কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
পুরনো চাল নাকি ভাতে বাড়ে, কিন্তু পুরনো দিনের পেট্রোলিয়াম জেলিও যে ভাতে, থুড়ি, কাজে বাড়তে পারে তা কি জানতেন! সে ছিল একটা সময়। তখন রূপচর্চায় বাহারি কোনও ক্রিম বা ময়শ্চারাইজার বঙ্গললনার সাজঘর দখল করতে পারেনি। এদিকে শীতের দিনে ফাটা গোড়ালি হোক বা ঠোঁটের ফুটিফাটা, ভরসা ছিল হাতে গোনা দু’-একটি উপকরণ। তাদেরই অন্যতম পেট্রোলিয়াম জেলি। কৌটোর মধ্যে রং-গন্ধহীন সাদাটে থকথকে একটি ক্রিম। বাঙালির ঘরে ঘরে তখন সেই পেট্রোলিয়াম জেলির কদর ছিল দেখার মতো।
সময় এগিয়েছে। নারীর রূপচর্চায় এসেছে আমূল বদল। বাজার জুড়ে এখন হাজারো ক্রিম, ময়েশ্চারাইজার, লোশন। তবু ড্রেসিং টেবিলের কোণে আজও উঁকি দেয় পেট্রোলিয়াম জেলির কৌটো। শীতের কনকনে হাওয়া চামড়ায় টান ধরানোর দিনক্ষণে হোক সারা বছরের টুকিটাকি দরকারে— এই পেট্রোলিয়াম জেলিই ভরসা।
কিন্তু এই ‘টুকিটাকি দরকার’ সম্পর্কে অনেকেই অন্ধকারে। পা ও ঠোঁট ফাটা মেরামতির বাইরে এই পেট্রোলিয়াম জেলির ভূমিকা আর কী কী হতে পারে তা জানা নেই অনেকেরই। রইল তারই হদিশ।
দাগ গায়েব: পেট্রোলিয়াম জেলিতে থাকে তেল। তাই ওয়াটার বা অয়েল বেসড মেকআপের দাগ তুলতে এর জুড়ি নেই। আইলাইনারের ঘেঁটে যাওয়া দাগ হোক বা পোশাকে মেকআপ প্যাচ— পেট্রোলিয়াম জেলিকে ভরসা করুন নিশ্চিন্তে। ত্বকে লাগা দাগ তুলতে খাঁটি পেট্রোলিয়াম জেলি দাগটির উপর লাগিয়ে সুতির কোনও কাপড় দিয়ে মুছলেই উঠে যাবে তা। পোশাকে মেকআপের দাগ লাগলে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে রাখুন জায়গাটিতে। মিনিট দুয়েক পর পাতলা সুতির কাপড় ভিজিয়ে জায়গাটা মুছে নিলেই দাগ অনেক অস্পষ্ট হবে। এরপর একবার সাধারণভাবে কাচলেই দাগ উঠে যাবে।
মুছুন মেকআপ: এক একজনের ত্বক এক একরকম হয়। সকলের ত্বকে সবরকমের মেকআপ উপযোগী নয়। তবে মেকআপে যতই বৈষম্য থাকুক না কেন, মেকআপ তুলতে সকলেই আস্থা রাখতে পারেন পেট্রোলিয়াম জেলির উপর। ত্বকবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও অন্যতম সেরা মেকআপ রিমুভার হিসেবে পেট্রোলিয়াম জেলিকে স্বীকৃতি দেন। ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ তুলতেও এই জেলি খুব দক্ষ। সারা মুখে পেট্রোলিয়াম জেলি ভালো করে মেখে নেওয়ার পর সুতি বা মলমল কাপড় দিয়ে মুখ ভালো করে মুছলেই উঠে যায় যাবতীয় মেকআপ। চড়া মেকআপ হলে এই পদ্ধতি বার দুই অবলম্বন করুন। এরপর ঠান্ডা জলে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিলেই মেকআপ তোলার ঝঞ্ঝাট শেষ। চিকিৎসকদের মতে, এই জেলিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে না বলে মেকআপ তোলার পর ত্বকের যে যত্ন প্রয়োজন হয়, সেটিও এই জেলি থেকেই মেলে। তাই মেকআপ তোলার পর একেই ময়শ্চারাইজার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
নিখুঁত নেলপলিশ: হাতে সময় কম, এদিকে নেলপলিশ না পরলেই নয়! এমন সময়ে নেলপলিশ লাগানোর আগেই নখের চারপাশের ত্বকে হালকা করে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে রাখুন। ফলে হুড়োহুড়িতে রং নখের বাইরে বেরিয়ে গেলেও তা হালকা করে কোনও কাপড় দিয়ে মুছে নিলেই সহজে উঠে যাবে। নেলপলিশের ফিনিশিং হবে নিখুঁত।
চুলে থাক পার্টি লুক: সারাদিন অফিস সেরে কোনও পার্টিতে যেতে হবে, এদিকে চুল সেদিন মনমরা। শ্যাম্পু করার মতো সময় হয়তো হাতে নেই। তখন আপনার অসময়ের বন্ধু হতে পারে এই পেট্রোলিয়াম জেলি। রূপবিশেষজ্ঞ শর্মিলা সিং ফ্লোরার মতে, ‘চুলের ডাল ডে’-তে এই পেট্রোলিয়াম জেলির ছোঁয়া আপনার সাজে বাড়তি জেল্লা আনতে পারে। আঙুলের ডগায় অল্প করে জেলি নিয়ে সামান্য ঘষে সেরাম লাগানোর মতো করে হালকা হাতে চুলে আঙুল চালান। চুলের গোড়া বাদ দিয়ে মাসাজ করুন। এবার আঁচড়ে নিলেই চুলে আসবে বাড়তি ঔজ্জ্বল্য।’
ভুরুর যত্নে: প্রতিদিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভুরুর উপর সামান্য পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে হালকা করে ঘষে নিন। ধীরে ধীরে ভ্রুযুগল ঘন হবে।
চামড়ার নতুনত্বে: চামড়ার তৈরি ব্যাগ, বেল্ট বা জুতো অনুজ্জ্বল হয়ে গেলে শরণ নিন পেট্রোলিয়াম জেলির। কিছুক্ষণ এই জেলি মাখিয়ে লাগিয়ে রেখে দিন। ঘণ্টা দুই বাদে সুতির পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিলেই তা উজ্জ্বল হয়ে নতুনের মতো দেখাবে। চামড়ার কড়াভাবও দূর হবে এই জেলির মাধ্যমে। নতুন জুতো পরার আগে এই জেলি জুতোর নানা কোণায় মাখিয়ে রাখুন। সাত-আট ঘণ্টা রাখার পর ভালো করে মুছে সেই জুতো পরলে পায়ে আর ফোস্কাও পড়ে না।
সুগন্ধের মেয়াদ: ত্বকে সরাসরি পারফিউম লাগাতে নিষেধ করেন চিকিৎসকরা। পারফিউমে থাকা রাসায়নিক ত্বকের ক্ষতি করে। এই ক্ষতি রুখতে অল্প করে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিন। তার উপর পারফিউম দিন। এতে রাসায়নিক সরাসরি ত্বকে মেশার সুযোগ পাবে না, আবার সুগন্ধির গন্ধও সহজে উবে যাবে না।
হাতের কাছের ফার্স্ট এড: পেট্রোলিয়াম জেলিতে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল গুণাবলি রয়েছে। তাই নিত্যদিনের কাটাছেঁড়া হোক অথবা হালকা ছ্যাঁকা লাগা বা পুড়ে যাওয়া— ভালো করে ক্ষতস্থান জল দিয়ে ধোয়ার পর সেখানে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে দিন। ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণও রুখে দেওয়া যাবে আবার ত্বক কোমলও থাকবে।
তাহলে কি প্রতিদিন নানা কাজে ও রূপচর্চায় ভরসা এবার পেট্রোলিয়াম জেলিই?
‘শুষ্ক ত্বক হলে আপত্তি নেই।’ জানালেন ত্বকবিশেষজ্ঞ ডাঃ সুমন রুদ্র। তবে সাবধানতার পাঠও দিলেন তিনি। তাঁর মতে, ‘সব ধরনের ত্বকেই এই পেট্রোলিয়াম জেলি উপকারী, তবে নিত্য ব্যবহার করলে কিছু বিধিনিষেধ মানতে হবে।’
• যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, র্যাশ ও ব্রণর সমস্যায় প্রায়ই ভোগেন, তাঁরা রূপচর্চায় পেট্রোলিয়াম জেলি
খুব একটা ব্যবহার না করে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কোনও ক্রিম ব্যবহার করুন।
• পেট্রোলিয়াম জেলি হাইড্রোকার্বন। এটি হাইড্রোজেন ও কার্বনের যৌগ। আমরা যে মিথেন গ্যাস জ্বালাই, সেটিও হাইড্রোকার্বন। পেট্রল, খাওয়ার তেল এমনকী মোমও হাইড্রোকার্বন। তাই রোজ অতিরিক্ত হারে এটি ব্যবহার করলে তা ফুসফুসে গিয়ে লিপিড নিউমোনিয়া ডেকে আনতে পারে। তাই পেট্রোলিয়াম জেলি নিয়ন্ত্রিত হারে ব্যবহার করুন।