বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
১৯৯৭-২০১৯ জার্নি কেমন ছিল?
খুব এক্সাইটিং। দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, আত্মত্যাগ, কঠিন পরিশ্রম সবটাই মিলিয়ে মিশিয়ে।
বিয়ের পর আপনার কেরিয়ার শুরু হয়। সেটা কীভাবে সম্ভব হল?
১৯৯৫-তে আমার বিয়ে হয়। আমার শ্বশুরবাড়ি একটি রক্ষণশীল ব্যবসায়ী পরিবার। ফলে ফ্যাশন ডিজাইনিংকে নিয়ে কীভাবে পেশা করা যায়, সে সম্পর্কে গাইড করার আমাকে কেউ ছিল না। বাধা-সমর্থন পাশাপাশি এসেছে।
ছোটবেলার থেকেই কী ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন ছিল?
একেবারেই নয়। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ডাক্তারিতে সুযোগ পাই। কিন্তু বিশেষ কারণে বিবি কলেজ বটানি অর্নাস নিয়ে ভর্তি হই। গ্র্যাজুয়েশন করার পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ার জন্য পরীক্ষা দিলাম। সুযোগ পেলাম। সেই সময় কাগজে ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্সের বিজ্ঞাপন দেখে বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ লিবারেল আর্টস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস-এ ভর্তি হই। ১৯৯৭’তে এমবিএ এবং ফ্যাশন ডিজাইনিং পাশ করি।
এই পেশায় আসার পেছনে আপনার শাশুড়ি মা অনুপ্রেরণা ছিল এমন কথা শোনা যায়...
একদম ঠিক। বেশিরভাগ শাশুড়ি মা পুত্রবধূর অ্যাচিভমেন্টে খুশি হন না। কিন্তু উনি গর্ববোধ করতেন, উনি আমার শুধু শাশুড়ি মা নন, প্রিয় বান্ধবী ছিলেন। আমার স্বামী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা পছন্দ করতেন না। এমনকী মুম্বই-এ সেটেলড হয়ে বলিউডে কাজ করি সেটাও চাননি। আবার এমনও হয়েছে মে মাসের দুপুরে চড়া রোদে দিল্লিতে অটোয় চড়ে আমার স্বামী আমাকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন শপিং মলে পোশাক সাপ্লাইয়ের জন্য ঘুরে বেরিয়েছেন।
শ্রীদেবীকে পোশাক পরিয়ে আপনি লাইমলাইটে আসেন। তবুও আপনাকে সেভাবে জাতীয় স্তরে পাওয়া গেল না কেন?
আমার মনে হয় বেশি করে দিল্লি, মুম্বইতে গিয়ে কাজ করলে ভালো হতো। সেজন্য ওখানে গিয়ে থাকতে হতো। সিনেমার কাজ থেকে তো বেশি প্রচার হয়। শ্যুটিং স্পটে ডিজাইনারকে থাকার জরুরি। প্রয়োজনে ওয়ার্কশপে কাজ করাতেও হয়। কিন্তু কলকাতা ছাড়া অন্য শহরে আমার তো কোনও ওয়ার্কশপ নেই। পরিচালক ও ডিজাইনারের কো-অর্ডিনেশন খুব জরুরি। তবুও ‘কই মেরে দিল সে পুছে’, ভায়া দার্জিলিং ইত্যাদি ছবিতে কাজ করেছি।
বাংলা ছবিতে প্রথম ফ্যাশন ডিজাইনার আপনি...
একদম ঠিক। আমার হাতেখড়ি অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর ছবি দিয়ে। ছবিতে ঋতুর জন্য পাঁচ-ছ’টা কসটিউম আমি করেছিলাম। সেই থেকে শুরু। একজন নতুন ডিজাইনারের ওপর আস্থা রেখে ঋতুপর্ণা আমাকে দায়িত্ব দেন। সেজন্য আজও ওঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এরপর ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের বন্ধন-এর জন্য কসটিউম করি। কম বেশি প্রায় ১৫টি বাংলা ছবিতে এরপর কাজ করেছি।
আপনি এক সময়ে মিঠুন চক্রবর্তীর একচেটিয়া পোশাক তৈরি করতেন...
ওঁর মতো জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা যে আমার পোশাক পরতেন তার জন্য কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। কাজের মাধ্যমে পরিচিত হলেও আজ উনি আমার পরিবারের একজন। ওঁর বড় ছেলে মিমো যখন সিনেমায় আসতে চলেছে তখন ওঁর মুম্বইয়ের বাড়ি যাই। দাদা নিজের হাতে আমাকে রান্না করে খাওয়ান। আজও ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ আছে।
এখন আপনাকে ছবিতে কসটিউম করতে দেখা যায় না কেন?
এখন আমি অনেক সিলেকটিভ। কারণ একটা সময়ে অনেক ছবির থেকে আমি টাকা পাইনি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভালো ছবি এবং উপযুক্ত পারিশ্রমিক পেলেই কাজ করব নচেৎ নয়। আমি সম্প্রতি মধুর ভাণ্ডারকর এবং গৌরাঙ্গ জালান প্রযোজিত ছবি অভিযাত্রিক-এ কসটিউম ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেছি। ছবির পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র। এটি হবে আমার প্রথম পিরিয়ড ফিল্ম। খুব চ্যালেঞ্জিং। মধুর ভাণ্ডারকর এই ছবির একজন নিবেদক। ফলে এই প্রজেক্ট আমার কাছে স্বপ্নের মতো। ওঁর ‘ফ্যাশন’ ছবি দেখে আমরা ডিজাইনাররা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।
ফ্যাশন ডিজাইনার হতে গেলে ডিজাইনিং নিয়ে পড়া জরুরি?
পড়াশোনা খুব দরকার। নামী ইনস্টিটিউট না হলেও বেসিক জ্ঞান অর্জনের জন্য একটা ইনস্টিটিউটে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা খুব প্রয়োজন। কীভাবে কাটিং হয়, কালার ব্লেন্ডিং কীভাবে করা হয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কী ধরনের কালার পছন্দ করতে হয় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা উচিত।
আপনার চোখে স্টাইলিশ পার্সন কে?
মনীষা কৈরালা। ওঁর সাজপোশাক অন্যরকম। চকচকে কিছু পরেন না।
এবারে পুজোর ট্রেন্ড কী?
লং অথবা শর্ট কুর্তার সঙ্গে সারারা চলবে। সঙ্গে থাকবে দোপাট্টা। আবার নানারকম কাটসের ধোতি প্যান্টের সঙ্গে কেপ বা হালকা জ্যাকেটও ইন। এছাড়া পালাজো, গাউনও চলবে। ট্রাডিশনস এবং স্টিচ এই দু’রকমের শাড়ি চলবে। সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বোটনেক, কলার দেওয়া ব্লাউজ তাকে সঙ্গত করবে। এতো গেল মেয়েদের কথা। ছেলেদের ক্ষেত্রে প্যান্টের সঙ্গে শর্ট কুর্তা ও মোদি কোট যেমন চলবে তেমনি ধুতির সঙ্গে কুর্তা তার ওপরেও মোদি কোট ফ্যাশন বাজার মাত করবে।
এবার কী ধরনের কালার ইন?
অরেঞ্জ ইজ আ নিউ ব্যাক। অরেঞ্জ ছাড়াও নবরাত্রি রেড, ব্লু, অফ হোয়াইট ইত্যাদি কালার চলবে। অ্যাকোয়া, মিন্ট প্রিন্ট ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন জগতে খুব ইন।
আপনি পুজোতে কী ধরনের কালেকশন আনলেন?
মেয়েদের জন্য নিয়মিত যা করি সেটাই আছে। লাইটওয়েট কটনের ওপর খুব বেশি এমব্রয়ডারি নয় প্রিন্ট, ইক্কত ইত্যাদির মিশেল রয়েছে। পোশাকে কাটসের ওপর কাজ করেছি। পুরুষদের জন্য কুর্তা, ধোতি, পাটিয়ালা, মোদি কোট করেছি।
আপনার সিগনেচার স্টাইল...
ইন্ডিয়ান আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট, সেইসঙ্গে কালার নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসি। পোশাকে ইন্দোওয়েস্টার্ন কাটস থাকে। ফ্যাব্রিকের ক্ষেত্রে হ্যান্ডলুম, লিনেন, জুট কটন এবং কটন ফ্যাব্রিক নিয়ে কাজ করি। মধুবনি আমার ইউএসপি। বন্ধেজ, কলমকারি নিয়েও কাজ করি।
ফ্যাশনের কী ধরনের বিবর্তন চোখে পড়ে?
যার যেমন ক্ষমতা সেই অনুযায়ী নিজেকে আজকাল মেনটেন করেন। মানুষ এখন ফ্যাশন সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন।
রাজনৈতিক দলে যোগদানের পর কান পাতলে শোনা যায় এখন আপনার কাজে ভাটা পড়েছে।
(জোরে হেসে) এই কথা আমার কানেও এসেছে। এত বছর ধরে যাদের সঙ্গে কাজ করে আজ আমি অগ্নিমিত্রা পল ইয়েছি। তারা সবাই আছেন। আমার স্টুডিওতে বসে যাঁরা কাজ করতেন সবাই আছেন। কারিগর বাড়াই বা কমাইনি। এটা মনে হয় একদল মানুষের ধারণা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ফ্যাশনের মাধ্যমে মহিলাদের যাতে স্বনির্ভর করতে পারি সেই কাজ শুরু করেছি। সুন্দরবনে একটা প্রজেক্টে কাজ করছি। ১৫০ জন মহিলাকে কাজ শেখানোর টার্গেট নিয়েছি। দুঃস্থ মহিলারা কাজ শিখছেন। সেখানে মাঝে মাঝে যাই। এটাকে বড় আকারে নিয়ে যাওয়ার জন্যই রাজনীতিতে আসা।
একদিকে ডিজাইনিং অন্যদিকে রাজনীতি দলের কাজকর্ম দু’য়ের সমতা কীভাবে বজায় রাখছেন?
এই মুহূর্তে যে বিশাল ব্যস্ত হয়ে পড়েছি তা কিন্তু নয়। ডিজাইনিং হল আমার শিকড়। আজ আমি অগ্নিমিত্রা হয়েছি ডিজাইনিংয়ের জন্য। সেটাকে ছাড়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। দুটো দিক যাতে সমানভাবে মেনটেন করতে পারি সেই চেষ্টাই করছি।
আগে একটি ব্র্যান্ডের জুয়েলারি ডিজাইন করতেন। এই নিয়ে নতুন কোনও পরিকল্পনা আছে কী?
যদি আবার কোনও ভালো ব্র্যান্ড থেকে অফার আসে অবশ্যই করব।
সাক্ষাৎকার: চৈতালি দত্ত