বিদ্যার্থীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবে। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। অতিরিক্ত চিন্তার জন্য উচ্চ ... বিশদ
অথচ ক্রিস্টিনা ইভান্সের ছেলে ড্যানি এক বছর আগেই মারা গিয়েছে। একটি ক্যাম্পে গিয়েছিল। খবর এসেছিল যারাই ক্যাম্পে গিয়েছে, সকলেই একে একে মারা যাচ্ছে। এমনকী গাড়ির ড্রাইভারও। ড্যানি আর ফিরে আসেনি। কিন্তু এই মেসেজগুলোকে কীভাবে অগ্রাহ্য করবেন একজন মা! তাই ক্রিস্টিনা ঠিক করলেন তিনি ড্যানির খোঁজে বেরোবেন। ড্যানি কীভাবে মারা গেল? কী ঘটেছিল? জানতেই হবে। অবশেষে টানটান উত্তেজনা শেষে জানতে পারলেন ড্যানি একটি মিলিটারি ফেসিলিটি সেন্টারে ভর্তি। চীনে। একটি অদ্ভূত ভাইরাসের সংস্পর্শে এসে গিয়েছিল ক্যাম্পে যাওয়া তাদের গোটা টিম। সেখানেই মারা গিয়েছে সবাই। শুধু ড্যানিকে নিয়ে আসা হয়েছে পর্যবেক্ষণের জন্য। ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি যাচাইয়ের জন্য। ভাইরাসের নাম, উহান-ফোর হান্ড্রেড! যা আসলে এক বায়ো ওয়েপন। জৈব অস্ত্র। এই ভাইরাস একমাত্র মানুষকেই আক্রমণ করে।
উহান ফোর হান্ড্রেড ভাইরাস কোথা থেকে লিক করেছে? চীনের উহান শহরের বাইরেই থাকা রিকমবিডিন্ট ডিএনএ ল্যাবরেটরি থেকে। যেখানে বায়ো ওয়েপন তৈরি করা হচ্ছে গোপনে। আর সেই ল্যাবরেটরি থেকেই আচমকা লিক হয়েছে এক মারণ ভাইরাস। যার লক্ষ্য আমেরিকা। এই হল প্লট। ১৯৮১ সালের এক আমেরিকান থ্রিলার বই। নাম, ‘দ্য আই অব ডার্কনেস’। লেখক ডিন কুনৎজ। ভাইরাসের নাম উহান-৪০০ (যদিও প্রথমে ভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছিল গোর্কি ৪০০। গোর্কি রাশিয়ার এক শহরের নাম। ১৯৮৯ সালে ওই বই যখন আবার সংস্করণ হল, তখন নাম পরিবর্তন করে ভাইরাসের নাম হয়ে যায় উহান। অর্থাৎ চীনের শহর। ঠিক ৩৯ বছর পর গোটা বিশ্বে মারণখেলায় নেমেছে যে ভাইরাসটি, সেই করোনার উৎপত্তিও ঘটনাচক্রে উহানেই। ঠিক যেরকম লেখা ছিল ওই বইতে। ওই থ্রিলারে বলা হয়েছিল উহান-৪০০ ভাইরাস সংক্রমণ মারাত্মক। আশ্চর্য, সেই উহানেই রয়েছে ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি। চীনের একমাত্র লেভেল ফোর বায়োসেফটি ল্যাবরেটরি। যে গবেষণাগারে কালান্তক মারক ভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
উহানে কী কী পরীক্ষা হয়েছে সাম্প্রতিককালে? ইবোলা, নিপা। দুই মারণ ভাইরাস। ১৯৮১ সালের একটি বই কীভাবে মিলিয়ে দিল ২০১৯ সালের এক ভাইরাস মহামারীর আন্তর্জাতিক ঘটনাকে? সেই নিয়েই আপাতত তোলপাড় দুনিয়া। কিন্তু ওটা তো একটা উপন্যাস। কাকতালীয় হতেই পারে। তাহলে একট সত্যি ঘটনা শোনা যাক।
২০১২, ১৩ জুন। ডাঃ আলি মহম্মদ জাকির ভ্রু কুঁচকে যাচ্ছে। মিশরের এই ভাইরোলজিস্ট জেড্ডায় একটি প্রাইভেট ফাইভ স্টার হাসপাতালের কেবিন নম্বর টু থার্টি ফাইভে বসে আছেন চিন্তিত মুখে। তাঁর রোগীর জ্বর সারছে না। শুধুই কাশি আর শ্বাসকষ্ট। রুটিন ডায়াগনসিস টেস্টে ধরা যাচ্ছে না। ভাইরাসটি কেমন টাইপের? বুঝতে পারছেন না ডাঃ জাকি। তিনি একটা কাজ করলেন। নেদারল্যান্ডসের এরাসমাস মেডিকেল সেন্টারে ফোন করলেন। ডাঃ রন ফ্যুশিয়ার। তাঁর বন্ধু। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভাইরোলজিস্ট। নমুনাও পাঠানো হল। রন অত্যাধুনিক পরীক্ষা করলেন। তিনি ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে কিছুই বুঝতে না পেরে ইউজ করলেন রিয়াল টাইম পলিমেরাস চেন রিঅ্যাকশন প্রক্রিয়া। টেস্ট করার জন্য। যাতে পরিচিত ভাইরাসের বৈশিষ্ট্যগুলির প্রকৃতির সঙ্গে সাযুজ্য বা বৈসাদৃশ্য পাওয়া যায়। আরও নিশ্চিত হতে এই করোনা ভাইরাস স্যাম্পল তিনি পাঠালেন কানাডায়। ভাইরোলজি গবেষণার জগতে কানাডার ন্যাশনাল মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরি শীর্ষতম স্থানে। সেখানে চিফ ভাইরোলজিস্ট ডাঃ ফ্র্যাঙ্কের কাছে গেল সেই ভাইরাসের নমুনা। পরীক্ষা শুরু করলেন তিনি। মার্চ ২০১৯। কানাডা থেকে হঠাৎ একঝাঁক ভয়ঙ্কর ভাইরাসের এজেন্ট পৌঁছলো চীনে। এবং জানাজানি হয়ে গেল যে কানাডা এরকম ভাইরাস এজেন্ট চীনের গবেষণাগারে পাঠিয়েছে। কিন্তু কেন? কানাডার ভাইরোলজি দপ্তর ও সরকারের মাথায় বাজ পড়েছে। কোথায়! তারা তো এরকম কিছু পাঠায়নি! তাদের গবেষণার বিষয়টি আচমকা কেন চীনে পাঠাতে যাবে তারা? তাহলে কারা পাঠালো ওই গোপন এজেন্ট? তার মানে তো চুরি হয়েছে ভাইরাস? কিন্তু ওই ভাইরাসের নমুনা মারাত্মক জৈব অস্ত্র হয়ে ওঠার মতো শক্তি রাখে। কে চুরি করল?
৫ জুলাই কানাডার সেই মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের করিডরে ঘটছিল একটা বিস্ময়কর দৃশ্য। কানাডার রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের দুই তদন্তকারী স্পেশাল এজেন্ট জেরা করছেন এক চীনা মহিলা বিজ্ঞানীকে। জিয়াং গো কিউ তাঁর নাম। ওই ল্যাবে যাঁর কাজ ছিল ইবোলা ভাইরাসের জেড ম্যাপিং ডেভেলপ করা। তিনি সাংঘাতিক সম্মানিত এক বিজ্ঞানী। তাঁর সঙ্গে গোপন যোগাযোগ চীনের? স্পাইং করছিলেন? কাজ করছিলেন এবোলা নিয়ে। ২০১৪ সালে এই মারাত্মক ভাইরাস পশ্চিম আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে। কিউ চীনা হলেও কানাডার নাগরিক। কানাডার সায়েন্টিস্ট। তদন্তের পর আর কিউকে একা নয়, তাঁর সঙ্গে থাকা তাঁর পাঁচজন স্টুডেন্টকেও আটক করা হয়। সকলেই জন্মসূত্রে চীনের। স্পাইং বা চরবৃত্তির অভিযোগ। কিন্তু ওই চারটি ভাইরাস এজেন্ট কে চুরি করল? প্রমাণ পাওয়া যায়নি! সেই থেকে কানাডার সঙ্গে চীনের সম্পর্কের অবনতি শুরু হল। কানাডা এবং আমেরিকা আশঙ্কা করতে শুরু করল, চীন আগ্রাসীভাবে বায়ো ওয়েপন তৈরি করছে। তাবৎ ইনফরমেশন যাতে গবেষণাগারের সমস্ত কম্পিউটার থেকে ডিলিট করা যায়, সেই প্রক্রিয়া চলাকালীনই কানাডার সিকিউরিটি ইনটেলিজেনন্স সার্ভিস জানাল ভয়ঙ্কর তথ্য! চীন ইতিমধ্যেই কানাডার ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের ওয়েবসাইট হ্যাক করে সাইবার অ্যাটাক চালিয়েছে। আমেরিকা আর কানাডা একদিকে। অন্যদিকে চীন। তারপরই প্রবল গোপন লড়াই শুরু হল ভাইরোলজি গবেষণার গোপন দুনিয়ায়। চীন প্রকাশ্যেই জানিয়েছে, কানাডার সব অভিযোগ মিথ্যা। সেই মহিলা সায়েন্টিস্ট ডাঃ জিয়াং গো কিউ যে প্যাথোজিনস প্রোগ্রামের প্রধান ছিলেন সেই ডকুমেন্ট আর ফর্মেশন ফাইল সব উধাও!
বিশ্বজুড়ে একের পর এক দেশে যখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে একটি কালান্তক ভাইরাসের আক্রমণে, তখন সবথেকে বেশি যে থিওরি দুনিয়াজুড়ে বিজ্ঞানীদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে সেটি হল, এই করোনা ভাইরাস কি আসলে সুপার পাওয়ার দুই দেশের বায়োলজিক্যাল ওয়ার? আমেরিকা বনাম চীন? এই যুদ্ধে এই প্রথম ইউরোপ এবং আমেরিকা প্রবলভাবে ব্যাকফুটে। বস্তুত করোনার আক্রমণ চীনে শুরু হলেও, তারপর আচমকা সেখানে মৃত্যু প্রায় স্তব্ধ। এরকম ম্যাজিকের কারণ কী? নাকি চীন সঠিক তথ্য দিচ্ছে না? কিন্তু বেছে বেছে পশ্চিমী দুনিয়ার তাবৎ ধনী ও প্রভাবশালী দেশগুলির মানুষ ও অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার তিনজন সেনেট সদস্য পর্যন্ত এই অভিযোগ করেছেন যে, এই করোনা আক্রমণ চীনের জৈব যুদ্ধ। চীনের পাল্টা দাবি, আমেরিকা নিজেদের অপদার্থতা ঢাকতে এসব ফেক নিউজ ছড়াচ্ছে কেন? আমেরিকা প্রশাসন সরাসরি এই নিয়ে মন্তব্য না করলেও, চীন যে প্রচুর কিছু গোপন করছে এই প্রশ্ন তুলেছে। যদিও বিশ্বের সিংহভাগ দেশ এবং বিজ্ঞানীরাই এই ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছে। বলা হচ্ছে এসব গালগল্প। এটা সত্যিকারের একটা ন্যাচারাল ভাইরাস। চীনের সি ফুড মার্কেট থেকেই ছড়িয়েছে।
কেন এই চক্রান্তের সন্দেহ? কারণ একঝাঁক মিসিং লিঙ্ক। করোনা ভাইরাসের আচরণ প্রবল বিস্ময়কর। এই প্রথম কোনও ভাইরাসকে দেখা যাচ্ছে প্রিভিলেজড ক্লাসকেই আক্রমণ করছে সবথেকে বেশি। অর্থাৎ বিমানে চড়ে, এ দেশ ও দেশ ঘুরে বেড়ায় এরকম ধনী শ্রেণী বেশি আক্রান্ত। বড়লোক দেশগুলিই বেশি ধ্বংসের মুখে। চীন থেকে যাত্রা শুরু করা ভাইরাস ইউরোপ-আমেরিকায় যাওয়ার আগে কত অসংখ্য ছোটখাট এশিয়া, আফ্রিকার দেশ আছে মানচিত্রে। কই কাউকেই তো স্পর্শই করল না! করলেও ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি, ব্রিটেন, আমেরিকার আতঙ্কজনক পরিস্থিতির ধারেকাছে কেউ নেই। এই প্রতিটি দেশ আর্থিকভাবে ধনী এবং বিশ্বে সামরিক অস্ত্রে সবথেকে শক্তিশালী। বেছে বেছে সেই শক্তিশালী ও ইতিহাসে খ্যাতনামা দেশগুলিই জনসংখ্যা ও অর্থনীতিগতভাবে ধ্বংসের মুখে। বিগত ৭৫ বছরে শেষ কবে ইতালি, স্পেন, আমেরিকায় দিনে ১ হাজার করে মানুষ মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে তা মনে করা যাচ্ছে না। অথচ চীনের ধ্বংসলীলা প্রায় থমকে গিয়েছে। আর তিন হাজারের গণ্ডি পেরোচ্ছে না। সেই তথ্য সত্যি? নাকি গ্রেট কভার আপ? এসব প্রশ্নের জরার দিয়েছে গ্লোবাল টাইমস। চীনের সরকারি মুখপত্র। তারা বলছে, চীনের নিয়ন্ত্রণ স্ট্র্যাটেজি অনেক কার্যকর। তাই চীন অনেকটাই স্তিমিত করতে পারছে। এরপরেই বেজিং প্রশ্ন তুলেছে, আমেরিকা যে কতটা অপ্রস্তুত সেটা প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। অযথা এখন চীনের নামে বদনাম করা হচ্ছে কেন?
অবশ্য এর উল্টো তত্ত্বও রয়েছে। চীনে প্রথম কেস ধরা পড়েছিল ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর। কিন্তু উহানের প্রশাসন কঠোরভাবে অর্ডার সার্কুলার করে জানিয়ে দেয় একথা যেন বাইরে প্রকাশিত না হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমস ২২ মার্চের সংখ্যায় লিখেছে যে সময় উহানে লকডাউন হয়ে যাওয়া উচিত ছিল, সেই সময়ই অর্থাৎ, পয়লা জানুয়ারি অন্তত ১ লক্ষ ৭৫ হাজার মানুষ উহান থেকে বেরিয়ে বিদেশের বিভিন্ন দেশে চলে যায়। পরবর্তী তিন সপ্তাহ ধরে কমপক্ষে ৭০ লক্ষ মানুষ উহান ও হুবেই প্রদেশ থেকে বেরিয়েছে। অন্তত ৮৫ শতাংশ মানুষই সংক্রমণের শিকার ছিল। কিন্তু সম্পূর্ণ ডিটেকশন না হওয়া অবস্থায় তারা ছড়িয়ে গিয়েছে দেশদেশান্তরে। ২৬টি দেশের ৩০টি শহরে। চীনের প্রথম যে ভাইরোলজিস্ট ডাক্তার সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন যে, নভেম্বর মাসেই কিন্তু করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, সেই ডক্টর ওয়েংলিয়ানকে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে তাঁকে চুপ করে থাকতে বলা হয়েছিল কেন? আর তার থেকে মারাত্মক তথ্য হল, কেনই বা তিনি কিছুদিন পর নিজেই করোনা সংক্রমণে মারা গেলেন?
বিগত কয়েক বছর ধরে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চরমে উঠেছে। সবথেকে বেশি লড়াই কী নিয়ে? টেলিকমে ফাইভ জি নিয়ে কে বিশ্বজয় করবে? সেটা নিয়েই চলছিল মরণপণ এক গোপন প্রতিযোগিতা। দ্বিতীয়ত ইরানের আর্থিক নিষেধাজ্ঞার পর পশ্চিম এশিয়ার তেলের দখল। কিন্তু করোনার ধাক্কায় ইউরোপের অর্থনীতি আপাতত বহুদিন আর মাথা তুলতে পারবে না। এই মৃত্যুমিছিল কবে শেষ হবে কেউ জানে না। আমেরিকা এরকম অকল্পনীয় ধাক্কা, আতঙ্ক কাটিয়ে কতটা বেরিয়ে আসতে পারবে, তা নিয়ে আপাতত সন্দেহ আছে। সুতরাং ২০২০ সালের পর পৃথিবীর পাওয়ার করিডরের সমীকরণ অন্যরকম হয়ে যাবে।
২০২০, ইতিহাসের ট্রু সায়েন্স ফিকশন!
ছবি: এএফপি
সহযোগিতায়: উজ্জ্বল দাস