বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
থ্রিলোফিলিয়া। ভ্রমণপ্রিয় লোকেদের কাছে এই নামটি বেশ পরিচিত। ভ্রমণ সংক্রান্ত যাবতীয় বুকিং করার অন্যতম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এই থ্রিলোফিলিয়া। অনলাইন মাধ্যমটি গড়ে তুলেছেন এক মহিলা। নাম চিত্রা গুরনানি দাগা। ছোট থেকেই ভ্রমণপ্রিয় চিত্রা যখন এমবিএ পাশ করলেন তখন তাঁর মনে হল এমন কোনও ব্যবসা করবেন যা অন্য সবকিছুর চেয়ে আলাদা। নিজের বেড়ানোর নেশাটাকেও জিইয়ে রেখেছিলেন চিত্রা। তেমনই একটা ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে গিয়েই তাঁর মনে হয় অনলাইন ট্র্যাভেল প্ল্যাটফর্ম খোলার কথা। একটা ছোট্ট বিজ্ঞাপন দিলেন তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায়। কয়েকটি প্রশ্ন রাখা হয়েছিল দর্শকদের কাছে। কেমন ভ্রমণ তাঁরা চান, ভ্রমণ সংক্রান্ত সুবিধে অসুবিধের অভিজ্ঞতা, বুকিং করার সুযোগ সুবিধে কেমন থাকলে ভালো হয় ইত্যাদি। প্রশ্নগুলোর উত্তর এলে তার বাছবিচার করতে করতেই থ্রিলোফিলিয়ার কথা ভাবেন চিত্রা। এমন একটা ট্র্যাভেল সাইট যার মাধ্যমে সব ধরনের ভ্রমণ সম্ভব। একক মহিলা, মহিলাদের গ্রুপ, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর, পারিবারিক ভ্রমণ সব কিছুর জন্য একটাই প্ল্যাটফর্ম। জনপ্রিয়তা পেতে বেশি সময় লাগেনি থ্রিলোফিলিয়ার। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে উপার্জন। এমনকী লকডাউনের সময়ও বেশ ভালোই ব্যবসা করেছে চিত্রার কোম্পানি। আপাতত মোটামুটি দেশে বিদেশে ১২৫টি গন্তব্যে ভ্রমণের বুকিং সম্ভব থ্রিলোফিলিয়ার মাধ্যমে। চিত্রা বলেন, ‘অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখন সকলের হাতে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট কানেকশন। ফলে অনলাইন বুকিং সবার হাতের মুঠোয়। কোথাও গিয়ে বুকিং করতে যে সময় লাগে তার অর্ধেক সময়ে যদি বুকিংয়ের সুযোগ পাওয়া যায় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেটা জনপ্রিয় হবে। থ্রিলোফিলিয়ার জনপ্রিয়তারও সেটাই কারণ।’
মহিলাদের উন্নততর জীবনের জন্য
একটি গান, আর তার মাধ্যমেই মহিলা জীবনের উদ্যাপন। ভাবনাটা শুরু করেন সমাজসেবী বিদ্যা থাপা। তাঁর গানের কথা— ‘মহিলা হওয়া কি মুখের কথা? ঘরের সব কাজ করার পরও সকলের আলাদা আলাদা করে খেয়াল রাখা কি মুখের কথা? তবু তারাই গলগ্রহ! এই কি তাদের পুরস্কার?’ এই গানের মাধ্যমেই সমাজে মহিলাদের কাজের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন বিদ্যা। দিল্লির প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করতেন বিদ্যা থাপা। সেখানকার মহিলাদের জন্য কাজ শুরু করেন। নিজের এলাকার মহিলাদের দেখতেন রান্না করা, সন্তান পালন, ঘর পরিষ্কার করার পরেও তাদের ভাগ্যে শুধুই লাঞ্ছনা। তখনই মেয়েদের জীবন নিয়ে গান বাঁধেন। আর সেই গানের মাধ্যমে সমাজের সামনে মোক্ষম প্রশ্নটি ছুঁড়ে দেন, মহিলারা সব করলেও তাদেরই কেন গলগ্রহ বলে ভাবা হয়? এই কি পুরুষতন্ত্রের উন্নত চিন্তা? পাশাপাশি নারী উন্নয়নের ভাবনাও থাকে তাঁর। তাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে নারী শিক্ষার প্রয়োজন। এমন শিক্ষা যা সমাজের সব স্তরে সম্ভব। সমাজের প্রত্যন্ত স্তরের মহিলাদের সাক্ষর করার পাশাপাশি তাদের অধিকার সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল করেন বিদ্যা। সেই বিষয়ে মহিলাদের শেখানোর জন্য একটি সেন্টার খুলেছেন তিনি। সেখানে নাইট ক্লাসের মাধ্যমে মহিলাদের নিজস্ব অধিকারগুলোকে জানানো হয়। অধিকারের গণ্ডি কত দূর তা বোঝানো হয় এবং সেই অধিকার না পেলে কোথায় কীভাবে আবেদন করতে হবে তাও জানানো হয়। বিদ্যার ছোট্ট প্রয়াসটি ক্রমশ বৃহদাকার ধারণ করেছে। দিল্লির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই কাজে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে। শুধু অধিকার বিষয়ক সচেতনতাই নয়, শরীর ভালো রাখার উপায়, ঋতুকালীন সময়ে যদি কোনও সমস্যা দেখা দেয় তাহলে তার সমাধানের পথও বাতলে দেওয়া হয়। সন্তানধারণ বিষয়েও তাঁদের অবগত করা হয়। সন্তানসম্ভবা অবস্থায় মহিলাদের শারীরিক দেখভালের নিয়মও জানানো হয়। এইভাবেই গ্রামের মহিলাদের এক উন্নততর জীবন দিতে চান বিদ্যা থাপা।
মেয়েদের জন্য স্কুল
মহলাবাই পারধির বাড়ি মধ্যপ্রদেশ। তাঁর পারিবারিক ব্যবসা ছিল শিকার। বন্য পশুদের শিকার করার বিরুদ্ধে আইন চালু হলেও চোরাগোপ্তা এই ব্যবসাই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মহলাবাইয়ের পরিবারের লোকেরা। কিন্তু সেই পরিবার থেকে বেরিয়ে এসে একেবারে ভিন্ন পথে হাঁটতে শুরু করলেন মহলাবাই। পশুশিকার ছেড়ে তিনি গ্রামের বাচ্চাদের জড়ো করে একটা পাঠশালা শুরু করলেন। পান্নার জঙ্গলের থেকে কিছুটা দূরে একটি গ্রাম এই ছাত্রাবাসের ঠিকানা। এই ছাত্রাবাসটি কিন্তু শুধুই মেয়েদের জন্য। মহলাবাই তাদের কাছেই একটি এক কামরার বাড়ি বানিয়েছেন। স্বামী ও চার ছেলেমেয়ে নিয়ে সেখানে থাকেন তিনি। স্কুলে বাচ্চাদের মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ও অঙ্ক শেখানো হয়। আপাতত এইটুকুই শেখানো হচ্ছে। পরে স্কুলটিকে আরও বড় করার ইচ্ছে রয়েছে মহলাবাইয়ের। এইসব বাচ্চার পরিবারে সবাই শিকারি। অনেকের বাবা মা শিকার করতে গিয়ে ধরা পড়ে জেল খাটছেন। অনেকের বাবা মায়ের সন্তান পালনের ক্ষমতা নেই। সেই ধরনের বাচ্চাদের একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দিতে চান মহলাবাই। কিন্তু শুধু মেয়েদের জন্য স্কুল করলেন কেন? তাঁর কথায়, ‘অধিকাংশ অশিক্ষিত পরিবারে মেয়েরা আজও ব্রাত্য। ফলে কোনও সমস্যা এলে মেয়েদের সহজেই বাবা মা সংসার থেকে বাদ দিয়ে দিতে চায়। নারী ও শিশুপাচার এইভাবেই বাড়তে থাকে।’ মেয়েদের সেই অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাদের নিয়ে স্কুল চালু করেছেন তিনি।
তাছাড়া এই স্কুল চালু করার পিছনে আর একটা উদ্দেশ্যও ছিল। ‘পারধি’ পদবিধারীদের সংস্কার মুক্ত করা। সমাজ ও আইনের চোখে আজও তারা শিকারি, অপরাধী। সেই দাগ মুছে ফেলার জন্যই তিনি সমাজের উন্নতিসাধনে মেতে ওঠেন। একদিনে ধারণা বদলায় না ঠিকই। কিন্তু ভালো কাজ এক না একদিন লোকের চোখে পড়বেই।