কর্মপ্রার্থীদের নতুন কর্ম সংস্থানের সুযোগ আছে। সরকারি বা আধাসরকারি ক্ষেত্রে কর্ম পাওয়ার সুযোগ আছে। ব্যর্থ ... বিশদ
শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের ২২টি জেলার ১০টি নাট্যদলের নাটক নিয়ে ৩ থেকে ৭ নভেম্বর এক পূর্ণাঙ্গ নাট্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় মোহিত মৈত্র মঞ্চে। পাইকপাড়া ইন্দ্ররঙ্গ আয়োজিত সর্ববৃহৎ এই নাট্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৭০টি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। এখান থেকে ১৬ জন বিচারকের একটি দল বেছে নেন ১০টি নাটক।
এই প্রতিযোগিতার আয়োজন প্রসঙ্গে উৎসব আহ্বায়ক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী বলেন, এই উৎসবের লক্ষ্য, মূলত জেলার নাটকগুলি কলকাতার দর্শকদের কাছে তুলে ধরা এবং আমাদের নিজেদের জানা এবং দর্শকদের জানানো যে, কলকাতা মানেই পশ্চিমবঙ্গ নয়। উৎসব অধ্যক্ষ ব্রাত্য বসু বলেন, কলকাতার থিয়েটারই সমৃদ্ধ বাংলা থিয়েটারের একমাত্র মুখ নয়। বরং কলকাতায় বসে আমরা জানতেও পারি না যে গোটা বাংলার বিভিন্ন জেলায় নিরবচ্ছিন্ন ও উৎকৃষ্ট নাট্যচর্চা কেমন ও কীভাবে চলছে তার কথা। তাই এক্ষেত্রে নাট্যকর্মী হিসাবে কোথাও আমাদের দায়িত্ব আছে কলকাতায় বসে জেলার উৎকৃষ্ট প্রযোজনা দেখা ও দেখানোর। দূরের নাটক ও শহরের প্রাণকেন্দ্রের ভৌগোলিক দূরত্ব একটি নির্মাণ যা এতদিন ধরে একটি সমপ্রচার বিরোধীভাস তৈরি করে রেখেছে এই উৎসব-প্রতিযোগিতা তাকে সুন্দরভাবে বদলে দেবে নূতনতর সংহতির ভাবনায়— বললেন নাট্য নির্দেশক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়।
উৎসবের প্রথম দিনে মুর্শিদাবাদ জেলার প্রান্তিক গোষ্ঠী প্রযোজিত এবং প্রিয়াংশুশেখর দাশ নির্দেশিত নাটক ‘মাই নেম ইজ গওহরজান’ ও নদীয়া শান্তিপুর সাংস্কৃতিক প্রযোজিত এবং কৌশিক চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত নাটক ‘অংশুপট উপাখ্যান।’ দ্বিতীয় দিনে মুর্শিদাবাদ রঙ্গাশ্রম প্রযোজিত ও সন্দীপ ভট্টাচার্য নির্দেশিত নাটক ‘সন্তাপ’ ও নদীয়া চাকদহ নাট্যজন প্রযোজিত ও উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত নাটক ‘বিল্বমঙ্গল কাব্য’। তৃতীয় দিনে হুগলি ধ্রুপদ নাট্য নাট্যসংস্থা প্রযোজিত ও দেবাশিস চক্রবর্তী নির্দেশিত নাটক ‘আরশিনগর’ ও পশ্চিম বর্ধমান এবং আমরা প্রযোজিত ও কল্লোল ভট্টাচার্য নির্দেশিত নাটক ‘অন্ধযুগ’। চতুর্থ দিনে উত্তর ২৪ পরগনা অশোকনগর নাট্যমুখ প্রযোজিত ও অভি চক্রবর্তী নির্দেশিত নাটক ‘আমি অনুকূলদা আর ওরা’ এবং মালদার মালদা থিয়েটার প্ল্যাটফর্ম প্রযোজিত ও সুব্রত পাল নির্দেশিত নাটক ‘বাকি ইতিহাস’। পঞ্চম ও শেষ দিনে উত্তর ২৪ পরগনা অশোকনগর নাট্যমুখ প্রযোজিত ও পার্থসারথী রাহা নির্দেশিত নাটক ‘মৃত্যু সংবাদ’ ও উত্তর ২৪ পরগনা নৈহাটি ব্রাত্যজন প্রযোজিত ও অরিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশিত নাটক ‘দাদার কীর্তি’ মঞ্চস্থ হল। চূড়ান্ত পর্বে বিচারক ছিলেন চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন অভিনেত্রী অনসূয়া মজুমদার, চলচ্চিত্র বিশারদ প্রেমেন্দ্র মজুমদার, নাট্য পরিচালক ও অভিনেতা বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাবন্ধিক নাট্য সমালোচক শংকরলাল ভট্টাচার্য, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেত্রী শতরূপা সান্যাল, নাটককার নাট্য নির্দেশক ও অভিনেতা শেখর সমাদ্দার এবং থিয়েটার ও চলচ্চিত্র অভিনেতা সুপ্রিয় দত্ত। এই ৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বেছে নিলেন প্রতিটি বিভাগের শ্রেষ্ঠতর প্রযোজনা, নির্দেশক, নাটককার, অভিনেতা, অভিনেত্রী, সহঅভিনেতা, সহ অভিনেত্রী, আলোকসম্পাত, মঞ্চসজ্জা এবং শ্রেষ্ঠ আবহ। তৃতীয় বছরের এই নাট্যোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মন্ত্রীরা অফ অফ একাডেমির প্রয়াসকে সাধুবাদ জানান।
গত দু’বছর আগে পাইকপাড়া ইন্দ্ররঙ্গ উত্তর কলকাতার মোহিত মঞ্চে তাদের নাট্য উৎসব শুরু করেছিল। তৃতীয় বর্ষে এসে তাদের পরিকল্পনায় সামান্য রদবদল ঘটিয়ে উৎসবটিকে প্রতিযোগিতার আকারে সাজিয়ে তুলল।
মোহিত মঞ্চে পাঁচ দিন ধরে চলে মূলপর্বের প্রতিযোগিতা। তারপর পূর্ব কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে অত্যন্ত জাঁকজমক সহকারে প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান করা হয়। যা সচরাচর কোনও ফিল্মি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানেই দেখা যায়। গোটা বাংলার নাট্যমহলের কেউকেটারা হাজির ছিলেনএই অনুষ্ঠানে। দেখা যায় বিভাস চক্রবর্তী, অশোক মুখোপাধ্যায়, গৌতম হালদার, হীরণ মিত্র, দেবাশিস মুজোমদার, দেবজিত মুখোপাধ্যায় প্রমুখকে।
হুগলির ধ্রুপদ নাট্যসংস্থা ‘আরশিনগর’ নাটকের জন্য শ্রেষ্ঠ প্রযোজনার সম্মান পায়। দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ প্রযোজনার সম্মান পায় নৈহাটি ব্রাত্যজন তাদের ‘দাদার কীর্তি’ নাটকের জন্য এবং মুর্শিদাবাদের রঙ্গাশ্রম দল তৃতীয় স্থান লাভ করে তাদের ‘সন্তাপ’ প্রযোজনাটির জন্য। শ্রেষ্ঠ নির্দেশকের সম্মান লাভ করেন অরিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘দাদার কীর্তি’ নাটকের জন্য। শ্রেষ্ঠ নাটককার হিসেবে পুরস্কার পান অনিল সাহা ‘আরশিনগর’ নাটকের জন্য। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা সন্দীপ ভট্টাচার্য ‘সন্তাপ’ নাটক থেকে। ঝুলন ভট্টাচার্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম স্থান অধিকার করেন ‘মাই নেম ইজ গওহরজান’ নাটকটিতে অভিনয় করে। শ্রেষ্ঠ সহ অভিনেতা এবং অভিনেত্রীর পুরস্কার পান যথাক্রমে শান্তনু নাথ এবং সঞ্জিতা মুখোপাধ্যায়। শ্রেষ্ঠ আলোক সম্পাতের জন্য পুরস্কৃত হন সুদীপ সান্যাল। শ্রেষ্ঠ মঞ্চসজ্জা দীপঙ্কর পাল ‘সন্তাপ’ নাটকটির জন্য। শ্রেষ্ঠ আবহের সম্মান যুগ্মভাবে দেওয়া হয় শুভময় বন্দ্যোপাধ্যায় (মাই নেম ইজ গহরজান) এবং শুভদীপ গুহকে (দাদার কীর্তি) নাটকের জন্য। এছাড়া বিচারকদের বিচারে কিছু বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রসেনজিত বর্ধন পুরস্কার পান ‘দাদার কীর্তি’ নাটকে অভিনয়ের জন্য। সুমন্ত রায় পান ‘আমি অনুকূলদা আর ওরা’ নাটকটির জন্য। ‘অংশুপট উপাখ্যান’ নাটকটির জন্য শ্রেষ্ঠ সহ অভিনেত্রীর পুরস্কারে সম্মানিত হন রিয়া বিশ্বাস। উৎসব অধ্যক্ষ ব্রাত্য বসু বলেন, কোনও পুরস্কারই নিষ্কলঙ্ক নয়, তবুও এই ধরনের আয়োজনে জেলার দলগুলি উৎসাহ পায়। পরে ইন্দ্ররঙ মহোৎসবের আহ্বায়ক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী এবং উৎসব অধ্যক্ষ ব্রাত্য বসু যৌথভাবে ঘোষণা করেন, আগামী বছরের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর এই প্রতিযোগিতামূলক উৎসব আবার অনুষ্ঠিত হবে।