মধ্যপ্রদেশের মেয়ে সীতা জামরা। কানহার জঙ্গলে তাঁর বাস। বন্য পশুদের নিয়েই নিত্য ওঠাবসা। মধ্যপ্রদেশ বনদপ্তরে কর্মরত তিনি। শিক্ষার প্রতি অসম্ভব টান অনুভব করেন। জানালেন, ‘গ্রাম্য পরিবারে পড়াশোনার চল এমনিতেই কম। আর কন্যাসন্তানের পড়াশোনা যে আদৌ দরকার তা-ই কেউ বুঝতে পারে না। ফলে মেয়েরা প্রকৃতির নিয়মে বড় হয়। প্রাইমারি স্কুলের পাঠ শেষ করে বাড়ির কাজে মন দেয়। রান্নাবান্না, ঘরকন্নার কাজ শিখে বিয়ের পিঁড়িতে গিয়ে বসে। সংসার আর সন্তান মানুষ করতেই তাদের সারা জীবন কেটে যায়। কিন্তু যুগ এগচ্ছে। শহরে মেয়েরা অনেকটাই শিক্ষিত ও সচেতন হচ্ছে। ফলে গ্রামই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? এই ভাবনা থেকেই সীতা নিজের গ্রামে মেয়েদের জন্য একটা লাইব্রেরি চালু করেছেন। তবে সাধারণ লাইব্রেরি নয়। এখানে বই সব উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত। ইউপিএসসি-র বিভিন্ন পর্যায়ের পরীক্ষায় বসতে গেলে যে বই পড়া দরকার, তেমনই বই আনিয়েছেন সীতা তাঁর এই লাইব্রেরিতে। আইএএস, আইপিএস-এর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়ারও ব্যবস্থা করেছেন তিনি। এর জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে সাহায্য চাইছেন। অনেক অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজের ইচ্ছের কথা জানাচ্ছেন সীতা। অনেকেই উৎসাহিত হয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন গ্রামের উজ্জ্বল ছাত্রীদের।
তবে লাইব্রেরি তৈরি বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার তুলনায় অনেক বেশি কঠিন গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলা যে কতটা জরুরি সে বিষয়ে অধিকাংশ পরিবার ওয়াকিবহালই নয়। তাদের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তুলে তবেই মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করতে হচ্ছে সীতাকে।
তাই দরিদ্র পরিবারগুলোকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করতেও তিনি এগিয়ে এসেছেন। কর্মশালার আয়োজন করে শীতে উলের পোশাক সংগ্রহ করেছেন দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য। গ্রামের বউদের হাতের কাজ শেখাতেও শুরু করেছেন সীতা। তাঁর এলাকায় পুঁতি আর সুতোর গয়না প্রচলিত। আঞ্চলিক এই গয়না বানানোর কাজ শিখিয়ে গ্রাম্য বধূদের রোজগেরে করে তুলতেও তিনি উদ্যোগী হয়ে উঠেছেন। সীতার কথায়, একটা বাড়িতে একাধিক জনের উপার্জন জরুরি। মেয়েদের রোজগার বাড়লে সমাজ উন্নত হয়। এই চেতনা গ্রামের প্রতিটি পরিবারে জাগিয়ে তুলতে চান। তবেই নারী উন্নয়ন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।