বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
দিনটা ছিল ১৯৬১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। রানি এলিজাবেথ পা রাখলেন তিলোত্তমায়। রেড রোড বরাবর তিনি অভিবাদন গ্রহণ করবেন ভারতবাসীর। সত্যি সেদিন রাস্তায় ভেঙে পড়েছিল মানুষের ভিড়। তাই রানির জন্য চাই হুডখোলা একটা গাড়ি। আগে থেকেই সে বন্দোবস্ত ছিল। মিলেছিল জুতসই ডজ গাড়িটা। কলকাতা, দুর্গাপুর সহ একগুচ্ছ জায়গায় রানির যাতায়াতের জন্য বরাদ্দ করা হল এই গাড়িটিকেই।
ছ’দশক আগের রানির কলকাতা সফরে বরাদ্দ সেই ডজ গাড়ি আজও রয়েছে বহাল তবিয়তে। রীতিমতো সচল। সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, কিন্তু এখনও কর্মক্ষম সেই ডজ সাবার্বান ডব্লুবিই ১৪৬৩ গাড়িটি। ভবানীপুরের জাস্টিস চন্দ্রমাধব রোডের রাজ্য পরিবহণ দপ্তরের পুলকার অফিসে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের ডব্লুবিএ ১-এর পড়শি এই ঐতিহাসিক ডজ গাড়িটি। বলা যায়, পুলকার ভবনের স্টাফদের নয়নের মণি সেটি। এখনও ঝাঁ চকচকে গাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে আপন গরিমা বুকে নিয়ে। ফি-বছর ২৬ জানুয়ারি রাজ্যপালকে রাজভবন থেকে রেড রোড নিয়ে যাওয়ার গুরুদ্বায়িত্ব যে আজও ‘তাঁর’ই কাঁধে!
গাড়িটির ব্লু-বুক বলছে, সেটির রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। তবে, গাড়িটি কখন কাকে দেওয়া হল তার রেকর্ড রয়েছে ১৯৬৪ সাল থেকে। অর্থাত্ ‘রানির জন্য বরাদ্দ হল’ এমন তথ্য মেলে না। তবে পুরনো ছবির সঙ্গে গাড়ির নম্বর প্লেট মেলালে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায়।
বর্তমানে এই ডজ পুলকারের রক্ষণাবেক্ষণ হয় শুভঙ্কর প্রামাণিকের তত্ত্বাবধানে। বলাই বাহুল্য তিনিই রেখেছেন ইতিহাসকে বাঁচিয়ে। আর এই গাড়ি চালানোর জন্য একমাত্র ব্যক্তি প্রভাস রায়। রাজ্যপালকে চাপিয়ে রেড রোড নিয়ে যান তিনিই। আর মাস ছ’য়েক পর অবসর নেবেন প্রভাসবাবু। তারপর কী হবে কেউ জানেন না!
গাড়ির বিশেষত্ব নিয়ে শুভঙ্করবাবু বলছিলেন, আনুমানিক ২ হাজার ৩০০ কেজির সেভন সিটার এই গাড়ি ছয় সিলিন্ডারের। এখনও অনায়সে ১০০ কিলোমিটার ছুটতে পারে ৭০ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিতে। মাইলেজও দেয় আশানুরূপ। তবে স্টিয়ারিং-এ গিয়ার সিস্টেম। বছর খানেক আগে বনেটের কাছে নোজ জং ধরে গিয়েছিল। কিন্তু ক্রোমিয়াম নিকেল মেলানো যায়নি। তাই অগত্যা পিতল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নোজ ও হেডলাইট রিং। চাকার বাইরে রিং বসেছে মূল রিংকে রক্ষা করতে। বছরে অনুমানিক ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।
হয়তো আর কিছু দিনের মধ্যেই চির বিশ্রামে পাঠানো হবে এই ডজকে। আপাতত এই ঐতিহাসিক গাড়ির জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে একটি শোকেসের। এলিজাবেথের মৃত্যুর পর স্মৃতির ধুলো ঝেড়ে বেরিয়ে পড়েছে প্রায় ছ’দশক পুরনো এই বাহন-কাহিনি। পুলকার অফিসের কর্মীদের মোবাইলে মোবাইলে ঘুরছে একটিই ছবি। গাউন পরিহিতা দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কলকাতার সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের সামনে এই ডজ গাড়িটিতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। তাঁদের কাছে এই ছবিই যেন কলকাতার ‘কোহিনুর’!
প্যালেসেই এটিএম!
বাকিংহাম প্যালেসের অন্দরমহলে কী আছে, কী নেই—তা নিয়ে বহু নিউজপ্রিন্ট খরচ হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে একটি এটিএম-ও। খবরটি অবশ্য নতুন কিছু নয়। ২০০১ সালে এক সাক্ষাৎকারে সেকথা জানিয়েছিলেন স্বয়ং কটস ব্যাঙ্কের তৎকালীন প্রধান গর্ডন পেল। তিনি বলেন, রাজপরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বাকিংহাম প্যালেসের বেসমেন্টে একটি এটিএম মেশিন বসানো হয়েছে। ২০১৯ সালে একটি টিভি চ্যানেলের তথ্যচিত্রে ফের উঠে আসে রাজপরিবারের সেই এটিএমের কথা। প্রশ্ন ওঠে, রানি কি কখনও এই এটিএম মেশিনটি ব্যবহার করেছেন? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, সম্ভবত না। কারণ, রানি ছিলেন অত্যন্ত মিতব্যয়ী। প্রবল শীতের মধ্যেও ঘরে ৩০ পাউন্ডের হিটার ব্যবহার করার কথা বলতেন তিনি। সুতরাং ওই এটিএম থেকে বোধহয় কখনও টাকা তোলেননি তিনি। অপর একাংশ অবশ্য দাবি করত, নিজের ঘোড়াগুলি বা প্রিয় জিনের বোতল কেনার জন্য কখনওসখনও হয়তো এটিএম ব্যবহার করলেও করতে পারেন রানি। এই এটিএমের মাধ্যমে যে কোনও ধরনের লেনদেনে রাজপরিবারের কোনও অতিরিক্ত খরচ লাগে না। বহু নামী-দামি ধনকুবের এই কটস ব্যাঙ্কের গ্রাহক তালিকায় থাকলেও তাঁদের কারও বাড়িতে অবশ্য এটিএম মেশিন বসার কোনও সম্ভাবনা নেই। এ ছিল শুধুই রানির জন্য। এক্সক্লুসিভ!