Bartaman Patrika
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
 

প্রতিভাত

মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনকে যদি একটি বাক্যে ব্যাখ্যা করা যায়, তবে তাঁর কবিতার একটি পংক্তিকেই বেছে নিতে হবে। সেটি হল, ‘আশার ছলনে ভুলি কী ফল লভিনু।’ কবির এই আত্মবিলাপের মধ্য দিয়েই ফুটে ওঠে তিনি কী স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং কী যন্ত্রণাময় পরিণতির দিকে ভাগ্যদেবতা তাঁকে ঠেলে দিয়েছিলেন। তাঁর জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একটি ভুল সিদ্ধান্তই তাঁকে করে তুলেছিল শেক্সপিরীয় ট্রাজেডির নায়ক। সেই ভুল সিদ্ধান্ত হল খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ। 
আজ পর্যন্ত সকলেই হন্যে হয়ে সন্ধান করেছেন, কেন মধুসূদন ধর্মান্তরিত হলেন! ‘দত্তকুলোদ্ভব কবি’ নিজেও এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলে যাননি। তবে অনুমান করা হয়, ইংল্যান্ড যাওয়ার উদগ্র বাসনাই তাঁকে ধর্মান্তরিত হতে  উৎসাহ দিয়েছিল। কেননা তিনি চেয়েছিলেন হোমার, ভার্জিল, দান্তের মতো মহাকবির স্বীকৃতি পেতে। আপন প্রতিভা সম্পর্কে তিনি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। জানতেন, তিনি অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে আছেন। তিনি যেমন প্রবল আত্মবিশ্বাসী, একই সঙ্গে অস্থিরও। যেন মহাযুদ্ধের ঘোড়া। নিমেষে সব অধিকার করে নেবে। তাই মনে করতেন, একবার বিলেতে পৌঁছতে পারলে এবং তাঁদের ভাষায় কবিতা লিখতে পারলে ইংরেজ জাত তাঁকে নিয়ে ধন্য ধন্য করতে থাকবে। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন সফল হয়নি। বরং যে বাংলা ভাষাকে তিনি  প্রথম থেকেই উপেক্ষা করে এসেছেন, একদিন সেই বাংলাই দিয়েছে তাঁর প্রতিভার প্রকৃত মর্যাদা। 
ধর্মান্তর, গৃহত্যাগ, মাদ্রাজ গমন, রেবেকার সঙ্গে অসফল বিবাহ— সব মিলিয়ে এই সময়টুকু মধুসূদন তাঁর প্রতিভাকে বিকাশের সময় পাননি। অবশ্য তখনও তিনি ইংরেজিতেই লেখেন। তবে মাদ্রাজ বাসের সময়টুকু ছিল তাঁর অনুশীলন পর্ব। প্রতিভাকে অনুশীলনের মাধ্যমে ঘষা মাজা করলে তার বিকাশ অচিরে ঘটবেই। মাদ্রাজ গিয়ে শুরু হল মাইকেল মধুসূদনের ক্লাসিক সাহিত্য রচনার অনুশীলন। সারাদিন ধরে ভাষা ও সাহিত্য পাঠ করে চলেছেন। তার জন্য নিজেই একটা রুটিন বানিয়েছিলেন। সকাল ৬টা থেকে ৮টা হিব্রু, ৮টা থেকে ১২টা স্কুলে অধ্যাপনা, ১২টা থেকে ২টো গ্রিক, ২টো থেকে বিকেল ৫টা তেলুগু ও সংস্কৃত, ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা ল্যাটিন এবং ৭টা থেকে রাত ১০টা ইংরেজি। এই রুটিন দেখলেই বোঝা যায় স্বপ্নকে ছুঁতে কী অপরিসীম পরিশ্রম করছিলেন। অনেক যত্নে ও ভালোবাসায় লিখে ফেললেন ‘ক্যাপটিভ লেডি’। মন তাঁর আনন্দে পূর্ণ। সেই বই কলকাতায় পাঠালেন বন্ধুদের কাছে।  কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে মিলল না প্রত্যাশিত উচ্ছ্বাস। এমনকী মহাত্মা বেথুন সেই বই পড়ে তাঁকে চিঠি লিখে পরামর্শ দিলেন, ‘এবার বাংলায় লেখো।’ 
১৮৫৬ সালে তিনি চলে এলেন কলকাতায়। কলকাতায় এসে মধুসূদন দেখলেন শহরের ইংরেজি শিক্ষিত ব্যক্তিরা বাংলায় লেখালেখি করছেন। প্যারীচাঁদ মিত্র, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজনারায়ণ বসু সকলেই।  এমনকী ডেভিড হেয়ারের স্মরণসভায় বাংলায় বক্তৃতা করলেন কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, মদনমোহন তর্কালঙ্কার প্রমুখ। নিজের অজান্তেই মধুসূদনের ভিতর বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা জন্মাচ্ছে। অনুভব করলেন, ‘হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন,-/ তা সবে (অবোধ আমি) অবহেলা করি, / পর ধন লোভে মত্ত করিনু ভ্রমণ / পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।’ সেই প্রতিভা যেন স্ফুলিঙ্গের মতো জেগে উঠল। বুঝলেন বাংলাতেও হোমার, দান্তে, ভার্জিল, পেত্রার্কের মতো লেখা সম্ভব। সেই সঙ্গে মনে পড়ল তাঁর কালিদাস, কৃত্তিবাস, জয়দেবের কথাও। জীবনে এই প্রথম একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেন। ঠিক করলেন, এবার বাংলাতেই লিখবেন।
প্রতিভা যেন প্রকাশের পথ খুঁজে পেল। বন্ধুদের সঙ্গে বাজি রেখে লিখে ফেললেন ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটক। ইউরোপীয় আঙ্গিকে লেখা প্রথম বাংলা নাটক। ‘অলীক কুনাট্য রঙ্গ’কে বাংলা থেকে মুছে ফেলতে স্বতঃপ্রবৃত্ত হলেন তিনি। বন্ধুরা বিশেষ পাত্তা দিলেন না। বন্ধু  গৌরদাস মনে মনে হাসলেন। যিনি এই বয়সেও ‘পৃথিবী’ বানান সঠিকভাবে লিখতে পারেন না, তিনি কী করে বাংলায় লিখবেন! ওটা বোধহয় মধুর আর এক খ্যাপামি।
কিন্তু মধু লিখে ফেললেন। মহারাজা ঈশ্বরচন্দ্র সিংহ সেই লেখায় বিশেষ ভরসা পেলেন না। ভাবলেন, মধুসূদনের বাংলা তো বেশ দুর্বল। তাই একজন পণ্ডিতকে দেখিয়ে নেওয়া যাক। কয়েকজন পণ্ডিতকে দেখানো হল। তাঁরা নাক সিঁটকে বললেন, সংস্কৃত নাট্যবিধি মেনে এই নাটক লেখা হয়নি। এর আগাগোড়া বদল দরকার। পণ্ডিত রামনারায়ণ তর্করত্নও তাই বললেন। কিন্তু তাঁরা কেউ মধু-প্রতিভাকে চিনতে পারেননি। বুঝতে পারেননি, বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় এসে গিয়েছে নতুন ঝোড়ো হাওয়া। সেই হাওয়া অচিরেই পুরনো সবকিছুকে সাফ করে নতুন আলোয় ভরিয়ে দেবে দিগ্বিদিক। আর সেটা মাত্র ছয়-সাত বছরের মধ্যেই। 
কিন্তু অনেকেই বললেন, বাংলায় এমন নাটক এর আগে লেখাই হয়নি। মধুসূদন যে অন্যের থেকে মেধা, প্রতিভা, ভাবনা , আত্মবিশ্বাস সবেতেই অনেক এগিয়ে আছেন, তা ক্রমে ক্রমে প্রকাশ পেতে লাগল। সে নাটকের অভিনয় হল। আরও দু’টি প্রহসন লিখে দেওয়ার অনুরোধ এল বেলগাছিয়া নাট্যশালার পক্ষ থেকে। মধুসূদন লিখলেন ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ এবং ‘বুড়সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটক দু’টি। কিন্তু সেই ব্যঙ্গবিদ্ধ নাটক করার মতো সাহস দেখাতে পারলেন না কেউই। সমাজের বুকে দাঁড়িয়ে ব্যঙ্গের তীব্র কশাঘাতে জমিদার ও ইয়ংবেঙ্গলদের ভণ্ডামিকে নগ্ন করে দিলেন। সেই সময়কার পণ্ডিতরা এই নাটক মঞ্চস্থ হতে দেননি। এরপর মধু লিখলেন গ্রিক পুরাণের আখ্যান অবলম্বনে ‘পদ্মাবতী’। তার কয়েক বছর পরে লিখলেন ‘কৃষ্ণকুমারী’। 
এই নাটকগুলির সংলাপের মধ্যেই আমরা লক্ষ্য করি মধুসূদনের কবি প্রতিভার। সুললিত সেই সংলাপে ছিল অমিত্রাক্ষরের ইঙ্গিত। কবির কলমে যেন জোয়ার এল। লিখে ফেললেন ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’। বাংলা সাহিত্যে প্রথম কাব্য। এক নতুন রোমান্টিকতার অন্বেষণ। তা বাংলা সাহিত্যকে পরবর্তী কালে রোমান্টিসিজমের পথ দেখিয়েছে। ইংরেজিতে লেখা ‘ক্যাপটিভ লেডি’তে যে প্রকাশ ছিল কিছুটা দুর্বল এবং আড়ষ্ট, সেটাই তিলোত্তমা সম্ভব কাব্যে হয়ে উঠল অচঞ্চল, শক্তিশালী এবং লক্ষ্যভেদী। অবশ্য মধুসূদনের প্রতিভা পূর্ণতা পেল ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’এ। 
এই কাব্য রচনার প্রেক্ষাপটটা একটু জেনে নেওয়া যাক। মধুসূদন যখন বাংলা সাহিত্যে এলেন তখন বাংলায় এক নতুন যুগের অবতারণা হয়েছে। সে এক রেনেসাঁসের কাল। সেই সঙ্গে দীর্ঘ একশো বছরের অন্ধকার যুগ শেষ করে বাংলা সাহিত্য আবার নতুন ভোরের আলো দেখতে শুরু করেছে। তার প্রথম পুরুষ ছিলেন কবি ঈশ্বর গুপ্ত। কিন্তু আধুনিক সাহিত্যের সেই সাতসকালে মধুসূদন তাঁর প্রতিভার বিকিরণে একেবারে ভাসিয়ে দিলেন চরাচর। একদিন যে ভুল স্বপ্নের পিছনে তিনি ছুটেছিলেন, তা যেন এক সময় এসে দাঁড়াল এক বর্ণময় সন্ধিক্ষণে।  একদিন তিনি হোমার, ভার্জিলের মতোই ইংরেজি সাহিত্যে স্থান পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর জন্য আসন পেতে বসেছিল বাংলা সাহিত্যের আঙিনা। নবযুগের ভাবনায় রাবণের বীরত্ব ও বিশালত্বে মুগ্ধ হয়ে এবং ‘ভিখারি’ রাঘবের প্রতি করুণা বর্ষণ করে লিখে ফেললেন ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’।  
এই বাংলা মঙ্গলকাব্যের দেশ। সেই মঙ্গলকাব্যের মধ্য দিয়ে আমাদের পূর্বসূরি কবিরা দৈবনির্ভরতার কথা বলেছেন, দেবতার অলৌকিকত্বের কথা বলেছেন। কিন্তু মধুসূদনের দৃষ্টিভঙ্গী ছিল অনেক বেশি মানবিক ও সামাজিক। ভারতচন্দ্র যেখানে শেষ করেছিলেন, তার প্রায় শতবর্ষ পরে মধুসূদন বাংলা সাহিত্যের কাব্যাঙ্গন সাজালেন নতুন ভাষ্যে। সেই দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে ছিল এক নব্য আধুনিকতা। তাঁর দুরন্ত চিন্তন দিয়ে প্রচলিত রামায়ণের কাহিনি নব ব্যঞ্জনায় বাঁধলেন। এযাবৎ রামায়ণ লেখা হয়েছে রামের দৃষ্টিকোণ থেকে। তিনিই ছিলেন নায়ক। মধুসূদন চালচিত্রটা বদলে দিলেন। তিনি গিয়ে দাঁড়ালেন রাবণের পাশে। সেখানে ‘ভিখারি রাঘব’ অন্য দেশের স্বাধীনতা হরণ করতে যুদ্ধে আগুয়ান হয়েছেন। তিনি ‘দেশবৈরী’। রেনেসাঁসের আলোয় হয়তো বা জেগে উঠল প্রচ্ছন্ন এক স্বাধীনতার ভাবনা। জাতীয়তাবাদের এক সুপ্ত বোধ। 
এই নব্য ভাষ্য্যের পিছনে ছিল রেনেসাঁস। মধুসূদন সেই রেনেসাঁসের ফসল। তিনি নব্যযুগের প্রথম কবি, যিনি দৈব নির্ভরতার বদলে উদ্ভাসিত হলেন পূর্ণ মানব সত্তায়। রামমোহন,  বিদ্যাসাগর, দেবেন্দ্রনাথ, প্রমুখ মানুষের নেতৃত্বে সেই নতুন যুগে মানুষের মধ্যে প্রকাশ পেল যুক্তিবোধ, মানবিকতা। তাই অচিরে ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ বা তাঁর অন্যান্য লেখা মানুষের স্বীকৃতি আদায় করে নিল। এতদিন তাঁর ইংরেজি সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে নানা প্রয়াস দেখা গেলেও তা সর্বজনস্বীকৃত হয়ে ওঠেনি। বাংলায় ‘মেঘনাদ বাধ কাব্য’ হয়ে উঠল নতুন যুগের মহাকাব্য। রবীন্দ্রনাথ পরে মন্তব্য করেছিলেন, ‘কবি পয়ারের বেড়ি ভাঙিয়াছেন এবং রামরাবণের সম্বন্ধে অনেকদিন হইতেই আমাদের মনে যে একটা বাঁধাবাঁধি ভাব চলিয়া আসিয়াছে, স্পর্ধাপূর্বক তাহার শাসন ভাঙিয়াছেন। ’
অমিত্রাক্ষর ছন্দের মধ্য দিয়ে বাংলা কাব্য যেন পেল যতিবন্ধন থেকে মুক্তি। স্বাধীন হল সে। ইচ্ছেমতো যতিচিহ্নের লালিত্য তাকে সৌন্দর্য দান করল। অন্ত্যমিলের সৌন্দর্যের বাইরেও যে একটা অনন্যতা আছে বা ঝরণার কলতান আছে, তা বুঝিয়ে দিয়েছিল মধুসূদনের কাব্য। এগুলি মোটেই অনায়াস সাধ্য নয়। কিন্তু মধুসূদনের প্রতিভার কোজাগরী সেই ছন্দকে অনায়াসে বাঁধতে সক্ষম হয়েছিল। কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় লিখলেন, ‘কবিগুরু বাল্মিকীর পদচিহ্ন লক্ষ্য করিয়া, নানা দেশীয় মহাকবিগণের কাব্যোদ্যান হইতে পুষ্পচয়নপূর্বক, এই গ্রন্থখানি বিরচিত হইয়াছে, কিন্তু সেই সমস্ত কুসুমরাজিতে যে অপূর্ব মালা গ্রন্থিত হইয়াছে, তাহা বঙ্গবাসীরা চিরকাল কণ্ঠে ধারণ করিবেন।’ সুতরাং দীর্ঘদিন ধরে তাঁর যে  বিশ্ব সাহিত্য পাঠ, ভাষা শিক্ষার জন্য কঠোর পরিশ্রম, তা অবশেষে সার্থক হয়ে উঠল।
অবশ্য কমবয়সে ধর্মান্তরিত হওয়া এবং তাকে কেন্দ্র করে জীবনের যে নানা উত্থান পতন, দ্রুত খ্যাতি লাভ করার তীব্র বাসনা তাঁর সৃষ্টির পথ ক্রমেই রুদ্ধ করে রেখেছিল। আসলে তাঁর জীবন যেন রোমান্টিক এক পুরুষের ছেলেমানুষী। তাঁর ছিল বুকভরা অভিমান, ক্ষোভ। কিন্তু শেক্সপিয়রের নায়কের মতোই উদ্ধত অটল।  মৃত্যুর আগে কিছুতেই ভেঙে পড়বেন না। পারিপার্শ্বিকতার কাছে কিছুতেই মাথা নিচু করবেন না। এমনই অনমনীয় ছিলেন তিনি। 
মেঘনাদ বধ কাব্যের রাবণের যে হাহাকার, তা যেন কবির নিজেরই আত্মবিলাপ বলে মনে হয়, ‘একে একে / শুকাইছে ফুল এবে নিবিছে দেউটি / .....দিন দিন আয়ুহীন হীনবল দিন দিন / তবু এ আশার নেশা ছুটিল না একি দায়।’ 
মেঘনাদ বধ কাব্য থেকে  তিনি গমন করলেন ব্রজাঙ্গনাদের আঙিনায়। তখন তিনি একেবারে বৈষ্ণব মহাজন। পদাবলী সাহিত্যের সুরকে আত্মস্থ করে আর  কোন কবি এমন সুললিত স্বরে শ্রীরাধিকার দিব্যোন্মাদের কথা বলবেন! তাঁর কলমে যেন একসূত্রে বাঁধা পড়েছেন চণ্ডীদাস, জয়দেব, জ্ঞানদাস। সেই কাব্য পড়ে বৈষ্ণবরা চোখের জলে ভাসেন। ভাবেন এ কোন পদকর্তা, এমনভাবে যিনি রাধার অন্তরের কথাকে বলে চোখ ভিজিয়ে দেন। অনেকেই তাঁকে দেখতে আসতেন। কোট-প্যান্ট পরা পদকর্তাকে দেখে তাঁরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাঁর চরণধূলি নিতে চাইতেন।
এই প্রজ্ঞা, এই প্রতিভা কোনও সভ্যতা সহজে পায় না। সে যেন দূরের এক উজ্জ্বল ধূমকেতু। বহুদিন পরপর তা দৃশ্যমান হয়। মধুসূদনের সমস্ত জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আকাশচুম্বি এক দুরন্ত প্রতিভার আত্মদহন। সেই দহনে বাংলা সাহিত্য আলোকোজ্জ্বল হল, সমৃদ্ধ হল বটে, কিন্তু তিনি নিজে দুঃখের দহনে ছাই হয়ে গেলেন। তাঁর প্রার্থনা ছিল, ‘অমর করিয়া বর দেহ দাসে সুবরদে!’ তাঁর সৃষ্টিই তাঁকে অমর করে রেখেছে। আজও এই দেশে ‘মধুময় তামরস কি বসন্তে কি শরদে!’  

বিশ্বজিৎ রায়
মধুসূদনের বাংলা ভাষা কি খুব কঠিন? ইস্কুলে সবাইকেই ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ পড়তে হত। সেই কাব্যে কবিতার আগের লাইনের সঙ্গে পরের লাইনের মিল নেই, অনেক শব্দ শুধু সংস্কৃত থেকে নেওয়া তৎসম শব্দই  নয়, বাংলায় অপ্রচলিত তৎসম শব্দ। তাই মাস্টারমশাইরা বুঝিয়ে না দিলে সে কাব্যের অর্থ খুব-একটা বোঝা যেত না। কঠিন লাগত, পড়তে গিয়ে মনে হত দাঁতভাঙা বাংলা। ‘ত্বিষাম্পতি’ মানে সূর্য, ‘দম্ভোলি’ মানে বজ্র, ‘পন্নগ-অশন’ মানে সাপখেকো গরুড় এসব মনে রাখতে হত। মাস্টারমশাইরা অবশ্য খাতায় সাপখেকো লেখাতেন না, লেখাতেন সর্পভুক্‌। মধুসূদনের লেখার বাংলা কিন্তু সর্বত্র এরকম নয়। ভাষাশিল্পী মধুসূদন নানারকম বাংলা লিখতে পারতেন। রচনার বিষয় অনুসারে নানারকম বাংলা লেখার সামর্থ তাঁর ছিল। ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ ছাড়া মধুসূদনের আরও কয়েকটি কবিতার কথা সাধারণ বাঙালি মাত্রেই জানেন। পুরোটা হয়তো নয় তবে সেই সব কবিতার অংশবিশেষ প্রবাদ বাক্যে পরিণত হয়েছে। ‘বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।/ করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,/ দীন যে, দীনের বন্ধু!’  -- বিদ্যাসাগর রচনা লেখার সময় এই ‘কোটেশান’ ব্যবহার করা ছিল বাঙালি বালক-বালিকাদের অবশ্য কর্তব্য। বাংলা ভাষার গুণগান গাইবার জন্য মাস্টারমশাইরা প্রায়সবাই বলতেন, ‘হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন’। যথাক্রমে ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ আর ‘বঙ্গভাষা’ কবিতায় আছে এই লাইনগুলি। মধুসূদনের ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’র মধ্যে এ-দুটিকে খুঁজে পাওয়া যাবে। মানে বুঝতে কিন্তু মোটের ওপর বাংলা জানা পাঠকের কোনও অসুবিধেই হয় না। বেশ মনেও থাকে। ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর মতো কঠিনও লাগে না। 
অর্থাৎ মধুসূদনের ভাষা কখনও কঠিন কখনও সহজ। পুরোটাই নির্ভর করছে কবি কী লিখছেন ও কেন লিখছেন তার ওপর। মধুসূদন ‘কবি’ বলে একটি চতুর্দশপদী কবিতা লিখেছিলেন। তাতে ‘কে কবি’ এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। শুধু প্রশ্নই তোলেননি উত্তরও দিয়েছিলেন। কবি তিনিই ‘শবদে শবদে বিয়া দেয় যেই জন’বিয়ে কি আর একরকম? বিয়ে অনেকরকম। কোনও বিয়েতে জাঁক-জমকের অবধি নেই, কোনো বিয়ে খুবই সাধারণ। সাধারণ যে বিয়ে সেই বিয়ের মণ্ডপে ঢুকতে ‘কিন্তু কিন্তু’ লাগে না। সহজেই, খুব দামি কিছু না পরেও ঢুকে পড়া যায়। বিয়ে যেমন নানারকম তেমনি মধুসূদন শব্দের সঙ্গে শব্দের বিয়ে দেওয়ার সময় নানারকম পদ্ধতিগ্রহণ করেছেন। কোনো কোনো শব্দ দুর্দান্ত কঠিন, কোনো কোনো শব্দ নিতান্তই সোজা। যেমন ‘শবদে শবদে বিয়া’ কবিতার এই অংশ লেখার সময় কঠিন তৎসম শব্দ ব্যবহারের চেষ্টাও করেননি। বিবাহ নয় বিয়া।
তিনি কেবল কবিতাই লিখতেন না, নাটক ও গদ্যও লিখতেন। তাঁর লেখা দুটি প্রহসন ‘একেই কি বলে সভ্যতা?’ আর ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’। এই প্রহসনদুটিতে সেই সময়ের বঙ্গদেশের বিপরীত দুই পক্ষকে নিয়ে তিনি ঠাট্টা করেছিলেন। নিতান্ত ঠাট্টা নয় – জীবনযাত্রার রীতি-নীতি নিয়ে কড়া প্রতিবাদ সেই প্রহসনদুটিতে চোখে পড়ে। দুই পক্ষের একদল নব্য ইঙ্গ-বঙ্গ। ইংরেজি শিখে ইংরেজি আদব-কায়দার ব্যর্থ অনুকরণ করছেন। সামাজিকতার খাতিরে ভদ্রভাবে মদ না খেয়ে মদ খেয়ে মাতলামি করাই উদ্দেশ্য।  অন্যদল রক্ষণশীল, ব্রাহ্মণ্য-সংস্কৃতির ভণ্ডসাধুত্বের অনুসারী। কামুক-রমণীপরায়ণ ভণ্ড সমাজপতি। এই দুই দলই মধুসূদনের রাগের কারণ। তাঁদের নিয়ে লেখা প্রহসনের সংলাপও সহজবোধ্য। তাই তো স্বাভাবিক। নাটক-প্রহসন মঞ্চে অভিনয়ের জন্য রচিত। সংলাপ কঠিন হলে দর্শক গ্রহণ করবেন কেন! তাছাড়া প্রহসন তো সমকালীন বিষয় নিয়ে লেখা – সমকালীন যে বিষয় নিয়ে লেখা হচ্ছে সেই বিষয়ের সঙ্গে জড়িত চরিত্রগুলির মুখের ভাষার যথাযথ রূপ সংলাপে ফুটিয়ে তোলা চাই। তা-না-হলে সে রচনাটি মঞ্চে অভিনয়ের সময় দর্শকের অবিশ্বাস্য ও ‘অলীক’ বলে মনে হবে। ‘একেই কি বলে সভ্যতা?’ প্রহসনে নানা সামাজিক শ্রেণির মানুষের মুখের কথার পরিচয় রয়েছে। ‘ও পুঁটী দেক্‌তো লা, কোন্‌ বেটা মাতাল এসে বুঝি দরজায় ঘা মাচ্চে? ওর মাথায় খানিক জল ঢেলে দে তো।’ নেপথ্য থেকে ভেসে আসা এই সংলাপ তখনকার কলকাতার অন্দরের মেয়েদের সংলাপ – ভাষার চাল দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে। ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে কামুক ভক্তপ্রসাদ জিজ্ঞাসা করে, ‘ছুঁড়ী দেখতে খুব ভাল তো রে!’ এসবও কিন্তু মধুসূদনের লেখারই ভাষা, মোটেই কঠিন নয়। মাস্টারমশাইদের সাহায্য ছাড়াই বোঝা যায়।
মধুসূদন যে সময় সাহিত্য রচনা করছিলেন সেই সময় বঙ্গদেশে নানা-রকম পরিবর্তন হচ্ছিল। সামাজিক-ধর্মীয় ক্ষেত্রে পরিবর্তনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও নানা পরিবর্তন দেখা দিচ্ছিল। বাংলা ভাষাকে নতুন ভাবে গড়ে-পিটে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল। মধুসূদন সে যুগের অন্যতম ভাষা কারিগর। তাঁর প্রিয়মানুষ বিদ্যাসাগর ছিলেন সংস্কৃত ভাষার পণ্ডিত। পণ্ডিত বিদ্যাসাগর কিন্তু কেবল তাঁর ‘বর্ণপরিচয়’ দুই-ভাগের শিশুশিক্ষার বইতে তৎসম সংস্কৃত শব্দই ব্যবহার করেননি, সহজ বাংলাও ব্যবহার করেছিলেন। বিশেষ করে তাঁর ‘বর্ণপরিচয়’-এর মধ্যে যে শিক্ষামূলক নাটকীয় মৌলিক গল্পগুলি আছে সেগুলি সহজভাষায় লেখা। মধুসূদনও প্রয়োজন মতো বিষয় অনুযায়ী বাংলা ভাষাকে গড়ে-পিটে নেওয়ার জন্য কখনও সহজ কখনও কঠিন ভাষা ব্যবহার করেছিলেন। 
মধুসূদনের মৃত্যুর পর ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় বঙ্কিমচন্দ্র মধুসূদনের কবি প্রতিভার প্রশংসা পঞ্চমুখে করেছিলেন। লিখেছিলেন, ‘ভিন্ন ভিন্ন দেশে জাতীয় উন্নতির ভিন্ন ভিন্ন সোপান। বিদ্যালোচনার কারণেই প্রাচীন ভারত উন্নত হইয়াছিল, সেই পথে আবার চল, আবার উন্নত হইবে। কাল প্রসন্ন – ইউরোপ সহায় – সুপবন বহিতেছে দেখিয়া জাতীয় পতাকা উড়াইয়া দাও– তাহাতে নাম লেখ “শ্রীমধুসূদন”।’ বঙ্কিমচন্দ্রের এই বিশ্লেষণে কেবল প্রাচীন ভারতের কথাই আসেনি, নব্যভারতের কথাও এসেছে। এই নব্যভারতে ‘ইউরোপ সহায়’। মধুসূদন বিশ্বসাহিত্যের ও ইউরোপিয় সাহিত্যের নিবিষ্ট পাঠক। আবার প্রাচীন ভারতীয় মহাকাব্যও পড়েছেন। তাঁর কাব্য-নাটক-গদ্যে দেশের ও বিদেশের সংস্কৃতি মিলে-মিশে গেছে। প্রাচীন ভারতের যা কিছু ভালো আর নতুন ভারতের যা কিছু ভালো এই দুয়ের মিশেলে দেশের উন্নতি হবে বলে বঙ্কিমচন্দ্র মনে করেন। মধুসূদন এই দুয়ের মিশেলের উদাহরণ। মধুসূদনের ভাষাও এই দুই সংস্কৃতির মিশ্রণের ফলে গড়ে উঠেছিল। ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’ পাশ্চাত্যের সাহিত্যিক মহাকাব্যের গাম্ভীর্য প্রকাশ করার জন্য তিনি ধ্বনি-ঝংকারময় তৎসমশব্দ প্রয়োগ করেছেন, যেখানে প্রয়োজন সমাসবদ্ধ পদ এনেছেন। আবার চতুর্দশপদী কবিতার ক্ষেত্রে মনের সহজ আবেগ প্রকাশের জন্য সহজ শব্দের প্রয়োগ করেছেন। নাটকের ক্ষেত্রে ‘কৃষ্ণকুমারী’-র সঙ্গে প্রহসনের ভাষা মিলবে না। সেই সময়ে বাঙালি লেখকদের ভাষার ক্ষেত্রেই এটাই ছিল সবচেয়ে বড়ো-সাধনা। কীভাবে নানারকম ভাষায় নানা ভাব প্রকাশ করা যায়। বঙ্কিমচন্দ্র একেই ‘বিষয়ানুসারী ভাষা’ বলে নির্দেশ করেছিলেন।
উনিশ শতকে এই বিষয়ানুসারী ভাষা প্রয়োগ করতে শেখার ফলেই বাংলাবিদ্যাচর্চা ও বঙ্গদেশের সামাজিক উন্নতি-সাধন সম্ভব হয়েছিল। নানা ভাষা ব্যবহারের সাধনা লেখকদের মানসিক উদারতা দেয়। সাম্প্রতিককালে ভাষা-ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি থেকে আমরা দূরে চলে গেছি। হয় অতি তরল না-হয় অতি কঠিন শব্দ ও বাক্য প্রয়োগ। ফলে ‘শবদে শবদে বিয়া’ আমরা ঠিক মতো দিয়ে উঠতে পারছি না। এতে নানাত্বের উদারতা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। একদিকে অতি তরল ভাষার পাঠকগোষ্ঠী, অন্য দিকে নাক উঁচু সাধারণের সংস্পর্শবঞ্চিত লেখককুল। দুয়ের মধ্যে সংযোগ নেই। ফলে সুপবন বইতে পারছে না। আজ থেকে দুশো বছর আগে মধুসূদন-বঙ্কিম প্রমুখ সাহিত্যিকেরা যে ‘ভাষা-সাধনায়’ আত্মনিয়োগ করেছিলেন সেই সাধনার কথা এখন আবার তাই নতুন করে মনে করার সময় এসেছে।  
ছবি : সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
05th  February, 2023
রাশিয়ার চিঠি

রুশ জীবনে মিশে আছে যুদ্ধের গন্ধ। ১০৬ বছর পেরিয়েও নাগরিক চেতনায় অমলিন নভেম্বর বিপ্লবের স্মৃতি। বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে রাশিয়ার যোগ সেই জারের আমল থেকে। রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ আজও সেখানে সমানভাবে চর্চায়। রাশিয়া ঘুরে এসে লিখছেন সুখেন বিশ্বাস।
বিশদ

03rd  December, 2023
২৬/১১
সমৃদ্ধ দত্ত

ফরিদকোটে ব্যবসা বাণিজ্য জীবিকার তেমন সুবিধা হয়নি। তাই আমির আলি লাহোরে কনস্ট্রাকশন এজেন্সিতে নাম লিখিয়ে ৪০০ টাকা দৈনিক মজুরিতে বিল্ডিং নির্মাণের মিস্ত্রি। ফরিদকোট বাসস্ট্যান্ডের পিছনের রাস্তা দিয়ে ১ কিলোমিটার গেলে আমিরের ঘর। বিশদ

26th  November, 2023
চন্দননগরের উমা
রজত চক্রবর্তী

কোমরে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত জোর করে কপালে ঠেকালেন আশি বছরের সুখলতা। বিড় বিড় করে বললেন, ‘জয় সর্বগতে দুর্গে জগদ্ধাত্রী নমহস্তুতে।’ চারিদিকে অযুত ঢাক বেজে উঠল। কাঁসর, ঘণ্টা, ধুপ-ধুনো মন্ত্রোচ্চারণ নিয়ে গঙ্গার পশ্চিমকূলে ছোট্ট মফস্‌সল শহর চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হল মণ্ডপে মণ্ডপে। বিশদ

19th  November, 2023
ফাটাকেষ্টর কালী
রাতুল ঘোষ

যে সময় কালের কথা বলছি, সেটা বিগত সাতের দশকের গোড়ার দিক। নকশাল আন্দোলনের ‘বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ’ শহর কলকাতার মধ্যবিত্ত ছাপোষা বাঙালি সমাজকে ভয়ে তটস্থ করে রেখেছে। বেপাড়ায় বিবাহের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাওয়াও যথেষ্ট ঝুঁকিবহুল। বিশদ

12th  November, 2023
ইডেনে প্রোটিয়া প্রত্যাবর্তন

বর্ণবৈষম্যহীন দুনিয়ায় স্বাগত, হে ক্লাইভ রাইস বাহিনী! ১৯৯১ সালের ১০ নভেম্বর একলাখি ইডেনের এটাই ছিল অভ্যর্থনার মূল সুর।
বিশদ

05th  November, 2023
 বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছে ‘চোকার্স’রা

নির্বাসন কাটিয়ে ফেরার পর বিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে ছিল রামধনুর দেশ। সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে  ৪৫ ওভারে ২৫৩ রানের টার্গেট।
বিশদ

05th  November, 2023
লক্ষ্মীকথা 

 সমৃদ্ধির দেবী তিনি। তাঁর পাঁচালির সঙ্গে আজকের সমাজের মিল খুঁজে পান অনেকে। সেই কাহিনিই লিখলেন রজত চক্রবর্তী বিশদ

29th  October, 2023
কবিগুরুর কনিকা

আম কুড়োতে খুব ভালো লাগত রবির। বিভিন্ন কবিতায় তা ঘুরেফিরে এসেছে। ‘দুই বিঘা জমি’তে তিনি লিখছেন, ‘সেই মনে পড়ে, জৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাইকো ঘুম,/অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম।’ শুধু তাই নয়, আশ্রমের কারও মধ্যে এই নেশা থাকলে তিনি তাকে প্রশ্রয় দিতেন।
বিশদ

15th  October, 2023
অসাধারণ মানুষ মোহরদি

৫ এপ্রিল, ২০০০। দুঃসংবাদটা এসেছিল রাত আটটা নাগাদ... মোহরদি আর নেই। দু’দিন পর, ‘বর্তমান’-এ ছাপা হল অতীতচারণ। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষে পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হল বরুণ সেনগুপ্তের সেই লেখাই।
বিশদ

15th  October, 2023
শক্তিরূপেণ

১৯৯৮। দুর্গাপুজোয় হাতেখড়ি হল আর্ট কলেজ পাশ করা এক যুবকের। দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ২৫টা বছর। এখন তিনি কিংবদন্তি। মা দুর্গা তাঁর কাছে শুধু দেবী নন, শক্তির অপর নাম। সেই ভাবনাই কলমে-তুলিতে রবিবারের ক্যানভাসে মেলে ধরলেন শিল্পী সনাতন দিন্ডা। বিশদ

08th  October, 2023
বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন
এস শ্রীশান্থ

সময়ের নিজস্ব দাবি থাকে। কালের নিয়মে ছাইচাপা পরিস্থিতির ভিতর থেকেও তা বেরিয়ে আসে। তাই বিশ্বকাপ নিয়ে ভারতীয় সমর্থকদের এই ব্যাকুলতা ও কাপ জেতার আকুতির মধ্যে অন্যায় কিছু দেখছি না। বিশদ

01st  October, 2023
মধ্যরাতে সূর্যোদয়!

১৯ নভেম্বরের আমেদাবাদও কি সাক্ষী থাকবে উপচে পড়া আবেগ আর বাঁধনভাঙা উচ্ছ্বাসের? কীর্তি আজাদের সঙ্গে কথা বললেন  সৌরাংশু দেবনাথ বিশদ

01st  October, 2023
শতকের সুচিত্রা

রবীন্দ্রসঙ্গীতের রহস্য নিকেতনে যিনি আমাদের চোখে আলো জ্বেলেছেন, কণ্ঠে দিয়েছেন সুর, অনুভবে দিয়েছেন গভীরতা, আজ তাঁর শতবর্ষের সূচনা লগ্ন। এখন অবসরে ফিরে তাকাই ছ’দশক আগের এক পরমক্ষণে— যেদিন রবীন্দ্রসঙ্গীতের রাজেন্দ্রাণী সুচিত্রা মিত্রকে প্রথম দেখা।
বিশদ

24th  September, 2023
আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক

আকাশজুড়ে ঘুড়ি আর ঘুড়ি। দেখে মনে হয়, কেউ গোটা আকাশটাকে ধরবে বলে রংরেরঙের জাল বিছিয়েছে। ছোট ছোট স্বপ্নঘুড়ি। বিশ্বকর্মা পুজোর সেই গল্প লিখছেন কলহার মুখোপাধ্যায় বিশদ

17th  September, 2023
একনজরে
জামিনের আবেদন করেও সাড়া মিলল না। তাই আপাতত তিহার জেলেই থাকতে হবে অনুব্রত মণ্ডলকে। কিন্তু কেন মিলবে না জামিন? গোরু পাচার কাণ্ডের ‘কিংপিন’ এনামুল হককে ...

দুর্ঘটনা ঘটলে রাজ্য সরকার এবং শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যকে খবর দেওয়ার দায়িত্ব নিয়োগকারী ঠিকাদার সংস্থার। কার্যত দায় এড়িয়ে সোমবার একথা জানিয়েছে শ্রমমন্ত্রক। ...

পাকিস্তানের জেলে খাবারে বিষক্রিয়া। এর জেরে গুরুতর অসুস্থ ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী সাজিদ মীর। ইতিমধ্যেই তাকে বাহাওয়ালপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ...

ছোট গাড়ির সঙ্গে সরকারি বাসের ধাক্কায় তিনজন জখম হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে গোয়ালপোখর থানার পাঞ্জিপাড়া পুলিস ফাঁড়ির বালিচুক্কা এলা ...




আজকের দিনটি কিংবদন্তি গৌতম ( মিত্র )
৯১৬৩৪৯২৬২৫ / ৯৮৩০৭৬৩৮৭৩

ভাগ্য+চেষ্টা= ফল
  • aries
  • taurus
  • gemini
  • cancer
  • leo
  • virgo
  • libra
  • scorpio
  • sagittorius
  • capricorn
  • aquarius
  • pisces
aries

কর্মাদি ক্ষেত্র ও শেয়ার থেকে অর্থলাভ যোগ। শ্রমিকদের অর্থকড়ি আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা। ... বিশদ


ইতিহাসে আজকের দিন

শৌর্য দিবস 
১৭৬৮: বিশ্বকোষ এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটেনিকা প্রথম প্রকাশিত হয়
১৮২৩: জার্মান দার্শনিক ম্যাক্সমুলারের জন্ম
১৮৫৩: ঐতিহাসিক ও শিক্ষাবিদ হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর জন্ম
১৮৭৭: পৃথিবী বিখ্যাত পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট প্রথম প্রকাশ হয়
১৮৭৭: বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন তার ফনোগ্রাফ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রথম শব্দ রের্কড করতে সক্ষম হন
১৮৯৭: লন্ডন বিশ্বের প্রথম শহর হিসাবে ট্যাক্সিক্যাবের অনুমোদন দেয়
১৯৪৫:  চলচ্চিত্র পরিচালক শেখর কাপুরের জন্ম
১৯৪৭: ভারতীয় ডিসকাস থ্রোয়ার, হ্যামার থ্রোয়ার তথা অভিনেতা প্রবীন কুমারের জন্ম, তিনি বি আর চোপড়ার মহাভারত টেলি সিরিয়ালে ভীমের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক হৃদয় জয় করেছিলেন
১৯৫৬: দলিত আন্দোলনের নেতা ভীমরাওজি রামাজি আম্বেদকরের মৃত্যু
১৯৮৫: ক্রিকেটার আর পি সিংয়ের জন্ম
১৯৮৮: ক্রিকেটার রবীন্দ্র জাদেজার জন্ম
১৯৯২: অযোধ্যার বিতর্কিত সৌধ ধ্বংস
১৯৯৩: ক্রিকেটার জসপ্রীত বুমরাহর জন্ম
১৯৯৪: ক্রিকেটার শ্রেয়স আইয়ারের জন্ম
২০১৬: তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার মৃত্যু
২০২০:  বাংলা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের বিখ্যাত অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু



ক্রয়মূল্য বিক্রয়মূল্য
ডলার ৮২.৪৫ টাকা ৮৪.১৯ টাকা
পাউন্ড ১০৩.৯২ টাকা ১০৭.৩৯ টাকা
ইউরো ৮৯.১৩ টাকা ৯২.৩০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
পাকা সোনা (১০ গ্রাম) ৬৩,৮০০ টাকা
গহনা সোনা (১০ (গ্রাম) ৬৪,১০০ টাকা
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট ১০ গ্রাম) ৬০,৯৫০ টাকা
রূপার বাট (প্রতি কেজি) ৭৬,৭০০ টাকা
রূপা খুচরো (প্রতি কেজি) ৭৬,৮০০ টাকা
[ মূল্যযুক্ত ৩% জি. এস. টি আলাদা ]

দিন পঞ্জিকা

১৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩। নবমী ৫২/২৫ রাত্রি ৩/৫। উত্তরফল্গুনী নক্ষত্র অহোরাত্র। সূর্যোদয় ৬/৬/৫৩, সূর্যাস্ত ৪/৪৭/৫৩। অমৃতযোগ দিবা ৬/৪৮ মধ্যে পুনঃ ৭/৩২ গতে ৮/১৪ মধ্যে পুনঃ ১০/১৩ গতে ১২/৩১ মধ্যে। রাত্রি ৫/৪১ গতে ৬/৩৪ মধ্যে পুনঃ ৮/২১ গতে ৩/২৭ মধ্যে। মাহেন্দ্রযোগ দিরা ৬/৪৮ গতে ৭/৩২ মধ্যে পুনঃ ১/১৪ গতে ৩/২৩ মধ্যে। বারবেলা ৮/৪৭ গতে ১০/৭ মধ্যে। পুনঃ ১১/২৭ গতে ১২/৪৭ মধ্যে। কালরত্রি ২/৪৬ গতে ৪/২৬ মধ্যে।
১৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩। নবমী রাত্রি ১/৫। উত্তরফল্গুনী নক্ষত্র শেষরাত্রি ৫/২৮। সূর্যোদয় ৬/৮, সূর্যাস্ত ৪/৪৮। অমৃতযোগ দিবা ৭/২ মধ্যে ও ৭/৪৪ গতে ৮/৩২ মধ্যে ও ১০/৩৩ গতে ১২/৪০ মধ্যে এবং রাত্রি ৫/৪৮ গতে ৬/৪১ মধ্যে ও ৮/২৯ গতে ৩/৩৯ মধ্যে। মাহেন্দ্রযোগ দিবা ৭/২ গতে ৭/৪৪ মধ্যে ও ১/২২ গতে ৩/২৯ মধ্যে। কালবেলা ৮/৪৮ গতে ১০/৮ মধ্যে ও ১১/২৮ গতে ১২/৪৮ মধ্যে। কালরাত্রি ২/৪৮ গতে ৪/২৮ মধ্যে।  
২১ জমাদিয়ল আউয়ল।

ছবি সংবাদ

এই মুহূর্তে
চিৎপুরে অগ্নিকাণ্ড
চিৎপুরে একটি গোডাউনে বিধ্বংসী আগুন। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে দমকলের ৯ টি ...বিশদ

11:43:07 PM

আইএসএল: মোহন বাগান ও ওড়িশার ম্যাচ ড্র (স্কোর ২-২)

10:13:00 PM

আইএসএল: মোহন বাগান ২ – ওড়িশা ২ (৯৫ মিনিট)

10:11:09 PM

আইএসএল: মোহন বাগান ১ – ওড়িশা ২ (৬০ মিনিট)

09:37:34 PM

আইএসএল: মোহন বাগান ০ – ওড়িশা ২ (হাফ টাইম)

09:00:00 PM

আইএসএল: মোহন বাগান ০ – ওড়িশা ১ (৩১ মিনিট)

08:44:38 PM