শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্তশত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত সাফল্য।প্রতিকার: ... বিশদ
ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র সকালে ডাল লেকের ধারে নানা রঙের গোলাপ নিয়ে বসেছিলেন ওই দোকানি। ভালোবাসার দিন বলে কথা। কিন্তু সেই ১৪ ফেব্রুয়ারিই কপাল পুড়ল কাশ্মীরের। নেপথ্যে পুলওয়ামার অবন্তীপোরায় নৃশংস জঙ্গি হামলা। আধা সামরিক বাহিনীর কনভয়ে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ প্রাণ হারান ৪৯ সিআরপিএফ জওয়ান। কয়েক দিনের টানা তুষারপাতের পর ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকেই জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছিল। যে অঞ্চলে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে, সেখানে বরাবরই নিরাপত্তা জোরদার থাকে। যদিও সমস্ত নজরদারি এড়িয়ে আগে থেকেই ওই এলাকায় পৌঁছে গিয়েছিল লাল স্করপিওটি। ৩৫০ কেজি বিস্ফোরক বোঝাই গাড়িটির স্টিয়ারিং ছিল জয়েশ জঙ্গি আদিল আহমেদ দারের হাতে। জয়েশ-ই-মহম্মদের এই জঙ্গি ‘গাড়ি টাকরানেওয়ালা’ নামে পরিচিত ছিল। জঙ্গি মহলে ‘গুন্ডিবাগের ওয়াকাস কমান্ডো’ নামেও ডাকা হতো তাকে। গত বছর সে জয়েশে যোগ দিয়েছিল।
বাস, ট্রাক মিলিয়ে প্রায় ৫০টি গাড়িতে সিআরপিএফের ৫৪ ব্যাটালিয়নের কনভয় যাচ্ছিল ওইদিন। প্রতিটিতে ৪০ থেকে ৪৫ জন করে জওয়ান ছিলেন। কনভয়ের গাড়ি পরপর একই গতিতে যাওয়ার নিয়ম। কিন্তু সিআরপিএফের ওই বাসটির সঙ্গে অন্য গাড়ির দূরত্ব অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। আর সেটিকেই টার্গেট করে আদিল। দুপুর ২টা ১৫ মিনিট নাগাদ জওয়ানদের কনভয় সেখানে পৌঁছতেই বিস্ফোরক বোঝাই স্করপিও নিয়ে বাসটিতে ধাক্কা মারে আদিল। প্রবল বিস্ফোরণ। কেঁপে উঠেছিল ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাড়িও। ফলে বাসটির অবস্থা সহজেই অনুমেয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে জওয়ানদের দেহাংশ। ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে অন্য বাস থেকে জওয়ানরা নামার আগেই তাঁদের ঘিরে ধরে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন জওয়ানরা।
ভালোবাসার দিনেই রক্তাক্ত হয় কাশ্মীর। শ্রীনগর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে উপত্যকার ইতিহাসের সবথেকে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। সারা দেশের উপর দিয়ে যেন ঝড় বয়ে গিয়েছিল। প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হল আরও বেশ কয়েক ডিগ্রি। হামলার একদিন পর থেকেই উপত্যকার সমস্ত বড় সড়কপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। জাতীয় সড়কে শুধু সেনা কনভয়ের যাওয়ার অনুমতি ছিল। কড়া নিরাপত্তায়। পুলওয়ামার বদলা নিতে এক সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তানে ঢুকে বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইক করে ভারত। ব্যাস। নিমেষে তছনছ হয়ে গেল সবকিছু। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায় যে, যুদ্ধ লাগল বলে। যদিও, শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটেনি। কিন্তু, পাক সীমান্ত লাগোয়া ভূস্বর্গ মাঝখান থেকে বলির পাঁঠা হয়ে গেল। কারণ, রাতারাতি কাশ্মীর থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করলেন পর্যটকরা।
ফি বছর গ্রীষ্মে পর্যটকদের আনাগোনায় জমজমাট থাকে জম্মু ও কাশ্মীরের রাস্তাঘাট। বছরে ৩০০ কোটি রাজস্ব এবং প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান জোগায় কাশ্মীরের পর্যটন শিল্প। কিন্তু, পুলওয়ামা হামলার পরবর্তী সময়ে আমূল বদলে গিয়েছে সেই ছবি। অজানা আতঙ্কে ভূস্বর্গ থেকে মুখ ফিরিয়েছেন দেশীয় এবং বিদেশি পর্যটকরা। ফলে মার খাচ্ছে ব্যবসা। যেখান থেকে রাজ্যের মোট জিডিপি’র প্রায় ৮ শতাংশ আসে, সেই শিল্প আজ বিপন্ন। এর পিছনে পুলওয়ামা পরবর্তী আতঙ্কের আবহ যেমন রয়েছে, তেমনই উঠে আসছে একাধিক তত্ত্ব। শ্রীনগরের বাসিন্দা পেশায় ট্রাভেল এজেন্ট ফৈয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা গোটা বসন্ত এবং অর্ধেকের বেশি গ্রীষ্মের মরশুম হারিয়ে ফেলেছি। এক শ্রেণীর মানুষ ও পর্যটন সংস্থা জম্মু ও কাশ্মীরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। পুলওয়ামা হামলার পর পর্যটকদের কাশ্মীরে আসা থেকে বিরত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ হ্যাঁ, কাশ্মীরবাসীর অভিযোগ, বালাকোট-কাণ্ডের পর দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থা কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে মানুষকে আরও বেশি করে ভয় দেখাতে শুরু করে। পরিবর্ত হিসেবে তারা পড়শি রাজ্য হিমাচল প্রদেশ, দক্ষিণ ভারতের উটি, কোদাইকানাল, মুন্নার, পূর্ব ভারতের গ্যাংটক বা পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের মতো জায়গাগুলিকে তুলে ধরতে শুরু করে।
আর এর ফল মেলে হাতেনাতে। চলতি গ্রীষ্মে হিমাচলে পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। হিমাচল সরকারের রিপোর্ট বলছে, রাজ্যের নথিবদ্ধ ৩ হাজার হোটেল ও ১ হাজার ৩৪০টি হোম স্টের ৯৫ শতাংশেরই বুকিং ফুল। মানালির এক ট্রাভেল এজেন্ট বলেন, ‘দিনে গড়ে প্রায় দু’ হাজার পর্যটক আসছেন। সপ্তাহান্তে সেটা বেড়ে চার হাজারে পৌঁছে যাচ্ছে। কখনও কখনও হোটেলগুলিতে মানুষকে জায়গা দিয়ে কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। পর্যটকের বাড়বাড়ন্তে এই সমস্ত শৈলশহরগুলিতে তীব্র যানজট রোজকার ঘটনা হয়ে গিয়েছে। পর্যটকের ভিড় যে মাত্রা ছাড়িয়েছে, তা শহরের এটিএমগুলি দেখলেই বোঝা যাবে। সকাল-সন্ধ্যা সেখানে মানুষের লম্বা লাইন চোখে পড়বে।’ হিমাচলের প্রথম সারির এক পর্যটন সংস্থা শিরগুল ট্রাভেলস জানিয়েছে, অতীতের বছরগুলির তুলনায় এবছর গ্রীষ্মে অনেক বেশি মানুষ সিমলা-মানালিতে এসেছেন। সংস্থার এক কর্মী জানান, কাশ্মীর নিয়ে অনিশ্চয়তার জেরেই হিমাচলের ভাগ্যে শিঁকে ছিড়েছে। তিনি বলেন, ‘জুন ও জুলাই মাসের জন্য সিমলা এবং মানালির সমস্ত হোটেল বুক হয়ে গিয়েছে।’
২০১৭ সালে কাশ্মীরে ১১ লক্ষ পর্যটক ভিড় করেছিলেন। কিন্তু ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ে পরের বছরই। পর্যটকের সংখ্যা হ্রাস পায় প্রায় ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ, মাত্র সাড়ে ৮ লক্ষ দেশি-বিদেশি পর্যটক উপত্যকায় পা রেখেছিলেন সেবার। গত সাত বছরের মধ্যে যা সর্বনিম্ন। চলতি বছরের গ্রীষ্ম তার থেকেও খারাপ বলে মত কাশ্মীরের পর্যটন সংস্থাগুলির। পুলওয়ামা তো রয়েইছে, সঙ্গে ব্যাপকভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে কাশ্মীরের সেই চিরাচরিত সমস্যা। কিছু একটা ছুতো পেলেই বন্ধ-হরতালের পথে চলে যাচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত জঙ্গিকে শহিদের মর্যাদা দিয়ে শেষকৃত্যে বিশাল শোভাযাত্রা, শুক্রবারের নামাজ শেষে কোনওরকম প্ররোচনা ছাড়াই বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া, পাথরবৃষ্টি—এসব এখন ভূস্বর্গে নিত্য ব্যাপার। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে, স্কুলপড়ুয়ারা পর্যন্ত জওয়ানদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুঁড়তে শুরু করেছিল। বাহিনী পাল্টা প্রতিরোধ করলেও শুরু হয়ে যাচ্ছে সংঘর্ষ। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয় প্রশাসনের তরফে ১৪৪ ধারা জারি নয়তো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি সুবিচারের দাবিতে বন্ধ ডেকে বসছে। ফলে তাতে স্থানীয়রা তো বটেই, বেজায় সমস্যায় পড়ছেন পর্যটকরাও।
আর এই পর্যটককে নিজেদের ঝুলিতে টেনে ফুলেফেঁপে উঠেছে পড়শি রাজ্য হিমাচল। কাশ্মীরের পরিবর্তে হিমাচলই কেন পর্যটকদের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছে? উত্তরটা দিলেন হিমাচল টিপস এলএলপি কোম্পানির কর্তা ভিকি রাপতা। তাঁর মতে, নিরাপত্তার জন্যই এত বিপুল পরিমাণ পর্যটক হিমাচলমুখী হয়েছেন। ভিকি বলেন, ‘পর্যটকরা এখানে অনেক বেশি নিরাপদ অনুভব করেন। সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে হিমাচল প্রদেশ সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উঠে এসেছে।’ নিরাপত্তার পাশাপাশি হোটেল-হোম স্টেগুলির ভাড়া তুলনামূলক কম হওয়ায় পর্যটকদের হিমাচলের প্রতি আরও বেশি করে আকৃষ্ট করেছে বলেও জানান তিনি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং এপ্রিলে শুধুমাত্র হিমালয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শৈলশহরগুলিতে প্রায় ৩৫ লক্ষ পর্যটকের পা পড়েছে। কিন্তু এর সিকি ভাগও কাশ্মীরের ভাগ্যে জোটেনি। অভিযোগ উঠেছে, পর্যটন সংস্থাগুলির সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের একাংশও কাশ্মীর নিয়ে নেতিবাচক প্রচার চালানোর ফলেই কাশ্মীরকে আজ এই দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়েছে। কথা হচ্ছিল কাশ্মীরের ট্রাভেল এজেন্ট সংগঠনের (টিএএকে) প্রেসিডেন্ট আশফাক আহমেদ দুগের সঙ্গে। তাঁর দাবি, ‘এখনও কাশ্মীরের বিমান ভাড়া অত্যধিক চড়া। সেই তুলনায় কাছাকাছি রাজ্যগুলি থেকে গাড়ি নিয়েই হিমাচল পৌঁছে যেতে পারেন পর্যটকরা। এর সঙ্গে কিছু জাতীয় স্তরের সংবাদমাধ্যম লাগাতার কাশ্মীরের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার করে যাওয়ায়, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।’
পুলওয়ামা হামলার পর পাঁচ মাস অতিক্রান্ত। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে অমরনাথ যাত্রা। এই তীর্থযাত্রাকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবসায়ীরা ফের লক্ষ্মীলাভের আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন। ট্রাভেল এজেন্ট উমর আহমেদের কথায়, ‘১ জুন থেকে অমরনাথ যাত্রা শুরু হয়েছে। আগামী ১৪ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। আশা করছি এই যাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের পর্যটন শিল্প ফের ঘুরে দাঁড়াবে।’ তবে, এতেও ‘কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য প্রশাসনের একটি সিদ্ধান্ত। অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দক্ষিণ কাশ্মীরের কাজিগুন্দ থেকে নাসরি পর্যন্ত জাতীয় সড়কে সাধারণ যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্যপাল এন এন ভোরার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। ৪৬ দিন ধরে চলা অমরনাথ যাত্রার প্রতিদিন পাঁচ ঘণ্টা করে এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। রাজ্য প্রশাসনের এই নজিরবিহীন সিদ্ধান্তে উপত্যকার সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়েছে। এরই মধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে নর্দার্ন রেলওয়ের সিদ্ধান্ত। গত ৩ জুলাই থেকে অমরনাথ যাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজিগুন্দ ও বানিহালের মধ্যে যাবতীয় ট্রেন পরিষেবা সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টে পর্যন্ত বন্ধ রাখতে শুরু করেছে নর্দার্ন রেল কর্তৃপক্ষ। সড়ক ও রেল দু’টোই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় স্বাভাবিকভাবেই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পর্যটকদেরও।
অনন্তনাগের দুরু কলেজের ছাত্র বানিহালের বাসিন্দা সাজাদ আহমেদের দাবি, সড়ক এবং রেল দু’টোই বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পড়ুয়াদেরই। তিনি বলেন, ‘আমরা কলেজে পৌঁছতে ট্রেনের উপরই ভরসা করি। এখন যেহেতু সড়কপথেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, তাই ভোরের আলো ফুটলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হয় আমাদের।’ জাতীয় সড়কের ওই ৯৭ কিলোমিটার অংশে সাধারণ যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে সমস্যা পড়েছেন সড়কের দু’ধারে বসবাসকারী বাসিন্দারাও। অনন্তনাগের বাসিন্দা মুনির আহমেদের ক্ষোভ, ‘অমরনাথ যাত্রা চলাকালীন আপনি জাতীয় সড়ক ব্যবহারের কথা কল্পনাও করতে পারবেন না। ওই সময়টা আমরা লিঙ্ক রোড ব্যবহার করছি, যেটা খুবই কষ্টকর।’ প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে পর্যটকদের কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে? উত্তরে কাশ্মীরের হোটেল ও রেস্তরাঁ মালিকদের সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদ মালিকের সোজাসাপ্টা মন্তব্য, ‘অমরনাথ যাত্রার নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে পর্যটকদেরও হেনস্থা করা হচ্ছে। সোনমার্গ এবং পহেলগাঁওয়ের দিকে দর্শকদের স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করতে দেওয়া হচ্ছে না। হাইওয়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার ফলেও পর্যটকদের চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’ কাশ্মীর ট্যুর অপারেটরদের সংগঠনের প্রধান নাজির মির জানান, ‘ছুটির মরশুমে প্রকৃতির কোলে অবসর যাপনের জন্যই পর্যটকরা উপত্যকায় আসেন। কিন্তু, প্রশাসনের এই নিষেধাজ্ঞা পর্যটকদের সেই আশায় জল ঢেলে দিচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন রাজ্যের পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনই কাশ্মীরে আসতে ইচ্ছুক পর্যটকদের মধ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’
এই দাবি যে এতটুকু অমূলক নয়, তার প্রমাণ তথ্যই। অমরনাথ যাত্রা শুরুর দিন থেকে এখনও পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরের হোটেল এবং লজগুলিতে একটিও বুকিং হয়নি। খাঁ খাঁ করছে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ব্যবসায়ীদের একটাই দাবি, অবিলম্বে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হোক। এ নিয়ে সম্প্রতি তাঁরা রাজ্যের পর্যটন সচিব রিগজিয়ান স্যামফিলের সঙ্গে বৈঠকও করেন। বৈঠকে কাশ্মীরের ট্রাভেল এজেন্ট সংগঠনের (টিএএকে) চেয়ারম্যান ইশফাক সিদ্দিক এই ভোগান্তির জন্য সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন। তাঁর মতে, যদি অমরনাথ যাত্রা চলাকালীন রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার পরিবেশ সরকার বজায় রাখতে না পারে, তাহলে ওই সময়টায় কাশ্মীরের পর্যটনের উপর ‘ব্ল্যাঙ্কেট ব্যান’ জারি করা হোক। ইশফাক বলেন, ‘আমার মনে হয় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অবিশ্বাসের পরিবেশ রয়েছে। রাজ্যের পর্যটন ব্যাপক ভাবে মার খাচ্ছে। যদি কোনও সমাধান না-ই থাকে, তাহলে ওই ৪৫ দিন কাশ্মীর পর্যটনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিক সরকার।’ তবে, শুধু সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করাই নয়, পরিস্থিতি কীভাবে সামলানো যেতে পারে, সেই পরামর্শও পরিবহণ সচিবকে দিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রথমে পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের আলাদা করে চিহ্নিত করতে হবে। তাহলেই জটিলতা অনেকটা কমে যাবে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এবং মোড়গুলিতে পর্যটকদের জন্য আলাদা পুলিস মোতায়েনেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওই পুলিসকর্মীরা তীর্থযাত্রীদের থেকে পর্যটকদের আলাদা করে খুঁজে তাঁদের যাবতীয় সাহায্য প্রদান করবে। জম্মু ও কাশ্মীরের পরিবহণ সচিব এই বিষয়গুলি বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অমরনাথ যাত্রা কোনও অনুষ্ঠান নয়, এটা একটা প্রক্রিয়া। এখানে প্রতিপদে ক্রুটি-বিচ্যুতি শুধরে নিতে হয়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগগুলির ভিত্তিতে আমরা কিছু পরিবর্তন করার চেষ্টা করব, যাতে অমরনাথ যাত্রা চলাকালীন রাজ্যের ট্রাফিক মসৃণভাবে এগতে পারে।’ আসলে, পুলওয়ামায় নৃশংস জঙ্গিহামলা, বন্ধ-হরতালের রাজনীতির পাশাপাশি অমরনাথ নিয়ে নিরাপত্তার বাড়াবাড়িতেও পর্যটন শিল্প ধাক্কা খেয়েছে উপত্যকায়।
তাই তো উপত্যকার ঐতিহ্যবাহী টিউলিপ বাগান প্রায় ফাঁকা। খাঁ খাঁ করছে শিকারা আর হাউসবোটগুলো। মোড়ে মোড়ে সওয়ারির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাক্সিচালকদের কপালে দুশ্চিন্তার চওড়া ভাঁজ।
এই কাশ্মীরকে কেউ চেনে না...।
..........................................
ছবি এএফপি, পিটিআই
গ্রাফিক্স সোমনাথ পাল
সহযোগিতায় স্বাগত মুখোপাধ্যায়