কর্মপ্রার্থীদের নতুন কর্ম সংস্থানের সুযোগ আছে। সরকারি বা আধাসরকারি ক্ষেত্রে কর্ম পাওয়ার সুযোগ আছে। ব্যর্থ ... বিশদ
আপনি সাতের দশকের কলকাতার থিয়েটারের পরিবেশ দেখেছেন। এখন সব কিছু বদলে গিয়েছে। কীভাবে দেখছেন এই বদলকে?
আমি কিন্তু খুব আপটুডেট নই। এখনকার কলকাতার থিয়েটার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানি না। হ্যাঁ, এতগুলো বছরের ব্যবধান, তফাৎ তো থাকবেই। সব কিছুই তো পরিবর্তনশীল। এগিয়ে যাওয়া তো চলতেই থাকবে।
সে সময় কলকাতার মঞ্চে শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্তরা নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন। সাফল্য পাচ্ছেন। তখন এখানকার নাটকে আপনিও ব্যস্ত। এঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো? কথাবার্তা হতো?
এঁদের কাজ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। মাঝে মধ্যে দেখা হয়েছে। কথাবার্তাও হয়েছে। আসলে তখন আমার বয়স কম, সবে শুরু করেছি। আর ওঁরা জনপ্রিয়তার মধ্যগগনে। কাজেই এঁদের কাছে যাওয়ার সাহস পেতাম না। বিশদভাবে কথা বলা তো দূর।
পদাতিকের সঙ্গে আপনার যোগসূত্র কীভাবে তৈরি হল?
শ্যামানন্দ জালানের সঙ্গে আমার দিল্লিতে আলাপ। ওখানে তখন আমরা নাটক করতাম। ওই আমাকে কলকাতায় আসার কথা বলে। ও বলে, কলকাতায় আমরা নাটক করব,আর দিনের বেলায় কোথাও কাজ করব। ব্যস, চলে এলাম কলকাতায়। (একটু থেমে) সে সময় শহরটাকে খুব ভালো লাগত। এত ভিড় ছিল না।
নিয়মিত থাকতে থাকতেই কি বাংলা শেখা?
(হেসে) হ্যাঁ, কিছু কিছু শিখেছিলাম। ইন ফ্যাক্ট, আমি দুটো বাংলা ছবিও করি। বিভূতি লাহার ‘অপরাহ্ণের আলো’ আর চন্দন মুখোপাধ্যায়ের ‘আর্তনাদ’।
শ্যামানন্দ জালান আপনার বন্ধু। বন্ধুর পরিচালনায় কাজ করতে কেমন লেগেছিল?
ও খুব ধৈর্যশীল, শান্ত একজন মানুষ। স্বয়ংসম্পূর্ণ একজন পরিচালক। ওর কাজের ধরনটা আমার ভালো লাগত। ওর পরিচালনায় ‘গিধাহদে’ এবং ‘সখারাম বাইন্ডার’ নাটকদুটিতে অভিনয় করেছিলাম। ‘সখারাম’ তো দারুণ সফল। (একটু থেমে) তখন কিন্তু পদাতিক এরকম ছিল না। আসতে আসতে শ্যামানন্দ এই সব সেটআপ, মিনি থিয়েটার তৈরি করে। এই যে, যেটা আপনি এখন দেখছেন। নাটকের প্রতি ওর ছিল অগাধ ভালোবাসা।
অভিনয়ের ইচ্ছেটা কি ছোট থেকেই?
হ্যাঁ, তা বলতে পারেন। স্কুলের নাটকে নিয়মিত অংশ নিতাম। স্কুলের বাইরে বিভিন্ন ক্লাব নাটকেও অভিনয় করেছি।
কলেজে তো আপনাদের একটা নাটকের দল ছিল?
দিল্লির যে কলেজে পড়তাম, মানে কারোরিমাল বিখ্যাত ছিল নাটকের জন্য। বহু সফল অভিনেতা ওই কলেজের ছাত্র ছিলেন। আমরা কলেজ থেকে বেরিয়ে একটা নাটকের দল তৈরি করেছিলাম যে দলের সব সদস্যই কারোরিমালের প্রাক্তনী। সেই ধারাটা আজও বজায় আছে।
আপনি তো জানেন, সাতের দশকে একদিকে যখন উন্নতমানের গ্রুপ থিয়েটার ছিল, পাশাপাশি কমার্শিয়াল নাটকও প্রচুর হত...
(থামিয়ে দিয়ে) জানি, জানি। হাতিবাগানে ছিল থিয়েটার পাড়া। প্রচুর হল ছিল— স্টার, রঙ্গনা, রঙমহল, বিজন, সারকারিনা। আমি কয়েকটি নাটক দেখেছিলাম। (একটু থেমে) খুব আফশোস হয় উত্তমকুমারের মঞ্চাভিনয় দেখতে পারলাম না।
আপনার কি মনে হয় প্রতিটি অভিনেতার থিয়েটারের অভিজ্ঞতা থাকাটা জরুরি?
না- না এর কোনও মানে নেই। এমন অনেক তুখোড় অভিনেতা আছেন যাঁদের থিয়েটারের কোনও ব্যাকগ্রাউন্ড নেই।
কিন্তু থাকলে তো ফিল্মে অভিনয় অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
হ্যাঁ তা অবশ্য যায়, আলাদা একটা কনফিডেন্স পাওয়া যায়। ফলে কাজটাও অনেক সহজ হয়ে যায়। আবার দেখুন ফিল্মে অভিনয় করার ফলে থিয়েট্রিক্যাল অ্যাক্টিংয়ে একটা ব্রেক আসে। সেটাও জরুরি।
অনেকদিন বাদে ‘আত্মকথা’ নিয়ে কলকাতার মঞ্চে। কী মনে হচ্ছে? সময়টা তো অনেকটাই বদলে গিয়েছে।
খুব ভালো লাগছে আবার কলকাতায় নাটক করতে পেরে। কলকাতা সব সময়ই আলাদা। একটা নস্টালজিক অনুভূতি। আর বদল তো অবশ্যম্ভাবী। এই দেখুন না পদাতিক কত বদলে গিয়েছে। এরা কত নতুন নতুন প্রযোজনা করেছে। আমার তো অনেকগুলো দেখাই হয়নি।
আপনি স্টেজ করেছেন, ছোট পর্দা করেছেন, অসংখ্য সিনেমাও করেছেন। প্রতিটি মাধ্যমে অভিনয়ের তফাৎটা কীরকম?
থিয়েটারে যেটা হয়, সেটা হল প্রজেকশন। আর ফিল্মে এক্সপ্রেশন। থিয়েটারে তোমার সামনেই দর্শক। তাদের সামনে তোমার সেরাটা তুলে ধরা। এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। ফিল্মে রিটেকের সুবিধে থাকে।
কলকাতায় সাম্প্রতিক কোনও প্রযোজনা দেখেছেন?
না, দেখা হয়ে ওঠে নি। খুবই আফশোসের ব্যাপার। তবে ইচ্ছে আছে দেখার।
থিয়েটার একটা জনপ্রিয় মাধ্যম। এর উন্নতির জন্য সরকারি সাহায্য আরও বেশি করে প্রয়োজন বলে মনে করেন?
দেখুন যে কোনও শিল্প তার নিজস্ব জনপ্রিয়তার জোরে টিকে থাকে। হ্যাঁ এটাও ঠিক যে, পারফরমিং আর্ট একেবারে সাহায্য ছাড়া এগিয়ে যাওয়া যায় না। আগেকার দিনে রাজা-মহারাজারা স্পনসর করত। এখন সরকারের দিক থেকে এগিয়ে আসা উচিত। নিজের কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের তো সাহায্য করা উচিত। তার মানে এই নয় যে সরকার এগিয়ে না এলে থিয়েটার বন্ধ হয়ে যাবে। হিরোকেন্দ্রিক নাটকের কথা ভাবতে হবে। তার নামেই টিকিট বিক্রি হবে। এটা এখন মুম্বইতে খুব হচ্ছে।
এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই অস্থির। জাতপাত, ধর্মের নামে যা চলছে, তা সমর্থনযোগ্য নয়। এর প্রতিবাদ নাটকের মধ্যে দিয়ে করাটা কতটা জরুরি?
এটা বলার দরকার হয় না। প্রত্যেকেই যে যার মতো করে ভাববে, প্রতিবাদ করবে। নাটক বলুন বা ফিল্ম, এরা তো সমাজের দর্পণ। ফলে যাই ঘটুক না কেন, প্রত্যেকে তার কাজের মাধ্যমে সেটাকে তুলে ধরবেই। এটাই তো স্বাভাবিক , সহজ সত্য।
নাটক আপনার প্রথম প্রেম, নাটকের মাধ্যমেই আপনার আত্মপ্রকাশ। অথচ আপনার পরিচিতি ‘শান”এর ভিলেন ‘সাকাল’এর মাধ্যমে। কেমন লাগে?
দেখুন সিনেমা হল বিনোদনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে যায়। সহজে মানুষের মনে ঢুকে পড়া যায়। কাজেই পরিচিতিটাও রাতারাতি পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে সিনেমার জনপ্রিয়তাকে অস্বীকার করার কোনও জায়গাই নেই।