আসবে। খুব ভালো প্রস্তাব। ঠাকুরপো এক কথায় রাজি হয়ে গেল। এদিকে কী একটা কাজে এসেছিল তাই আমার সাথে একবারটি দেখা করে গেল। চা খেয়ে ‘আসি, বৌঠান’ বলে চলে গেল।
বেশ কিছুদিন ধরে শহরে তীব্র দাবদাহ চলছে। মাস দুয়েক হল বৃষ্টির দেখা নেই। আকাশে গর্ভবতী মেঘ সঞ্চারের কোনও লক্ষণ চোখে পড়ছে না। মাঠ ঘাট গাছ পালা সব শুকিয়ে বিবর্ণ পাংশুটে হয়ে আছে। শুকনো পাতাগুলো ফরফর করে উড়ছে। পিচ ঢালা রাস্তা পিপাসার্ত পথিককে মরীচিকার মায়ায় প্রলুব্ধ করছে। আকাশ জুড়ে ছড়ানো আছে এক অদ্ভুত শূন্যতা। এক বিন্দু জলের জন্যে হাহাকার করছে প্রকৃতি। কাকেরা ক্লান্তস্বরে কা কা করছে। কুকুরগুলো এক চিলতে ছায়ার খোঁজে জিভ বের করে হাঁফাচ্ছে। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কেউই বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিং।
শাশুড়ি মারা যাওয়ার পরে আজকাল ঘরে বাইরের সকল কাজ আমাকে একা হাতেই সামাল দিয়ে হয়। সেদিন বাজারে দেখা হয়ে গেল রিপনদার মিসেসের সঙ্গে। রিপনদা অনিকেতের ব্যবসার পার্টনার ছিল একটা সময়ে। এখন স্বাধীন ব্যবসা করছে বেশ কিছুদিন হল। অর্ণব ঠাকুরপোর সঙ্গে রিপনদার আবার ভালো সম্পর্ক। সেদিন কথায় কথায় জানতে পারি অর্ণব ঠাকুরপোকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বউদির মুখে শুনলাম সুন্দরবনে গিয়েছিল ব্যবসার কাজে তারপর আর ফেরেনি ঠাকুরপো। বেশ চিন্তিত দেখাল বউদিকে। ইদানীং নাকি সুন্দরবনের দিকে জলদস্যুদের দাপট বেড়েছে। বেশ কিছু ব্যবাসায়ী জলদস্যুর কবলে পড়েছে। জলদস্যুদের হিংস্রতার কথা এর আগেও শুনেছি। তাদের হাতে একবার কেউ ধরা পড়লে তাদের আর রেহাই নেই। জিনিসপত্র কেড়ে নিয়ে নৃশংসভাবে তাদের খুন করে জলে ফেলে দেয়। হাঙ্গর, কুমিরের খাদ্য হয় তারা। আর কোনওদিন তাদের কেউ খুঁজেও পায় না। বউদির দাদা গোয়েন্দা বিভাগের একজন অফিসার। তিনি নাকি এই কেসটা হাতে নিয়েছেন।
ঠাকুরপোর সংবাদটা শোনামাত্র আমার বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠল। আমি ফলের দোকানের ফলওয়ালাকে দাম না দিয়ে হা করে ভাবতে লাগলাম। কয়েকদিন আগের ঘটনা মনে পড়ে গেল। রাত একটার কাছাকাছি হবে। অনিকেত তখনও বিছনায় আসেনি। কী সব হিসাব নিকাশ করছিল। আমি সেদিন জেগেই ছিলাম। ঘুম আসছিল না কিছুতেই। এক সময়ে মনে হল অনিকেত কারও সঙ্গে বেশ উত্তেজিত হয়ে কথা বলছে। বাড়িতে অনিকেতকে কখনও জোরে কথা বলতে শুনিনি। বুঝতে পারছিলাম অনিকেতের গলার স্বর ক্রমশঃ চড়ছে। আস্তে আস্তে সেটা কথা কাটিরকাটির পর্যায়ে চলে গেল। অনিকেতকে বেশ উত্তেজিত মনে হচ্ছে।
ব্যাপারটা কী বোঝার জন্যে আমি আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াই। শুনতে পেলাম অনিকেত বলছে, ‘যা করতে পারিস করিস, কী বলবি তোর বৌঠানকে? আমি যা খুশি তাই করব, তুই বলার কে রে? কীভাবে আমার জীবন কাটাব, পয়সা ইনকাম করব সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার। তোর ইচ্ছা হলে থাকবি, না হলে সরে যাবি।’
আজ সেইদিনের কথা ভেবে মনটা বিষণ্ণতায় ভরে গেল। বেচারা অর্ণব ঠাকুরপো আজও তার বন্ধুটিকে ঠিকমতো চিনতেই পারল না।
বেশ কয়েকদিন অনিকেত বাড়িতে ছিল না। ব্যবসার কাজে বাইরে গেছিল। সাত আটদিন বাদে অনিকেত বাড়িতে ফিরেছে। বেশ অস্থির লাগছিল অনিকেতকে। এক জায়গায় সুস্থির হয়ে কিছুতেই বসে থাকতে পারছিল না। ড্রয়িংরুমে সোফার উপরে বসে একের পর এক স্কচ সাবাড় করছে। দুইদিন দেখলাম বাড়ি থেকে বের হল না। মনে মনে ভাবি ঠাকুরপোকে পাওয়া যাচ্ছে না বলেই হয়তো অনিকেতের এমন বিবেক দংশন হচ্ছে। সেদিন কথা কাটাকাটির পরে ঠাকুরপো নাকি অনিকেতের সঙ্গে আর থাকবে না বলে চলে যায়। হাজার হোক ছোটোবেলার বন্ধু বলে কথা। একটা সময়ে তো অনিকেত অর্ণব বলতে পাগল ছিল। অবস্থা বৈগুণ্যে আজ হয়তো অনিকেতের অনেক পয়সা হয়েছে, অনেক বিত্তবানেদের সঙ্গে মেলামেশা করছে কিন্তু পুরনো বন্ধুকে কি আর ভুলতে পেরেছে?
আজকাল খবরের কাগজ পড়তেই কেমন যেন টেনশন হয়। পাতায় পাতায় খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই নয়তো বিস্ফোরণের সংবাদ। সন্ধ্যাবেলায় দেখি টিভিতে একটি নৃশংস হত্যার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ চলছে। কয়েকদিন আগে খড়্গপুর শাখার একটি লোকাল ট্রেনের সিটের নীচে পরিত্যক্ত একটা ব্যাগ থেকে একটা কাটা পা উদ্ধার করা হয়েছে। যাত্রীরা রেল পুলিশকে খবর দিলে স্নিফার ডগ নিয়ে বম্ব স্কোয়াডের লোকজন হাজির হন।
এই জাতীয় খবর পড়লে বা শুনলে সারাটা দিন আমার মনের ভিতরে একটা অস্বস্তি হয়। হাউজ কিপিংয়ের মেয়েরা সন্ধ্যার পর চলে গেলে আমার কেন জানি আজকাল অর্ণব ঠাকুরপোর কথা মনে পড়ে। মনকে সান্ত্বনা দিই, স্নেহের স্বভাব বুঝি এমনি। খারাপ কিছু শুনলে প্রিয়জনের কথাটাই আগে মনে পড়ে। তবু কেন জানি গভীর রাতের দিকে মনে হয় কে যেন ‘বৌঠান’ বলে আমায় ডাকছে। ডাকটা যেন আমার ঘরের চারিপাশে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে ঘুরে ঘুরে কানে আসে। গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, পাড়াটা নিস্তব্ধ হয়ে আসে, আমাদের বেড রুমের জানালার পাশে ল্যাংড়া আমগাছটার উঁচু ডালে বসে একটা কালো পেঁচা তীক্ষ্ণ স্বরে ডাকতে থাকে। মনে হয় কোনও অশরীরী আত্মা বুঝি আমাদের বাড়িটার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনও ছায়ামূর্তি নয়, কোনও পদশব্দ নয়, তবু কেন জানি আমার মনে হয় কেউ বুঝি এসেছে আজ রাতে। ঠিক সেই সময়ে আমাদের গেটের বাইরে শুয়ে থাকা টমিটা গলা উচু করে ‘উ-উ-উ হু-হু-হু’ করে মরা কান্না কাঁদে। তার সঙ্গে গলা মেলায় অন্য সারমেয় বাহিনী। বাতাস ভারী হয়ে আসে। কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ অপসৃত হয় মেঘের অন্তরালে। একটা ধূসর চাদর নেমে আসে পৃথিবীর বুকে।
সকালে খবরের কাগজটা পরে চমকে উঠি। অসমগামী একটা মালগাড়ির ভিতরে সিলমোহরহীন প্যাকিং বাক্স থেকে একটা কাটা মুণ্ড উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিস ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
আজ আকাশ কাঁপানো মেঘ গর্জন শোনা যাচ্ছে। সঙ্গে মুহুর্মুহু বিদ্যুতের ঝলকানি। খানিক বাদেই তোড়ে বৃষ্টি নামল। ড্রয়িংরুমের পর্দা উড়িয়ে বৃষ্টির ছাটে সোফা ভিজে যাচ্ছে দেখে আমি জানালা বন্ধ করতে গেলে অনিকেত বাধা দিয়ে বলে, ‘খোলা থাকুক, সরিয়ে দাও পর্দাগুলো।’
ভাবলাম অনেকদিন বাদে বৃষ্টি নামল, অনিকেত বৃষ্টিটাকে উপভোগ করতে চাইছে। কথাটা বলে ও আরও এক পেগ চড়াল। গাছেরাও আজ মাতাল হয়েছে। জানালার পাশে নারকেল গাছের পাতাগুলো হাওয়ায় দুলছিল। অনিকেত সোফার উপরে বুঁদ হয়ে বসেছিল। আমি ওর কাছে গিয়ে বলি, ‘অর্ণব ঠাকুরপোর কোনও খবর পেলে?’
অনিকেত জানালার বাইরে অশান্ত প্রকৃতির দিকে তাকিয়েছিল। হঠাৎ নিস্তব্ধ বনভূমি কাঁপানো হায়নার মতো খিক খিক হাসিতে ফেটে পড়ল। তীক্ষ্ণ, কুটিল, ভয়ংকর সেই হাসি। অনিকেতের চোখে হিংস্র শ্বাপদের ছায়া।
অনিকেত আজ বড্ড বেসামাল হয়ে পড়েছে। একটু শান্ত হয়ে বলল, ‘বসো, আমার পাশে। শোনো , তোমার অর্ণব ঠাকুরপোকে না আর কোনওদিন কোত্থাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি নিজের হাতে তাকে এই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছি। বেচারা! বলে কিনা ওর মৃত্যুর একজন সাক্ষী নাকি ও রেখে যাচ্ছে। জানো কে সেই সাক্ষী? এই বর্ষা!’
সেদিনও এমনি ভাবে বৃষ্টি হচ্ছিল। চারিদিকে কেউ কোত্থাও নেই। রিসর্টের জানালার পাশে এইরকমই একটা নারকেল গাছ ছিল। নারকেল পাতা বেয়ে এমনভাবেই জল ঝরছিল মনে হচ্ছিল কান্না ভেজা কোনো মেয়ের চোখের পাতা। অর্ণব সেই দিকে তাকিয়ে বলেছিল আজ যদি আমি খুন হই, জানবি এরাই আমার খুনের সাক্ষী রইল, বুঝলি?’
অনিকেত যে ড্রাগ পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত এবং আরও অনেক অসামাজিক কাজের সঙ্গে লিপ্ত সেকথা অর্ণব জেনে যায় এবং তার প্রতিবাদ করায় ওকে পথের কাঁটা ভেবে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া হয় একজন সুপারি কিলারের সহায়তায়।
নৃশংসভাবে খুন করা হয় অর্ণবকে। দেহটাকে কয়েক টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অনিকেত কথাগুলো বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ল।
বেচারা অনিকেত! বুঝতে পারছে না এমন বর্ষাই শোনাতে পারে ওর মৃত্যুর পরোয়ানা। এছাড়া আরও দুইজন সাক্ষী তো রইলই, আমি এবং আমার কাছে লুকিয়ে রাখা এই ডিক্টোফোন। রিপন বউদির দাদার দেওয়া।
অলংকরণ : সুব্রত মাজী
14th  July, 2019
এ ফেরা অন্য ফেরা
তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

উচ্চতা ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি, গায়ের রং আধাফর্সা, রোগা-পাতলা চেহারা। পরনে অতিসাধারণ শাড়ি-ব্লাউজ, কিন্তু পরিষ্কার। ঈষৎ গম্ভীর থাকে কাজের সময়। ঠিক সময়ে ঘরে ঢোকে, দ্রুত নিজের কাজটি সেরে বেরিয়ে যায় অন্য বাড়ির উদ্দেশে। কামাই প্রায় করেই না।
বিশদ

পুণ্য ভূমির পুণ্য ধূলোয়
বহুচরা দেবী
ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়

গুজরাত প্রদেশে আর এক তীর্থে আছেন বহুচরা দেবী। দিল্লি অথবা আমেদাবাদ থেকে মাহেসানায় নেমে এই তীর্থে যেতে হয়। স্থানীয়রা এই দেবীকে বলেন বেচরাজি। কিন্তু কেন ইনি বেচরাজি? প্রবাদ, বহুকাল আগে এক চাষি চাষ করতে করতে এখানকার দেবী দুর্গা বা অম্বিকাকে খেতের মধ্যে কুড়িয়ে পান।
বিশদ

ছায়া আছে কায়া নেই
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

 পাত্রীর ডাকনাম ফুলি, ভালোনাম ভবতারিণী। বিয়ের পর স্বামী রবীন্দ্রনাথ স্ত্রীর আর একটি ডাক নাম পদ্মের সঙ্গে মিলিয়ে রাখলেন মৃণালিনী। শুরু হল তাঁদের দাম্পত্য জীবন। বিশদ

ছায়া আছে কায়া নেই
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়  

২৩

অপমৃত্যু নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব একটা মতামত ছিল। পরিণত বয়সে তিনি এ সম্পর্কে তাঁর মতামত মংপুতে থাকাকালীন মৈত্রেয়ী দেবীর কাছে ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,‘অপমৃত্যু সম্বন্ধে একটা কথা কি মনে হয় জানো, হঠাৎ যে বন্ধন ছিন্ন হয়, হয়তো তা সুসমঞ্জসভাবে ছিন্ন হয় না।  
বিশদ

11th  August, 2019
পুণ্য ভূমির পুণ্য ধূলোয়
আরাসূরীর অম্বাজি, পর্ব-২৩
ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়  

গিরনারের অম্বাজির পর আরাসূরীর অম্বাজিকেও দর্শন করে আসা যাক এবার। রাজস্থানের অর্বুদ শিখরে ৫২ সতীপীঠের অন্তর্গত দেবী অম্বাজি আছেন। অম্বাজিতে আমি আগেও গিয়েছি।  
বিশদ

11th  August, 2019
যে মেঘ গাভীর মতো চরে
সুতপা বসু 

বেডরুমের লাগোয়া বারান্দায় তখন সিদ্ধার্থ আর বারিষ বৃষ্টির ছাট নিয়ে খেলছে। সিদ্ধার্থ বললো,‘ওই ছড়াটা বল, মনে আছে?’ বারিষ বুঝল তার বাবাই কোন ছড়ার কথা বলছে। সে লাফাতে লাফাতে সুর করে বলল, ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এল বান...’ 
বিশদ

04th  August, 2019
ছায়া আছে কায়া নেই
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 

২২

শ্যামলাল গঙ্গোপাধ্যায়। জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের বাজার সরকার। মাসিক বেতন কুড়ি টাকা। ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে তাঁর কেমন লতায়-পাতায় আত্মীয়তা ছিল বলেও শোনা যায়।  
বিশদ

04th  August, 2019
পুণ্য ভূমির পুণ্য ধূলোয়
গিরনারের অম্বাজি পর্ব-২২
ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় 

মরুভূমি ত্যাগ করে এবার যাওয়া যাক রৈবতক পর্বতে। এখানে বিরাজ করছেন অম্বাজি। সারা ভারতে, বিশেষ করে হিন্দিবলয়ে দেবী দুর্গা অম্বাজি নামেই প্রসিদ্ধ। অম্বিকা থেকে অম্বা, অম্বে, অম্বাজি।  
বিশদ

04th  August, 2019

দারোগা চমকিতচরণ
 
রতনতনু ঘাটী


দরকার পড়লে দারোগাবাবুকে চোর খুঁজতেও বেরতে হয়। কিন্তু আজ তিন দিন হল উদ্ভুট্টিডিহি থানা এলাকায় এক আজব কাণ্ড ঘটেছে। বড় দারোগা চমকিতচরণ দত্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই থানা এলাকার দাগি চোরদের ধরে ধরে এনে থানায় পুরবেন।
বিশদ

28th  July, 2019
পুণ্যভূমির পুণ্য ধুলোয়
মরুতীর্থ ও ওশিয়াঁ
ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়

করাচি শহর থেকে ৩০০ কিমি দূরে লাসাবেলার বিস্তীর্ণ ও ভয়াবহ মরুভূমির বুকে হিঙ্গুলা নদীর তীরে যেমন হিংলাজ মাতার গুহা মন্দির, তেমনই রাজস্থানের থর মরুভূমির বুকে যোধপুর থেকে ৬৫ কিমি দূরে হল ওশিয়াঁ মাতার রম্য মন্দির। মরুভূমির বুকে মহাতীর্থ। মরুতীর্থ ওশিয়াঁ।
বিশদ

28th  July, 2019
 ছায়া আছে কায়া নেই
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

 ঘরে উপস্থিত সবাই বুঝতে পারলেন নিত্যরঞ্জন ঘোষের শরীরে কোনও অতৃপ্ত, ক্রুদ্ধ আত্মা ভর করেছেন। সেজবাতির আলোটা একটু বাড়িয়ে দিয়ে ডাক্তার রাজকৃষ্ণ মিত্র বললেন, হ্যাঁ, আমরা আপনার সম্পর্কে সবকিছু জানতে চাই। আপনি কে? আপনার নাম কী?
বিশদ

28th  July, 2019
পুণ্য ভূমির পুণ্য ধূলোয়
মরুতীর্থের দেবী, পর্ব ২০
ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়

 আমার বারো বছর বয়সের সময় বাবা-মায়ের সঙ্গে তীর্থযাত্রায় গিয়ে দ্বারকা থেকে ফেরার পথে ভাটিয়া স্টেশনে নেমে সমুদ্রের খাড়ি পার হতে হয়েছিল। ওখান থেকে গন্তব্য ছিল সুদামাপুরী (পোরবন্দর)। পথে যেতে যেতে এক জায়গায় বাসযাত্রীরা সবাই নেমে পড়লেন এক জাগ্রতা দেবীকে দর্শন করবার জন্য।
বিশদ

21st  July, 2019
ছায়া আছে কায়া নেই
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

 একদিন মিউগেন্স সাহেবকে বললাম, আমি বাড়িতে মাঝে মাঝে মিডিয়াম হয়ে ‘স্পিরিটের’ সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু খুব ভালো পারছি বলে মনে হচ্ছে না। মিউগেন্স সাহেবের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে আবার বললাম, — অথচ বিলেতের কাগজে পড়েছি, এফিসিয়েন্ট মিডিয়ামের সাহায্যে তারা একান্ত আপনজনের স্পিরিট নিয়ে আসছে....
বিশদ

21st  July, 2019
একনজরে
 নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: শুধু হাওড়া শহর সংলগ্ন এলাকায় নয়, হাওড়া জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এবার শিল্প স্থাপনে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। তার জন্য উদয়নারায়ণপুরের কান্দুয়ায় ৪০০ একর জমি বাছা হয়েছে। তার মধ্যে ১৭০ একর জমি কেনাও হয়ে গিয়েছে। ...

 সংবাদদাতা, ময়নাগুড়ি: ময়নাগুড়ি সদর এলাকায় টোটোর দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করতে ময়নাগুড়ি পুলিস প্রশাসন বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে চলেছে। ব্যস্ত রাস্তার ধারে বেআইনিভাবে টোটো পার্কিং করা হলে তা ...

 নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গোটা বিশ্বেই মধ্যবিত্ত শ্রেণী বাড়ছে দ্রুত। নতুন প্রজন্ম অর্থ উপার্জন করছে বলেই এই শ্রেণীর বাড়বাড়ন্ত। সরকারেরও উচিত তাদের কাজের সুযোগ করে দেওয়া। সেই কারণেই সরকার যতটা পেনশন খাতে খরচ করে, তার চেয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত শিক্ষা খাতে ...

 নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর উপায় নেই। সুপ্রিম কোর্ট এবার রাজ্য সরকারের ‘রিভিউ পিটিশন’ খারিজ করে দেওয়ায় ২০০৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী প্রায় ১২০০ প্রার্থীকে প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ করতে হবে রাজ্য সরকারকে। ...




আজকের দিনটি কিংবদন্তি গৌতম ( মিত্র )
৯১৬৩৪৯২৬২৫ / ৯৮৩০৭৬৩৮৭৩

ভাগ্য+চেষ্টা= ফল
  • aries
  • taurus
  • gemini
  • cancer
  • leo
  • virgo
  • libra
  • scorpio
  • sagittorius
  • capricorn
  • aquarius
  • pisces
aries

হঠাৎ জেদ বা রাগের বশে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া শ্রেয়। প্রেম-প্রীতির যোগ বর্তমান। প্রীতির বন্ধন ... বিশদ


ইতিহাসে আজকের দিন

১৯০০: রাজনীতিক বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতের জন্ম
১৯৩৬: গীতিকার ও পরিচালক গুলজারের জন্ম
১৯৫৮: ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করলেন প্রথম এশীয় ব্রজেন দাস
১৯৮০: সঙ্গীতশিল্পী দেবব্রত বিশ্বাসের মৃত্যু



ক্রয়মূল্য বিক্রয়মূল্য
ডলার ৭০.৫৯ টাকা ৭২.২৯ টাকা
পাউন্ড ৮৪.৮১ টাকা ৮৭.৯৪ টাকা
ইউরো ৭৭.৮৩ টাকা ৮০.৭৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
17th  August, 2019
পাকা সোনা (১০ গ্রাম) ৩৮,২৪৫ টাকা
গহনা সোনা (১০ (গ্রাম) ৩৬,২৮৫ টাকা
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট ১০ গ্রাম) ৩৬,৮৩০ টাকা
রূপার বাট (প্রতি কেজি) ৪৩,৯০০ টাকা
রূপা খুচরো (প্রতি কেজি) ৪৪,০০০ টাকা
[ মূল্যযুক্ত ৩% জি. এস. টি আলাদা ]

দিন পঞ্জিকা

১ ভাদ্র ১৪২৬, ১৮ আগস্ট ২০১৯, রবিবার, তৃতীয়া ৪৯/৪৯ রাত্রি ১/১৪। পূর্বভাদ্রপদ ২৯/২ অপঃ ৪/৫৫। সূ উ ৫/১৮/২, অ ৬/৩/১৪, অমৃতযোগ দিবা ৬/৯ গতে ৯/৩৩ মধ্যে। রাত্রি ৭/৩২ গতে ৯/২ মধ্যে, বারবেলা ১০/৫ গতে ১/১৬ মধ্যে, কালরাত্রি ১/৫ গতে ২/৩০ মধ্যে।
৩২ শ্রাবণ ১৪২৬, ১৮ আগস্ট ২০১৯, রবিবার, তৃতীয়া ৪৩/৯/৬ রাত্রি ১০/৩২/৩৬। পূর্বভাদ্রপদনক্ষত্র ২৬/১/৪১ দিবা ৩/৪১/৩৮, সূ উ ৫/১৬/৫৮, অ ৬/৫/৪৬, অমৃতযোগ দিবা ৬/১২ গতে ৯/৩১ মধ্যে এবং রাত্রি ৭/২২ গতে ৮/৫৪ মধ্যে, বারবেলা ১০/৫/১৬ গতে ১১/৪১/২২ মধ্যে, কালবেলা ১১/৪১/২২ গতে ১/১৭/২৮ মধ্যে, কালরাত্রি ১/৫/১৬ গতে ২/২৯/১০ মধ্যে।
 ১৬ জেলহজ্জ

ছবি সংবাদ

এই মুহূর্তে
আজকের রাশিফল
মেষ: প্রাকবিবাহ কথাবার্তাও হতে পারে। বৃষ: সৌখিন দ্রব্যের ব্যবসা শুভ হবে। ...বিশদ

07:11:04 PM

ইতিহাসে আজকের দিনে
১৯০০: রাজনীতিক বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতের জন্ম১৯৩৬: গীতিকার ও পরিচালক গুলজারের জন্ম১৯৫৮: ...বিশদ

07:03:20 PM

নেতাজিনগরে ২টি অটোর সংঘর্ষ, জখম মহিলা 

08:31:00 PM

বেনিয়াপুকুরে তরুণীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার 

06:21:00 PM

পানিহাটিতে গঙ্গায় ডুবে যাওয়া যুবকের দেহ উদ্ধার 

05:49:00 PM

পানিহাটিতে গঙ্গায় ডুবে যাওয়া যুবকের দেহ উদ্ধার 

05:46:00 PM