বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
একজন বিখ্যাত চিত্রপরিচালকের ছেলে শ্যাম। কাজ নিয়েই সবসময় খুব ব্যস্ত থাকেন তিনি। ছেলেকে সময় দেন না। মভের বাবা বড় ব্যবসায়ী। মা তাঁকে ছেড়ে চলে যায়। অন্যত্র সংসার করে। সে কনভেন্টে পড়াশুনো করে। সেখানেই পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় শ্যামের সঙ্গে। শ্যাম তাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু মভ ভালোবাসে বিভিন্ন পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে ফ্লার্ট করতে। তারা ইউএসএ-র নাসায় পড়াশুনোর জন্য স্কলারশিপ পায়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার জন্য কোনও পয়সা তাদের কাছে ছিল না। তাই মভ একটা ডান্স রিয়েলিটি শো-তে অংশ নেয়, যেটা জিততে পারলে তাদের যাওয়ার খরচটা উঠে আসবে বলে মনে করে তারা। দুর্ভাগ্যবশত মভ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী মৌ নামের একটি মেয়ের কাছে হেরে যায়। মৌ আবার শ্যামের ফেসবুকের বন্ধু। মভ একটা শর্তসাপেক্ষে শ্যামকে মৌ-এর সঙ্গে ফ্লার্ট করতে বলে। সে বলে মৌ-এর সঙ্গে ভালোবাসার অভিনয় করতে এবং মৌ যদি সত্যিই তাঁকে ভালোবেসে পাগল হয়ে যায় তবে সে শ্যামের দেওয়া প্রস্তাবটি গ্রহণ করবে। মৌ-ও রাজি হয় কারণ সেও চায় শ্যামের সঙ্গে অভিনয় (ফ্লার্ট) করে যেতে পারলে সে শ্যামের চিত্রপরিচালক বাবার ছবিতে সুযোগ পাবে। কারণ তার লক্ষ্য ছিল শুধু নৃত্যশিল্পী নয় সফল নায়িকা হওয়া। কিন্তু শ্যাম ও মৌ সত্যিই একে অপরের প্রেমে পড়ে যায়। মভ সেটা মেনে নিতে পারে না। সে প্রতিশোধ নিতে চায়। শ্যাম ও মৌ-এর ভালোবাসা ও ঘনিষ্ঠ কিছু মুহূর্তের ভিডিও বানিয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেয় মভ। এটা জানতে পেরে মৌ আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। শ্যামকে পুলিস ধরে নিয়ে যায়। তার অবস্থা খুব খারাপ হয়। শেষে সেও পাগল হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারায়। মভের আর এক বন্ধু রাজ জোর করে তার সঙ্গে ইউএসএ-তে নিয়ে যেতে চায় তাঁকে। সে বলে আমাদের ইউএসএ যাওয়ার খরচটা আমার বাবা দেবেন। তুই শ্যামকে এখানে ফেলেই চল আমার সঙ্গে। তোরও স্বপ্নপূরণ হবে। কিন্তু মভ রাজি হয় না। কারণ সে বুঝত যে শ্যামকে সে খুব ভালোবাসে। তাই তাঁর চিকিৎসা ও সব দায়িত্ব সে নিজের কাঁধেই তুলে নেয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর শ্যাম স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। অন্যদিকে মৌকে রাজ বাঁচায়। দীর্ঘদিন পরে মৌ রাজকে সঙ্গে নিয়ে শ্যামের কাছে আসে তার নতুন ছবির প্রিমিয়ার শোতে এবং তাদের দু’জনের বিয়ের এনগেজমেন্টে আমন্ত্রণ জানাতে। মভ চেষ্টা করে মৌয়ের সঙ্গে শ্যামের ভালোবাসাকে পরিণতি দিতে কিন্তু শ্যাম প্রত্যাখ্যান করে। কারণ শ্যাম বুঝতে পারে মৌ ছাড়া বাঁচতে শিখেছে সে কিন্তু মভ ছাড়া বাঁচা তার পক্ষে সম্ভব নয়।
খুব প্রাসঙ্গিক বাস্তবধর্মী একটা বিষয় নিয়ে নবাঙ্কুর তাদের নাটক ‘এমএমএস এখন’ মঞ্চস্থ করল তপন থিয়েটারে। কেরিয়ার সর্বস্ব জীবন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা আধুনিক প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কত নীচে নামাতে পারে তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ এই নাটক। মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে টাকা-পয়সার কাছে আবেগ, অনুভূতিকে পণ্য করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না তারা। বিষয়টা শুধুই ভাবায় না, আতঙ্ক ও আশঙ্কাও জাগায়। তবে শেষপর্যন্ত ভালোবাসার জয় অবশ্য আশার কথাই শোনায়। শান্তনু চক্রবর্তীর গল্প ও নির্দেশনায় নাটকটি একেবারে বাস্তবরূপ পেয়েছে। নাটকের গান, সেট ডিজাইন এক কথায় অনবদ্য। শ্যাম ও মভের চরিত্রে রিকি তেওয়ারি ও প্রিয়াঙ্কা ঘোষাল অসাধারণ অভিনয় করে দুটি চরিত্রের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। যোগ্য সঙ্গ দিয়েছে মৌরূপী দেবমিতা গোস্বামী। অন্যান্য চরিত্রে অভ্রজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় (রাজ), সুদীপা সিনহা, আকাশ পাত্র ও নেহা শা যথাযথ। বাবলু সরকারের আলো মঞ্চটিকে বাস্তব রূপ দিতে সাহায্য করেছে। নাটকটি শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়, উপভোগ্যও। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নাটকের কিছু কিছু দৃশ্য এতটাই সাহসী যে দেখতে বসে বেশ আতঙ্ক লাগে। নাটক আজ কোন উচ্চতায়, শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছেছে তা ভাবার অবকাশ নেই। নাটকের কুশীলবরা প্রত্যেকেই অল্পবয়স্ক তবে পেশাদারিত্বের কোনও তুলনা হয় না।