সম্প্রতি মঞ্চস্থ হল পূর্বরঙ্গ নাট্যদলের সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়’। বলা যায়, কাব্যনাট্য। যে নাটকের বিষয় ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আধুনিক ভারতবর্ষ – পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের হাত ধরে বদলে বদলে যাওয়া অনুভূতি, মনুষ্যত্ব আর রাজনীতি।
পাঁচটি মেয়ে। কোনও এক সময়ে এরা পরস্পরের বন্ধু ছিল। সময়ের বহমানতায় তারা ছিটকে পড়েছিল একদি ওদিক। সামাজিক সংযোগ মাধ্যমের দৌলতে ফের তারা খুঁজে পায় একে অপরকে। তাদের অন্দরের কাহিনী থেকে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়ের।
কসবা অর্ঘ্য নাট্যদলের দশম বার্ষিক নাট্যোৎসব ‘লোকরঙ্গ ২০১৯’ শুরু হতে চলেছে আগামী ৮ নভেম্বর থেকে। চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। অ্যাকাডেমি মঞ্চে নীলাঞ্জন মিশ্রের গান দিয়ে শুরু হবে উৎসব।
উনিশ পেরিয়ে কুড়ি বছরে পা দিল নাট্যসংস্থা থিয়েলাইট। এই উপলক্ষে তারা গত ২০ জুন অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের লেডি রানু মুখোপাধ্যায় মঞ্চে আয়োজন করেছিল এক অনুষ্ঠানের।
আধুনিক বিশ্ব ধীরে ধীরে উষ্ণায়ণের করাল গ্রাসে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল সবুজায়ন। ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’, ‘গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান’, ‘সবুজ বাঁচান’ — সরকারি বিজ্ঞাপন হোর্ডিংয়েই সীমাবদ্ধ।
পেশাদারি বিভিন্ন মঞ্চে প্রায় চুয়াল্লিশটি নাটকে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন শিল্পী দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি থিয়েটারের টানেই বর্ধিষ্ণু পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও, নাট্যমঞ্চকেই আপন করে নিয়েছিলেন। উইংস-এর আড়াল থেকে সেই সুদর্শন নটকে প্রত্যক্ষ করলেন ড. শঙ্কর ঘোষ।
উচ্চতর বিদ্যায় আগ্রহ বাড়বে। মনোমতো বিষয় নিয়ে পঠন-পাঠন হবে। ব্যবসা স্থান শুভ। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত ... বিশদ
নান্দীপটের নাটক ‘আবৃত্ত’কে জড়িয়ে রেখেছে যাত্রা। এক সৃষ্টিশীলতার মধ্যে দিয়ে আর এক শিল্পকে স্মরণ করা।
প্রায় ভগ্নপ্রায় এক বাড়ি। যে বাড়ির বাসিন্দা মাত্র চারটি প্রাণী। এক বৃদ্ধ, এক বৃদ্ধা এবং তাঁদের সন্তানসম দুই তরুণ-তরুণী। চারজনকে একত্রিত করে একসঙ্গে বেঁধে রেখেছে যাত্রা।
সে এক সময় ছিল। যখন যাত্রার রমরমা। সৃষ্টিশীলতার উল্লাসে টগবগ করে ফুটছে চিৎপুর। সেই সময়ে যাত্রা জগতের এক সফল নাম তারক পাল। যার নামে টিকিট বিক্রি হতো, যার অভিনয় দেখে আপ্লুত হত গোটা বাংলা। সেই সময়ের আরও এক সফল যাত্রাশিল্পী উমাশশী। যাত্রাই যাঁদের জীবন, যাত্রাই যাঁদের যাপন। এই দুই যাত্রাশিল্পীর সংস্পর্শে, স্নেহে, ভালোবাসায় মানুষ হয় কার্তিক আর রাজলক্ষ্মী। তাই হয়ত অজান্তেই এই দুই তরুণ-তরুণীর মধ্যে যাত্রার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়। যাত্রা যেমন এই চারটি প্রাণীকে একসূত্রে বেঁধেছ, তেমনই দারিদ্র এদের চার হাতকে একসঙ্গে শক্ত করে রেখেছে। যে বাঁধনকে আটুট রাখতে দরকার পড়ে না কোনও রক্তের সম্পর্কের।
তারক পাল এক সময়ের নামী যাত্রাশিল্পী। কার্তিকের বারাংবার অনুরোধে অবশেষে তার পিতৃসম তারক পালের উপর ডকু ছবি করতে আসে কার্তিকের পরিচিত এক সিরিয়ালের পরিচালক। সঙ্গে আসে তার টেকনিক্যাল টিম। আদৌ কি তারক পালকে নিয়ে ডকু ছবি তৈরি হয়? সে তো পরের কথা। কিন্তু এই ডকু ছবি বানানোকে কেন্দ্র করে হালের বিনোদন জগতের নোংরামি, স্বার্থপরতা, স্বেচ্ছাচারিতা, দাম্ভিকতার এক নগ্ন রূপ উঠে আসে দর্শকের সামনে। অর্থের লোভ দেখিয়ে নারীর অবমাননা, যোগ্যতাহীন পরিচালকের নিজেকে বিরাট ভেবে নিয়ে মুর্খামি... ছোট পরদার জগতের ঘৃণ্য বাস্তবটাকে মঞ্চে হাজির করেছেন নির্দেশক প্রকাশ ভট্টাচার্য। তীর্থংকর চন্দের নাটক হয়ে ওঠে বিনোদন দুনিয়ার আয়না। দুই যাত্রাশিল্পীর জীবনের ওঠাপড়া, আলো-আঁধারের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসে এক জ্বলন্ত বাস্তব।
প্রকাশ ভট্টাচার্যর নির্দেশনাকে এক অন্য উচ্চতা দান করেছে সন্দীপ সুমন ভট্টাচার্যের অসাধারণ মঞ্চ, ত্রিগুণাশংকরের আলো এবং স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবহ। তবে নাটকের দৈর্ঘ্য কিছুটা কম হতে পারত, সেই সুযোগও ছিল। পরিচালনাও আঁটোসাঁটো হতে পারত।
চার প্রধান শিল্পীর মনকাড়া অভিনয়, নাটকটিকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। কখনও যাত্রার উচ্চকিত অভিনয়, আবার কখনও নাটকের উপযোগী অভিনয়— এই ট্রান্সফরমেশনটা খুব সহজ নয়। সাবলীলতা আর দক্ষতা দিয়ে চরিত্রগুলোকে জীবন্ত করে তুলেছেন বিপ্লব নাহা বিশ্বাস (তারক পাল), সর্বানী ভট্টাচার্য (উমাশশী), সঞ্জিতা (রাজলক্ষ্মী) এবং অভিজিৎ সরকার (কার্তিক)। বাকিরাও চমৎকার সঙ্গত করেছেন।
সহজ, সরল ভঙ্গিতে প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া যাত্রাশিল্পের অন্দরকাহিনীকে নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন নির্দেশক প্রকাশ ভট্টাচার্য। নাটকের মধ্যে দিয়ে যাত্রাশিল্পের সমস্যাকে তুলে ধরাটা বেশ অভিনব। তাই নান্দীপটের ‘আবৃত্ত’ বেশ আলাদা।
অজয় মুখোপাধ্যায়
