বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
পুরুষশাসিত সমাজে নানাভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে নারীর ন্যায়সঙ্গত অধিকার। তাই অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নামা ছাড়া কোনও গতি ছিল না মেয়েদের। নারীবাদী আন্দোলনে বহু পুরুষও স্বেচ্ছায় শরিক হয়েছেন, নারীর প্রতিবাদী কণ্ঠ সমর্থন করেছেন। আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যে আছে অর্ধনারীশ্বরের কল্পনা। এক গভীর সত্য নিহিত রয়েছে এই কল্পনায়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, সতীদাহ প্রথা রদ করেছিলেন রাজা রামমোহন রায়। বিধবা বিবাহ, স্ত্রী-শিক্ষা প্রচলনের জন্য বিদ্যাসাগরকেও লড়াই করতে হয়েছিল। আবার মুসলিম সমাজে বেগম রোকেয়ার বহুমুখী লড়াকু পদক্ষেপের কথা মনে পড়ে আমাদের। মেয়েদের পূর্ণ মুক্তির জন্য যে এক কল্পলোকের প্রয়োজন, সেটাও লেখিকার সৃষ্ট সাহিত্যে স্থান পেয়েছিল।
শিল্পবিপ্লবের ফলে কলকারখানা গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন দেখা দেয়। বহু নারী শ্রমিক সুতোকলে, পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন। খুব কম মজুরি, ১৭-১৮ ঘণ্টা কাজ—এককথায় অবর্ণনীয় শোষণ-অত্যাচারের শিকার ছিলেন তারা। একটানা ৩০ ঘণ্টা কাজ করার পর মৃত্যু পর্যন্ত হওয়ার উদাহরণ রয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি ও দারিদ্রের শিকার মেয়েরা অপুষ্টিতে ও অধিক পরিশ্রমের ফলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। নানা দাবি নিয়ে মিছিল করলে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে পুলিসের। নারীদের ভোটাধিকার, সমানাধিকার, সমকাজে সমমজুরির দাবি আজও অপূর্ণ থেকে গিয়েছে। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার অধিকার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে মেয়েরা। কিন্তু তা কাগজে কলমে। অনেকে আজও সাক্ষর নয়। আজও মহিলা শ্রমিকরা মজুরিতে বৈষম্যের শিকার, যৌন নির্যাতনের জন্য নিরাপত্তাহীন। এই একবিংশ শতাব্দীতে পর্যন্ত গার্হস্থ নির্যাতনের শিকার হতে হয় বেশিরভাগ নারীকে। উঠতে-বসতে, ডাইনে-বামে, এমনকী ঘর থেকে বেরতে পর্যন্ত বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
বহু দিন ধরে নিষ্পেষিত ও অবহেলিত থাকায় মেয়েদের প্রকৃত আত্মমর্যাদাবোধকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে এক ছদ্ম মর্যাদাবোধ। আজকের দিনেও সামাজিক রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বণ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ের দায় শুধুমাত্র তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত থাকায় মেয়েদের মধ্যেও এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, এগুলি তাদের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। এমন ধারণাকে নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে হয়। সমাজকে যে দিন এই বৈষম্য থেকে পুরোপুরি মুক্ত করা যাবে, সে দিনই দেশ প্রকৃত উত্তরণের পথে এগিয়ে যাবে।