বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
দিতিপ্রিয়া রায়
আজ বড়দিন। অনেকেরই ছুটি হয়তো। কিন্তু আমার ছুটি নেই। ২৫ ডিসেম্বর শ্যুটিং করে কাটছে। ‘আয় খুকু আয়’-এর শ্যুটিংয়ে কলকাতার বাইরে রয়েছি। ফিরতে ফিরতে হয়তো বছরের শেষ হয়ে যাবে। ৩১ ডিসেম্বর শ্যুটিং সেরে ফিরব সম্ভবত। সেদিনও আর আলাদা করে পার্টি করার এনার্জি থাকবে না হয়তো। ফলে এবছর ছুটির সময়টা কাজেই কাটবে। অন্যান্য বছরও ২৫ ডিসেম্বর শ্যুটিং থাকত। কিন্তু গত দু’বছর ইচ্ছে করেই শ্যুটিং এড়িয়ে গিয়েছিলাম। এখন মনে পড়ে বেশ নস্টালজিক লাগছে। গত বছর পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম। তার আগেরবার সমুদ্র। যদি বেড়াতে যেতে না-ও পারি, অন্তত ২৫ ডিসেম্বর রাতটা বাড়ির বাইরে থেকে মজা করতাম।
বড়দিন মানেই কেক। আমি খুবই কেক খেতে ভালবাসি। শ্যুটিংয়ে এসেও কেক খাচ্ছি। কলকাতায় থাকলে মা বাড়িতে রকমারি কেক বেক করে। এসময় বাড়িতে কেউ এলেও নানারকম কেকই নিয়ে আসে। আমি ফুডি। কিন্তু সেটা নির্ভর করে মুডের উপর। আমি আসলে খুবই মুডি। তবে পরিমাণে অল্প হলেও সব রকমের খাবার খাই। কেক তো বাদ দিতেই পারব না।
ছোটবেলার বড়দিন মানে আমার কাছে ছিল চার্চে যাওয়া। কলকাতায় বড় হয়েছি। কিন্তু এই সময়টা আজ পর্যন্ত পার্ক স্ট্রিট যাওয়া হয়নি! ক্রিসমাস আর নিউ ইয়ারে পার্ক স্ট্রিট কেমন সাজানো হয়, তা সামনে থেকে দেখিনি। কারণ আমার বন্ধুদের যে গ্রুপটা রয়েছে, তারা প্রত্যেকেই খুব লাজুক। পার্ক স্ট্রিট যাওয়ার থেকে আমাদের মনে হয়, বাড়ি বসে আড্ডা দিলেই তো হয়। সেজন্য আর যাওয়া হয়নি। প্রত্যেকবারই ভাবি যাব, কোনওবার হয়তো নিশ্চয়ই হবে।
গৌরব চট্টোপাধ্যায়
২৪ ডিসেম্বর রাত থেকেই আমাদের সেলিব্রেশন শুরু। কোনওবার বাইরে যাই, কোনওবার বাড়িতেই থাকি। ৩১-এর রাত যেমন প্রতি বছর বাড়িতেই সেলিব্রেশন হয়। ক্রিসমাস ইভে আমি, স্ত্রী দেবলীনা (কুমার), বন্ধুদের সঙ্গে থাকি। কখনও বাড়ির লোকেরাও থাকেন। ক্রিসমাসে পার্টি করতে ভালো লাগে। তাই ২৫ ডিসেম্বর সকালে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি হয়। তারপর কোথাও লাঞ্চে গেলাম বা বিকেলে খুব কাছের মানুষদের নিয়ে কোথাও খেতে গেলাম। এ বছর আমার নতুন মেগা ধারাবাহিক শুরু হয়েছে ‘গাঁটছড়া’। ২৫ ডিসেম্বর সাধারণত শ্যুটিং রাখি না। এ বার কাজ শেষ করে ডিনারে যাব।
এখন বা গত বেশ কয়েক বছর ক্রিসমাসে যেভাবে পার্ক স্ট্রিট সাজানো হয়, আমার ছোটবেলায় এত সাজানো হতো না। তবে অন্যরকম পরিবেশ থাকত। ক্রিসমাসে পার্ক স্ট্রিটে গিয়ে আনন্দ করতাম। বাবা, মায়ের সঙ্গে যেতাম ফ্লুরিজে। ডিনার করতাম বারবিকিউতে। আর ছিল গ্রেট ইর্স্টান। বাঙালিদের টিপিক্যাল মেনু সুইট কর্ন স্যুপ, ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন...। এগুলো খেতাম।
আমি দার্জিলিংয়ে সেন্ট পলসে পড়েছি। বিয়ের পর দেবলীনাকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। ওকে নিয়ে গিয়েছিলামও। আর একটা ইচ্ছে আছে। আমাদের স্কুলে প্রতি বছর লম্বা ছুটি পড়ার আগে সুন্দর করে স্কুল সাজানো হতো। বড়দিনের প্রার্থনা হতো। এখনও হয়। সেটা ওকে দেখানোর ইচ্ছে আছে। দেবলীনা এমনিতে খুব শীতকাতুরে। ও যদি ঠান্ডাটা কন্ট্রোল করতে পারে, তাহলে কোনও একবার ওকে নিয়ে যাব।
ক্রিসমাসে আর একটা জিনিস মিস করি। নাহুমস থেকে ব্রাউনি নিয়ে আসত বাবা। অনেক বছর সেটা হয়নি। এবছর সেটা নিয়ে আসব।
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
আমার মেয়ে কিয়ার বয়স আড়াই বছর। ওকে বাড়িতে রেখেই কয়েক মাস হল শ্যুটিং শুরু করেছি। মা প্রতিদিন কাজে যাচ্ছে, এই ব্যাপারটার সঙ্গে কিয়া মানিয়ে নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ও আমাকে মিস করে। তাই এখন আমার কাছে একটা দিন ছুটি মানেই সেটা ওর জন্য। সেটাই একটা উৎসবের মতো। ২৫ ডিসেম্বর, বড়দিনও তাই। আজ শ্যুটিং রাখিনি। আজকের দিনটা কিয়ার।
বাড়িতে একটা ক্রিসমাস ট্রি আছে। সেটা উপর থেকে নামিয়ে সাজিয়েছি। কিয়ার জন্য সান্টাক্লজ এনেছি। মোজা ঝুলিয়েছিলাম। ও যা দেখে, তা যে সত্যি হয়, সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আসলে এখন তো ওকে নিয়ে বেশি বেরতে পারছি না। তাই বাড়িতেই সাজানোর চেষ্টা করেছি। যেদিন ক্রিসমাস ট্রি ছাদ থেকে নিয়ে এলাম, সেদিন কিয়া দেখেই প্রথমে বলল, ‘ক্রিসমাস ট্রি’। তারপর বলল, ‘জিঙ্গল বেল’। কথা বলতে শিখেছে। সান্টাক্লজকে চেনে এখন।
আমার ছোটবেলার ক্রিসমাস মানে কিন্তু পার্ক স্ট্রিট নয়, নিউ মার্কেট। আমরা যেতাম। ওল্ড নিউ মার্কেটের মাঝখানে বড় ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে সাজানো হতো। বাবা-মায়ের সঙ্গে নিউমার্কেট যাওয়া, নাহুমসের কেক খাওয়া নিয়মের মতো ছিল। নাহুমসে গিয়ে দুই বাড়ির জন্য কেক কেনা এখনও আছে।
কিয়ার হাত ধরে নিজের ছোটবেলাটা ফিরে দেখছি। আমি যেহেতু অল্প বয়সে মা হইনি, সে কারণে এই ফিরে দেখাটা আমাকে মা, বাবার কাছে আবার নিয়ে যাচ্ছে। অল্প অল্প পাওয়া, কিন্তু তাতেই আনন্দ। একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। এটা আনন্দের সময়। বাচ্চাদের নিয়ে হয়তো বেরবেন সকলে। বড়রা সচেতন থাকুন। মাস্ক পরুন। বাচ্চাদের যতটা কম সম্ভব ছোঁবেন। ছোট ছোট বিষয়ে সাবধান হলে তবেই আমরা ভালো থাকব।
অপরাজিতা আঢ্য
২৫ ডিসেম্বরের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করার সুযোগ পাইনি। গতকালই চেন্নাই থেকে শ্যুটিং সেরে ফিরলাম। ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারির মধ্যে একটা দিন রাস্তায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের খাবার আর কম্বল দিই। বাচ্চাদের খেলনা দিই। এবার হয়তো আজই করতে পারব না। সবে ফিরলাম। আমি যে একা করতে পারি তা নয়, অনেকটা পুঁজি লাগে। অনেকে সাহায্য করেন। উদ্যোগ আমি নিই, কনট্রিবিউশনও থাকে।
ছোটবেলায় ক্রিসমাস বলতে যেটা মনে পড়ে, বাড়িতে একটা যিশুখ্রিস্টের মূর্তি ছিল। বড়দিনে মা সেটা নামিয়ে দিত, আমরা সাজাতাম। বাড়িতে একটা কেক আনা হতো, সেটা মজা করে খাওয়া, সেটাই আনন্দ। পয়লা জানুয়ারি হাওড়া থেকে বাসে বাবার সঙ্গে কলকাতায় আসতাম। কিন্তু বাসে উঠলেই শরীর খারাপ হতো। সে জন্য সেভাবে আর আনন্দ করতে পারিনি।
এই সময়টা কীভাবে সেলিব্রেশন-পার্টি হয়, তা জানতে পারি বিয়ের পর ২০০০ সাল থেকে, পুরোদস্তুর অভিনয় তখন শুরু করেছি। এত রক্ষণশীল পরিবারে বড় হয়েছি, ক্রিসমাস বা নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনের কথা শুনেছি, পড়েছি বা সিনেমায় দেখেছি। বাস্তবে অভিজ্ঞতা ছিল না।
আমার কাছে এই সময়ের সেলিব্রেশন মানে কিন্তু পার্টি নয়। যাঁদের প্রয়োজন, তাঁদের পাশে থাকতে পারাতেই আমার আনন্দ। যাঁদের জন্য কাজ করি, তাঁরা হয়তো জানতে পারেন না। যদি ভালো কাজ করি, তাতে একটা মানুষের উপকার হয়, তার তো একটা পজিটিভ ভাইব তৈরি হয়। সেটা ঠিক আমার কাছে ফিরবে। আমি তো নিজে কিছু করতে পারি না, আমি বিশ্বাস করি, যার কাছে পৌঁছল, তাঁর ভাগ্যে ছিল বলেই আমি করতে পারলাম। সুতরাং তিনি আমাকে সুযোগ করে দিলেন বলে তাঁকে ধন্যবাদ। এটাই আমার ক্রিসমাস গিফট।
ঋষি কৌশিক
২৫ ডিসেম্বর মানেই পার্টি সিজন। পুরো শীতকাল জুড়েই চলে। আমি বাইরে পার্টি করলেও তা খুব কম, একেবারেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে। বরং হাউজ পার্টিই ভালো লাগে। এই বন্ধুরা সকলেই ইন্ডাস্ট্রির বাইরের। আমার বাইকিংয়ের বন্ধুরা। একসঙ্গে বাইকে চড়ে ঘুরতে যাই। ওদের সঙ্গে কোনও প্রফেশনাল সম্পর্ক নেই। ওদের সঙ্গেই ক্রিসমাস সেলিব্রেট করব।
এই সময়টা বেড়াতে যেতে ভালোই লাগে। ২০২০তে শেষবার বন্ধুদের সঙ্গে বাইকে পুরুলিয়ায় গিয়েছিলাম। এবার কলকাতাতেই। আমার নতুন ধারাবাহিক ‘সোনা রোদের গান’ শুরু হবে। কাজ চলছে। ক্রিসমাসের কথা উঠলে কেকের কথা বলবই। বাড়িতে বেক করা হয় না। কিনেই খাওয়া হয়। কেক খেতে কার না ভালো লাগে? আমারও দারুণ লাগে। যখন ডায়েট করি, তখন সবটাই মেনটেন করি। আবার ফেস্টিভ সিজনে সব কিছু খাই। তৃপ্তি করে। ডায়েটে থাকা ভালো। কিন্তু সবসময় সেটা অসম্ভব। মনের শান্তির জন্যও তো কিছু করতে হয়।
আমি তেজপুরের ছেলে। সেখানে কলকাতার মতো ক্রিসমাস সেলিব্রেশন একেবারেই হতো না। খ্রিস্টানদের মধ্যে হতো অবশ্য। এখন অনেকটা বদলেছে। গ্লোবালাইজেশনের পর তেজপুরেও এখন সেলিব্রেশন হয়। কিন্তু যখন আমি থাকতাম, তখন কলকাতার মতো উন্মাদনা ছিল না। স্কুলের ছুটি হয়ে যায়। গির্জা সাজানো হয়। আগে আমাদের বাড়ির পাশেই খ্রিস্টান পরিবার থাকত। ওদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ থাকত। আমরা যেতাম। সেসময়ের কথা ভাবলে নস্টালজিক লাগে!
একটাই অনুরোধ করব, ফেস্টিভ সিজন, সকলে আনন্দ করুন। কিন্তু নিরাপদ দূরত্ব মেনে। দুটো বছর করোনার জন্য মানুষের লোকসান হয়েছে। মানুষ একটু রিফ্রেশমেন্ট খুঁজবেই। কিন্তু সাবধান থাকতে হবে।