সন্তানের সাফল্যে গর্ব বোধ। আর্থিক অগ্রগতি হবে। কর্মে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ঘাড়, মাথায় যন্ত্রণা বৃদ্ধিতে বিব্রত ... বিশদ
বাঙালি এখন স্বাস্থ্যসচেতন। ফ্যাটি লিভার ও কোলেস্টেরল ভরা শরীরকে বাগে আনতে সেও ডায়েট, শেক ও শারীরিক কসরতের দুনিয়াকে আপন করে নিয়েছে। নিত্য অফিস সামলেও সে খানিক হাঁটাহাঁটির সময় খুঁজে বের করছে। এমন রুটিনে অভ্যস্ত গৃহস্থ তেল-মশলা কম খাওয়ার দিকে ঝুঁকবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে কিছু রান্না আছে যা সাধারণ বাসনকোসনে রাঁধলে কম তেল ব্যবহার করা যায় না। তাই কম তেলে রান্নার প্রয়োজনীয়তা বুঝে নন স্টিক পাত্র ব্যবহারের রেওয়াজ বাড়ছে বাঙালি হেঁশেলে। অনেকে আবার নন স্টিকের চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে হার্ড আয়োনাইজড পাত্র ব্যবহার করতে চাইছেন। নন স্টিক বা হার্ড আয়োনাইজড পাত্রের ধাতুর সঙ্গে খাদ্যের উপাদানের কোনও রকম খারাপ বিক্রিয়া ঘটে না। তাছাড়া এইসব পাত্রে খুব কম তেলে তাড়াতাড়ি রান্না করা যায়, রান্নার পর পাত্রের গায়ে খাবার লেগে থাকার ভাবনাও থাকে না। আগুনের উচ্চ তাপেও পাত্র পোড়ে না। আজকাল তাই নন স্টিক ও হার্ড আয়োনাইজড রান্নার সরঞ্জাম হেঁশেলের জরুরি জিনিস হয়ে উঠেছে। বাজারে রয়েছে নানা সংস্থার নানা উপকরণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় কোন কোন জিনিস কেনা বুদ্ধিমানের কাজ হবে? দামই বা কেমন? রইল সেসবের খোঁজ।
হার্ড আয়োনাইজড কড়াই: কড়াই কেনার পরিকল্পনা থাকলে নন স্টিকের চেয়েও ভালো হবে হার্ড আয়োনাইজড কড়াই। ঢাকা সহ বা ঢাকা বাদ দিয়ে দু’রকম ভাবেই কিনতে পারেন এটি। প্রায় সব সংস্থা তাদের হার্ড আয়োনাইজড কড়াইয়ের গেট আপ সুন্দর করার জন্য কড়াইয়ের গায়ে নন স্টিকের মসৃণ আস্তরণ ব্যবহার করে থাকে। ফলে নন স্টিকের গুণ এতে এমনিই পাওয়া যায়। কড়াই ব্যবহারের সুবিধার জন্য এর সঙ্গে কাঠের বা তাপের কুপরিবাহী নানা উপকরণের হাতল দেওয়া থাকে। বাজারচলতি সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রেস্টিজ, হকিন্স, ওয়ান্ডারশেফ, পিজিয়ন, নির্লন, সেলো ইত্যাদি ব্র্যান্ডের উপর ভরসা করতে পারেন। ১.৫, ২, ২.৫, ৩ ও ৪ লিটার ইত্যাদি নানা আয়তনে এই কড়াই মিলবে। সংসারের প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নিলেই চলবে। ঢাকা সহ কিনলে দাম একটু বেশি পড়ে ঠিকই, তবে সেই মডেল দেখতেও ভালো হয়। কড়াইয়ের তলা গোল বা চ্যাপ্টা দু’ধরনের বিকল্পই পাবেন।
প্রেস্টিজের দুই লিটার আয়তনের কড়াই পাবেন ১১০০ টাকার মধ্যে। আবার আর একটু বড় আকারের কিনতে চাইলে তাও পাবেন। এই সংস্থার ৩ লিটার আয়তনের ঢাকা সহ হার্ড আয়োনাইজড কড়াই পাবেন ২২০০-২৩০০ টাকার মধ্যে। তবে এগুলোর অনেক মডেল আভেন সেফ নয়। কাজেই ওটিজি বা ইন্ডাকশনে রান্না করার পরিকল্পনা থাকলে কেনার আগে কড়াইয়ের বৈশিষ্ট্য ভালো করে জেনে নেবেন।
রান্নার সরঞ্জামে হার্ড আয়োনাইজড বিভাগে হকিন্সের ফিউচুরা খুব জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। কড়াইয়ের ক্ষেত্রে এদের বাছাইয়ের বিকল্পও অনেক বেশি। কড়ার তলদেশ সমতল বা গোল দুই-ই হতে পারে। ঢাকনা ছাড়া বা ঢাকনা সহ দু’রকম ভাবেই পাওয়া যায়। এদের কোনও কোনও মডেল ইন্ডাকশন ও ওটিজিতেও ব্যবহার করা যায়। সাধারণত ১২০০-২০০০ টাকার মধ্যে নানা মডেল পাবেন।
নন স্টিক কড়াই: হার্ড আয়োনাইজড ছেড়ে শুধুই নন স্টিক কড়াই কিনতে চাইলে সেলো ও পিজিয়ন পছন্দ করতে পারেন। কম বাজেটে ভালো মানের কড়াই বাজারজাত করে এই দুই সংস্থা। ১.৫ লিটার আয়তনের পিজিয়নের কড়াই মিলবে ১০০০ টাকার আশপাশে। লাল ও কালো দুই রঙে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়ামের উপর নন স্টিক মেটেরিয়াল কোট করা এই কড়াই দেখতেও আকর্ষণীয়। একটু বড় আকারের চাইলে তিন লিটারের কড়াইটি বাছতে পারেন। দাম পড়বে ১৪০০ টাকা।
কম বাজেটে নন স্টিক কড়াই কেনার পরিকল্পনা থাকলে বাছতে পারেন সেলো-কেও। ঢাকা সহ ও ঢাকাবিহীন দু’রকম বিকল্পই পাবেন। এদের নানা মডেল ইন্ডাকশনেও ব্যবহার করা যায়। চেরি, লাল, কালো, গাঢ় সবুজ, বাদামি বিভিন্ন আকর্ষণীয় রঙের কড়াই পাবেন। ১.৫-৩ লিটারের নানা মাপের কড়াইগুলোর দাম ঘোরাফেরা করবে ৯৫০-১৫০০ টাকার মধ্যে।
নন স্টিক তাওয়া: পরোটা, ধোসা, পোচ বা ওমলেট ভাজার জন্য কম তেলের বাসনপত্র খুঁজছেন? তাহলে নন স্টিক তাওয়ায় ভরসা রাখুন। এক্ষেত্রেও প্রেস্টিজ, হকিন্সের ফিউচুরা, কুচিনা, বিনোদ, সেলো, নিরলনের উপর ভরসা করতে পারেন। গরম অবস্থাতেও ধরা যাবে এমন হাতল প্রায় সব মডেলের সঙ্গেই যোগ করা থাকে। অ্যালুমিনিয়ামের উপর নন স্টিক মেটেরিয়াল কোট করা এই তাওয়াগুলিতে যেমন তেল খরচ কম হয়, তেমন খাবার রান্নার পর তা পাত্রের গায়ে লেগেও থাকে না। তবে কেনার আগে কত দিনের ওয়্যারান্টি রয়েছে তা দেখে কিনবেন। কত ইঞ্চি ব্যাসযুক্ত তাওয়া কিনছেন তার উপর নির্ভর করবে দাম। সাধারণত ২৫ সেমি ব্যাসবিশিষ্ট প্রেস্টিজের তাওয়ার দাম পড়বে ৬০০-৭০০ টাকা। আবার পিজিয়নের ৩১ সেমি ব্যাসের তাওয়ার জন্য খরচ হবে প্রায় ৯৫০-১০০০ টাকা। নিরলনের ২৭-২৮ সেমি ব্যাসের তাওয়ার জন্য বাজেট রাখুন ৪৫০-৫০০ টাকার মধ্যে। বিনোদের ৩০ সেমি ব্যাসের তাওয়া কিনলে খরচ হবে ১০০০ টাকার আশপাশে। হকিন্স ফিউচুরা পছন্দ হলে ২২ সেমি ব্যাসের তাওয়ার জন্য বাজেট রাখুন ৮৫০-৯০০ টাকা।
হার্ড আয়োনাইজড হাঁড়ি: কড়াইয়ের মতো হাঁড়ির বেলাতেও নন স্টিকের চেয়ে হার্ড আয়োনাইজড বেশি জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যকর। হকিন্সের ফিউচুরা এমন হাঁড়ি বাজারজাত করেছে। একটি লম্বা হাতল বা দু’টি ছোট হাতল কিংবা একটি লম্বা হাতল ও একটি ছোট হাতল এমন নানা বিকল্পে এদের হাঁড়ি পাবেন। স্যস প্যানের মতো দেখতে এমন হাঁড়ির আয়তন ৩ লিটার। দাম পড়বে ১৫০০-১৬০০ টাকার মধ্যে। অনলাইনে কিনলে কিছুটা ছাড় পাবেন।
বিনোদের হার্ড আয়োনাইজড হাঁড়ির আয়তন ৩.৮ লিটার। এটি ইন্ডাকশন আভেনেও ব্যবহার করা যাবে। দাম পড়বে ১৪০০ টাকার কাছে। এমব্যাসির হার্ড আয়োনাইজড হাঁড়িও বেশ জনপ্রিয়। এদের বেলায় ১-৩.৫ লিটার পর্যন্ত নানা আয়তনের পাঁচটি হাঁড়ি একসঙ্গে কিনতে পারবেন। পুরো প্যাকেজটির দাম পড়বে ৪০০০ টাকার আশপাশে। আবার আলাদা করে ২ বা ৩ লিটার আয়তনের হাঁড়িও কিনতে পারেন। দাম পড়বে ৮৫০-৯০০ টাকার মধ্যে। অনলাইন অফারে আর একটু কমে পাবেন।
হার্ড আয়োনাইজড প্রেশার কুকার: দেখতেও হবে সুন্দর আবার কাজেও হবে খাঁটি। এমন মানের প্রেশার কুকার খুঁজলে হার্ড আয়োনাইজডই সেরা বাছাই। এক্ষেত্রে পিজিয়ন, প্রেস্টিজ ও হকিন্স এই তিন সংস্থারই যথেষ্ট সুনাম। ইন্ডাকশন ও গ্যাস আভেন দু’জায়গাতেই ব্যবহার করতে পারবেন হকিন্স ফিউচুরার প্রেশার কুকারটি। আধুনিক প্রযুক্তি ও দারুণ নকশায় তৈরি এই কুকারটি কাজেও বেশ দড়। ২-৩ লিটার আয়তন যুক্ত নানা মডেল পাবেন। দাম পড়বে প্রায় ৩ হাজার টাকা। তবে এটি ছাড়াও আর একটু কম বাজেটে হকিন্সের প্রেশার কুকার চইলে হকিন্স কন্টুরাকে বাছতে পারেন। সেক্ষেত্রে ৩ লিটারের দাম পড়বে ১৮০০ টাকার আশপাশে। ৫ লিটারের দাম পড়বে প্রায় ২৫০০ টাকা।
প্রেশার কুকারের দুনিয়ায় প্রেস্টিজ খুবই জনপ্রিয়। বড় আয়তনের কুকার প্রয়োজন হলে এই সংস্থার নক্ষত্র ডুও প্লাসকে বাছতে পারেন। ৫ লিটারের এই কুকারের দাম পড়বে প্রায় ২৫০০ টাকা। প্রেস্টিজেরই নতুন নকশার সাড়ে তিন লিটার হার্ড আয়োনাইজড প্রেশার কুকার কিনতে চাইলে বাজেট রাখুন প্রায় ২৩০০ টাকা। একটু কম বাজেটে প্রেস্টিজের কুকার কিনতে চাইলে এর নক্ষত্র কিউট ডুও স্বচ্ছকে বাছতে পারেন। সেক্ষেত্রে ২ লিটারের দাম পড়বে প্রায় ১৫০০ টাকা। এই মডেলগুলি ছাড়াও প্রেস্টিজের কুকারে নানা ভ্যারাইটি পাবেন।
কম বাজেটে আকর্ষণীয় নকশা চাইলে পিজিয়নের প্রেশার কুকারও বাছতে পারেন। ৫ লিটার আয়তনের হার্ড আয়োনাইজড পিজিয়ন টাইটানিয়াম কুকারের দাম পড়বে ১৫০০-১৬০০ টাকার মধ্যে। ২ লিটারের দাম পড়বে প্রায় ১২০০ টাকা।
কম তেলে রান্নার দিনগুলোয় এবার হাতের কাছেই মজুত থাকুক এরা।