সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক, কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
এখন রাজ্য সরকারের করোনা যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ। এক্সপার্ট গ্রুপ এবং গ্লোবাল অ্যাডভাইজারি বোর্ডের সদস্য। আপনাদের কাজ সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বলবেন?
সবার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে? সেন্ট্রার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের প্রাক্তন শীর্ষকর্তা সহ...
হ্যাঁ। সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। ওঁর সঙ্গে তো আমি নিজে কথা বলেছি।
কীভাবে কাজ হবে?
ওঁদের থেকে আমরা ইনপুট নেব। জানতে চাইব, কীভাবে এগনো উচিত। কীভাবে মানুষকে ভালো রাখা যায়। দারিদ্র ভবিষ্যতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই বৈঠক হবে। কারণ, বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন জায়গায় আছেন।
পরিস্থিতি দেখে কী মনে হচ্ছে?
বেশ কিছু রাজ্যের থেকে আমাদের পরিস্থিতি যথেষ্টই ভালো। যেমন, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তামিলনাড়ু ইত্যাদি। সামগ্রিকভাবে রাজ্যের পরিস্থিতি খুব জটিল নয়। তবে বিষয়টা মোটেই হালকাভাবে নিচ্ছি না আমরা। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলেই সব ধরনের বিশেষজ্ঞদের একই ছাতার তলায় আনা হয়েছে। তবে এক-দু’দিনে এই সমস্যা মিটবে না। এটা হল টেস্ট ম্যাচ। টি-২০ নয়।
আরও একটু সুনির্দিষ্টভাবে বিষয়ে আসা যাক। ঠিক কী কী পরিকল্পনা আছে? কিছুদিন আগেই এক সাক্ষাৎকারে ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, করোনা মোকাবিলার প্রধান অস্ত্র হল ট্র্যাকিং, ট্রেসিং, টেস্টিং এবং কোয়ারেন্টাইন।
হ্যাঁ। সেটা বাড়াতে হবে। করোনার ক্ষেত্রে এটা অনেকটা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার মতো খুব কঠিন কাজ। আমরা তাই যে যে জায়গায় সন্দেহ বেশি, সেখানে পরীক্ষার দিকে জোর দেব। র্যা পিড পরীক্ষার কিট এসে যাবে আগামী সপ্তাহে।
তাই? কবে চালু করবেন?
অর্ডার দেওয়া হয়েছে। ওরা সাত-দশদিন সময় চেয়েছে। হয়তো আগামী সপ্তাহ থেকেই চালু হয়ে যাবে।
কোথায় চালু করবেন, হটস্পটগুলিতে?
হ্যাঁ, হটস্পটগুলিতে চালু হবে। যাঁদের শ্বাসযন্ত্রের জটিল সমস্যা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও করা হবে পরীক্ষা।
কিন্তু করবেন কীভাবে? মানে হাসপাতালে থাকা রোগীদের উপর, নাকি তাঁদের সংস্পর্শে আসাদের উপর?
হুমম, কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকা মানুষেরও পরীক্ষা হবে।
সব সেন্টার মেলালে তো ছয় হাজারের বেশি মানুষ আছেন। সবার উপর?
না, না, সবার উপর নয়। একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষা হবে। যাঁরা এক্সপোজড হয়েছেন, কোনও না কোনওভাবে পজিটিভ রোগীর কাছাকাছি এসেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে করা হবে।
কারা করবেন পরীক্ষা? সরকারি হাসপাতাল নাকি সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দু’ধরনের ক্ষেত্রই?
আইসিএমআর যেরকম ঠিক করে দেবে, আমরাও সেভাবে চলব। তবে বিস্তারিত আলোচিত হয়নি। সরকার করবে, এটা বলতে পারি।
আপনাদের হিসেব অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের কত মানুষ ‘এক্সপোজড’ জায়গায় রয়েছে?
সেরকম কোনও হিসেব নেই। তবে বলা যায়, যাঁরা কোয়ারেন্টাইনে আছেন, কমবেশি ‘এক্সপোজড’। তবে গড় হিসেব করলে রাজ্যের যা জনসংখ্যা, সেই তুলনায় প্রচুর মানুষ যে এক্সপোজড—এমন নয়। আবার জনগোষ্ঠীর মধ্যে র্যা পিড পরীক্ষা শুরু করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে। সবদিক দেখতে হবে। তাছাড়া র্যা পিড পরীক্ষা মানেই চূড়ান্ত নয়। স্ক্রিনিং বলা চলে। ফলস পজিটিভ, ফলস নেগেটিভ হতে পারে। পজিটিভ হলে ফের আরটিপিসিআর করতে হবে।
ক’দিন আগে আমরা দেখলাম, নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিলেন। ওঁর সঙ্গে কথা বলে কী মনে হচ্ছে?
ওঁর কথার মূল সুর যেটুকু বুঝেছি, সেটি হল গরিব মানুষকে এই সময় যে কোনও মূল্যে বাঁচাতে হবে।
গ্রামেগঞ্জে কাজ করেছেন। নিজের জেলা বীরভূমে কাজ করেছেন। গ্রামীণ ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ হোক বা লিভার ফাউন্ডেশন। আপনার কী মনে হয়, লকডাউন বাড়ানো উচিত?
খুব কঠিন প্রশ্ন। তবে আমার মনে হয়, দু’টি বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে। একটি হল পেটের জ্বালা, যা আছে এবং আরও আসতে চলেছে। অন্যটি হল ভাইরাসের চরিত্র। ‘খিদে’ আমাদের চোখের সামনে এসে পড়ছে প্রায়। তার সঙ্গে মানুষের ব্যবহার, শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার নজির ইত্যাদিও জড়িয়ে আছে। যদি এমন হয়, লকডাউন চালালাম, অথচ মানুষ খিদেতেই হোক বা শৃঙ্খলাহীনতার জন্যই হোক... মানল না, রাস্তায় আসতে শুরু করল, অথচ অর্থনীতি একেবারে তলানিতে চলে গেল, ওরকম লকডাউন রেখে কী লাভ? তার চেয়ে বরং মানুষকে ন্যূনতম কাজ চালানোর রসদ, খাবার দাবার যদি দেওয়া যায়...।
মানে যেভাবে চলছে, তাই তো? বাজার খোলা রাখা! ওষুধের দোকান খোলা রাখা, মানুষ যাতে অত্যাবশ্যকীয় জিনিস পায়..
এবং পাশাপাশি যদি হটস্পটগুলি ঘিরে রাখা যায়।
ন্যূনতম কারবার যদি না চলে, তাহলে গ্রামগঞ্জের অবস্থা..
ভয়ঙ্কর হয়ে যাবে। তখন কিন্তু মানুষ ভাইরাস বুঝবে না। তুই-আমি ভাইরাস বুঝি। খিদের জ্বালায় মানুষ ভাইরাস বুঝবে? যখন মানুষ খেতে পাবে না, রাস্তায় নেমে আসবে।
মানে যেভাবে লকডাউন চলছে, সেভাবে চালু রাখার পক্ষেই আপনি?
না। একবারেই না। একেবারে পরিষ্কার এই ব্যাপারে। অবশ্য এটা একান্তই আমার মত। হটস্পট বেছে রাখো। জায়গাগুলি ঘিরে রাখো। ট্র্যাক কর, টেস্ট কর।
কিন্তু, আমাদের দেশ, আমাদের রাজ্যের জনঘনত্ব ভাবুন। একবার ঢিলে দিলে মানুষ তো পিলপিল করে রাস্তায় নেমে আসতে পারে।
সবই মানছি। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ক্ষুধা সর্বগ্রাসী।
মানে দুটির মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলতে হবে?
একেবারেই। রোগ যাতে না ছড়ায়, আবার অন্যদিকে মানুষের পেটে যেন ভাত থাকে। ঘরে যেন আনাজপাতি থাকে, ওষুধ থাকে। স্টিমরোলার চালিয়ে কিছু হয় না।
কত জায়গায় টেস্ট, কত জায়গায় কোভিড হাসপাতাল, সব পরিকল্পনাই তো মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে নিয়েছেন। তবে দেখুন, ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন!
যদি সংখ্যার কথা বলতে হয়, ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের কিন্তু প্রচুর পিপিই দেওয়া হয়েছে। তার মানে এই নয় যে সবাই সন্তুষ্ট। অনেকের অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু এগুলি স্থানীয় স্তরে ঠিকমতো মিটলে সমস্যা থাকে না। ‘সিএম’ বলেছেন, বেশ কিছু জায়গায় যাচ্ছি সমস্যা মেটাতে।
গত ক’বছর সরকারের সঙ্গে একাধিক বিষয়ে কাজ করেছেন। করছেনও। আবার আপনার একটি নিজস্ব সমাজ-গণ্ডী আছে। আগের অভিজিৎ চৌধুরী আর এখনকারের মধ্যে কোথাও তাঁদের মানাতে সমস্যা হয় না? দূরত্ব তৈরি হয় না? সামলান কীভাবে?
আমি নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকি। যেটুকু দায়বদ্ধতা, সবই মানুষের কাছে। যখন মনে হয়, এই কাজটা করতে হবে, করি। যদি প্রতিকূলতা আসে, স্ত্রী-সন্তান সকলকেই বোঝানোর চেষ্টা করি, সেটাই করে এসেছি। এটাই আমার ব্যক্তিত্বের ধরন। এখন যেমন মনে হয়েছে, দেশের মানুষকে ভালো রাখার জন্য এই কাজগুলি করা দরকার। করছিও। মনে হয় না তাতে সমাজের বন্ধুরা অসন্তুষ্ট হবেন। আর এখন মানুষকে বাঁচাতে হবে। কে বাঁচাচ্ছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি প্লাজমা থেরাপি চালুর কথা বলেছেন। নেচার-এ প্রকাশিত হয়েছেন এই থেরাপির ব্যাপক সম্ভাবনার কথা।
হ্যাঁ, আমরা চালু করছি। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি আর স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন মিলেমিশে কাজ করবে। সুস্থ রোগীদের প্লাজমা নিয়ে কাজ হবে। সমস্ত মান্যতা নিয়ে কাজ হবে।
তার মানে পশ্চিমবঙ্গ প্লাজমা থেরাপি ব্যবহারের দিক থেকে প্রথম রাজ্য হতে চলেছে?
হ্যাঁ, বলতে পারিস।
এবারের প্যানডেমিক কি অনেকগুলি শিক্ষা দিল না? এতদিন প্রথম বিশ্ব মনে করত, ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া সবই তৃতীয় বিশ্বের সন্তান। আচ্ছা, এবার প্রথম বিশ্বের এত শোচনীয় অবস্থা কেন হল?
‘‘যারে তুমি নীচে ফেল, সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে, পশ্চাতে রেখেছ যারে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে’’। রবীন্দ্রনাথ সেই কবে বলে গিয়েছিলেন।
মানে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস?
একেবারেই। পা দিয়ে ঠেলতে গিয়েছে। ফল পেয়েছে।
কী মনে হয়, এখানে লকডাউনের পর কী হবে?
সত্যি বলতে, ভাইরাসটা ঠিক কী, এখনও ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারিনি। তাই এর ফলাফল কতটা সুদূরপ্রসারী হবে, বলা খুব কঠিন। তবে আশাবাদী, হয়তো এই পরিস্থিতি সামলে উঠব। সদর্থক ভাবতে হবে। তবে অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
শেষ প্রশ্ন, যাঁর সঙ্গে কাজ করছেন, তাঁর কোন কোন বিষয় আপনাকে মুগ্ধ বা উৎসাহিত করে? মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলছি।
অক্লান্ত পরিশ্রম করতে পারার ক্ষমতা। তড়িৎগতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। এই দু’টিই সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে। আর আমি আবেগপ্রবণ মানুষ। ওঁর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, উনিও যথেষ্ট আবেগের সঙ্গে, মন থেকে কাজ করেন। এটাই আরও উৎসাহিত করে।