অগ্রজকে কীভাবে সম্মান জানাতে হয় তা শিখেছিলেন বিভাস চক্রবর্তীর থেকেই। তাঁর আসন্ন জন্মদিন উপলক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করলেন প্রকাশ ভট্টাচার্য।
তাঁকে বলা হত আলোর জাদুকর। আলোকশিল্পী হিসেবে বিশ্বজোড়া তাঁর খ্যাতি। গত ১১ সেপ্টেম্বর ছিল সেই প্রয়াত তাপস সেনের জন্মদিন। তাঁকে কাছ থেকে দেখার সুবাদে স্মৃতিচারণ করলেন প্রকাশ ভট্টাচার্য।
আজকের বাংলা থিয়েটারে ব্যস্ততম অভিনেতার নাম প্রসেনজিৎ বর্ধন। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে শুভঙ্কর গুহ।
বহুবার, বিভিন্ন সময়ে মঞ্চস্থ হওয়া রবীন্দ্রনাথের ‘বিসর্জন’-কে আবার মঞ্চে ফিরিয়ে আনল ‘থেসপিয়ানস’ নাট্য সংস্থা। বহু চর্চিত, আলোচিত, এই নাটকের বিষয়। এই সময়ে দাঁড়িয়ে নাটকটির প্রাসঙ্গিকতাকে নতুন করে উপলব্ধির পথটা করে দিল থেসপিয়ানস।
যাত্রা ছিল তাঁর কাছে ধর্মের মতো। লিখেছেন সন্দীপন বিশ্বাস
সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় জটিলতা বৃদ্ধি। শরীর-স্বাস্থ্য দুর্বল হতে পারে। বিদ্যাশিক্ষায় বাধা-বিঘ্ন। হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য আফশোস বাড়তে ... বিশদ
বৃক্ক, অর্থাৎ কিডনি। মানবশরীরের একজোড়া গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই কিডনিকে কেন্দ্রে রেখে সামাজিক ক্ষয়িষ্ণুতা, মূল্যবোধ এবং সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এক মজার নাটক ‘বিষবৃক্ক’। ‘সমকালীন সংস্কৃতি’র নতুন প্রযোজনা। এই সময়ের নাটক, তাই এই সময়ের রাজনীতিও ঠাই পেয়েছে নাটকে। হালকা চালে, সহজ কথায় আর সরল ছন্দে।
অতি সাধারণ ছাপোষা সেলসম্যান কমল। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা। চারিদিকে দেনা। তিন মাসের বাড়ি ভাড়া বাকি। বাড়িওয়ালি কুসুম নিত্য কথা শোনায়। কিন্তু কোথায় যেন একটা মায়া কাজ করে এই অগোছালো, মধ্যবয়সী,অকৃতদার মানুষটার প্রতি। দু’চার কথা শোনালেও তাই অবিবাহিত কুসুম, খুব রুঢ় হতে পারে না।
হঠাৎই একদিন কমলের সঙ্গে দেখা করতে আসে তার কলেজ জীবনের প্রেমিকা দোলা। সে এখন বিবাহিতা। তার স্বামী সেন্ট্রাল হোম ডিপার্টমেন্টের উচ্চপদস্থ অফিসার। কিন্তু ভদ্রলোকের একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কলেজ জীবনের ঘনিষ্ঠতার কারণে দোলা জানত কমলের ব্লাডগ্রুপ ‘ও নেগেটিভ’। কাজেই সেই পারবে দোলার স্বামীকে কিডনি দান করতে। দোলার প্রস্তাবে কমল বজ্রাহত! হতবাক!
ওদিকে প্রতিবেশি মিস্টু কমলের প্রতি তার দুর্বলতার কথা জানাতে আসে। মিস্টু তার প্রেমে পড়েছে, এই ভেবে মধ্যবয়সী, ছাপোষা কমল রঙিন স্বপ্নে বিভোর। কিন্তু মিস্টুর প্রেম নিবেদনের পেছন যে এক ঘৃণ্য চক্রান্ত রয়েছে, তা জানতে পেরে কমল দারুণ আঘাত পায়। আসলে মিস্টুর প্রেমিক, পাড়ার কাউন্সিলার। তার জন্য চাই কমলের একটা কিডনি।
এরপর কমলকে নিয়ে, থুড়ি তার কিডনি নিয়ে দুই নারী, অর্থাৎ দুই বিরোধী রাজনৈতিক দল, কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে লেগে যায় ধুন্ধুমার কাণ্ড। কেউই তাদের অধিকার ছাড়তে রাজি নয়। দোলা আর মিস্টুর মধ্যে দিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের পারস্পরিক দোষারোপের রাজনীতির সমকালীন রূপটি মজা আর হাসির মধ্যে দিয়ে অত্যন্ত দক্ষতায় তুলে ধরেন পরিচালক। কিডনি তো রূপক মাত্র।
নাইট বালব বেচা কমল রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠে। ক্ষমতা আর লোভের পেছনে ছোটা রাজনীতি থেকে মিডিয়ার মিথ্যাচার, সুযোগ সন্ধানী উকিল থেকে লোভী পুলিশ (যে তার স্ত্রীর জন্য কমলকে কিডনি দানের অনুরোধ করে) – এক জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকা কমল আবিষ্কার করে মুখোশের আড়ালে থাকা মুখগুলোকে। যারা আমাদের আশেপাশেই ঘুরে বেড়ায়। যারা সব সময় শান দিচ্ছে, নখে, দাঁতে। মতের বিরুদ্ধাচারণ করলেই মুখোশ খুলে বেরিয়ে আসছে হিংস্রতা। কমলের এই জটিল জীবনকে আবার স্বাভাবিকতার ছন্দে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নেয় কুসুম। বিবাহই যার একমাত্র সমাধান।
হাসির মোড়কে মধ্যবিত্ত চলমান জীবনের বহমানতার সামনে নানা বক্তব্য, প্রশ্নকে তুলে ধরেছেন নাট্যকার-নির্দেশক সুদীপ্ত সরকার। যার প্রাসঙ্গিকতা ভাবায়, নাড়া দেয়। এই রাজ্যের বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষিতে যুযুধান দুই পক্ষের লড়াইটাকে চমৎকার দক্ষতায় নাটকের মুডের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন পরিচালক।
নাটকটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলেছে শিল্পীদের সম্মিলিত, বলিষ্ঠ অভিনয়। কমল চট্টোপাধ্যায় (কমল) এবং নন্দিনী ভৌমিক (দোলা)কে উপযুক্ত সঙ্গত করেছেন তনিমা দাস সরকার (কুসুম), অপর্ণা দাস (মিস্টু), ইন্দ্রজিৎ পাল (পঞ্চা), দেবীপ্রসাদ ঘোষ, দীপেনকান্তি আচার্জ, মৌমা নস্কর, মৈনাক চক্রবর্তী, রজতশুভ্র পাইন এবং দেবাশিস দাস। প্রত্যেকে যেন এক সুতোয় বাঁধা। একচুল এদিক ওদিক হলে মজাটাই হারিয়ে যেত। ভাঁড়ামো হয়ে যেতে পারত। শিল্পীরা সেটা হতে দেননি। অভিজিৎ সরকারের মঞ্চসজ্জায় সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে মধ্যবিত্ত ব্যাচেলারের ঘর, এবং তার পারিপার্শিকতা, যা কখন যেন নাটকের চরিত্র হয়ে ওঠে। সোমনাথ দত্তের আবহ এবং মনোজ প্রসাদের আলো, নাটকের মুডকে সঠিকভাবে ধরে রাখে।
অজয় মুখোপাধ্যায়
