Bartaman Patrika
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
 

পেগাসাস, রাজকন্যা
ও চুপকথা

থ্রি মাস্কেটিয়ার্স— নিভ-সালেভ-ওমরির নামের আদ্যক্ষর মিলিয়ে তৈরি ইজরায়েলের কুখ্যাত গুপ্তচর সংস্থা এনএসও। কেবল উগ্রপন্থী বা পেডোফাইলস (শিশু যৌন নির্যাতনকারী) পাকড়াতে বিভিন্ন দেশের সরকারকেই নাকি পেগাসাস বিক্রি করা হয়। আরবের রাজকুমারী লতিফা, খুন হওয়া সাংবাদিক জামাল খাশোগি বা মরক্কোর ইতিহাসবিদ্‌ মাতি মনজিব—সকলেই তাহলে ছিলেন পেডোফাইলস বা উগ্রপন্থী? আরব-ইজরায়েল সম্পর্ক সাপে-নেউলে। অথচ, পেগাসাস কেনাবেচার সময় বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও মহম্মদ বিন রশিদ প্রাণের বন্ধু। গোটা বিশ্বের নিরাপত্তাই আজ বিপন্ন। ‘জিরো ক্লিকে’ই পেগাসাস ঢুকে পড়েছে কুলীন আইফোনের বাসরঘরে। রোমাঞ্চ উপন্যাসকেও হার মানানো পেগাসাসের কাণ্ডকারখানার তত্ত্বতালাশে কলম ধরলেন মৃন্ময় চন্দ।  

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮। দুবাই। কালো অডি, কিউ সেভেনের, ডিকিতে লুকিয়ে রয়েছেন ৩২ বছরের উদ্ভিন্নযৌবনা রাজকুমারী। বাবার অত্যাচার, খবরদারিতে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি থেকে পালাচ্ছেন তিনি। অবশ্য এটাই তার প্রথম বাড়ি থেকে পালানো নয়। ১৬ বছর বয়সে পালাতে গিয়ে ওমান সীমান্তে বাবার সৈন্যবাহিনীর হাতে তিনি বামাল ধরা পড়েন। একটা জানলাহীন বদ্ধ ঘরে রেখে বাবা নাকি তাঁর সৈন্যবাহিনীকে আদেশ দিয়েছিলেন পিটিয়েই তাঁকে মেরে ফেলতে। আধমরা হয়ে ৩ বছর ৪ মাস বাদে তিনি বাড়ি ফেরেন। এবার রাজকুমারী দৃঢ়প্রত্যয়ী, পালাবেনই। অডি থেকে লাফিয়ে নেমে উঠে পড়লেন র‌্যাংলার জিপে। জিপ স্টার্ট করাই ছিল। রাজকুমারীকে নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটল জিপ। স্পিডোমিটারের কাঁটা ১৬০ কিমি ছুঁইছুঁই। জিপে রয়েছেন তাঁর বিশ্বস্ত কয়েকজন বন্ধু। গোটা দুবাই নিদ্রালু। র‌্যাংলার এসে থামল আরবসাগরের তীরে। উথালপাথাল আরবসাগর। রাজকুমারী ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা র‌্যাংলার থেকে নেমে সাঁতরে উঠলেন একটা ডিঙি নৌকোয়। ডিঙি টাল খেয়ে প্রায় উল্টে যাচ্ছিল! উত্তাল ঢেউ ভেঙে ডিঙি ভিড়ল পার্শ্ববর্তী দেশ ওমানের মাস্কাটে। ১৬ কিমি দূরে মাঝ-সমুদ্রে রাজকুমারীর জন্য অপেক্ষায় প্রমোদতরী ‘নসট্রোমো’। আসলে সেটি একটি ইয়ট।  
জেট স্কি করে যেতে হবে নসট্রোমোয়। কিন্তু সমুদ্র এতটাই বিক্ষুব্ধ যে ‘সি স্কুটার’ কিছুতেই নসট্রোমো-র দিকে এগতে পারছে না। সূর্য পাটে বসছে। দিগন্ত লাল আবিরে রাঙা। সন্ধে ৭টা, সমুদ্র একটু শান্ত। ডাকাবুকো রাজকুমারীর তর সইছে না। মাঝে তো কয়েকটা দিন মাত্র, তারপরেই তো তিনি মুক্ত বিহঙ্গ— যা চাই পরতে, খাইতে পারেন, যেথায় খুশি যাইতে পারেন। রাজকুমারীর ইচ্ছে, ভায়া শ্রীলঙ্কা অথবা ভারত তিনি পাড়ি জমাবেন আমেরিকায়। রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন। সেইমতো ভারত বা শ্রীলঙ্কার অগ্রিম ভিসাও পকেটে রেডি। অবশেষে পদার্পণ ‘নসট্রোমো’তে। সারাদিনের দৌড়ঝাঁপে, শ্রান্ত-ক্লান্ত-অবসন্ন রাজকুমারী কোনওরকমে রাতের খাওয়া সেরে ঢলে পড়লেন নরম বিছানায়, নিদ্রাদেবীর কোলে। মৌন-মুখর একফালি চাঁদ আর নীল ধ্রুবতারা রাজকুমারীর কপালে আলগোছে চুমু খেয়ে গেল। 
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী রাজার কন্যা তিনি। বিরাট রাজপ্রাসাদে, রাজকীয় বিলাস-বৈভবে তাঁর দিন কাটে। নিজেরই তাঁর রয়েছে বেশ কয়েকটা প্রাইভেট জেট। পৃথিবীর কোথাও তাঁর হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা। তিনি প্লেনের দরজা খুলে প্যারাসুটে চড়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন গহন অ্যামাজনের জঙ্গলে বা খরস্রোতা জামবেজি নদীতে। যেখানে নব্বই হাজার জলহস্তী আর এক লক্ষ আশি হাজার কুমির নিত্যদিন জলকেলিতে ব্যস্ত থাকে। বাঞ্জি জাম্পিং, স্কাই ডাইভিং জলভাত তাঁর কাছে। রাজকুমারী ঘোড়দৌড়েও চ্যাম্পিয়ন। তাঁর বাবার যে রয়েছে রেসের ঘোড়ার জগৎজোড়া কারবার। ঘোড়ায় চড়া তাই তাঁর রক্তে। তীব্র-বেগে ছুটন্ত ঘোড়ার পিঠ থেকে প্রজাপতির মতো ভেসে তিনি অবতরণ করতে পারেন মাটিতে। তিনি গাড়ি চালাচ্ছেন না রোলার কোস্টারে চড়েছেন বোঝা দায়! ক্যাপওয়ারার তিনি। হাসতে হাসতে, নাচ গানের তালে তালে তিনি ক্যারাটেতে কাবু করতে পারেন তার মহাবলী প্রতিপক্ষকেও। 
তাঁর বাবা পারস্য উপসাগরের সবথেকে বিত্তবান মানুষটি তাঁর জন্য তৈরি করেছেন বিশ্বের সর্বোচ্চ বাড়ি, ১৬৩ তলার ‘বুর্জ খলিফা’। সমুদ্রের জল ছেঁচে নির্মাণ করেছেন, আস্ত একটা দ্বীপপুঞ্জ, পাম জুমেইরা। মহাকাশ স্টেশন থেকেও যার অভূতপূর্ব সৌন্দর্য দৃশ্যমান। তথাপি মেয়ের মন ভরে না কিছুতেই। কে সেই ধন্যি মেয়ে? তিনি রাজকুমারী লতিফা, থুড়ি লতিফা বিন মহম্মদ আল-মাকতাম। তাঁর বাবা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দোর্দণ্ডপ্রতাপ স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী-উপরাষ্ট্রপতি-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মহম্মদ বিন রশিদ আল-মাকতাম। দুবাই, আরব আমিরশাহির সাতটি স্বয়ংশাসিত সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্রের একটি। 
দুবাইয়ের রাজা মহম্মদ বিন রশিদ তাঁর মেয়ে লতিফাকে স্নানঘরে আটকে রেখে নির্যাতন চালাচ্ছেন, সে ছবি ২০১৯-’২০-তে ভাইরাল হয়েছে। ‘ইউএস টুডে’ গত ফেব্রুয়ারিতে ফলাও করে সে খবর ছেপেওছে। দুবাইয়ের রাজা নিজেকে প্রগতিশীল, উদারপন্থী ও নারীবাদী হিসেবে জাহির করেন। ছ’জন স্ত্রী এবং ২৫টি সন্তানসন্ততিকে নিয়ে তাঁর নাকি সুখের সংসার। তবে, তাঁর স্বাধীনচেতা মেয়ে লতিফা একটি ভিডিওতে প্রকাশ্যে বলছেন, বাবার পুরোটাই মেকি। তাঁর মেয়েরা কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে সবটাই নাকি বিন রশিদের নজরবন্দি। নিজে তিনি কখনওই চোখে চোখে রাখেন না মেয়ে বা বউদের, তাঁর হয়ে নজরদারির কাজটা চালায় পেগাসাস। 
রাজা যে শুধু লতিফার ওপরেই ক্ষিপ্ত, খড়গহস্ত এমনটা নয়। লতিফার বড়দি সামাসা, পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে ২০০০-এর গ্রীষ্মে লন্ডন বেড়াতে গিয়ে পালিয়ে যান। আধপেটা খেয়ে একটা হস্টেলে আশ্রয় নেন। কেমব্রিজের রাস্তা থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে রাজার গুন্ডাবাহিনী সামাসা-কে তুলে আনে। হেলিকপ্টারে চাপিয়ে তাকে ফ্রান্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর প্রাইভেট জেটে বসিয়ে সোজা দুবাই। সামাসার ফোন ট্যাপ করে রাজা বিন রশিদ তাঁর মেয়ের হদিশ জেনেছিলেন। রয়েল ব্রিটিশ হাইকোর্টে সামাসার একটি চিঠি অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জমা দেয়। তাতে সামাসা লিখছেন: ‘বাবা এমনকী তাঁর মেয়েকেও মেরে ফেলতে দু’দণ্ড ভাবেন না।’ রাষ্ট্রসঙ্ঘ সামাসার কোনও খোঁজ আজও পায়নি। 
লতিফার সৎমা হায়া বিন-হুসেন লতিফার দুর্দশায় বিচলিত হয়ে মুখ খুলেছিলেন। অচিরেই রাজা বিন রশিদের চক্ষুশূল হলেন হায়া। বিপদ বুঝে হায়া তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে রাজপরিবারের চোখ এড়িয়ে পালিয়ে আসেন লন্ডনে। চাকরি নেন জর্ডন দূতাবাসে। জর্ডনের রাজা হুসেনের মেয়ে রাজকুমারী হায়া। অসাধারণ সুন্দরী। গ্ল্যামারাস। অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেছেন। জর্ডনের প্রথম মহিলা হিসাবে ‘হেভি ট্রাক’ চালানোর লাইসেন্স তাঁর পকেটে। আরবের প্রথম মহিলা হিসাবে ২০২০-র সামার ওলিম্পিকসে হায়া প্রথম ঘোড়দৌড়ে অংশ নেন। ইন্টারন্যাশনাল ওলিম্পিকস কমিটি ও রাষ্ট্রসঙ্ঘের ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের’ গুডউইল অ্যাম্বাসেডর ছিলেন হায়া। ব্রিটেনের রয়েল কোর্ট অফ জাস্টিস-এ ২০১৯-এর জুলাইতে হায়া বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা শুরু করেছেন। তারপর থেকেই হায়ার প্রতিটি পদক্ষেপ নিঃসাড়ে দুবাইয়ের রাজার কাছে পৌঁছে দিয়েছে পেগাসাস। সাত বছর ধরে তিল তিল করে বানানো লতিফার পালানোর নিশ্ছিদ্র পরিকল্পনাতেও জল ঢেলে দিয়েছিল পেগাসাস।
পেগাসাস ও লতিফা অপহরণ:
লতিফা ‘কাপওয়ারিয়া’ শিখতেন ফিনল্যান্ডের টিনা জোউহনিয়ানের কাছে। নাচ-গান-মার্শাল আর্টের যুগলবন্দি একসঙ্গে চলত। প্রশিক্ষণ পর্বে টিনাই নিয়ে এলেন তাঁর আর এক বন্ধু ক্রিশ্চিয়ান এলোম্বকে। ফ্রান্সের তাড়া খেয়ে হার্ভে জবার্ট তখন দুবাইতে লুকিয়ে। জবার্ট সাবমেরিন বানাতে ও চালাতেও পারতেন। টিনা-লতিফা-এলম্বোর সঙ্গে জবার্টের পরিচয় হল একটি ঘরোয়া পার্টিতে। পরিচয় গড়াল সখ্যতায়। ঘটনাক্রমে লতিফার পালানোর পরিকল্পনায় জবার্ট হয়ে উঠলেন মূল কাণ্ডারী। লতিফার সঞ্চয়ের তিন লক্ষ মার্কিন ডলার— পুরোটাই খরচ করে জোগাড় হল ইয়ট, নসট্রোমো। নসট্রোমোকে চালাবেন জবার্ট। 
লতিফা বা টিনা আগেই আঁচ করেছিলেন তাঁদের ফোনে আড়ি পাতা হতে পারে। তাই দুবাই শহরের কেন্দ্রস্থলে ‘লা সহা কাফে’র বাথরুমে তাঁরা আদরের মোবাইলটি ইচ্ছা করেই ফেলে এলেন। দিগন্তবিস্তারী সমুদ্রে দিক ঠাওরাতে নসট্রোমোতে একটাই স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সংযোগ ছিল। জবার্ট নিশ্চিত করেছিলেন, এই ইন্টারনেট থেকে কোনওভাবেই তাঁদের অবস্থান জানা বা নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। যে ডিঙিটা করে তারা সদলে নসট্রোমোর কাছে পৌঁছেছিলেন, এলম্বো সেই ডিঙিটাকে ওমানের তীরে ছেড়ে আসতে গেলেন। ওমান পুলিস তক্কে তক্কে থেকে গ্রেপ্তার করে এলম্বোকে। এলম্বোকে গ্রেপ্তার করলেও লতিফাদের কোনও হদিশই করে উঠতে পারে না ওমান পুলিস। এরপর আসরে নামে পেগাসাস, শুরু হয় লোকেশন ট্র্যাকিং। রাজপরিবারে ততক্ষণে ঘণ্টি বেজে গিয়েছে। দুবাই প্রশাসন তড়িঘড়ি উপায়ান্তর না দেখে এফবিআই-এর শরণাপন্ন হয়েছে। 
স্বৈরাচারী রাজা বিন রশিদ গোটা বিশ্বে রটিয়ে দিলেন তাঁর কন্যা লতিফাকে মোটা মুক্তিপণের বিনিময়ে অপহরণ করেছে দুষ্কৃতীরা। মাঝে কেটে গিয়েছে ছ’দিন। ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলে ঢুকে পড়েছে নসট্রোমো। চালক জবার্ট খেয়াল করলেন নসট্রোমোকে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটা যন্ত্রচালিত নৌকো আর সি-প্লেন খুব নিচু দিয়ে উড়ে উড়ে ক্রমাগত অনুসরণ করে চলেছে। মার্চ ৪, ২০১৮, রাতের খাবার খেয়ে লতিফারা যখন বিছানায় যাবার তোড়জোড় করছেন হঠাৎ নসট্রোমোর ডেকে ভারী বুটের আওয়াজ শোনা গেল। ভারতীয় স্পেশাল ফোর্সের হেলিকপ্টার, ভেসেল থেকে কমান্ডোরা লাফিয়ে নামল নসট্রোমোতে, আমিরশাহির সশস্ত্র কমান্ডোরাও ছিল সেখানে। তারা প্রথমেই গ্যাস গ্রেনেড ছুড়ে লতিফার কেবিনটা ধোঁয়ায় ভরে দিল। রাজকুমারী দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে দরজার ছিটকিনি তুলে করুণ আর্তিতে মানবাধিকার কর্মী রাধা স্টারলিংকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে বললেন, ‘যেভাবে হোক আমাদের বাঁচান, ওরা আমাদের ঘিরে ফেলেছে’। সে আর্তিও পেগাসাসের দপ্তরে তৎক্ষণাৎ জমা পড়ল। একজন ভারতীয় সৈন্য ততক্ষণে লতিফার নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করেছে। সে আসলে বুঝতে পারছিল না কে এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ মহীয়সী রমণী লতিফা, যার জন্য আরব-আমেরিকা-ভারত মাঝ-সমুদ্রে রাতদুপুরে ঝড় তুলছে! ইতিমধ্যে আরব সৈন্যরা লতিফার দুটো হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলল। তাদের নৌকোয় লতিফা, টিনা আর জবার্টকে তুলে নিল।  
নসট্রোমোর ইন্টারনেট কানেকশনটি রোড আইল্যান্ডের ‘কেভিএইচ’ নামক একটি কোম্পানি প্রদান করেছিল। গ্রাহকের গোপনীয়তা তারা শেষমুহূর্ত পর্যন্ত রক্ষা করে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও লতিফাদের নিখুঁত অবস্থান কীভাবে সৈন্যবাহিনীর হাতে পৌঁছল? নসট্রোমোর ইন্টারনেটের মাধ্যমে লতিফা একবারই তাঁর কোনও এক বন্ধুকে একটি ইমেল পাঠিয়েছিলেন। ব্যস, তখনই পেগাসাসের নজরে পড়ে যায় লতিফাদের অবস্থান। রাজকুমারী নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর সমস্ত বন্ধুদের ফোনের দখল নেয় ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও-এর আড়িপাতা সফটওয়্যার পেগাসাস। লতিফা মেলটা না করলে আর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই পিছনে না পড়লে লতিফাদের মাঝ-সমুদ্রের অভিযান পেগাসাসের পক্ষে জানা সম্ভব হতো না। কীভাবে এফবিআই তড়িঘড়ি লতিফাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ল সেও এক বিস্ময়। কারণ লিগাল অ্যাটাশে বা লিগাটস সবুজ সঙ্কেত না দিলে এফবিআই-এর পক্ষে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনও অভিযানে নামা একেবারেই অসম্ভব। তাহলে কি স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অঙ্গুলিহেলনেই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা আসরে নামে?  
গোটা ঘটনায় মুখে কুলুপ আঁটে এফবিআই-এর ওয়াশিংটনের সদর দপ্তর। লতিফা হরণের বিন্দুবিসর্গ জানতেন না আবুধাবির মার্কিন রাষ্ট্রদূত বারবারা লিফ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আরবের শেখের সখ্যতা সুবিদিত। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপেই ‘ওয়াশিংটন পোস্টে’র সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুনের দায়ভার থেকে বেকসুর খালাস পায় আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন। ২০১৮-তে জামাল খাশোগি তাঁর বিয়ের কাগজপত্র জোগাড়ে ইস্তাম্বুলের আরব দূতাবাসে ঢোকামাত্র সলমনের গুপ্তঘাতকরা অতর্কিতে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। পেগাসাস তখনও ফোন হ্যাক করে খাশোগির নিখুঁত অবস্থান শেখ সলমনের ভাড়া করা গুন্ডাদের হাতে তুলে দিয়েছিল। কিন্তু ভারত কেন লতিফা উদ্ধারে ঝাঁপাল? সে প্রশ্নের উত্তর আজও অমীমাংসিত। ক্রিশ্চিয়ান মিশেল নামে এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ীকে দুবাই সেইসময়ে ভারতের হাতে প্রত্যর্পণ করে। কে এই ক্রিশ্চিয়ান মিশেল? দাউদ ইব্রাহিম বা ছোটা রাজনের থেকেও মহার্ঘ! 
ইজরায়েলের সঙ্গে আরবের সম্পর্ক কোনওকালেই মধুর নয়। তথাপি এনএসও-এর নজরদারি সফটওয়্যার পেগাসাস কেনাবেচার সময় বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও মহম্মদ বিন রশিদ ছিলেন প্রাণের বন্ধু। বাণিজ্য বসতে লক্ষ্মী বলেই কি? রাজকুমারী লতিফার অপহরণ কাণ্ডের পর সারা পৃথিবীর ছিছিক্কারে এনএসও আরবের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। পেগাসাস যে কেবল উচ্চকোটির লোকদের ওপর নজরদারি চালায় এমনটাও নয়। মেক্সিকোর পুঁচকে অনামা সাংবাদিক সেসিলিও পিনেডো ব্রিটোর খুনের সুপারিও নিয়েছিল পেগাসাস। মেক্সিকোর সান মিগ্যুয়েল টোতালাপান-এর পাহাড়ি অঞ্চলে বেআইনি ‘পপি’ চাষ করে প্রচুর আফিম বা মরফিন মিলত। স্থানীয় মাফিয়া দল ‘লা টেকিয়ালোরসে’র অকল্পনীয় রোজগারের বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে পেগাসাস মারফত বেঘোরে খুন হন সেসিলিও। ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করতেও এনএসও-এর জুড়ি মেলা ভার। সিএনএনের সাংবাদিক জিওফ গোল্ডবার্গ আরব দুনিয়ার স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে বহুকালই সরব। আরবের স্বঘোষিত নীতি-পুলিস হুসেন আল-ঘাওয়ি পেগাসাসকে হাতিয়ার করে লাগাতার খুনের হুমকি দিয়ে চলেছেন গোল্ডবার্গকে। মৃত্যুর আগে সমাজমাধ্যমে খাশোগিকেও একইভাবে উত্ত্যক্ত করেছিলেন আল ঘাওয়ি পেগাসাসের হাত ধরেই। মরক্কোর স্বৈরাচারী রাজপরিবারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন রাবাতের ইউনিভার্সিটি অফ মহম্মদ ভি-র ইতিহাসের অধ্যাপক মাতি মানজিব। পেগাসাসকে হাতিয়ার করে তাঁর জীবনটাকেও ছারখার করে দিয়েছিল মরক্কোর রাজপরিবার। 
পেগাসাসের কর্মপদ্ধতি
মোবাইলের স্ক্রিনে হঠাৎ এসএমএসের মাধ্যমে একটি লিঙ্ক আসবে। সেই লিঙ্কটি ক্লিক করলেই (বা না করলেও, ‘জিরো ক্লিকেই’) স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেগাসাস থানা গাড়বে মোবাইল ফোনের অন্দরে। ফোটো/মেল/মেসেজ এবং মোবাইলের পেটে সঞ্চিত যাবতীয় তথ্যকে হাতিয়ে পেগাসাস যিনি আড়ি পাতছেন তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেবে। মোবাইলের মাইক্রোফোন ও ক্যামেরা ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতেই খুলে যাবে। ফলে আশপাশের ঘটনা, কথোপকথন লাইভ স্ট্রিমিংয়ে ব্যবহারকারীর অজান্তেই নির্বিঘ্নে পৌঁছে যাবে নজরদার ব্যক্তি বা সংস্থা অথবা রাষ্ট্রের কাছে। 
এনএসও বলছে, পেগাসাস কেবল উগ্রপন্থী, অপরাধী ও পেডোফাইলসদের পাকড়াতেই ব্যবহার করা হয়। সরকার বা সরকারি আইন-রক্ষকরা দেশ ও দশের স্বার্থে পেগাসাস কিনতে পারেন। তাহলে জামাল খাশোগি বা সেসিলিওর পরিকল্পিত খুন সম্ভব হল কীভাবে? আল ঘাওয়িই বা কীভাবে পেগাসাস ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত গোল্ডবার্গকে চমকাচ্ছেন বা মাতি মানজিবকে মরক্কোর রাজপরিবার? তারা তো কেউই উগ্রপন্থী বা পেডোফাইলস নন। তাঁরা কলম বা ক্যামেরা দিয়ে সামন্ততান্ত্রিক প্রভুদের নগ্ন চেহারাটা তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন নরখাদক খুনে বদমাশদের মুখোশটা টেনে খুলে দিতে। পেগাসাসের দৌলতে সেই প্রতিবাদীরাই পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেলেন। পেগাসাস অন্ধকার জগতের অপরাধীদের জঘন্য অসামাজিক কাজের দোসর। বিশ্বের ১৭টি স্বনামধন্য সংবাদমাধ্যমের ৮০ জন সাংবাদিক তাই জোট বেঁধে পেগাসাসের অনৈতিক কাজের পর্দা-ফাঁস করছেন ‘ফরবিডেন স্টোরিস’-এর মাধ্যমে।  কিন্তু এনএসও-এর আড়িপাতার হদিশ মিলল কীভাবে? একজন দালালই নাকি নাটের গুরু। তিনিই এনএসও-এর সাইপ্রাসের সার্ভার থেকে নাকি হাওয়া করে দেন যাবতীয় স্পর্শকাতর তথ্য। ২০১৪ সালে এনএসও যুক্ত হয় সাইপ্রাসের ‘সার্কেল টেকনোলজির’ সঙ্গে। সার্কেলের মালিক ছিলেন ইজরায়েলের সাময়িক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ‘কর্প টেকনোলজিক্যাল ইউনিটের’ কমান্ডার তাল ডিলিয়ান। অজ্ঞাতকারণে সাইপ্রাসের কাজকর্ম কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। পাচার হয়ে যায় নাকি অতিগোপন তথ্য। হাজার পঞ্চাশেক ফোনে আড়িপাতার সন্ধান মেলে তখনই। এনএসও-এর বর্তমান কর্ণধার হুলিও সালেভ বলছেন, পেগাসাস বিক্রিই করা হয়েছে নাকি ৪৫ জনের কাছে। তাই পঞ্চাশ হাজারের গালগল্প হাস্যকর। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ফরেনসিক অনুসন্ধানের পর নিশ্চিত করছে সংখ্যাটা পঞ্চাশ হাজার তো বটেই তার বেশিও হতে পরে। এমন কিছু কুখ্যাত ব্যক্তি বা উগ্রপন্থী সংস্থার কাছেও পেগাসাস বিক্রি করা হয়েছে, যেখান থেকে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কাও যথেষ্ট। সদ্য ৬৭টি ফোনে আড়িপাতার জলজ্যান্ত হদিশ মিলতেই সারা বিশ্বে শোরগোল পড়ে যায়। ৬৭টি ফোনের মধ্যে ৩৭টি ফোনে আড়িপাতার চেষ্টা চালিয়েছিল পেগাসাস। ২৩টি ফোনে আড়িপাতার প্রত্যক্ষ প্রমাণ মিলেছে বাকি ১৪টিতে আড়িপাতার চেষ্টার প্রমাণ মিলেছে। ২৩টি সংক্রমিত ফোনের সবক’টিই আইফোন, বাকি ১৪টির ১১টি আইফোন বাকি ৩টি অ্যান্ড্রয়েড। পেগাসাসের আড়িপাতা থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত সুতরাং অ্যান্ড্রয়েড ফোন। ‘হোম লোকেশন রেজিস্টার’ ব্যবহার করেই পেগাসাস তার যাবতীয় কুকর্ম চালিয়েছে। ফাঁদে পড়ে এনএসও বলছে জামাল খাশোগি বা সেসিলিও বা মতি মানজিব-এর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নাকি তাদের কোনওই যোগ নেই। ধোয়া তুলসীপাতা এনএসও-এর পেগাসাস সফটওয়্যারকে কেউ যদি অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে তাহলে এনএসও কী করবে? তারা কোভিড শনাক্তকরণে যথেষ্ট জনপ্রিয় সফটওয়্যার ‘ফ্লেমিং’ বা পড়শি রাষ্ট্রের দুষ্টু বোমা ফেলা ড্রোন পাকড়াতে ‘ইকলিপ্স’ বাজারে ছেড়েছে। বহু নিরপরাধ মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য তাতে সুরক্ষিত হচ্ছে। 
ফোনের নিরাপত্তা
বিশ্বের সেরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাকি আইফোনেই মেলে, এমনটাই দাবি অ্যাপেলের। কিন্তু পেগাসাস সবথেকে বেশি ভেঙেছে আইফোনের নকল বুঁদির গড়। আইফোনের ‘আই-মেসেজ’ অত্যন্ত জনপ্রিয়, চলে ‘ব্লাস্টডোর’ প্রযুক্তি মারফত। অ্যাপেলের দাবি ‘ব্লাস্টডোর’-এর কড়া পাহারা এড়িয়ে ফোনের সিঁধ কাটা মুশকিল। আইফোনের ‘আইওএস’ প্ল্যাটফর্মের কর্মপদ্ধতি এতটাই গোপন যে বহির্বিশ্ব আইওএস-র সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানে না। ফলে এনএসও-এর পক্ষে চুপিসারে আইওএসের দখলদারি নেওয়া সহজ হয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমে ঢাক ঢাক গুড় গুড় কম থাকায় দিনে ডাকাতিতে এনএসও-এর কিঞ্চিৎ অসুবিধা হয়েছে। অহমিকা বিসর্জন দিয়ে অ্যাপেল আইফোনের নিরাপত্তা নিয়ে সত্বর ভাবনাচিন্তা শুরু করলেই মঙ্গল।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি বলছে, মোবাইল ফোনের নিরাপত্তায় সবার আগে ব্লু টুথ-কে নিষ্ক্রিয় করা প্রয়োজন। সর্বজনীন ওয়াই-ফাই ব্যবহার অনুচিত। অপরিচিত কোনও ‘রিমুভেবল ডিভাইসের’ সঙ্গে নিজের মোবাইলটি জোড়া উচিত নয়। মোবাইলের ‘কেস/কভার’ যেন সবসময় ক্যামেরা আর মাইক্রোফোনকে ঢেকে রাখে। শক্তপোক্ত ৬ ডিজিটের পিন নাম্বার দিয়ে মোবাইল লক করা উচিত। যত কম সম্ভব ‘অ্যাপ্লিকেশন’ ব্যবহার করা উচিত। নির্দিষ্ট অফিসিয়াল সাইট থেকেই কেবল ‘অ্যাপ’ ডাউনলোড করতে হবে। কাজ মিটলেই অ্যাপ বন্ধ করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব সফটওয়্যার আপডেট করতে হবে। বায়োমেট্রিক যেমন আঙুলের ছাপ, মুখের প্রতিচ্ছবি ব্যবহারে বেশি নিরাপত্তা মিলবে। সন্দেহজনক ই-মেল অ্যাটাচমেন্ট কখনওই খোলা উচিত নয়। ফোনের নিজস্ব ‘চার্জিং কেবল’ ব্যবহার বাঞ্ছনীয়। হাসপাতাল, স্টেশনের মতো গণ-পরিসরে চার্জিং বিপজ্জনক। ‘লোকেশন’ সবসময় নিষ্ক্রিয় থাকবে। মাঝেমধ্যেই মোবাইল অন-অফ করতে হবে। ‘জেলব্রেক’ বা ‘রুটিং’ করে কোনও অপরিচিত সফটওয়্যার ডাউনলোড করা অনুচিত। সবশেষে জর্জ অরওয়েলের ‘নাইন্টিন এইট্টিফোরে’র উইনস্টন স্মিথের কথাও মাথায় রাখতে হবে: বিগ ব্রাদারের নজরদারি থেকে মুক্তি বাস্তবিক অসম্ভব।
29th  August, 2021
বাংলার হারিয়ে যাওয়া নদী

মানব সভ্যতা নদীমাতৃক। অথচ, অনেক ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বহু নদী। সভ্যতা বাঁচাতে নদীকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই। তাই ‘বিশ্ব নদী দিবসে’ বাংলার হারিয়ে যাওয়া নদীগুলির সন্ধান করা হল। বিশদ

26th  September, 2021
বাতাসে বিষ কমছে আয়ু
অরিন্দম রায়

ছোটবেলায় স্কুলের বইতে বায়ুদূষণ নিয়ে যা পড়েছিলাম সেই ধারণার একটা পরিবর্তন করা দরকার। আমাদের পাঠ্য বইতে বায়ুদূষণের বেশিরভাগ অংশটাই ছিল সালফার-ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড কেন্দ্রিক। আমরা পড়েছিলাম, এই দুই গ্যাস কলকারখানা এবং গাড়ির ধোঁয়া থেকে বেরিয়ে অ্যাসিড বৃষ্টির সৃষ্টি করে। বিশদ

19th  September, 2021
অপু-দুর্গার খোঁজে
পুলক চট্টোপাধ্যায়

ছেলেবেলায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন স্কুল পালিয়ে লুকিয়ে তাঁর বাবার লেখা ‘পশ্চিমের ডায়েরি’ পড়তেন, তখন থেকেই তাঁর মনের মধ্যে একটা কল্পনার পাখি বাসা বেঁধেছিল। এরপর বিভূতিভূষণ কর্মসূত্রে হাজির হলেন শরৎচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত ভাগলপুরের আদমপুরে উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে। বিশদ

12th  September, 2021
বাঙালির শিক্ষক
সমৃদ্ধ দত্ত

স্কটল্যান্ডের এবর্ডিন থেকে ২৫ বছর বয়সে বহু দূরের একটি শহর কলকাতায় যখন ডেভিড হেয়ার এলেন, তার কিছুকাল আগেই এই প্রদেশটিতে ভয়ঙ্কর এক দুর্ভিক্ষ ঘটে গিয়েছিল। তাঁর বাবা ছিলেন ঘড়ি নির্মাতা। চার পুত্র জোশেফ, আলেকজান্ডার, জন ও ডেভিড কমবেশি ঘড়ি-বিশেষজ্ঞ। বিশদ

05th  September, 2021
অবিস্মরণীয় চিত্রামৃত
শংকর

অনন্তকালের মহামানবদের বাণী প্রচারে অনেক সময় লেগে যায়। কামারপুকুরের গদাধর চট্টোপাধ্যায় তার ব্যতিক্রম নন। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের পাঁচ টাকা মাইনের পূজারী তাঁর অবসর সময়ে ভক্তজনদের কিছু বললেন, একজন স্কুল মাস্টার তা শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনে বাড়ি ফিরে এসে নোটবইতে লিপিবদ্ধ করলেন। বিশদ

22nd  August, 2021
সারদা মায়ের 
স্বদেশি সন্তান
সমৃদ্ধ দত্ত

বরিশালের বানবীপাড়ার যোগেন্দ্রনাথ গুহঠাকুরতা ছিলেন স্বদেশপ্রেমী। সুতরাং নিজের কন্যাটিকেও সেভাবেই তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। অন্য বালিকাদের সঙ্গে বড় হওয়ার সময় শিশুদের গ্রাম্য খেলাধুলোয় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি, বাবার কাছে মেয়েটি দেশভক্তির আকুলতাও শিখেছিল। যা সেই ছোট থেকেই তার মনের মধ্যে গেঁথে যায়। মেয়ের নাম প্রফুল্লমুখী। বিশদ

15th  August, 2021
অস্তকালের রবি
পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়

বারান্দায় বসে সন্ধ্যার সময় সুনন্দা, সুধাকান্ত ও ক্ষিতিমোহনবাবুর স্ত্রীকে মুখে মুখে বানিয়ে একটা দীর্ঘ গল্প শুনিয়ে তারপরে বাদলা বাতাস ঠান্ডা বোধ হওয়াতে ঘরে গিয়ে কেদারাতে বসেছিলুম, শরীরে কোনো প্রকার কষ্ট বোধ করিনি, অন্তত মনে নেই; কখন মূর্চ্ছা এসে আক্রমণ করল কিছুই জানি নে। 
  বিশদ

08th  August, 2021
ঘড়ির দর্পণে কলকাতা

‘বৈঠকখানায় মেকাবি ক্লাকে টাং টাং টাং করে পাঁচটা বাজলো, সূর্যের উত্তাপের হ্রাস হয়ে আসতে লাগলো। সহরের বাবুরা ফেটিং, সেলফ ড্রাইভিং বগী ও ব্রাউহ্যামে করে অবস্থাগত ফ্রেণ্ড, ভদ্রলোক বা মোসাহেব সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে বেরুলেন; কেউ বাগানে চল্লেন।’— মহাত্মা হুতোম লিখেছেন। 
বিশদ

01st  August, 2021
লোককথায় গাঁথা মহাকাব্য

‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ কেবল বাঁশবাদির কাহারদের জীবন আখ্যান নয়, এ এক মহাসময়ের সম্পাদ্য। আখ্যানের প্রতিটা বাঁকে মহাকাব্যিক চলন। মানুষের ক্রমে সভ্যতার পথে পা বাড়ানোর ইতিহাসে আগুন আবিষ্কারের আগে থেকেই তার দৃষ্টিশক্তি অন্ধকারেও প্রখর ছিল।
বিশদ

25th  July, 2021
অচেনা তারাশঙ্কর

আমার জীবনে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রভাব এমনই যে, তাঁর স্নেহধন্য হয়ে আজও নিজেকে আমি অতি সৌভাগ্যবান বলে মনে করি। আমার তখন কতই বা বয়স, হাওড়া শ্রীরামকৃষ্ণ শিক্ষালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি।
বিশদ

25th  July, 2021
অশান্ত স্মৃতি
সোভিয়েত পতনের ৩০ বছর

দড়ি ধরে মারো টান, লেনিন হবে খানখান! এগারো ফুট উঁচু লাল গ্রানাইটের মূর্তিটা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তেই উল্লাসে ফেটে পড়েছিল জনতা। কেউ আনন্দে হাততালি দিয়েছেন, তো কেউ আবার প্রাণখুলে গেয়েছেন জাতীয় সঙ্গীত।
বিশদ

18th  July, 2021
কথা ও কাহিনিতে
বাংলার রথ
তরুণ চক্রবর্তী

এপার ওপার দু’দিকেই ঘন জঙ্গল আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েকটি জনপদের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গা। সেই গঙ্গার নির্জন তীরে পাতায় ছাওয়া এক কুটিরে থাকতেন যে সন্ন্যাসী, হঠাৎই একদিন কোথায় যে উধাও হয়ে গেলেন!কবে কোথা থেকে এসে সেখানে তিনি ডেরা বেঁধেছিলেন, কী তাঁর নাম, তাও তো কেউ জানে না। বিশদ

11th  July, 2021
অচেনা সীমান্তে
অজানা গল্প

সীমান্ত....! দু’দেশের মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। আর তার দু’দিকে বাস হাজার হাজার মানুষের। যেখানে কাঁটাতার নেই, সীমান্তের ‘উঠোন’ যেখানে উন্মুক্ত, সেখানে বাস করা যে কী কঠিন, কী যন্ত্রণাদায়ক, তা বোধহয় আমার-আপনার মতো বহু মানুষই জানেন না। বিশদ

04th  July, 2021
আদুর বাদুড়
চালতা বাদুড়

মাম্পস-র‌্যাবিস-নিফা-ইবোলা-হেন্ড্রা-সার্স-মার্স-কোভিড প্রভৃতি মারণ ভাইরাসের সূতিকাগার বাদুড়ের শরীর। অথচ বাদুড়ের টিকিটিও কস্মিনকালে তারা স্পর্শ করতে পারেনি। বাদুড় থেকে মানুষে সরাসরি সংক্রমণের নেই কোনও প্রাক-ইতিহাস। মধ্যবর্তী পোষক উট-ঘোড়া-শিম্পাঞ্জি-শুয়োর-পিপীলিকাভুক থেকেই সংক্রমিত হয়েছে মানুষ। নির্বিচারে অরণ্যনিধন, জীববৈচিত্র্যের সমূল বিনাশই প্রতিটা মহামারীর নেপথ্যের এক এবং অদ্বিতীয় কারণ। মানুষের কি সম্বিত ফিরবে না? সেই অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি মৃন্ময় চন্দ।   বিশদ

27th  June, 2021
একনজরে
লেসলি ক্লিভলিকে গোলরক্ষক কোচ নিযুক্ত করল এসসি ইস্ট বেঙ্গল। তিনি এর আগে চেলসিতে কাজ করেছেন। ক্লিভলির উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্স রয়েছে। ...

ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে মৃত্যু হল তিন জনের। ঘটনাটি ঘটেছে আমেরিকার মন্টানায়। শিকাগো থেকে সিয়াটেলের মধ্যে রেল পরিষেবা প্রদানকারী আমট্রাক কর্পোরেশনের ট্রেনটিতে মোট ১৪১ জন যাত্রী ও ১৬ জন ক্রু ছিলেন। ...

ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি করতে এসে পুলিসের জালে ধরা পড়ল তিন পাচারকারী। ক্রেতা সেজে রবিবার ভোরে বালুরঘাটের অমৃতখণ্ডের কামারপাড়া থেকে ৮০০০ ইয়াবা সহ তিন জনকে পুলিস ...

‘কাকা আভি জিন্দা হ্যায়…।’ ‘কাকা’ নামেই ছত্তিশগড়ে খ্যাত ভূপেশ বাঘেল। মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষনেতাকে এই নামেই ডাকতে অভ্যস্ত দলের কর্মী-সমর্থকরা। ...




আজকের দিনটি কিংবদন্তি গৌতম ( মিত্র )
৯১৬৩৪৯২৬২৫ / ৯৮৩০৭৬৩৮৭৩

ভাগ্য+চেষ্টা= ফল
  • aries
  • taurus
  • gemini
  • cancer
  • leo
  • virgo
  • libra
  • scorpio
  • sagittorius
  • capricorn
  • aquarius
  • pisces
aries

সন্তানের সাফল্যে গর্ব বোধ। আর্থিক অগ্রগতি হবে। কর্মে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ঘাড়, মাথায় যন্ত্রণা বৃদ্ধিতে বিব্রত ... বিশদ


ইতিহাসে আজকের দিন

বিশ্ব পর্যটন দিবস
১৯৫৮ - ভারতীয় হিসাবে প্রথম মিহির সেন ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন।
১৯০৭ - বিপ্লবী শহিদ ভগৎ সিংয়ের জন্ম
১৮৩৩: বিশ্বপথিক রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যু
১৯৩২: ভারতীয় চিত্রপরিচালক যশ চোপড়ার জন্ম
২০০৮: প্রখ্যাত ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী মহেন্দ্র কাপুরের মৃত্যু



ক্রয়মূল্য বিক্রয়মূল্য
ডলার    
পাউন্ড    
ইউরো    
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
পাকা সোনা (১০ গ্রাম)  
গহনা সোনা (১০ (গ্রাম)  
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট ১০ গ্রাম)  
রূপার বাট (প্রতি কেজি)  
রূপা খুচরো (প্রতি কেজি)  
[ মূল্যযুক্ত ৩% জি. এস. টি আলাদা ]

দিন পঞ্জিকা

 ১০ আশ্বিন ১৪২৮, সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১। ষষ্ঠী ২৫/৩৩ দিবা ৩/৪৪। রোহিণী নক্ষত্র ৩০/২৮ সন্ধ্যা ৫/৪২। সূর্যোদয় ৫/৩০/২১, সূর্যাস্ত ৫/২৫/১১। অমৃতযোগ দিবা ৭/৫ মধ্যে পুনঃ ৮/৪০ গতে ১১/৪ মধ্যে। রাত্রি ৭/৪৯ গতে ১১/৪ মধ্যে পুনঃ ২/১৭ গতে ৩/৬ মধ্যে। বারবেলা ৭/০ গতে ৮/২৯ মধ্যে পুনঃ ২/২৭ গতে ৩/৫৬ মধ্যে। কালরাত্রি ৯/৫৭ গতে ১১/২৭ মধ্যে। 
১০ আশ্বিন ১৪২৮, সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১। ষষ্ঠী দিবা ১/৮। রোহিণী নক্ষত্র অপরাহ্ন ৪/২৭। সূর্যোদয় ৫/৩০, সূর্যাস্ত ৫/২৭। অমৃতযোগ দিবা ৭/২৯ মধ্যে ও ৮/৪১ গতে ১০/৫৯ মধ্যে এবং রাত্রি ৭/৩৭ গতে ১০/৫৭ মধ্যে ও ২/১৭ গতে ৩/৭ মধ্যে। কালবেলা ৭/০ গতে ৮/২৯ মধ্যে ও ২/২৮ গতে ৩/৫৮ মধ্যে। কালরাত্রি ৯/৫৮ গতে ১১/২৯ মধ্যে।
 ১৯ শফর।

ছবি সংবাদ

এই মুহূর্তে
আইপিএল ২০২১ : রাজস্থানের বিরুদ্ধে ৭ উইকেটে জয় সানরাইজার্স হায়দরাবাদের

11:06:59 PM

আইপিএল ২০২১ : হায়দরাবাদ : ৯১/১ (১০ ওভার)

10:14:16 PM

আইপিএল ২০২১ : সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৬৫ রান

09:38:30 PM

আইপিএল ২০২১ : রাজস্থান ৮১/৩ (১১ ওভার)

08:27:31 PM

গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে অনেকটাই কমল দৈনিক করোনা সংক্রমণ
গতকালের তুলনায় রাজ্যে অনেকটাই কমল করোনার দৈনিক সংক্রমণ। গত ২৪ ...বিশদ

08:25:56 PM

কয়লাপাচার কাণ্ডে গ্রেপ্তার লালা ঘনিষ্ঠ ৪ অভিযুক্ত
আজ, সোমবার কয়লাপাচার কাণ্ডে লালা ওরফে অনুপ মাজি ঘনিষ্ঠ ৪ ...বিশদ

05:31:00 PM