সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
হঠাৎ নাটকের মঞ্চে কেন?
এর আগেও নাটকে অভিনয় করার প্রস্তাব পেয়েছি। তখন টেলিভিশন, সিনেমা, সঞ্চালনা সব নিয়ে সময়ের ভীষণ অভাব ছিল। তবে ‘হঠাৎ’ বললে ভুল হবে। কারণ, অনেকেই হয়তো জানেন না আমি ছেলেবেলা থেকেই নাটক করি। সাত বছর বয়স থেকে যখন দক্ষিণীতে গান শিখতাম তার পাশাপাশি সেখানকার ড্রামা বিভাগে নাটক করতাম। দক্ষিণীর হয়ে আমি রবিঠাকুরের রক্তকরবী, কঙ্কাল, বাল্মীকি প্রতিভা, মায়ার খেলা নাটকে কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছি। দক্ষিণীর হয়ে কলকাতার কলামন্দির, রবীন্দ্রসদন, আশুতোষ মেমোরিয়াল ছাড়াও দিল্লি, মুম্বই, এলাহাবাদ ইত্যাদি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় নাটক করেছি। ফলে ছেলেবেলা থেকেই নাটকের মঞ্চ, রিহার্সাল রুমের সঙ্গে আমি সংপৃক্ত। নাটকের সংলাপ কীভাবে বলতে হয়, সংলাপের স্ক্যানিং কীরকম হওয়া উচিত, মঞ্চে কীভাবে দাঁড়াতে হয় ইত্যাদি যাবতীয় খুঁটিনাটি আমার গুরু দেবাশিস রায়চৌধুরী (দক্ষিণী)আমাকে হাতে ধরে শিখিয়েছেন।
তাছাড়া, আমি যখন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে খুব স্ট্রাগল করছি আর পাশাপাশি সিরিয়ালে টুকটাক কাজ করছি তখন জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ফেরারি ফৌজ নামে নাটকে আমি কবি মুকুন্দের ছোট চরিত্রে অভিনয় করি। সেই নাটকের রিহার্সালে একদিন এসে উনি দলের একজনকে দিয়ে আমাকে নাটকের সংলাপ বলতে বলেন। আমি সংলাপ বলার পর পাশে বসে থাকা ওঁর সহকারীকে বলতে শুনেছি, ‘এই ছেলেটার মধ্যে সম্ভাবনা আছে, এর হবে।’
‘রানি ক্রেউসা’ নাটকে রাজা জেথাসের চরিত্রে অভিনয় করছেন আপনি। কী বিশেষত্ব আছে চরিত্রটিতে?
গ্রিক পুরাণের গল্প থেকে এই নাটকটি লিখেছেন ব্রাত্য বসু। মূলত মৌলিক নাটক। গ্রিক রাজার চরিত্রে অভিনয় করা এটা আমার কাছে বেশ আকর্ষণীয়। একজন গ্রিক রাজা যিনি একজন কর্তব্যপরায়ণ, নিষ্ঠাবান, দায়িত্বশীল মানুষ। যিনি কোনও অন্যায় অপরাধকে প্রশয় দেন না। তিনি ন্যায় বিচার করেন। গণতন্ত্রকে রক্ষা করেন। প্রজাদের যোগ্য সম্মান তিনি দেন। তাঁর চোখেমুখে অদ্ভুত পরিণতি বোধ আছে। এই নাটকের বিষয়বস্তু আজকের সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার মনে হয়েছে। আর রাজা জেথাসের চরিত্রের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য আছে তা আমার অভিনয়শৈলীর মাধ্যমে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করারও ইচ্ছে ছিল।
ব্রাত্য বসু এবং সুজন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
অত্যন্ত ভালো। ব্রাত্যদা একদিন রিহার্সালে আসেন। ওঁর ভালো লেগেছে বলে আমাকে জানান। রাজা জেথাসের চরিত্র নিয়ে উনি বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেন। এই চরিত্রের কোন কোন জায়গায় অভিনয়ের আরও উন্নতি করা যায় তার উপদেশ দেন। অভিনয়ের আমার কিছু কিছু জায়গায় উনি সংশোধন করেছেন। সবটাই আমি মাথায় রেখেছি। অন্যদিকে সুজন অর্থাৎ নীল অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার ছেলে। দায়িত্বশীল একজন পরিচালক। যেহেতু নীল একজন ভালো অভিনেতা তাই উনি যেটা চান সেটা সুন্দর করে অভিনয় করে দেখিয়ে দেন। অথচ অভিনেতা বা অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত জায়গাকে লঙ্ঘন করে না, উপরন্তু ভাবার জায়গা দেন।
চেতনা নাট্যগোষ্ঠীর প্রাণপুরুষ অরুণ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার কথাবার্তা হয়েছে?
উনি তো একজন লিভিং লেজেন্ড। ওঁর সম্পর্কে কথা বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। নিজেকে নাটকের জন্য সারাজীবন তিনি উৎসর্গ করে দিয়েছেন। উনি একদিন রিহার্সালে এসেছিলেন, যখন বাংলা শার্ট আর ধুতি পরে এসে হারমোনিয়াম নিয়ে নাটকের গান ধরলেন তখন নিজেকে বড্ড ভাগ্যবান মনে হলো। আমি নাটক করছি দেখে উনি খুব খুশি হয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সিরিয়াসলি নাটক করবে তো?’
আপনি তো সিডনি অপেরা হাউসে একটি নাটকে স্বামী বিবেকানন্দ-র চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সেই অভিজ্ঞতার কথা যদি বলেন?
এটি ছিল সাড়ে তিন ঘণ্টার একটি ইংরেজি নাটক। নাটকের নাম ‘ওয়াননেস’। বাংলার প্রথম অভিনেতা, গায়ক হিসেবে আমি সিডনি অপেরা হাউসে অভিনয় করেছি। সিডনির বেদান্ত সোসাইটির তত্ত্বাবধানে নাটকটি হয়। অস্ট্রেলিয়ান থিয়েটার কোম্পানির চিত্রনাট্যকার ও নির্দেশক অ্যালেক্স ব্রুন এই নাটকের নির্দেশনা দেন। যেহেতু স্বামীজি বাঙালি ছিলেন তাই ওঁরা চেয়েছিলেন বাংলায় গান হবে, অভিনয়ের সঙ্গে গানও আমি গেয়েছি। নাটকটি শেষ হতেই দু’মিনিট ধরে দর্শকদের হাততালিতে হল ফেটে পড়ে। সেটা আমার জীবনে বড় পাওনা।
আপনি তো নাট্য নির্দেশক ও নাট্যব্যক্তিত্ব দুলাল লাহিড়ীর নির্দেশনায় বিদেশে নাটক করেছেন।
হ্যাঁ। নাটকের নাম ‘এ আবরণ’। এটি টোরেন্টোতে বঙ্গ সম্মেলনে হয়। এই নাটকে আমি ছাড়াও অন্যান্য শিল্পীরা ছিলেন, মেঘনাদ ভট্টাচার্য, শকুন্তলা বড়ুয়া, দুলাল লাহিড়ী, লকেট চট্টোপাধ্যায়।
আপনি তো যাত্রাও করেছেন?
কেরিয়ারের শুরুতে। দ্বিতীয় নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। যাত্রার নাম ছিল ‘ভালো খারাপ মেয়ে।’ রূপা গাঙ্গুলির সঙ্গে করেছিলাম।
এবার থেকে কলকাতার রঙ্গমঞ্চে নিয়মিত আপনাকে দেখা যাবে?
আশা করি। এখন মনে হয় এতদিন নাটক না করে ভুল করেছি। নাটকে তৎক্ষণাৎ দর্শকদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। ফলে নিজের ভুলটা শুধরে নেওয়া যায়। আর যদি সামান্য প্রশংসা মেলে সেটা যে কোনও শিল্পীকে এনকারেজ করে।
পরবর্তী নাটকের কোনও চিন্তাভাবনা করেছেন?
২০২০-তে সুজন মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় লস ভেগাসে ‘অ্যাণ্টনি কবিয়াল’ নাটক মঞ্চস্থ হবে। আমি অ্যান্টনি চরিত্রে অভিনয় করব। সুজন মুখোপাধ্যায় ভোলা ময়রা করবেন।