রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
সাদা নয়। প্রিয় রং হতে হবে বাদামি! অন্তত বিজ্ঞান তা-ই বলছে।
ভাবছেন, এ আবার কোন দেশি নিয়ম! রং বাছাইয়ের স্বাধীনতা তো ব্যক্তিগত। এখানে আবার বিজ্ঞান এল কোথায়? ভয় নেই, আপনার ব্যক্তিগত পছন্দের রঙের উপর কোনও ফতোয়া জারি হয়নি। তবে কি না সুস্থ থাকতে বদলে ফেলতে হবে পাতের রং। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় প্রমাণিত, মেদহীন হয়ে ফিট থাকার রংমিলান্তি খেলায় সাদাকে টপকে বাদামি কয়েক যোজন এগিয়ে গিয়েছে।
সরাসরি বললে খাবার পাতেই লুকিয়ে আছে ‘সাদা শয়তান’। এই যে নিত্য চিনি, নুন, পাউরুটি ও চাল খাচ্ছেন, সেসবই সাধারণত সাদা রঙের। এইসব সাদা রঙের খাদ্যোপাদানে পুষ্টিগুণ যেমন কম, তেমনই ওবেসিটি ডেকে আনতে তারা ওস্তাদ। তবে এগুলির বিকল্প হিসেবে যদি বাদামি বা লাল চাল, ব্রাউন ব্রেড, বাদামি রঙের রক সল্ট বা বিটনুন ও নারকেলের চিনি বা ব্রাউন সুগার পাতে রাখেন, তাহলে মেদবৃদ্ধির শঙ্কা কমে প্রায় ৬৫ শতাংশ। অন্যান্য বেশ কিছু অসুস্থতাকে এড়িয়ে থাকা যায়। পুষ্টিবিদদের মতে, সাদা চাল, ময়দা, নুন, চিনি ইত্যাদি যে কোনও খাবারেরই পুষ্টিগুণ অনেকটা কম। বহুবার পরিশুদ্ধ করে যে সাদা ঝকঝকে দেখতে খাদ্যোপাদানটি আমরা পাই, তার যাবতীয় ‘গুণ’ বিনষ্ট হয় শুদ্ধিকরণে। কেমন সেসব? জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
কেন বাদ সাদা পাউরুটি
ইংরেজিতে একটা প্রবাদ প্রচলিত। ‘দ্য হোয়াইটার দ্য ব্রেড, দ্য সুনার ইউ আর ডেড।’ অর্থাৎ কিনা, রুটি যত সাদা হবে, মৃত্যু ততই এগবে। একথা শুধু রুটিতে আর আটকে নেই বলে মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামীর। তাঁর কথায় ‘রুটি হোক বা ভাত, এমনকী পাতের চিনি ও নুনটুকুও বাদামি করতে পারলে ভালো হয়।’ দিলেন তার ব্যাখ্যাও। জানালেন, ওবেসিটিতে ভুগছে গোটা বিশ্ব। মেদ ঝরানোর যে দৌড়ঝাঁপ ইদানীং এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে থাকে, সেই কাজকে অনেকটাই সহজ করে দেয় এই বাদামি খাবারগুলো। দিনের শুরুতেই যে পাউরুটি দিয়ে ডাইনিং টেবিলের ব্যস্ততা শুরু হয়, তা ময়দায় ঠাসা হোয়াইট ব্রেড না হয়ে যদি আটার তৈরি বা বিভিন্ন দানাশস্যের তৈরি ঈষৎ বাদামি ও কম স্বাদযুক্ত ব্রাউন ব্রেড হয়, সেখানেই অনেকটা ক্যালোরি গ্রহণ আটকে দেওয়া যায়। শুধু মেদ ঠেকানোই নয়, ব্রাউন ব্রেডে ফাইবার বেশি থাকায় এই রুটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে দেয় না। এই রুটি হোল গ্রেন বা দানাশস্যের হলে আরও ভালো। তাতে থাকা মিনারেলস, ভিটামিন সবই শরীরের পুষ্টি বৃদ্ধি করে। খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্টের গায়েও মেদ জমতে দেয় না।
সেই তুলনায় হোয়াইট ব্রেডে পুষ্টিগুণ অনেক কম। সাদা পাউরুটি প্রস্তুত করা হয় রাসায়নিক মিশিয়ে কৃত্রিম উপায়ে। বেনজিল পারক্সাইড, পটাশিয়াম ব্রোমাইড ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় সাদা পাউরুটি তৈরিতে। নিয়মিত এই সাদা পাউরুটি খেলে শরীরে এই রাসায়নিকগুলির মাত্রা বেড়ে যায়, যা পরোক্ষে মেদ বাড়ায়। নানা অসুখও ডেকে আনে। তাছাড়া কৃত্রিম উপায়ে তৈরি বলে এতে সোডিয়ামের পরিমাণও বেশি। তাই ওজন বৃদ্ধি, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হার্টের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে হোয়াইড ব্রেড এড়িয়ে চলাই ভালো।
কোন চিনি রাখব পাতে
চিনির বেলাতেও সাদা চিনি এড়িয়ে প্রাকৃতিক চিনি বা বাদামি চিনির উপর ভরসা করার পরামর্শ দিলেন পুষ্টিবিদ সুমেধা ধর। তিনি জানালেন, ‘ক্যালোরির হিসেব যদি ধরি, তাহলে কিন্তু প্রতি গ্রাম সাদা চিনি ও প্রতি গ্রাম বাদামি বা ব্রাউন সুগারের মধ্যে তেমন কোনও ভেদাভেদ নেই। অর্থাৎ কেউ যদি ভাবেন মেদ কমাতে সাদা চিনি ভুলে মুঠো মুঠো বাদামি চিনি বা ব্রাউন সুগার খাব, তাতে বিশেষ লাভ হবে না। রোগা হতে গেলে বরং চিনি একেবারে ছেড়ে দেওয়াই ভালো। তবে তা তো আর সকলে পারেন না, তাই সেক্ষেত্রে ভরসা করতে পারেন নারকেলের চিনিতে। এর রংও বাদামি, অনেকটা নারকেলের খোলা কোরানো হলে যেমন দেখতে হয়, তেমনটা। এই চিনির পুষ্টিগুণ অনেক। এ চিনি মেদ কমাতে ওস্তাদ, ডায়াবেটিকও নয়। তবে এই উপাদানের চাহিদা অনেক বেশি বলে এটি একটু দামি। এই কোকোনাট সুগারে ক্যালোরিও অনেক কম থাকে। ১ টেবিল চামচ কোকোনাট সুগারে ৪৫ ক্যালোরির পাবেন। কাজেই মেদ ঝরাতে এই নারকেলের চিনি খুবই উপযোগী।
কোন চালে মেদ কমে
বাঙালির আরামের খাওয়া মানেই নানা তরিতরকারি বা পছন্দের মাছ-মাংসের সঙ্গে একটু ভাত। ভাত খান। তাতে আপত্তি নেই, তবে সাদা ভাত নয়, বরং পাতে রাখুন ঢেঁকি ছাঁটা ব্রাউন রাইস। ধান থেকে খোসা ছাড়িয়েই যে চাল মেলে সেটাই ব্রাউন রাইস। তাই এই চালে পুষ্টিগুণের পরিমাণও অনেক বেশি। এই চালকেই নানাভাবে প্রক্রিয়াজাত করে সাদা রিফাইনড চাল প্রস্তুত করা হয়। বাদামি চাল বা ব্রাউন রাইসে ক্যালোরি অনেক কম। তাই পাতে রাখলে মেদ বাড়ার ভয় একেবারে নেই। এতে ফ্যাটি অ্যাসিড ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রাও একেবারে নামমাত্র। সেই তুলনায় সাদা পরিশুদ্ধ চালে প্রায় কোনও পুষ্টিগুণই থাকে না। বারবার পরিশোধন করার ফলে এর সব গুণ তলানিতে গিয়ে ঠেকে। সাদা চালের ক্যালোরিও অনেক। খাওয়ার পর শরীরের ভিতরে গিয়ে সহজে ভেঙে পুষ্টি জোগাতে চায় না। তাই ছিপছিপে থাকতে আপন করুন বাদামি চাল।
কোন নুনের গুণ গাইব
আয়োডিন ও সোডিয়াম—এই দুইয়ের অফুরন্ত ভাঁড়ার হল নুন। যত বড় রাঁধুনিই হোক না কেন, তার মোক্ষম অস্ত্র কিন্তু এই নুন-ই। দারুণ রান্না অথচ আলুনি, ভাবুন তো, কী কেলেঙ্কারি! আবার এই বস্তুটির ভাগ বেশি হলেও রান্নার দফারফা। তাই অতি সাবধানে ব্যবহার করতে হয় হেঁশেলের এই অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটিকে। আর এই বদল আনলেই হাতেনাতে ফল পাবেন। সুমেধা বললেন, ‘ইদানীং বহু জায়গায় সাদা রিফাইনড নুনের বদলে রক সল্ট বা বিটনুন খাওয়ার চল হয়েছে। এই নুন ওজন কমাতে সহায়ক। এতে থাকা খনিজগুলি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবেও কাজ করে। তাই স্যালাড, ফল বা টক দইয়ে বিটনুন ছড়িয়ে খাওয়ার চল রয়েছে।’ নিত্য রান্নার কাজেও বিটনুন ব্যবহারে মান্যতা দিলেন সুমেধা। তাঁর মতে, এই নুন খাবারের সঙ্গে মিশলে দ্রুত হজম হয়, শরীরে শর্করা বাড়তে দেয় না। যে কায়িক পরিশ্রম করে মেদ ঝরানো হয়, তাতে এনার্জিও বাড়ায়। জিম, হাঁটাহাঁটি বা সাঁতার থেকে ফিরে এক গ্লাস ছাতুর শরবত বা ফল ও নানা বাদাম মেশানো স্যালাডে একটু বিটনুন মিশিয়ে খান। এতে শরীর বাড়তি এনার্জি পাবে ও মেদ ঝরবে। তাই যে যাই বলুক, আপনি খাবার পাতে একটু বেশি গুরুত্ব দিন বাদামিকে!