বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মাধ্যমে যে এক অন্যরকম সামাজিক মর্যাদা অর্জন করা যায় তা লাদাখের গ্রাম্য মহিলাদের জানা ছিল না। সম্প্রতি তাদের এই বিষয়ে অবগত করল একটি সেলাই মেশিন সংস্থা। লাদাখের বিভিন্ন গ্রামে ঘরোয়া মহিলাদের কাছে সেলাই মেশিন পৌঁছে দিয়ে তাদের সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সংস্থা। সংস্থার সিউইং সেক্টরের প্রধান সমীনা রসুল বলেন, ‘গ্রামের মহিলারা পরনির্ভর হয়ে থাকতে থাকতে আত্মসম্মানের কথা ভুলেই গিয়েছিলেন। তাঁদের জীবনে এ যেন এক নতুন আলোর সঞ্চার করেছে। তাছাড়া এতে শুধুই যে মহিলারাই লাভবান হয়েছেন তা তো নয়, তাঁদের গোটা পরিবারই লাভবান হয়েছে।’ গ্রাম্য জীবনে পড়াশোনা না জানা মেয়েরা অনেকেই সেলাইয়ে দড়। তাদের নতুন করে কিছু শেখানোর প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে কোনও কাজ করা, অর্ডার নেওয়া, সময়ের মধ্যে জমা দেওয়া ইত্যাদি শেখাতে হয়েছে। অনেকে আবার সেলাই মেশিন চালাতেই জানতেন না। তাঁদের একেবারে গোড়া থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই শেখাতে হয়েছে। আর এই গোটা দায়িত্ব সামলেছেন সমীনা। বললেন, ‘এ এক অন্য ধরনের অভিজ্ঞতা। আমরা কর্পোরেট কাজ করতে অভ্যস্ত। সেখানে গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে মহিলাদের ট্রেনিং দেওয়া, কাজের দায়িত্ব বিষয়ে তাঁদের সচেতন করা এগুলো সবই একটু অন্যধরনের কাজ। তবে এই কাজের মাধ্যমে মহিলাদের সাহায্য করতে পারছি ভেবেই ভালো লাগছে।’ তিনি আরও বলেন, এই সেলাই মেশিনটি বিদ্যুৎচালিত হলেও এতে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয় না। ফলে কম খরচে দ্রুত কাজ করা সম্ভব। লাদাখের গ্রামের মহিলা সংগঠনের অন্যতম সদস্য জুহি পারভিন বলেন, ‘এমন সুযোগ পেয়ে আমরা সবাই খুব খুশি। আশা করছি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্বনির্ভরতা আর রোজগারের পথে এগিয়ে যেতে পারব।’
ঐতিহ্য থেকেই নতুনত্ব
এখন ফিউশনের যুগ। প্রাচ্যর সঙ্গে পাশ্চাত্যের মিলন ঘটছে সর্বত্র। সাজগোজ, পোশাক ডিজাইন, রান্নাবান্না সর্বত্রই এই একই ট্রেন্ড। কিন্তু তারই মাঝে নিজের ঐতিহ্যকে ধরে রাখাও জরুরি। আর এই বিশ্বাস নিয়েই গতানুগতিক ডিজাইনের সন্ধান করেন ফ্যাশন ডিজাইনার অনিতা ডোংরে। তাঁর মতে, ‘আমাদের দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাদের কাছে রয়েছে ঐশ্বর্যের ভাণ্ডার। আমরা তা না খুঁজে বিদেশিয়ানার পিছনে ছুটছি। তাতে আমাদের ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে।’ তাই নিজের পোশাকে ‘ইন্ডিয়ান ট্র্যাডিশনাল ওয়ার্ক’ তুলে ধরতে চান অনিতা। দেশি ফ্যাব্রিক, প্রিন্ট ও হাতের কাজ নিয়ে কাজ করছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘যে কোনও ডিজাইন তৈরি করার আগে আমি দেশের গ্রামে গ্রামে ঘুরে রসদ জোগাড় করি। গ্রামের মহিলাদের হাতের কাজ খুঁটিয়ে দেখি এবং সেইসব কাজে লাগিয়েই ডিজাইন তৈরির চেষ্টা করি। আর সে থেকেই তৈরি হয় আমার নিজস্ব ফিউশন। তাতে ভারতীয় ঐতিহ্য ধরে রাখা হয়। কখনও বাটিকের সঙ্গে কাঁথার কাজ মেশানো হয়, কখনও বা বাঁধনির সঙ্গে ব্লক প্রিন্টের মিলমিশ ঘটে। এইভাবেই নতুনত্ব তৈরি হয়।’ গ্রামের মহিলাদের আলাদা করে প্রশিক্ষণ দিয়ে যে কাজ করান তিনি তা নয়। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন ভাবনা নেওয়া হয়। সেগুলোকে পুনর্নির্মাণ করে আবারও গ্রামের মহিলাদের দিয়ে সেই কাজ করানো হয়। এতে তাদের স্বনির্ভরও করা সম্ভব হয়। অনিতা মনে করেন গ্রাম্য মহিলাদের স্বনির্ভর করার জন্য সবসময় যে বড় কোনও প্রকল্পের প্রয়োজন তা নয়। ছোটখাট পদক্ষেপের মাধ্যমেও তাঁদের রোজগেরে করে তোলা সম্ভব।
চোখের ঘাতক জ্বালানী
গ্রামের মহিলা, যাঁরা কাঠকয়লার উনুনে দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করেন অথবা শুকনো পাতা, সব্জির ফেলে দেওয়া অংশ ইত্যাদি শুকিয়ে জ্বালানির কাজে লাগান তাঁদের নাকি ছানি পড়ার সম্ভাবনা বেশি। শুধু তাই নয়, গবেষণা বলছে এইসব মহিলাদের অল্প বয়সে চোখ খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দেয়। অরবিন্দ আই হসপিটাল, তামিলনাড়ু, এআইআইএমস এবং লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিন মিলিতভাবে একটি সমীক্ষা করেছে এই বিষটি নিয়ে। ‘এনভায়রনমেন্টাল হেলথ’ নিয়ে ভারতে খুব একটা কাজ হয় না, জানিয়েছে লন্ডন স্কুল অব হাইজিনের বিশেষজ্ঞ গবেষকের একটি দল। কিন্তু ভারতে আবহাওয়া সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়ানো খুবই দরকার। তাঁদের বক্তব্য, দূষণের মাত্রা ভারতে চিরকালই বেশি ছিল এবং ক্রমশ তা বেড়েই চলেছে। ফলে এই বিষয়ে সচেতনতা গড়ে না তুলতে পারলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মহিলাদের ক্ষতির সংখ্যা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি হবে। ভারতে মহিলারা অধিকাংশই নিজেদের শরীরের যত্ন নিতে অক্ষম। আর গ্রামের মহিলাদের মধ্যে সুস্থতা সংক্রান্ত সচেতনতা একেবারেই নেই। ফলে বিভিন্ন সমীক্ষা ও কর্মশালার মাধ্যমে তাঁদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
এইমস-এর অপথ্যালমোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ প্রবীণ বশিষ্ঠ অবশ্য এ বিষয়ে বলেছেন, ক্রমশ আবহাওয়া সংক্রান্ত গবেষণা আমাদের দেশে বাড়ছে এবং ‘এনভায়রনমেন্টাল হেলথ’ বিষয়ক জ্ঞানের পরিধি ও সচেতনতাও বাড়ছে। কিন্তু এখনও প্রচুর কাজ বাকি।
লন্ডন স্কুল অব হাইজিনের অধ্যাপক অ্যাসট্রিড ফ্লেচার বলেন, জ্বালানি থেকে চোখের সমস্যা সম্পূর্ণই মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়। তার একটা বড় কারণ হয়তো এই যে ভারতের গ্রামে মহিলারাই রান্না ও ঘরকন্নার কাজ সামলান। তাছাড়া গ্রামের বাড়িতে রান্নাঘরে চিমনির ব্যবহার নেই। ফলে পুরো ধোঁয়াটাই মহিলাদের চোখে মুখে লাগে। শ্বাসের মাধ্যমে তাদের ফুসফুসেও তা ঢোকে এবং এতে তাঁদের শরীর খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু জ্বালানির কাজে যদি গ্যাস ব্যবহার করা যায়, তাহলে এই সমস্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে।