কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
অস্কারজয়ী বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে নানারকম কাজ হচ্ছে গত বছর থেকে। তার মধ্যেই একটি, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক, সুখেন বিশ্বাসের লেখা প্রবন্ধ সংকলন ‘বিষয় সত্যজিৎ।’ সত্যজিৎকে নিয়ে চর্চা বিশ্লেষণ গবেষণা তিনি করে এসেছেন বহু আগে থেকেই। জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত প্রবন্ধ একত্রিত করে এই বইটি প্রকাশিত হয়েছে। বইটির সবচেয়ে বড় গুণ, বাঙালির অতিপ্রিয় পরিচালক, লেখক, চিত্রশিল্পী ও বহুধাবিস্তৃত গুণের আধার সম্পর্কে নানা তথ্যসমৃদ্ধ কথা গল্পচ্ছলে বলে দেওয়া। যে গল্পের কিছু কিছু হয়তো অনেক সত্যজিৎ-ভক্তের কণ্ঠস্থ। আবার কিছু বিষয় নতুন করে জানা। প্রবন্ধের পাশাপাশি বইতে রয়েছে সত্যজিৎ ও তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কিত চার বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার— সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্দীপ রায় এবং শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মানিকখচিত শৈশব থেকে যৌবন বা মাঝবয়েস— গল্পে গল্পে উঠে এসেছে নানা মুহূর্ত। সত্যজিতের কালজয়ী ছবি ‘পথের পাঁচালী’র নির্মাণের পিছনের বহু গল্প নির্ভর করে সম্প্রতি তৈরি হয়েছে একটি ছবি। এ বইতে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ রয়েছে সেই গল্পগুলি ঘিরেই। কেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’কে চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল সত্যজিতের? সে ছবি করতে গিয়ে কত বাধাবিপত্তি এসেছিল সামনে সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ ধরা পড়েছে সুখেনবাবুর লেখনীতে।
যৌবনে ইংরেজি সাহিত্য ও বিদেশি সিনেমায় ডুবে থাকা সত্যজিৎ যে একদিন বাংলা সাহিত্যে বুঁদ হবেন, এবং একের পর এক ব্যতিক্রমী ছবি করবেন, তা যেন স্থির করে রেখেছিলেন তিনি নিজেই। এ প্রসঙ্গে নলিনী দাশের (উপেন্দ্র-কন্যা পুণ্যলতার কন্যা) ‘সাত রাজার ধন এক মানিক’ থেকে ভারি সুন্দর একটি অংশ তুলে দিয়েছেন লেখক। নলিনী-মানিক এঁরা যখন শৈশবে খেলতেন, একদিন খেলার সঙ্গী ‘দিদি একটা সুন্দর ব্রাউন ব্যাগে লিখল ডক্টর সত্যজিৎ রায়, এম ডি, এফ আর সি এস, এম আর সি পি। মানিককে বলল, ‘তুমি বেশ মস্তবড় ডাক্তার, আমরা সবাই তোমার রুগী, তুমি আমাদের চিকিৎসা করবে।’ মানিক কিন্তু বেঁকে বসল, ‘না আমি ত ডাক্তার হব না। আমি জার্মানি গিয়ে সিনেমা তৈরি শিখে এসে সিনেমা বানাব।’
শুধু ‘পথের পাঁচালী’-র নির্মাণকাহিনি নয়, রয়েছে তাঁর অন্য ছবি সংক্রান্ত বিভিন্ন কৌতূহলোদ্দীপক গল্প। এসেছে ‘সোনার কেল্লা’ তৈরির সময় রাজস্থানের সঙ্গীতের সমঝদার ডাকাতকুলের গপ্প। যে কারণে সেইসব ‘রিফর্মড’ ডাকাত নিজগুণে হয়ে উঠেছেন সেই ছবিরই অংশ। ‘পথের পাঁচালী’ তৈরির কুড়ি বছর পরে আবার বোড়ালের বাঁশবনে ফিরে ছিলেন পরিচালক। এবার গুপীবাঘার জন্য। ততদিনে ছবিকরিয়ে হিসেবে এতটাই নাম তাঁর, বোড়াল গ্রাম ভেঙে পড়েছিল বাঘের শ্যুটিং দেখতে। এমন টুকরোটাকরা অজস্র অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন লেখক।
বিষয় সত্যজিৎ/ সুখেন বিশ্বাস/
দেজ পাবলিশিং/ ২৬০ টাকা।