উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
প্রয়াত হলেন থিয়েট্রন নাট্যদলের কর্ণধার ও প্রাণপুরুষ সলিল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জীবন সহজ সরল ছন্দে চলমান ছিল। প্রকৃত খাঁটি এক পণ্ডিত মানুষ ছিলেন সলিলদা। তাঁর সঙ্গে পরিচয় ন’য়ের দশকে এবং পরিচয়ের শুরুতেই ঘনিষ্ঠতা। পরিচয়ের মাধ্যম দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়। সলিলদার মাথায় সর্বসময় একটি টুপি থাকত। ফলে সবার মধ্যে সলিলদাকে চিনে নিতে অসুবিধে হত না। পায়জামা পাঞ্জাবি পরতেন। পরিষ্কার উচ্চারণে কথা বলতেন। কথা বলার ভঙ্গিটি একেবারে নিজস্ব, মার্জিত এবং আকর্ষণীয়। কিছুক্ষণ কথা বললেই তাঁর পাণ্ডিত্য মালুম হতো। কিন্তু তিনি কিছুই জাহির করতেন না। প্রচার বিমুখ মানুষ ছিলেন সলিলদা। অভিনয় খুব বেশি নাটকে করেননি, কিন্তু একজন উঁচুমানের অভিনেতা ছিলেন। নির্দেশক হিসেবে প্রথমশ্রেণীর। তাঁর কাজ বারবার আমাদের মুগ্ধ করত। সলিলদার জীবন আড়ম্বরহীন, আতিশয্যহীন হলেও নাট্যসাহিত্য বিষয়ে তাঁর জ্ঞানের উচ্চতা সবসময় টের পেতাম।
আর একটা বিষয় হল সলিলদা যখন কিছু জানতে চাইতেন (যে কোনও বিষয়ে) তখন তা ছাত্রের মতো শুনতেন। বারবার প্রশ্ন করতেন, যাচাই করতেন। বহুবছর আগে দূরদর্শনের জন্য শম্ভু মিত্রের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সলিলদা। অসাধারণ সে অনুষ্ঠান। নাটকের শিক্ষার্থীদের কাছে সেই অনুষ্ঠানের মূল্য ছিল অপরিসীম।
প্রত্যেক মানুষের জীবনেই নাটকীয় কিছু না কিছু ঘটনা ঘটে। সলিলদার জীবনেও এরকম নাটকীয় ঘটনা ছিল। একান্ত আলাপচারিতায় অকপটভাবে সেসব শুনিয়েছিলেন। কিন্তু এক ভাবগম্ভীর নম্রতায় জীবনের সেসব ঘটনার বিশ্লেষণও করেছিলেন। সলিলদার কোনও চাহিদা ছিল না। লোভ ছিল না। এত কম অর্থনৈতিক যোগানে মানুষের জীবনযাপন যে সম্ভব তা তাঁর সম্ভ্রান্ত, অভিজাত কণ্ঠে শুনেছি এবং নতুন বোধে জারিত হয়েছি।
ন’য়ের দশকের শেষে যখন চতুর্দিকে মুর্খ, খুচরো নাটকওয়ালাদের প্রচারের তীব্র কোলাহল তখন সলিলদার আত্মমগ্ন জ্ঞানের অনুসন্ধান আমাকে অবশ করে দিত। এও কি সম্ভব? নির্বিকার সলিলদা মুচকি হাসতেন। দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়, অসিত মুখোপাধ্যায় এই তিনজন প্রয়াত মানুষের সান্নিধ্যে এসে সভ্যতা, ভদ্রতা, সৌজন্যবোধের, আত্মপ্রত্যয়েত পাঠ নিয়ে নতুন পথের সন্ধান পেয়েছিলাম যা আজকের সময়ে বিরল। তিনজনকেই আনত প্রণাম জানাই।