বিদ্যার্থীদের উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে মধ্যম ফল আশা করা যায়, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। ব্যবসাতে যুক্ত ... বিশদ
আমি বাকরুদ্ধ। চিন্টুর চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। তবে অসুস্থতার খবর আগেই পেয়েছিলাম। চিন্টুর মৃত্যুর আগের দিন ইরফানের খবরটা পাই। তখনই মানসিকভাবে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। এর পরপরই খবর আসে যে চিন্টু অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি। এখন চারিদিকে এত গুজব যে সত্যি-মিথ্যা যাচাই করা মুশকিল। ভাবলাম, এটা বোধহয় আর একটা গুজব। বৃহস্পতিবার সকালে খবরটা এল। এটা আর একটা গুজব হলেই ভালো ছিল। কিন্তু হল না। ইরফানও আমার কাছের এক মানুষ ছিল। মাড আইল্যান্ডে ও আমার প্রতিবেশী ছিল। তাই ইরফানের মৃত্যুর ধাক্কা তখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তার মাঝেই আর একটা...। ছুটে গিয়ে যে চিন্টুকে শেষ দেখাটা দেখে আসব, সে সুযোগও ঈশ্বর দিলেন না। লকডাউনের জন্য বাড়ির বাইরে পা রাখা যাবে না। এর থেকে খারাপ আর কী-ই বা হতে পারে। চিন্টু চলে যাওয়াটা গোটা ইন্ডাস্ট্রির কাছে বড় ধাক্কা। ঈশ্বর যেন ওর পরিবারকে এই শোক কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা দেন। আর আমার বন্ধু চিন্টু যেখানে আছে, যেন ভাল থাকে। এই প্রার্থনা শুধু আমি করতে চাই।
বন্ধুত্বের অভিষেক
চিন্টুর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কিছুটা পারিবারিক। আমি ওর বাবা রাজ কাপুরকে আগে থাকতেই চিনতাম। আমেরিকাতে তাঁর সঙ্গে বেশ কিছুবার দেখা হয়েছে। আসলে রাজ কাপুর আমার বাবা-মায়ের পরিচিত ছিলেন। তবে চিন্টুর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ছবির সেটে। ‘ইয়ে ইশক নেহি আসান’-এ আমরা প্রথম একসঙ্গে কাজ করেছিলাম। চিন্টু তখন রীতিমতো স্টার। আর আমি মাত্র কয়েক বছর ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছি। তখন থেকেই আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের শুরু। ৩৫ বছরের এই সফর। ওর মধ্যে তারকাসুলভ কোনও ব্যাপার কিন্তু ছিল না। আর পাঁচজন তারকার থেকে এব্যাপারে চিন্টু একদম আলাদা। তবে অভিনেতা হিসেবে ছিল অত্যন্ত পেশাদার। নিজের চরিত্রের সঙ্গে চিন্টু অনায়াসে এক হয়ে যেতে পারত। অনামী বা নতুন অভিনেতাকে কখনও এতটুকু অসম্মান করত না। সবাইকে সমান চোখে দেখত। এটা ওর একটা বড় গুণ। সেটে চিন্টু অসম্ভব এনার্জেটিক থাকত। একাধিক ছবিতে নিজেকে প্রমাণ করেছে যে, ও কত বড় মাপের অভিনেতা। অনেকে ওকে একটাই ইমেজে বেঁধে রাখতে চেয়েছিল। সেটাও ভুল প্রমাণ করেছে ও। আবেগপ্রবণ দৃশ্যেও ছিল অত্যন্ত সাবলীল। ও হ্যাঁ, চিন্টুর আর একটা ভাল গুণ... স্মরণশক্তি মারাত্মক।
অন্য চিন্টু
বন্ধুত্বের জন্য চিন্টু সব কিছু করতে পারত। এই মুহূর্তে একটা ঘটনা মনে পড়ছে। আমাদের অভিনেতা বন্ধু রাজ কিরণের সঙ্গে অনেক দিন দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। কোনও খবরও পাচ্ছি না। চিন্টুর সঙ্গে রাজ কিরণ ‘কর্জ’ ছবিতে কাজ করেছে। ওকে বলা মাত্র খুঁজতে শুরু করে দিল। কোথায় আছে... বের করতেই হবে। শুধু রাজ কিরণের ব্যাপারে আলোচনার জন্যই আমার সঙ্গে দু’বার দেখা করে। অনেক খোঁজ-খবর নেওয়ার পর চিন্টু জানতে পারে যে, রাজ কিরণ আমেরিকায় আছে। চিন্টু আমাকে বলেছিল, আমেরিকায় গিয়ে রাজ কিরণের সঙ্গে দেখা করবে। আবার রাজকে দেশে ফিরিয়ে কাজ দেওয়ার কথাও বলে চিন্টু। প্রথমেই আমেরিকায় গিয়ে ও খুঁজে বের করেছিল রাজ কিরণের ভাইকে।
মুখোশহীন চিন্টু
আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে মুখোশধারী মানুষের সংখ্যা বেশি। এক্ষেত্রে চিন্টু একদম অন্য রকম। মুখ ছিল, মুখোশ ছিল না। সাদাকে সাদা, আর কালোকে কালো বলতেই ও ভালবাসত। অপছন্দ হলে সেটাও মুখের উপর বলতে এতটুকু গলা কাঁপত না চিন্টুর। এ নিয়ে অনেকে ওকে ভুল বুঝত। চিন্টু এই স্পষ্টবক্তা স্বভাবের জন্য হামেশাই চর্চিত হতো। কিন্তু ওর হৃদয়টা ছিল অনেক বড়। হৃদয়ের কথাই ওর মুখে থাকত। ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই সামনে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে। আর পিছন ফিরলে অন্যের নিন্দা করতে শুরু করে দেয়। এই পরিবেশে বড় হয়েও সকলের থেকে আলাদা ছিল আমার পরম বন্ধুটি।
শেষবেলা
গত বছর দিওয়ালিতে চিন্টুর সঙ্গে আমার শেষ দেখা। অমিতাভ আর জয়ার বাড়ির দিওয়ালি পার্টিতে। তখন ও ক্যান্সারের চিকিৎসা করে দেশে ফিরেছে। কেমন আছে সে... জিজ্ঞেস করতেই সেই চিরাচরিত হাসি। বলল, ‘কেমন দেখছিস?’ সত্যি বলতে সেদিন ওকে বেশ ঝরঝরে এবং সুস্থ লাগছিল। চিন্টুকে সুস্থ দেখে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। আমরা সেদিন পুরনো গল্পের খাজানা খুলে বসেছিলাম। প্রথমে আমি চিন্টুর অসুস্থতার খবর জানতাম না। চিকিৎসার জন্য ও যে আমেরিকা গেছে সে খবরও না। আসলে তখন আমাদের ইন্ডাস্ট্রির কেউ ওর অসুস্থতার খবর সেভাবে জানত না। আমার বোন এবং জামাইবাবু আমেরিকায় থাকে। ওরাও চিন্টুর খুবই পরিচিত। বোনের থেকেই জানতে পারি যে, চিন্টু চিকিৎসার জন্য আমেরিকাতে আছে। দিওয়ালির সেই রাতই যে শেষ দেখা, কেই বা জানত।