Bartaman Patrika
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
 

দেশবন্ধু ১৫০
রজত চক্রবর্তী

১৮৯৭। কলকাতা সরগরম। বিশেষ করে শিক্ষিত সমাজে কিছুদিন ধরেই আলোচনা তুঙ্গে। চারিদিকে ছি ছি পড়ে গিয়েছে! ব্রাহ্ম সমাজের মাথারা আলোচনায় বসেছেন। কারণ, বরদানাথ হালদার ও ভুবনমোহন দাশ সমাজের অগ্রগণ্য দুই মানুষ জড়িয়ে গিয়েছেন এই ঘটনায়। বরদানাথ হালদার বিক্রমপুরের নওগাঁ গ্রামের বাসিন্দা আর ভুবনমোহন দাশ কলকাতার। বরদানাথ হালদারের আর্থিক অবস্থা ভালো হলেও ঋণগ্রস্ত ভুবনমোহন দাশের অর্থনৈতিক অবস্থা জর্জরিত। এই দুই ব্রাহ্মের একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই কলকাতার বাঙালি শিক্ষিত মানুষজন উত্তেজিত। 
‘বরদানাথ কি পাগল?’
‘যাদের ঘরে খাবার সংস্থান নেই, সেই ঘরে কেউ মেয়ের বিয়ে দেয়!’
‘ঈশ্বর-বিদ্রোহী, নাস্তিক একজনের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে! ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যা...’
পরনিন্দা-পরচর্চা আগুনের আগে পৌঁছে যায় পাঁচ কানে। বাসন্তী দেবী মায়ের কাছে বসে চোখের জল সামলাতে পারে না। বাবা জেদ করে কার সঙ্গে বিয়ে দিচ্ছে! নাস্তিক-মাতালের হাতে তুলে দিচ্ছে! বরদানাথ বুঝতে পারলেন মেয়ে ও মেয়ের মায়ের মন— ‘বাসন্তী, তোকে যার হাতে দিচ্ছি, একদিন দেখবি ভারতের এক প্রান্ত থেকে আর-এক প্রান্ত পর্যন্ত তার নাম ধ্বনিত হবে, হয়তো আমি তখন থাকব না, কিন্তু তুই এটা নিশ্চয়ই দেখবি।’
সত্যি দেখেছিলেন বাসন্তী দেবী, জীবনময় একজন দেশের বন্ধুকে নিজের পাশটিতে পেয়ে। দেশবন্ধু। চিত্তরঞ্জন দাশ।
১৮৯৭ সালের ৩ ডিসেম্বর ব্রাহ্ম ধর্মের আচার মেনেই বিয়ে হয়েছিল চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে বাসন্তী দেবীর। উদারপন্থী শিক্ষিত ব্রাহ্ম সমাজকেও কিন্তু নিয়মতান্ত্রিকতার জাঁতাকলে পড়ে অযৌক্তিক গোঁড়ামির পথে হাঁটতে হয়েছিল। চিত্তরঞ্জন জীবন দিয়ে বুঝলেন সংস্কারমুক্ত মনের প্রসার ও প্রচার দরকার। উদারমন ও স্বাধীন সমাজ গঠনের জন্য জীবন গড়ার ব্রত নিলেন দারিদ্র্যের সঙ্গে ধুলোমাখা পথে হাঁটতে হাঁটতেই । 
প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেছিলেন ১৮৯০-এ। সেই বছরেই লন্ডন যান উচ্চশিক্ষার জন্য। ১৮৯৪ সালে ব্যারিস্টার হয়ে ফিরে আসেন। ফিরে দেখলেন ঋণভারে জর্জরিত বাবাকে। লোকের উপকার করতে গিয়ে ঋণভার। সংসারের অসচ্ছলতার বোঝা তুলে নিলেন কাঁধে। শুরু করলেন আইনজীবীর কাজ। সেই সময়ে সাময়িক সিটি কলেজের ল-লেকচারার হিসাবে যোগ দিলেন। সামান্য পারিশ্রমিকের জন্য তখন দেখা গিয়েছে চিত্তরঞ্জন দাশকে মফস্‌স঩লের কোর্টে সওয়াল করতে। হাইকোর্টেও তখন প্রবল সব প্রতিপক্ষ। জায়গা করে উঠতে পারছিলেন না।
১৮৭০ সালের ৫ নভেম্বর জন্মেছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ কলকাতার পটলডাঙা স্ট্রিটে। নিঃশব্দে পেরিয়ে গেল দেশবন্ধুর জন্ম সার্ধশতবর্ষ। মাত্র ২৩-২৪ বছর বয়সে তরুণ চিত্তরঞ্জন কাঁধে তুলে নিয়েছেন সংসারের ভার। পসার তেমন না জমলেও সাহিত্য সৃষ্টি জমেছে মনের কোণে। কবিতা লিখছেন। যাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথের জোড়াসাঁকোর ‘খামখেয়ালি’ ক্লাবে। ক্লাবের সভ্য ছিলেন। লিখছেন কবিতা। প্রকাশ হচ্ছে ‘সাহিত্য’, ‘নির্মাল্য’, ‘মানসী’ প্রভৃতি পত্রিকায়। ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘মালঞ্চ’। এই কাব্যগ্রন্থে চিত্তরঞ্জন লিখেছেন ‘ঈশ্বর’ ও ‘বারোবিলাসিনী’ নামে দু’টি ব্যতিক্রমী কবিতা। যে কবিতা দু’টি নিয়েই যত বিতর্ক। জুটেছিল ‘ঈশ্বর বিদ্রোহী’, ‘নাস্তিক’ ও ‘মাতাল’ বিশেষণ । 
***********
‘কুমড়োর ছেঁচকি আরেকটু দিন দেখি বউঠান!’
বাসন্তী দেবী নিজের হাতে খেতে দিচ্ছেন স্বামী চিত্তরঞ্জন দাশ আর ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়কে। ঘোমটা-টা টেনে এক হাতা কুমড়োর ছেঁচকি ব্রহ্মবান্ধবের কাঁসার থালায় দিলেন।
‘এমন চমৎকার রান্না আমি আর খাইনি, আমি ফিরে এসে আবার আপনার হাতের কুমড়োর ছেঁচকি খাব!’ বলেই হেসে উঠলেন মুণ্ডিত মস্তক গেরুয়া পোশাক পরা এক সাধক স্বদেশি পণ্ডিত। ঘোমটার আড়ালে বাসন্তী দেবীর নাকের নোলক লজ্জায় ঝলক দিয়ে উঠল, ‘তা বটেই, দেশমাতা আপনাদের রক্ষা করবে!’
ফিরে আসেননি ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়। সেদিনই গ্রেপ্তার হন কোর্টের সওয়াল জবাবের পরেই। লড়েছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ। গ্রেপ্তারের সময় ব্রহ্মবান্ধব বলেছিলেন চিত্তরঞ্জনকে, ‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, ইংরেজের সাধ্য নেই আমাকে জেলে পাঠায়।’ ব্রহ্মবান্ধবকে অসুস্থতার কারণে ক্যাম্পবেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অপারেশন করতে হয়। ধনুষ্টঙ্কার হয়ে মারা যান হাসপাতালেই। 
বলতে গেলে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন চিত্তরঞ্জন। তখনও ওকালতির পসার জমেনি। কারণ, ১৯০৬ সালে দেখা যাচ্ছে চিত্তরঞ্জনকে দেউলিয়া ঘোষণা করে আদালত। অসম্মান নীরবে সহ্য করে একদিকে লড়াই চালাচ্ছেন দারিদ্র্যের সঙ্গে অপরদিকে লড়াই চালাচ্ছেন দেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে। দেশকে স্বাধীন করার লড়াই। তখন বাংলা উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে। রবীন্দ্রনাথ এগিয়ে এসেছেন তাঁর গান ও রাখীবন্ধন উৎসব নিয়ে। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিচ্ছেন। সেইসব সভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন চিত্তরঞ্জন। দেখা যাচ্ছে বাসন্তী দেবীকেও। ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার টাউন হলে ডাকা হল সেই ঐতিহাসিক সভা যেখানে লোকমান্য তিলক, লালা লাজপত রায়, মদনমোহন মালব্য, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ ঘোষের সঙ্গে দেখা গেল চিত্তরঞ্জন দাশকে। এই সভা থেকে ডাক দেওয়া হল স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনের। ‘বন্দেমাতরম’ মন্ত্র উচ্চারণে ঝাঁপিয়ে পড়ল বাংলা। সেই সময়ে চিত্তরঞ্জন তাঁর ছেলে চিররঞ্জনকে ভর্তি করেছিলেন ‘জাতীয় শিক্ষামন্দির’ স্কুলে, যেখানে অধ্যক্ষ হয়ে এলেন অরবিন্দ ঘোষ সুরাটের মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে। রসা রোডের বাড়িতে তখন বিপিন পাল, সুরেন বাঁড়ুজ্যেদের ঘন ঘন যাতায়াত প্রমাণ করে চিত্তরঞ্জন জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। 
অরবিন্দ ঘোষের নেতৃত্বে এই সময়ে গড়ে উঠছে সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপরেখা। প্রমথনাথ মিত্র,অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখের সঙ্গে ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ ‘অনুশীলন সমিতি’ গঠনে। প্রথম ঘটনা কিংসফোর্ড সাহেবের উপর মুজফ্‌ফরপুরে বোমা মারা ৩০ এপ্রিল, ১৯০৮। ছিলেন দুই বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী। প্রফুল্ল চাকী আত্মহত্যা করেন এবং ক্ষুদিরাম বসু গ্রেপ্তার হন। সেই সময়েই তৈরি হচ্ছে অস্ত্র ও বোমা গোপন কেন্দ্রে— কলকাতারই ৩২ নম্বর মুরারি পুকুর লেনে।
************
‘আজ আত্মাচক্র বৈঠকে অরবিন্দের মোকদ্দমার কথা জিজ্ঞাসা করব,’ চিত্তরঞ্জন কথাটা বলেই তাকালেন বাসন্তী দেবী মুখের দিকে। বাসন্তী দেবী লক্ষ করেছেন ইদানীং তিনি পরলোকতত্ত্ব নিয়ে চর্চা শুরু করেছেন বেশ। বই আনিয়ে পড়ছেন। আলোচনা করছেন। বাসন্তী দেবী মৃদু আপত্তি করেছিলেন শরীর-স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই। কিন্তু নাটোরের মহারাজা জগদীন্দ্রনাথের দিকে তাকাতেই তিনি সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লেন। অর্থাৎ তিনিও বসতে চান আজকের আত্মাচক্র বৈঠকে।
গভীর রাত। একটা প্রদীপ জ্বলছে ঘরে। অমাবস্যার অন্ধকার। ব্রহ্মবান্ধবের আত্মাকে ডাকা হয়েছে। হঠাৎ পেন্সিল নড়ে উঠল। কিছু একটা লেখা হচ্ছে! খসখসখস। লেখা হল— ‘You must defend Aurobinda’। পেন্সিল উত্তেজিত। উত্তেজিত চিত্তরঞ্জনও। তখনও পর্যন্ত আলিপুর বোমার মামলার কেস তার কাছে আসেনি। ব্যারিস্টার ব্যোমকেশ চক্রবর্তী লড়ছেন অরবিন্দের পক্ষে। তার ভিজিট দিতে দিতে ফতুর বিপ্লবীদের তহবিল। এর কিছুদিন পরেই ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকার তরফ থেকে কৃষ্ণকুমার মিত্র এবং শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী এলেন চিত্তরঞ্জনের কাছে মামলার দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে ।
একদিন সকালে উল্লাসকর দত্তের মা এলেন চিত্তরঞ্জনের কাছে সেই শিবপুর থেকে।
‘আমি শুধু আমার ছেলের জন্য বলতে আসিনি, সব ছেলেদের বাঁচাবার ভার তুমি নাও, বাবা।’
চিত্তরঞ্জন প্রণাম করলেন, ‘ক’জন মা বলতে পারে আমি শুধু আমার ছেলের জন্য আসিনি? এই মায়েরাই দেশকে ধন্য করে রেখেছে।’ খুবই কম পারিশ্রমিকে চিত্তরঞ্জন মামলা শুরু করলেন। সারাদিন সারারাত আইনের বইয়ে ডুবে থাকলেন চিত্তরঞ্জন। প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার পক্ষের ব্যারিস্টার আর্ডলি নর্টন। বিচারপতি ছিলেন বিচক্রফট। যিনি বিলেতে অরবিন্দের সহপাঠী ছিলেন। এজলাসে বিচারপতি বসেছেন। এজলাস শুরু হল। বাদী পক্ষের উকিল চিত্তরঞ্জন উঠলেন। পেতে আঁচড়ানো চুল। সরু গোল্ডেন ফ্রেমের চশমার আড়ালে শান্ত ও স্থির দৃষ্টি। নলিনীকান্ত গুপ্ত তাঁর স্মৃতিচারণে লিখছেন— ‘... চিত্তরঞ্জনের কণ্ঠ ধীরে ধীরে উঠে চলল গমকে গমকে ... শুনলাম চিত্তরঞ্জন দেবাদিষ্ট হয়ে যেন বলে চলেছেন, He stands not only before the bar of this Court, but stands before the bar of the High Court of History...Long after he ( Aurobindo) is dead and gone, his words will be echoed and re-echoed not only in India, but across seas and lands...’
কলাপাতা কেটে আনছে ভোম্বল ( চিররঞ্জন) আর চাকররা। বাড়ির মেয়েরা এবং আশপাশের বাড়ির মেয়েরা আজ ভোর থেকেই চিত্তরঞ্জন দাশের অন্দরমহলে হেঁশেল সামলাচ্ছে। সবাই ব্যস্ত। বেলা বয়ে যাচ্ছে। কলাপাতা আর গেলাস ধুয়ে বারান্দার এক কোণে ডাঁই। এলাকার মেয়েরা নতুন কাপড় পরে হাতে শাঁখ ও ফুল নিয়ে রসা রোডের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ শোনা গেল ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি। মেয়েরা শাঁখ বাজাতে শুরু করল। বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামলেন অরবিন্দ আর চিত্তরঞ্জন। অন্য গাড়িতে এলেন মুক্তি পাওয়া বন্দিরা। মুক্ত কণ্ঠে স্বদেশি গান গাইছেন তাঁরা। মুক্তি পাওয়া বন্দিরা বাড়ির পুকুরে স্নান করে, নতুন ধুতি-জামা পরে বারান্দায় লাইন দিয়ে বসেছেন দুপুরের খাবার খেতে। ওঁদের সঙ্গে অরবিন্দ ও চিত্তরঞ্জন পাশাপাশি বসেছেন। সবার মুখে হাসি।
পসার ও যশের বৃদ্ধি লাভ শুরু হয়েছে চিত্তরঞ্জনের এই আলিপুর মামলার পর থেকেই। ব্যারিস্টার মহলে নাম হয়ে গেল, ‘Maker of Criminal Law’ হিসেবে। শুধু ফৌজদারি নয় দেওয়ানি মামলাতেও তিনি ছিলেন দক্ষ।
দ্রুত কতগুলি ঘটনা ঘটতে থাকে চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনে- ১৯১৩ ও ১৯১৪ সালে। প্রথমে মা ও পরে বাবা মারা যান। ১৯১৩ সালের ১৪ মে বাবার সমস্ত ঋণ পরিশোধ করে চিত্তরঞ্জন ‘দেউলিয়া’ নাম থেকে মুক্ত হলেন। ১৯১৪ সালে তিনি ‘নারায়ণ’ পত্রিকা প্রকাশ করলেন। ততদিনে চিত্তরঞ্জনের পাঁচটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর মতে, ‘এই সমগ্র জীবনের অনুভূতিই সাহিত্য এবং তার জীবন্ত জ্বলন্ত প্রকাশই শ্রেষ্ঠ শিল্পকলা, সেই অনুভূতিই সাহিত্যের রস।’
চিত্তরঞ্জন দাশের সাহিত্য প্রতিভা নিয়ে খুব একটা আলোচনা আমরা দেখি না। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা ‘নারায়ণ’-এর প্রায় প্রতিটি সংখ্যায় তখন ছাপা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সৃষ্টির কঠোর সমালোচনা। এদিকে রসা রোডের দাশ বাড়ির সঙ্গে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির সম্পর্ক খুবই ভালো, পারিবারিক বলা যায়। দার্শনিক ও সমাজকর্মী তথা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে একটা বিরোধাভাষ সবসময়েই ছিল। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন দার্শনিক। তাঁর বিশ্ব মানবতার সুর ছিল অন্য তারে বাঁধা। তাই তিনি চিত্তরঞ্জন দাশের মেয়ের (অপর্ণা) বিয়েতে অসংকোচে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে চলে আসেন। যদিও ব্রাহ্ম সমাজের সবাই এই বিয়ে সমর্থন করেননি এবং বিয়েতে অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি রবীন্দ্রনাথ। তিনি উপস্থিত থেকে বাংলায় প্রথম অসবর্ণ বিয়েকে সমর্থন করে গেলেন আশীর্বাদ করে। পারিবারিকভাবে ব্রাহ্ম চিত্তরঞ্জন মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন হিন্দু মতে। চিত্তরঞ্জনের চিত্তের দৃঢ়তাও যেমন লক্ষ্যণীয়, তেমনই উল্লেখ্য রবীন্দ্রনাথের আধুনিক উদার মানসিকতা।
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর রবীন্দ্রনাথ যেমন গান্ধীজির কাছে পাঞ্জাবে প্রতিবাদ হিসাবে যাওয়ার অনুরোধ নিয়ে পাঠিয়েছিলেন অ্যান্ড্রুজকে। গান্ধীজি প্রত্যাখান করেন সেই অনুরোধ। কারণ, তিনি রাজনৈতিক নেতা। তাঁকে ভেবে নিতে হয় দূরগত বাস্তবতা। তেমনই তিনি গিয়েছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশের কাছে। একজন মানবতাবাদী গিয়েছিলেন একজন পুরোদস্তুর রাজনৈতিক নেতার কাছে, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ সভা ডাকার অনুরোধ নিয়ে। তখন চিত্তরঞ্জন বলেছিলেন, ‘আপনি সভাটা ডাকুন।’ অনেকেই এখানে বিরোধাভাষ খুঁজে পান, খুঁজে পান বিদ্বেষ। কিন্তু গভীরভাবে দেখলে পরিষ্কার হয়— রাজনীতির মানুষের কাছে মঞ্চ, সভা, কে ডাকছেন, কেন ডাকছেন, কী তার আসু ও দূরবর্তী ফল এই সমস্তটার চুলচেরা বিশ্লেষণ জরুরি। কিন্তু একজন কবির পক্ষে, একজন দার্শনিকের পক্ষে, মানবিক অভিঘাত বড় হয়ে দেখা দেয়। তাই গান্ধীজি ও চিত্তরঞ্জন যা অস্বীকার করেন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রবীন্দ্রনাথ মানবিকতার দিক থেকে সেটাকেই গ্রহণ করেন ও প্রতিবাদ করেন তীব্র— ফিরিয়ে দেন নাইটহুড উপাধি। কিন্তু প্রত্যেকের পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকে অটুট। শ্রদ্ধাশীল মতপার্থক্য সমষ্টিকে গতিশীল করে। সমাজ-ভাবনায় তোলে ঢেউ।
********** 
৭ জানুয়ারি, ১৯২৫। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রবল ‘কলিক’ যন্ত্রণায় কষ্ট পেয়েছেন। সঙ্গে জ্বর। বেশ কয়েকটা মরফিয়া ইঞ্জেকশন নিতে হয়েছে। রাতের পর রাত নির্ঘুম কেটেছে তাঁর। চোখের কোণে ক্লান্তি ও যন্ত্রণা জমে আঁধার হয়ে আছে। বাসন্তী দেবী স্বামীর পাশে বসে। চিত্তরঞ্জন তাকালেন, ‘আজ আমাকে যেতেই হবে।’
বাসন্তী দেবী স্থির তাকিয়ে থাকেন। তিনি জানেন তাঁর স্বামীর কাছে কর্তব্য আগে। 
চিত্তরঞ্জন মাথাটা তোলার চেষ্টা করলেন, ‘আমার শরীরের আগে আমার কর্তব্য...যদি আমি মরেও যাই তবুও কারও কথা শুনব না...।’
বাসন্তী দেবী জানেন। তিনি যাবেন। তিনি এটাও জানেন কারারুদ্ধ সুভাষচন্দ্র ছাড়াও অন্য বন্দিমুক্তির জন্য তাঁর কাউন্সিল হাউসে যাওয়া জরুরি। যে অর্ডিন্যান্স বলে ব্রিটিশ সরকার সুভাষ সহ অন্যান্যদের গ্রেপ্তার করে রেখেছে তার মেয়াদকাল ছিল ১৯২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। সরকার তাই অর্ডিন্যান্সটিকে আইন হিসাবে পাশ করার জন্যই কাউন্সিল হাউস ডেকেছে। 
‘আজ আমার সোনার ছেলেরা বিনা বিচারে কারারুদ্ধ, নির্বাসিত আর ওদের আইন করিয়ে নেবার সুযোগ দেব! কিছুতেই না, প্রাণ থাকতে নয়...’ অসুস্থ অবস্থায় স্ট্রেচারে করে তিনি গেলেন। কাউন্সিল হাউসে তাঁর শোবার ব্যবস্থা হয়েছিল। টাউনহলের বাইরে হাজার হাজার মানুষের ভিড় । কাউন্সিল হাউসে দৃপ্ত বক্তৃতা দেন চিত্তরঞ্জন। ভোট হয়। অর্ডিন্যান্স-এর বিরুদ্ধে ভোট ৬৬ আর পক্ষে ৫৭। রদ হয় আইন। সুভাষ সহ সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিমুক্তির পথ সুগম হয়। স্ট্রেচারে শুয়েই বেরিয়ে আসেন টাউনহল থেকে।
১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর চিত্তরঞ্জন দাশ গ্রেপ্তার হন। ওই একই দিনে সুভাষচন্দ্র বসু, বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, মৌলনা আবুল কালাম আজাদ সহ অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার আগে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ছেলে চিররঞ্জন (ভোম্বল) আর স্ত্রী বাসন্তী দেবী। বাসন্তী দেবীকে সেদিনই মুক্তি দিলেও চিররঞ্জনের উপর চলেছিল অত্যাচার। এদিকে সেই বছরই অর্থাৎ ১৯২১ সালের ২৩-২৪ ডিসেম্বর আমেদাবাদ কংগ্রেসে চিত্তরঞ্জন দাশ সভাপতি নির্বাচিত হলেন। যদিও তিনি তখন কারাগারে। সরোজিনী নাইডু পাঠ করলেন তাঁর লিখিত বক্তৃতা। ১৯২২ সালে চট্টগ্রাম প্রাদেশিক সম্মেলনে সভানেত্রী হলেন বাসন্তী দেবী কারণ তখনও চিত্তরঞ্জন দাশ কারাগারে। শরীর তাঁর ভেঙে পড়ছে। সুভাষ খুব যত্ন করছেন। মজা করে স্ত্রীকে বলছিলেন, ‘সুভাষ খুব ভালো নার্স!’ ১৯২২ সালের ৯ আগস্ট রাতে চিত্তরঞ্জন বেরিয়ে এলেন জেল থেকে। কারামুক্তি। অত রাতেও রসা রোডের বাড়ির সামনে মানুষের স্রোত। সেইদিন থেকে তিনি মানুষের কাছে হলেন ‘দেশবন্ধু’।
মতিলাল নেহরুকে সঙ্গে নিয়ে নতুন দল গড়লেন ‘স্বরাজ দল’। শুরু করলেন সমগ্র ভারতবর্ষে সংগঠন গড়ে তোলা এবং কাউন্সিল হাউসের নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া ও জেতানোর লড়াই। কাউন্সিল হাউসে ব্রিটিশ সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে তীক্ষ্ম সমালোচনা করছেন। বাধা দিচ্ছেন।  তারপর তৈরি হয়েছিল ‘গান্ধী-দাশ প্যাক্ট’। ভারতবর্ষের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠছে ‘স্বরাজ দল’। 
সংগঠক চিত্তরঞ্জনের নেতৃত্বে ‘স্বরাজ দল’ তখন বাংলার কাউন্সিল হাউসের অধিকাংশ পদে নির্বাচিত হয়েছিল। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, ১৯২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর গভর্নর লর্ড লিটন চিত্তরঞ্জন দাশকে মন্ত্রিসভা গঠন ও পরিচালনা করার দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করেন। চিত্তরঞ্জন অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ, তিনি চান পূর্ণস্বরাজ। ১৯২৪ সালেই চিত্তরঞ্জন খসড়া তৈরি করলেন- দ্য বেঙ্গল হিন্দু-মুসলিম প্যাক্ট। উদার জাতীয়তাবাদের নিদর্শন ছিল এই প্যাক্ট। যদিও এই প্যাক্ট কার্যকর করা যায়নি। সেই বছরেই কলকাতা কর্পোরেশন এর নির্বাচনে ‘স্বরাজ দল’ সমস্ত ওয়ার্ডে প্রার্থী দিল। প্রায় প্রত্যেক ওয়ার্ডে ‘স্বরাজ দল’ জয়যুক্ত হল। চিত্তরঞ্জন দাশ হলেন কলকাতা কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র। সুরাবর্দি হলেন ডেপুটি মেয়র। আর নিজের প্রিয় শিষ্য সুভাষ বসুকে এগজিকিউটিভ অফিসার করে কলকাতা কর্পোরেশনে নিয়ে এলেন। ভারতবর্ষের প্রান্তে প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন সংগঠক চিত্তরঞ্জন । কর্পোরেশনের মেয়র পদের কাজ। স্বরাজ দলের নেতৃত্ব। ভোটের প্রচার। শরীর ভাঙছিল। ১৯২৫ সালের ফরিদপুর প্রাদেশিক সম্মেলন ২ মে তাঁর শেষ সভা। ৭ জানুয়ারি অসুস্থ অবস্থায় কাউন্সিল হাউসে সেই ঐতিহাসিক বক্তৃতা ও অর্ডিন্যান্স এর বিরুদ্ধে ভোটপর্ব। তারপর তিনি স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য চলে যান পাটনা। যাওয়ার আগে রসা রোডের ওই বাড়িটি নারী কল্যাণ কাজে ব্যবহার করার জন্য ট্রাস্ট ডিড করে যান দানবীর দেশবন্ধু। 
*********
১৯২৫ সাল। ১৮ জুন ভোরের কলকাতা মেঘলা। ভেজা ভেজা রাস্তা-ঘাট। আগের দিন বৃষ্টি হয়েছে। একটা মোটরগাড়িতে মহাত্মা গান্ধী, অপর্ণা দেবী, তাঁর স্বামী পেরিয়ে গেলেন কলকাতার সীমানা। যাবেন ব্যারাকপুর। মহাত্মা গান্ধীর মুখ থমথমে। স্থির তিনি। অচঞ্চল। ব্যারাকপুর স্টেশনে যেন জনসমুদ্র। এখান থেকেই গান্ধীজি উঠবেন দার্জিলিং মেলে। ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি উঠছে মুহুর্মুহু। ট্রেনটি ঢুকছে। ভলান্টিয়াররা গান্ধী ও তাঁর সঙ্গে আসা অপর্ণা দেবী এবং তাঁর স্বামীকে ঘিরে আছে। প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের কম্পার্টমেন্ট বেশ উঁচু। ছাত্ররা বসে পিঠ পেতে দিচ্ছে। তাদের পিঠে পা দিয়ে উঠতে বলছে। গান্ধীজি রাজি হলেন না। যাই হোক ধীরে ধীরে কামরায় উঠলেন। এক ঝলক তাকিয়ে থাকলেন চিত্তরঞ্জনের দিকে। ফুলে ফুলে ঢেকে গিয়েছে চিত্তরঞ্জনের দেহ। স্থির। গভীর ঘুমে। 
দার্জিলিং থেকে কলকাতায় আনা হচ্ছে। পথের প্রতিটি স্টেশনেই ট্রেন দাঁড়িয়েছে শুধু মানুষের ভিড়ের কারণেই। সবাই প্রিয় নেতাকে জানাতে চান শেষ শ্রদ্ধা।
উদার জাতীয়তাবাদের পরাকাষ্ঠা চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যু হয়েছিল দার্জিলিংয়ে ১৯২৫ সালের ১৬ জুন। ১৮ জুন শিয়ালদহ স্টেশনে যখন শববাহী ট্রেন এসে দাঁড়াল, তখন স্টেশন জনারণ্যে পরিণত হয়েছে। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল। গান্ধীজি কামরার গেটে এসে দাঁড়ালেন। হাতের ইশারায় চুপ করতে বললেন মানুষকে। নিস্তব্ধ হয়ে গেল স্টেশন চত্বর। ফুলে ফুলে ঢেকে গেল জননেতার নশ্বর দেহ। সকাল ৭-৪৫ মিনিটে শববাহী মিছিল শুরু হল। গান আর বন্দেমাতরম ধ্বনি। রাজপথে শুধু মানুষের মাথা। পথের দু’ধারে মানুষ আর মানুষ।
অঙ্কন : সুব্রত মাজী
20th  December, 2020
আমরি বাংলা ভাষা
অনুপ বন্দ্যোপাধ্যায়

রোজকার মতো প্রাতঃভ্রমণ সেরে চায়ের দোকানে এসে বসলেন চণ্ডীবাবু। কাগজের দিকে হাত বাড়াতে যাচ্ছিলেন। আর মধ্যেই আমাকে দেখে বলে উঠলেন—
গুড মর্নিং স্যর, হ্যাপি বেঙ্গলি নিউ ইয়ার। বিশদ

14th  April, 2024
রহস্যময় গম্ভীরা

পুরীর গম্ভীরায় জীবনের শেষ আঠারোটা বছর কাটিয়েছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব। অন্তর্ধানের আগে মহাপ্রভু অন্তিমবারের মতো বের হয়েছিলেন সেখান থেকেই। সেই গম্ভীরা ঘুরে ইতিহাস-রহস্যের অনুসন্ধান করলেন অনিরুদ্ধ সরকার। বিশদ

07th  April, 2024
জিপিও ২৫০

বুধবারের দুপুরবেলা। দোল-হোলি পর্বের টানা ছুটি কাটিয়ে এবার ছন্দে ফেরার পালা। কিন্তু একটু বড় ছুটি পেলেই মানুষের মতো শহরটাকেও জড়িয়ে ধরে আলস্য। অফিস-কাছারি খুলতেই আড়মোড়া ভাঙছে শহর। রাস্তাঘাটে অবশ্য তেমন ভিড় নেই। বিশদ

31st  March, 2024
অন্ধকূপেই ডাকঘরের জন্ম

শহরের বুক থেকে ইংরেজদের পুরনো কেল্লার সীমানা মুছে গিয়েছে কবেই। ফিকে হয়ে এসেছে নবাব সিরাজদ্দৌলার কলকাতা আক্রমণ, প্রথম যুদ্ধজয় এবং অন্ধকূপ হত্যার স্মৃতি। এমনটাই যে হবে, আগেই অনুমান করতে পেরেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ইংরেজরা।
বিশদ

31st  March, 2024
নানা রঙের দোল

বারসানায় এখন পা-টুকু নিশ্চিন্তে রাখার জো নেই! দেহাতি, দক্ষিণ ভারতীয়, বাঙালি, বিদেশি কে নেই সেই বিখ্যাত ভিড়ে। প্রায় সবার মাথায় রংবেরঙের পাগড়ি। কারও হাতে আবির, তো কারও ক্যামেরা। একসপ্তাহ ধরে চলছে রঙখেলা। হোলি... লাঠমার।
বিশদ

24th  March, 2024
 ‘যত মত তত পথ’
পূর্বা সেনগুপ্ত

দক্ষিণেশ্বরের দেবালয়। বিরাট বারান্দার এক কোণের ঘরে বসে ভক্তসঙ্গে ধর্মপ্রসঙ্গ করছেন শ্রীরামকৃষ্ণ। দেবালয়ের পাঁচ টাকা মাইনের পুরোহিত হলে কি হবে...মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা রাণী রাসমণি থেকে তাঁর জামাই মথুরবাবু, সকলেই তাঁকে সমীহ করে চলেন। বিশদ

17th  March, 2024
ওপেনহাইমার ও যুদ্ধবাণিজ্য

কয়েক ঘণ্টার মাত্র অপেক্ষা। লস এঞ্জেলসের আলো ঝলমলে ডলবি থিয়েটারে শুরু হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিল্মি শোবিজ—অস্কার। এবারের অস্কার হুজুগে সারা পৃথিবীর সংবাদ শিরোনামে ‘ওপেনহাইমার’। ক্রিস্টোফার নোলানের এই সিনেমার সঙ্গেই অতীতকে ফিরে দেখলেন মৃন্ময় চন্দ।
বিশদ

10th  March, 2024
এলিট ইতিহাস
কলহার মুখোপাধ্যায়

সে নিজেই একটা ইতিহাস! তবু বেলা না যেতে খেলা তব গেল ঘুচে। তখন নাইট ক্লাব, হুক্কা বার, হ্যাং আউট, শপিং মলের কথা শোনালে মানুষ ভাবতো তামাশা করছে।
বিশদ

03rd  March, 2024
স্বেচ্ছামৃত্যু
 

গ্রিক ভাষায় ‘ইউ’ মানে ভালো আর ‘থ্যানেটোজ’ মানে মৃত্যু। দুইয়ে মিলে ইউথ্যানেশিয়া বা স্বেচ্ছামৃত্যু। গত বছর ভারতে আইনসিদ্ধ হয় প্যাসিভ ইউথ্যানেশিয়া। আইনত বৈধ হলেও, সেই পদক্ষেপকে ঘিরে দানা বাঁধছে সংশয়। স্বেচ্ছামৃত্যুর ইতিবৃত্ত খতিয়ে দেখলেন মৃন্ময় চন্দ
বিশদ

25th  February, 2024
আ’মরি বাংলা ভাষা

আসছে আরও একটা একুশে ফেব্রুয়ারি। হোয়াটসঅ্যাপ যুগে ক্রমে গুরুত্ব হারাচ্ছে দিনটি। তবুও বাংলা ভাষা বেঁচে আছে। থাকবেও। অসম ও বাংলাদেশ ঘুরে এসে লিখেছেন সুখেন বিশ্বাস। বিশদ

18th  February, 2024
সরস্বত্যৈ নমো নমঃ
কৌশিক মজুমদার

আমাদের নয়ের দশকের মফস্বলে উত্তেজনার খোরাক বলতে খুব বেশি কিছু ছিল না। বিশেষ করে আমরা যারা সেকালে ছাত্র ছিলাম, তাদের জন্য। মাস্টারমশাই আর অভিভাবকদের গণ ছাতাপেটাইয়ের ফাঁকে বুধবার সন্ধ্যায় টিভিতে চিত্রহার আর রবিবার সকালের রঙ্গোলিতে কিছু বস্তাপচা গান বাদে গোটা হপ্তাটাই কৃষিকথার আসর আর ‘খবর পড়ছি দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়’-এর মতো নেহাত নিরেস ছিল। বিশদ

11th  February, 2024
কুল খেতে মানা
সন্দীপন বিশ্বাস

স্কুল থেকে ফেরার পথে বিন্তির চোখে পড়ল, বাজারে বিক্রি হচ্ছে বড় বড় কুল। পাশে রয়েছে আপেল কুল, টোপা কুল। তাই দেখে তার জিভে জল এসে গেল। মনে হল, কেটে নুন দিয়ে মেখে খেলে বিকেলটা জমে যাবে। মায়ের কাছে সে আবদার করল, ‘আমায় একটু কুল কিনে দাও না মা!’  বিশদ

11th  February, 2024
নেতাজির বিমা কোম্পানি
সৌম্যব্রত দাশগুপ্ত

১৯৪১ সাল। শীতের সন্ধ্যা। ঢাকা শহরের নবাবপুর অঞ্চলে এক ব্যক্তি ঘুরছেন। রাত্রি নামার আগে তাঁকে গন্তব্য পৌঁছতেই হবে। কিন্তু রাস্তায় কারও কাছে ঠিকানা জানার হুকুম নেই। চারদিকে পুলিসের জাল বিছানো। নবাবপুর রোডের কাছে রায় কোম্পানির বিখ্যাত বিলাতি মদের দোকানের সামনে এসে চোখ পড়ল একটি বাড়ির দরজায়। বিশদ

04th  February, 2024
আইএনএ’র বিপ্লবী ডাক্তার
বিশ্বজিৎ মাইতি

‘অস্থায়ী হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন শয়ে শয়ে মরণাপন্ন রোগী। চিকিৎসক ও নার্সদের দাঁড়ানোর ফুরসত নেই। আচমকাই সাইরেন বেজে উঠল। মুহূর্তের মধ্যে দৈত্যের মতো আওয়াজ তুলে হাজির যুদ্ধবিমান। প্রাণের ভয়ে পাশের পরিখায় ঝাঁপিয়ে পড়লেন অনেকে। বিশদ

04th  February, 2024
একনজরে
বৃহস্পতিবার রাতে উল্লাসে তৃণমূলের প্রতীকে জেতা সাংসদ সুনীল মণ্ডলের উল্লাসের বাড়িতে কেক কাটলেন বিজেপির দিলীপ ঘোষ। আবার শুক্রবার সকালে প্রাতঃভ্রমণ করার সময় বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন বর্ধমান শহরের তৃণমূল কাউন্সিলার অজিত খাঁ ...

ধুবুড়ির কালবেলায় একটি ছোট ক্যাম্প অফিসে ডাঁই করে রাখা অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট বা এইআইইউডিএফের ফ্ল্যাগ। এত ফ্ল্যাগ কবে লাগাবেন? ক্যাম্পের কর্মী আনিমুল হক খানিক গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন, ‘ওই ফ্ল্যাগ না লাগালেও আমাদের কিছু হবে না। ...

ধুবুড়ির কালবেলায় একটি ছোট ক্যাম্প অফিসে ডাঁই করে রাখা অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট বা এইআইইউডিএফের ফ্ল্যাগ। এত ফ্ল্যাগ কবে লাগাবেন? ক্যাম্পের কর্মী আনিমুল হক ...

তীব্র দাবদাহের মধ্যে পানীয় জলের সংকট। শুক্রবার ক্ষোভে হরিরামপুর-ইটাহার রাজ্য সড়ক অবরোধ করলেন মহিলারা। হরিরামপুর থানার বিশাল ...




আজকের দিনটি কিংবদন্তি গৌতম ( মিত্র )
৯১৬৩৪৯২৬২৫ / ৯৮৩০৭৬৩৮৭৩

ভাগ্য+চেষ্টা= ফল
  • aries
  • taurus
  • gemini
  • cancer
  • leo
  • virgo
  • libra
  • scorpio
  • sagittorius
  • capricorn
  • aquarius
  • pisces
aries

কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ


ইতিহাসে আজকের দিন

১৫২৬: পানিপথের যুদ্ধে মোগলরা আফগানদের পরাজিত করে
১৭৭০: আজকের দিনে ক্যাপ্টেন কুক অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেন
১৮৪৪: বাংলার নবজাগরণের অন্যতম ব্যক্তিত্ব দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যাযয়ের জন্ম
১৮৭৯: ডিরোজিওর অন্যতম শিষ্য, কলকাতার প্রথম শেরিফ রাজা দিগম্বর মিত্র প্রয়াত হন 
১৮৮৯: ফরাসী বিপ্লবের শতবর্ষ পূর্তিতে স্মারকস্তম্ভ হিসেবে ৯৮৫ ফুট উঁচু আইফেল টাওয়ার নির্মাণের কাজ শেষ হয়
১৮৮৯: জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাডলফ হিটলারের জন্ম
১৯০৫: অগ্নিযুগের বিপ্লবী, সুভাষচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ অনুগামী জ্যোতিষচন্দ্র জোয়ারদারের জন্ম
১৯১২: আইরিশ লেখক ব্রাম স্টোকারের মৃত্যু
১৯১৮: বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ এবং বাংলা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা শওকত আলীর জন্ম
১৯২০: ভারতের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী যূথিকা রায়ের জন্ম 
১৯৪৬: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়
১৯৪৮: বলিউড অভিনেত্রী ববিতার জন্ম
১৯৫০: রাজনীতিক তথা অন্ধ্রপ্রদেশের ১৩তম মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডুর জন্ম
১৯৫২: বাংলা ভাষার সুরকার ও সঙ্গীতজ্ঞ সুধীরলাল চক্রবর্তীর মৃত্যু
১৯৬০: বংশীবাদক ও সুরকার পান্নালাল ঘোষের মৃত্যু
১৯৭২: চাঁদের মাটিতে নামল অ্যাপোলো ১৬
১৯৭২: বলিউড অভিনেত্রী মমতা কুলকার্নির জন্ম
১৯৯৯: কলেরাডোর কলম্বাইন হাইস্কুলে ১৩ জনকে হত্যা করে আত্মহত্যা করল এরিক হ্যারিস এবং ডিলান কেবোল্ড
২০১৩: চীনের সিচুয়ান প্রদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত ১৫০ 
২০১৯ : বাঙালি লোকসঙ্গীত শিল্পী ও লেখক অমর পালের মৃত্যু



ক্রয়মূল্য বিক্রয়মূল্য
ডলার ৮৩.১০ টাকা ৮৪.১৯ টাকা
পাউন্ড ১০২.৫৮ টাকা ১০৫.২২ টাকা
ইউরো ৮৭.৭৯ টাকা ৯০.২২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
পাকা সোনা (১০ গ্রাম) ৭৪,১৫০ টাকা
গহনা সোনা (১০ (গ্রাম) ৭৪,৫০০ টাকা
হলমার্ক গহনা (২২ ক্যারেট ১০ গ্রাম) ৭০,৮৫০ টাকা
রূপার বাট (প্রতি কেজি) ৮৩,৪০০ টাকা
রূপা খুচরো (প্রতি কেজি) ৮৩,৫০০ টাকা
[ মূল্যযুক্ত ৩% জি. এস. টি আলাদা ]

দিন পঞ্জিকা

৭ বৈশাখ, ১৪৩১, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪। দ্বাদশী ৪৩/৩৫ রাত্রি ১০/৪২। পূর্বফল্গুনী নক্ষত্র ২২/০ দিবা ২/৪। সূর্যোদয় ৫/১৬/৬, সূর্যাস্ত ৫/৫৫/৫। অমৃতযোগ দিবা ৯/৮ গতে ১২/৫১ মধ্যে। রাত্রি ৮/১১ গতে ১০/২৭ মধ্যে পুনঃ ১১/৫৯ গতে ১/২৯ মধ্যে পুনঃ ২/১৪ গতে ৩/৪৪ মধ্যে। বারবেলা ৬/৫১ মধ্যে পুনঃ ১/১০ গতে ২/৪৫ মধ্যে পুনঃ ৪/২০ গতে অস্তাবধি। কালরাত্রি ৭/২০ মধ্যে পুনঃ ৩/৫১ গতে উদয়াবধি।
৭ বৈশাখ, ১৪৩১, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪। দ্বাদশী রাত্রি ১০/৫৮। পূর্বফল্গুনী নক্ষত্র দিবা ২/৪৩। সূর্যোদয় ৫/১৬, সূর্যাস্ত ৫/৫৬। অমৃতযোগ দিবা ৯/২২ গতে ১২/৫১ মধ্যে এবং রাত্রি ৮/১৬ গতে ১০/২৭ মধ্যে ও ১১/৫৬ গতে ১/২২ মধ্যে ও ২/৩ গতে ৩/৩৩ মধ্যে। কালবেলা ৬/৫১ মধ্যে ও ১/১১ গতে ২/৪৬ মধ্যে ও ৪/২১ গতে ৫/৫৬ মধ্যে। কালরাত্রি ৭/২১ মধ্যে ও ৩/৫১ গতে ৫/১৬ মধ্যে। 
১০ শওয়াল।

ছবি সংবাদ

এই মুহূর্তে
আইপিএল: চেন্নাইকে ৮ উইকেটে হারাল লখনউ

19-04-2024 - 11:30:00 PM

আইপিএল: ৮২ রানে আউট কেএল রাহুল, লখনউ ১৬১/২ (১৭.১ ওভার), টার্গেট ১৭৭

19-04-2024 - 11:15:12 PM

আইপিএল: ৫৪ রানে আউট কুইন্টন ডিকক, লখনউ ১৩৪/১ (১৫ ওভার), টার্গেট ১৭৭

19-04-2024 - 10:57:07 PM

আইপিএল: ৪১ বলে হাফসেঞ্চুরি ডিককের, লখনউ ১২৩/০ (১৪.১ ওভার), টার্গেট ১৭৭

19-04-2024 - 10:53:44 PM

আইপিএল: ৩১ বলে হাফসেঞ্চুরি কেএল রাহুলের, লখনউ ৯৮/০ (১০.৪ ওভার), টার্গেট ১৭৭

19-04-2024 - 10:34:00 PM

আইপিএল: লখনউ ৫৪/০ (৬ ওভার), টার্গেট ১৭৭

19-04-2024 - 10:13:07 PM