কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
বিশ্বব্যাপী মহামারীর আকার নিলেও নোভেল করোনা ভাইরাস বাহিত রোগ আদতে নিরাময়যোগ্য। কিছু সতর্কতা নিলেই উপশম সম্ভব। সরকারি তরফে প্রচারও চলছে, ‘আতঙ্কিত হবেন না। সতর্ক থাকুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।’ তা সত্ত্বেও ভয় পাচ্ছেন মানুষ। ছড়াচ্ছে গুজব। ভাইরাসবাহিত রোগটি যে আদপেই তেমন ভয়ঙ্কর নয়, সেকথা কার্যত প্রথম জানালেন রোহিতই। তাঁর কথায় অনেকটাই স্বস্তি পাবেন সংক্রমণের শিকার হওয়া বা আক্রান্ত হতে পারেন সন্দেহে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা নাগরিকরা। দিল্লিতে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে দু’জন রোগীকে সুস্থ বলে ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকরা। সারা দেশে সংখ্যাটা আরও বেশি। বিশ্বে ২ লক্ষেরও বেশি আক্রান্তের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৮৪ হাজার মানুষ সেরে উঠেছেন।
সেরে ওঠার জন্য রোহিত পুরো কৃতিত্ব দিচ্ছেন সরকারি উদ্যোগকেই। সফদরজং হাসপাতালের আইসোলেশন পরিষেবার প্রশংসায় তো পঞ্চমুখ তিনি। দিল্লির ময়ূর বিহারের বাড়িতে বসে বললেন, ‘আমি একটি এসি ঘরে থাকতাম। এবং বেশ ভালো পরিষেবা। সকালে জানলা খুললেই সূর্যের আলোতে ঘর ভরে যেত। বিলাসবহুল হোটেলের থেকে কোনও অংশে কম নয় পরিষেবা যা কি না প্রায় অবিশ্বাস্য। আমি তো ভেবেছিলাম সরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ড যেমন হয়, তেমন কিছু হবে। এখানকার কর্মীরাও ভীষণ পরিচ্ছন্নতা মেনে চলেন। দিনে দু’বার মেঝে পরিষ্কার করে পর্দা বদলে দেওয়া হতো।’
অথচ, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে শুরুতেই ভয় পেয়ে যাচ্ছেন মানুষ। পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। রোহিতের মনেও শুরুর দিকে ভয় ছিল। তাঁর কথায়, ‘আমি ডাক্তার নই, কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছিলাম যে এটা সাধারণ সর্দি-জ্বর নয়।’ রোহিতের ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেক্সটাইলের ব্যবসা রয়েছে। সেই সূত্রেই ইতালিতে যাওয়া। সেখানে থাকাকালীনও জানতেন না এমন মহামারী ছড়িয়েছে। ঠিক কী হয়েছিল জানালেন করোনা-জয়ী। তিনি বলেন, ‘আমি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউরোপ থেকে ফিরি। ঠিক পরদিনই জ্বরে আক্রান্ত হই। স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে গেলে, তিনি বলেন গলাতে সংক্রমণ হয়েছে। তিনদিনের জন্য ওষুধও দেন। ২৮ তারিখে খানিকটা সুস্থ ছিলাম। ওইদিনই দক্ষিণ দিল্লির একটি বড় হোটেলে আমার ছেলের জন্মদিনের পার্টি ছিল। সেখানে আমার স্ত্রী, মেয়ে, মা ও কিছু বন্ধু ছিল। সবারই করোনা নেগেটিভ এসেছে। ওই রাতেই প্রবল জ্বর আসে। রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে যাই। ১ মার্চ টেস্ট পজেটিভ আসে। তারপরেই সফদরজং হাসপাতালে আইসোলেশনে পাঠানো হয়।’
সেখানে শুরুর দিকে সমস্যা হয়নি? প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, ডাক্তাররা ২৪ ঘণ্টা নজর রাখতেন। কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, জিজ্ঞাসা করতেন। সত্যি কথা বলতে, প্রাথমিকভাবে ভেঙেও পড়েছিলাম। চিকিৎসকরাই বোঝান যে আমি ঠিক সেরে উঠব। আপাতভাবে সুস্থ যে কেউ সর্দি-কাশি-জ্বরের মতোই এই রোগ থেকে সেরে ওঠার ক্ষমতা রাখেন। শুধু একটু বেশি সময় লাগে। এই ১৪ দিন অবশ্য দুনিয়ার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ছিলেন না তিনি। কিছুটা ধার্মিকও হয়েছেন বলে দাবি করলেন রোহিত। বললেন, ‘দু’বেলা নিয়ম করে প্রাণায়াম করতাম। ভজন শুনতাম। আর পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কল। আমাকে ফোন ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সময় কাটাতাম অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটে সিনেমা দেখে আর চাণক্য নীতি পড়ে। একবারের জন্যও মনে হয়নি পরিবার ছেড়ে আলাদা রয়েছি। ডাক্তাররা বারবার বলতেন, কোনও ভয় নেই। দারুণ কেটেছে দিনগুলো। ডাক্তারদের অসংখ্য ধন্যবাদ।’
রোহিতের সবচেয়ে বেশি মনে আছে পরিবার ছাড়া হোলির কথা। কিন্তু এবারের হোলি তাঁর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফোন করে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি জানান, ‘কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফোন করে আরও জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন আছি, কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না। খাবার পছন্দ হচ্ছে কি না সেটা পর্যন্ত জানতে চাইলেন। জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তিনি নিজে করোনা রোগীদের বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে নজরে রাখছেন। ভাবতে পারেন দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমার মতো সাধারণ মানুষকে ফোন করছেন!’ ১৪ দিনের লড়াই শেষে ঘরবন্দি হয়েও জয়ের হাসিমুখ নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন তিনি। এখন গোটা বিশ্বকে আশ্বাস দিচ্ছেন রোহিত দত্ত। তাঁকে দেখে ভরসা পাচ্ছেন অনেকেই।