পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
ফিরে আসা যাক বর্তমান পরিস্থিতিতে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে চীনের বাইরে। গোটা বিশ্বে। কিছুদিন আগেও এই বিশ্বব্যাপী মহামারীর (প্যানডেমিক) এপিসেন্টার ছিল ইউরোপ। ইতালিতে যখন মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৩ হাজার, তখনই স্পেনে করোনার শিকার হয়েছেন ১০ হাজার মানুষ। আর এখন চিত্রটা হঠাৎ বদলে গিয়েছে। আজ করোনা সংক্রমণের এপিসেন্টার মার্কিন মুলুক। পরিসংখ্যানবিদরা জানাচ্ছেন, হংকং, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড এবং জাপান ছিল চীনের করোনা ভাইরাসের বিচরণের মুক্তাঞ্চলের মতো। তা সত্ত্বেও ওই দেশগুলিতে নোভেল করোনা ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়নি। আর তার একটাই কারণ। ২০০৩ সালের সার্স-এর ক্ষয়ক্ষতি থেকে দেশগুলি শিক্ষা নিয়েছিল। তারা জানত, মহামারীতে কীভাবে, আর কত দ্রুত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তাই করোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা আগাম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছিল। কী সেই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা? উত্তর হল—‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’ বা ‘সামাজিক দূরত্ব’।
ইরান, ফ্রান্স, জার্মানি এবং স্পেন-এর মতো দেশ সংক্রমণ আটকানোর আগাম ব্যবস্থা নিতে বেশ দেরি করে ফেলে। ফলে পরিস্থিতি দ্রুত জটিল হয়ে যায়। সৌভাগ্যবশত ভারত বহু আগে থেকে বিদেশ থেকে আগত পর্যটকের আগমনের উপর যতিচিহ্ন টানতে শুরু করেছিল, যদিও বন্ধু রাষ্ট্রগুলি ভারতের এমন সিদ্ধান্তে খুব একটা প্রীত হয়নি।
সমস্যা হল, অনেকেই এই সংক্রমণকে খুব সহজভাবে দেখছেন। ভাবছেন, সংক্রমণে মৃত্যুর হার মাত্র ৩ শতাংশ। এমন কিছু ব্যাপার নয়। কিন্তু একবার ভাবুন, ভারত কত বড় দেশ! জনসংখ্যাও যথেষ্ট বেশি। আর এখনও পর্যন্ত আমাদের দেখা সবচাইতে দ্রুত সংক্রামক রোগ হল কোভিড-১৯। প্রতিটি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী তিনজন মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারেন! এমনকী তাঁরা দু’সপ্তাহ পর্যন্ত মারাত্মক সংক্রামক থাকেন! এদেশে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েকশো। অন্তত পক্ষে ৫ শতাংশ রোগীর আইসিইউ-এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। এক শতাংশকে দিতে হবে ভেন্টিলেটরের সহায়তা।
উচ্চ রক্তচাপের রোগী, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম আছে এমন মানুষ যেমন ক্যান্সারের রোগী বা সত্তরোর্ধ্ব ব্যক্তি এই ভাইরাসের আক্রমণের সামনে খুবই দুর্বল। দেশের সব হাসপাতালের আইসিইউ প্রায় সবসময় বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের দ্বারা ভর্তি থাকে।
এমনকী এর মধ্যে অন্যান্য কয়েকজনের দেহে এইচ১এন১ ভাইরাস ধরা পড়েছে। তাঁরাও রয়েছেন আইসিইউতে। আমরা কিন্তু বাস্তবিকই বিশ্বব্যাপী মহামারীর আওতায় চলে এসেছি। এই পরিস্থিতিতে আমাদের একমাত্র কর্তব্য হল, যে করেই হোক সংক্রমণ ঠেকানো যাতে হাসপাতালগুলি অন্যান্য আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে।
ভারতের গরম আমাদের রক্ষা করবে বা ভারতীয়রা এমনিতেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম—এমন ধারণাগুলো দূরে সরিয়ে রেখে একটু ভাবতে শুরু করুন। কী হতে পারে যদি বাকি দেশগুলির মতো হাল আমাদেরও হয়? সেখানে বন্যার মতো রোগীর স্রোত দেখা যাচ্ছে।
ভারতে কিন্তু এমনটা হবে না। সচেতন না হলে এখানে করোনা ভাইরাস মানুষের উপর বোমের মতো আছড়ে পড়বে। কারণ এই দেশের জনঘনত্ব যথেষ্ট বেশি।
আমাদের হাতে এখন সময় খুব কম। এখন থেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করুন। দেশজুড়ে লকডাউন আমরা করেছি। এবং তার ১৯দিন অতিক্রান্ত। সংক্রমণ থেমে যায়নি ঠিকই, কিন্তু তাতে লাগাম পরানো গিয়েছে। চিহ্নিত করা গিয়েছে ‘হটস্পট’। অর্থাৎ কোথায় কোথায় এই ভাইরাসের প্রকোপ বেশি। যুদ্ধ কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। এই যুদ্ধ এখনও চলবে। যথা সম্ভব ঘরে বসে। আর কিছু সাধারণ পদক্ষেপ অবলম্বন করে—
ঘরের বাইরে যথা সম্ভব কম থাকুন। লকডাউনে তো জরুরি পরিষেবা বা অত্যধিক প্রয়োজন ছাড়া বেরনোর প্রশ্নই নেই। লকডাউন শিথিল হলেও কিন্তু সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।
ছোট জায়গার মধ্যে অনেক লোক গাদাগাদি করে থাকলে সেই জায়গা এড়িয়ে যান। জিম, মল, পাব, সিনেমা হল তো আপাতত বন্ধই। সামান্য বাজার বা দোকানে গেলেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
যতটা পারবেন, বাড়ি থেকে কাজ করুন। অফিসে বা কারখানায় বসে কাজ করলে সহকর্মীর দ্বারা সংক্রামিত হওয়া বা সহকর্মীর মধ্যে সংক্রমণ ছাড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়।
অফিসে যেতে হলে সহকর্মীদের থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরত্বে বসুন। ক্যান্টিনে খেতে যাবেন না। মিটিং এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। ১০ জনের বেশি লোক আছে এমন দলে ভিড়বেন না। যে কোনও শোভাযাত্রা, পদযাত্রা, সমাবেশে যোগদান করবেন না।
সংকলক: সুপ্রিয় নায়েক
* সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে নানা সংবাদমাধ্যমে ডাঃ দেবী শেঠির পরামর্শগুলির অনুবাদ। রোগীর পরিসংখ্যান ২০/০৩/২০২০ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী।